অতি কষ্টের একটি জীবনের গল্প

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

অতি কষ্টের একটি জীবনের গল্প

FB_IMG_1627364953851.jpg

আসসালামু আলাইকুম,
সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন এবং সুস্থ আছেন। আমি অনেক ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি অতি কষ্টের একটি মেয়ের জীবনের গল্প। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।

একটি মেয়ের অতি কষ্টের একটি জীবনের গল্প। মেয়েটি ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করে মানুষ হয়েছে। তার মা অন্যের বাসায় কাজ করে যে খাবারটা তাকে খেতে দিত সেই খাবারটা তার সন্তানদের জন্য নিয়ে আসতো এইভাবে তাদের সংসার চলত। ভালো খাবার খেতে পারতো না ,ভালো পোশাক পরতে পারতো না এমনকি ঈদ পার্বনের ভালো কোন পোশাক পেত না। কোনভাবে লেখাপড়াটা চলত যতই হোক মা তার সন্তানের ভালোই চাই।

মেয়েটি দেখতে শুনতে খুবই সুন্দরী ছিল। মেয়েটি যখন ক্লাস সিক্স পড়াশোনা করেন তখন একটি ছেলেকে মনে মনে পছন্দ করত ।পছন্দ করতো বললে ভুল হবে হয়তো ভালোবাসতো। মেয়েটি কোনদিন মুখ ফুটে ছেলেটিকে কিছু বলতে পারেনি কিন্তু ছেলেটি মেয়েটির মনের কথা বুঝতে পেরেছিল। মেয়েটি যখন ক্লাস ৮ উঠলো তখন ছেলেটি একটা সুযোগ নিল। ছেলেটি কি করলো ছেলেটি মেয়েটিকে প্রপোজ করল এবং মেয়েটি আনন্দের সাথে রাজি হয়ে গেল কারণ মেয়েটি ছেলেটিকে আগে থেকেই ভালোবাসতো।

মেয়েরা অনেক বোকা সহজে সবাইকে বিশ্বাস করে ফেলে সেরকম এই মেয়েটি ও করল।মেয়েটি বুঝতে পারলো না যে সে ছেলেটির ফাঁদে পা দিয়েছে। মেয়েটি আসলে খুব সাদাসিধে সরল সোজা সে সহজেই ছেলেটিকে বিশ্বাস করে। এভাবে ছেলেটি কিছুদিন যাওয়ার পর মেয়েটি যখন ক্লাস নাইনে তখন মেয়েটির সাথে নানা অজুহাতে দেখা করতে চাইল মেয়েটি তখন অনেক ছোট সেটাও বুঝতে পারেনি যে কিসের জন্য তাকে দেখা করতে বলল। মেয়েটিকে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য জোর করলো। মেয়েটি প্রথমে রাজি হচ্ছিল না তারপর ছেলেটি তাকে বলল যে আমি তো তোমাকেই বিয়ে করব তোমার অসুবিধা কিসের নানাভাবে নানা কারণ দেখিয়ে মেয়েটিকে রাজি করালো। এভাবে দুই বা এক বছর মেয়েটির সাথে সম্পর্ক চালিয়ে গেল।

মেয়েটি যখন এসএসসি পরীক্ষা দিবে তখন ছেলেটির বিয়ে ঠিক হয়ে গেল অন্য একটা মেয়ের সাথে। মেয়েটি খুব কান্নাকাটি করল কিন্তু ছেলেটির তাতে কিছু যায় আসে না। ছেলেটি তাকে আর পাত্তা দেয় না কথা বলে না দেখা করে না। সে একদিন তাকে বলল যে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তুমি আর আমাকে ফোন দিবা না। মেয়েটা খুব কষ্ট পেল কিন্তু কিছু করার ছিলনা। মেয়েটি তার বাবা-মায়ের সাথে বলল মেয়েটির বাবা-মা ছেলেটির বাবা মায়ের সাথে কথা বলল কিন্তু কথা বলে কোন লাভ হয়নি ।ছেলের বাবা কয় যে আমার ছেলে যায় কোনদিন ধরছো আমার ছেলের। মেয়ের বাবা-মা বাড়িতে এসে আলোচনা করল একথা মেয়ে শুনতে পেল মেয়েটি শুনে খুবই কষ্ট পেল এজন্য মেয়েটি একটা ফাঁদ পাতলো। একরাতে মেয়েটি ছেলেটিকে ফোন করল এবং ছেলেটিকে আসার জন্য বলল ছেলেটি মেয়ের কথামতো রাতে আসলো কিন্তু ছেলেটি বুঝতে পারেনি যে মেয়েটি তার জন্য ফাঁদ পেতে রেখেছে। ছেলেটি আসার সাথে সাথে মেয়েটির বাবা-মা এবং পাশের লোক জনেরা ছেলেটিকে ধরল এবং ছেলের বাবাকে সংবাদ দিল কিন্তু ছেলের বাবা আসেনি এরপরে গ্রামের লোকজন মিলে ছেলেটির সাথে মেয়েটির বিয়ে দিয়ে দিল।

জোর করে কি আর সংসার করা যায় না ভালোবাসা পাওয়া যায়। মেয়েটি গেল ছেলের বাড়িতে ছেলের বাবা মা মেয়েটির সাথে প্রথম প্রথম ভালো ব্যবহার করত তারপর যতদিন যায় তত মেয়েটির সাথে খারাপ ব্যবহার করে ছেলে ও খারাপ ব্যবহার করে। মেয়েটিকে রীতিমত নির্যাতন করা শুরু করে মেয়েটির বাবা-মার কাছে যৌতুক দাবি করে 40 হাজার টাকা মেয়েটির মা বাবা সুখের জন্য 40 হাজার টাকা দিয়ে দেয়। কিন্তু তাতেও মেয়ে সুখী হয় না। মেয়েটিকে ভালো খেতে দেয়না ,ভালো পোশাক দেয় না তাকে দিয়ে অনেক কষ্টের কাজ করায়। তবুও মেয়েটি মানিয়ে নিয়েছিল কিছু বলতোনা তাদের সব কষ্ট নীরবে সহ্য করত।

এভাবে দীর্ঘ নয় মাস সংসার করার পর ছেলেটি হঠাৎ করে মেয়েটিকে না জানিয়ে কোর্টে গিয়ে মেয়েটিকে ডিভোর্স দেয়। মেয়েটি এ বিষয়ে কিছুই জানে না। তখনো কিন্তু মেয়েটি ছেলেটির বাড়িতে অবস্থান করছে মেয়েটা কিন্তু তার বাপের বাড়িতে নেই কিংবা কোন আত্মীয়র বাড়িতে নেই তার সাথে সংসারী করছে।

হঠাৎ একদিন ডিভোর্স এর নোটিশ মেয়ের বাড়িতে পৌঁছায় তখন মেয়েটি কিন্তু তার শ্বশুর বাড়িতেই আছে। মেয়েটির বাবা-মা ডিভোর্স নোটিসে সাইন করে না বলে যে মেয়ে তো শ্বশুর বাড়িতে আছে পিয়ন শ্বশুর বাড়িতে আসে সেখানে এসে দেখে মেয়েটি সংসার করছে সংসার কাজকাম গোছাচ্ছে মেয়েটিকে ডাকা হয় মেয়েটিকে সাইন করার কথা বলা হয় মেয়েটির বাবা-মা ও সাথে আছে মেয়েটির বাবা-মা বলে কি তুমি সাইন করবা না তুমিতো জানোনা তুমি এখনো শ্বশুর বাড়িতেই আছ এভাবে ডিভোর্স দেয় কিভাবে সে। ছেলেটির বাবা মা রীতিমত ভয় পেয়ে যায় এবং কোর্টে গিয়ে ডিভোর্স বাতিল করে। এটা দেখে মেয়েটির মনটা একেবারে ভেঙে যায়। মেয়েটি মনে মনে ভাবে যে এটা আমি কি করলাম কাকে ভালোবাসলাম যে আমাকে কোনদিনও ভালবাসিনি কোনদিন ও আমাকে মন থেকে গ্রহণ করে নি। এত কষ্ট কার জন্য সহ্য করলাম। এতদিন সংসার করার পর ও আমার জন্য একটুও মায়া জন্মায় নি। এসব কথা ভাবে আর মেয়েটি অঝোরে কাঁদতে থাকে।

মেয়েটির বাবা-মা মেয়েটিকে নিয়ে চলে যায় এবং ডিভোর্সটা ফাইনাল করে। মেয়েটি তখন কিছুই বলেনা কারন তাঁর বলার কোনো ভাষা নাই এখন মেয়েটি সেটাই করে যেটা তার বাবা-মা চায়। মেয়েটির বাবা-মা তাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার পর অন্য আর এক জায়গায় মেয়েটিকে বিয়ে দিয়ে দেয় সেখানে হয়তো মেয়েটির পোশাক-আশাক খাবার-দাবার কোন কিছুরই অভাব নাই। মেয়েটি অনেক সুখে আছে তবুও মনের ভিতর যেন একটা অপরাধবোধ কাজ করছে। মেয়েটি এখন স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখের সংসার করছে। আর ছেলেটি ও পরে বিয়ে করে। এখন হয়তো ছেলেটি অনেক সুখে আছে।

আসলে এই কথাটা সত্যি যে মেয়েটির জন্য ওই ছেলেটি যোগ্য ছিল না কারণ ওই ছেলেটি কোন দিন মেয়েটিকে বুঝতে চাইনি ভালোই বাসিনি তাকে শুধু ব্যবহার করে গেছে। কারণ যে সত্যি কারে ভালোবাসে সে কখনো মেয়েদেরকে অসম্মান করে না তাদেরকে কারো সামনে ছোট হতে দেয় না। অবশেষে একটাই কথা বলতে চাই যে মেয়েটির মত কেউ এভাবে ছেলেদের বিশ্বাস করতে যাবেন না তাহলে পরে ঠকে যাবেন।

তো বন্ধুরা আজ এ পর্যন্তই। গল্পটি কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। সবাই ভাল থাকেন, সুস্থ থাকেন এই কামনা করি। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

খোদা হাফেজ।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 67282.50
ETH 2627.94
USDT 1.00
SBD 2.68