জেনারেল পোস্ট- অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অভিনব পদ্ধতি | | written by@maksudakar ||

in আমার বাংলা ব্লগ7 months ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই আমার মত বেশ ভালোই আছেন। ভালো থাকেন, প্রফুল্ল থাকেন আর সুস্থ জীবন যাপন করেন এতটুকু দোয়া সবার জন্য। তবে সেই ভালো থাকাটা আজকাল যেন সবার কাছে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। একজনের এই সমস্যা তো আর একজনের আন্য সমস্যা। চারদিকে যেন সমস্যায় ভরপুর। এখন যেন সমস্যা ছাড়া মানুষ খুঁজে পাওয়া টাই বেশ মুশকিল হয়ে গেছে। আর এই সমস্যা নিয়েই আমাদের কে জীবন পার করতে হচ্ছে। আর চলে যেতে হচ্ছে দিনের পর দিন। মানুষ এখন অসহায়। আজকাল ডিজিটাল এ যুগে সব মানুষ গুলোই হয়ে গেছে ডিজিটাল। আর এই ডিজিটাল যুগেও নিজেকে রক্ষা করার জন্য মাঝে মাঝে আমাদের কে চলতে হয় বুদ্ধি করে। আজ তেমনি কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি।

অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অভিনব পদ্ধতি

দু চোখে ঘুম আসে না (9).png

Banner credit --@maksudakawsar

২০২৩ সাল। বিশ্বজুড়ে চলছে ডিজিটালের বাতাস। এখন মানুষ ঘরে বসেই সারা বিশ্ব দেখতে পায় এক ক্লিকে। আর সেই বাতাসের দয়ায় কিন্তু পিছিয়ে নেই আমাদের বাংলাদেশও। এ দেশের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ডিজিটাল যুগের কর্মকান্ড। আজকাল আমরা ঘরে বসেই যেমন পরিশোধ করতে পারি যে কোন বিল। তেমনি করে ঘরে বসেই এক ক্লিকে করে ফেলতে পারি ঘরের যাবতীয় বাজার সদাই। এ যেন এক অন্য রকমের বাংলাদেশ। কিন্তু এত এত উন্নয়নের জোড়ে এ দেশ হতে দূর করা যায়নি দুর্নীতি। উন্নয়নের ছোঁয়ায় যেন দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে বহুগুন।

বেশ ব্যস্ততায় কাটলো আজ সারাটিা দিন। তাও আবার একজন দুর্নীতি বাজ মানুষকে শায়েস্তা করার জন্য। নিজেদের একটি সম্পত্তির নামজারির জন্য বেশ কিছুদিন যাবৎ আমি নিজেই দৌড়ঝাঁপ করছি। কারন আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন যে আমাদের পরিবারের অনেক দায়িত্ব আমাকেই পালন করতে হয়। আর এ জন্যই কিছুদিন আগে সেই সম্পত্তিটির নামজারির জন্য সবকিছু করে নিলাম অনলাইনে। এরপর ভূমি অফিসে ডাক পরলো শুনানীর জন্য। আমি প্রয়োজনীয় সকল কাগজ নিয়ে গেলাম। কিন্তু ‍দুঃখের বিষয় হলো সে দিন আমাদের নামজারির আবেদন নাকোচ হয়ে গেল। বুঝতে পারলাম না কি কারনে। এমন করে দুইবার অনলাইনে পূরণ করার পরও দুবারই আমাদের আবেদন নাকোচ করে দিল। আচ্ছা আমার একটি প্রশ্ন যদি অনলাইনে করার পর আবার অফলাইনে সব কাগজপত্র জমা দিতে হয় তাহলে অনলাইনের কি দরকার? যাক সে সব কথা। কর্তার ইচ্ছাতেই কর্ম।

এবার দ্বিতীয় বার নাকোচ হওয়ার পর যখন আমি নিজের পরিচয় দিলাম এবং ভদ্রলোকের সাথে বেশ সুন্দর ব্যবহার করলাম। তখন তিনি আমায় উপ- ভূমি সহকারী কর্মকর্তার সাথে দেখা করতে বললেন। আমি তো সেই উপ- ভূমি সহকারী কে দেখে ভাবলাম মানুষ না ফেরেস্তা। কারন তিনি বেশ ভালো ব্যবহার করলো। আর এমন ব্যবহার করলো যে আমার মনে হয়েছে ভূমি অফিস অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। তারপর আমি ভদ্রলোকের কথা মত সেখানে খরচ বাবদ ৩০০০/- টাকা দিয়ে আসলাম। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো এবার ও নাকোচ হওয়ার ম্যাসেজ আসলো অনলাইনে। এবার ভদ্র লোককে ফোন করে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বেশ মিষ্টি কণ্ঠে বললেন যে এবার হয়ে যাবে। যাক কয়েকদিন পর মোবাইলে ম্যাসেজ আসলো যে আমাদের সম্পত্তিটির নামজারি হয়ে গেছে। আমাদের করনীয় জানার জন্য এবার তাকে ফোন করা হলে তিনি বেশ মিষ্টি কন্ঠে বললেন যে, ভদ্রলোক এ কাজেরর জন্য ২০২২০/- টাকা খরচ করেছে। শুনেই মেজাজ গরম হয়ে গেল।বেশ রাগ উঠলো ভিতরে। এ ও কি সম্ভব ? এখন এ বিংশ্ব শতাব্দিতে এসে তাকে ঘুষ দিব ২০২২০/-টাকা।

তো মনে মনে ভাবতে লাগলাম কি করা যায়। ভেবে ভেবে একটি বুদ্ধি বের করলাম। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম নামজারির কাগজের মূল কপি আনতে যাবো । তবে এর আগে ইউটিউবে সার্চ দিয়ে দেখে নিলাম নামজারির মূল কপি আনতে কি করতে হবে? মাত্র ১১০০/- ফি জমা দিলেই আমরা আমাদের নামজারির কাগজ ভূমি অফিস থেকে তুলতে পারবো। তাও আবার সেই নম্র ভদ্রলোক মানুষটির কাছ হতেই আনতে হবে। তো চলে গেলাম মিশনে। সাথে নিলাম ছোট ভাইকে। ওকে শুধু বলে দিলাম যে তুই চুপ করে বসে থাকবি। যেই বলা সেই কাজ। ভদ্র লোকের সামনে যেয়ে তো ছোট ভাই কোন কথাই বললো না। ভদ্রলোক আমাদের কে দেখে বসতে বলেলেন। তারপর আমাদের কেইস নাম্বার নিয়ে নির্ধারিত ফি জমা দিতে বললেন। এদিকে নির্ধারিত ফি ১১০০/- টাকা জমা দেওয়ার মাঝে আমি আমার মোবাইলটি টেবিলের উপর রাখলাম। আর সেটা দেখে ভদ্রলোক একটু খেয়াল করলো।

সে যাই হোক। ভদ্রলোক যখন কাজে ব্যস্ত তখন আমি আমার ভাইকে বলা শুরু করে দিলাম আমার আর ভালো লাগে না, এত দায়িত্ব পালন করতে করতে হিমশিম খেয়ে যাচিছ। সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। বরং জমিটা বিক্রি করে লোন গুলো পরিশোধ করে দে। পড়ে কিন্তু পিটানি খাবি মানুষের। এই বলতে বলতে আমি কাদঁতে শুরু করে দিলাম। আর এর মাঝেই আমাদের নামজারির কাগজটি চলে আসে। ভদ্রলোক তাতে সীল স্বাক্ষর করে এবং তার মোট খরচের একটি ফিরিস্তি আমাদের হাতে ধরিয়ে দেয়। এখন আপনারাই বলেন, যেখানে নামজারি করতে মাত্র ১১০০/- টাকা লাগে সেখানে কি করে তাকে ২০২২০/-দেই। তাই কেঁদে দিলাম জোড়ে জোড়ে। আর বললাম যে যদি কাগজ না দেন তো থাক আমাদের লাগবে না। কিন্তু আমাদের কে মেরে ফেললেও অত টাকা দিতে পারবো না। তখন ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলো কত পারবেন। তখন আমার ভাই তাকে ৫০০/- টাকা বের করে দিল। আর আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম থাকলে আর ৫০০/-টাকা দিয়ে দে। তারপর আমরা সেই ভদ্রলোক কে মোট ১০০০/- টাকা দিয়ে নামজারির কাগজ নিয়ে চলে আসলাম। হি হি হি।

image.png

শেষ কথা

কি করবো বলেন? আমরা অসহায় মানুষগুলো জিম্মি হয়ে আছি এদের কাছে। এমন না করলে তো সেই বেটা আমাদের কে আরও ঘুরাতো। তাই এমন ঘুষখোরদের কে শায়েস্তা করার জন্য এমন একটু অভিনয় কি বেশ খারাপ কিছু হয়ে গেল বন্ধুরা? জানার অপেক্ষায় রইলাম।

image.png

নিজেকে নিয়ে কিছু কথা

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।

আমার ব্লগটির সাথে থাকার জন্য এবং ধৈর্য সহকারে আমার ব্লগটি পড়ার জন্য সবাই কে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। সেই সাথে সবার প্রতি আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

image.png

Screenshot_1.png

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 7 months ago 

বাহ্! আপু আপনার অভিনয়ের জন্য তো আপনাকে অস্কার দেওয়া উচিত। কি অভিনয় টা করলেন 😂। গত বছর আমার আব্বুর একটা জায়গা আমি অনলাইনের মাধ্যমে নামজারি করেছিলাম। প্রথমে একটু ঝামেলা হয়েছিল। পরবর্তীতে আমাদের উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এর মাধ্যমে, এসি ল্যান্ড কে ফোন করিয়েছিলাম। তারপর এসি ল্যান্ড তার পিয়নকে বলে আমার যা যা দরকার সব করে দিতে। পরবর্তীতে অল্প টাকা বকশিস এবং ডিসিআর ফি ১১০০ টাকা দিয়ে নামজারি করিয়ে ফেলি। যাইহোক আপনার অভিনয় একেবারে কাজে দিয়েছে। অনলাইন হোক আর যা ই হোক না কেনো,আমাদের দেশের দুর্নীতি কখনোই বন্ধ হবে না। যেহেতু নামজারি করে ফেলেছেন, অনলাইনের মাধ্যমে খাজনা দিয়ে ফেলবেন। তাহলে বাড়তি টাকা দিতে হবে না খাজনার। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 7 months ago (edited)

অস্কার পেলে তো মন্দ হতো না ভাইয়া। ঘরের দেয়ালে খোদাই করে রেখে দিতাম। কি করবো বলেন দুনিয়ার যে পরিস্থিতি বাঁচতে হলে তো একটু চালাকি করতেই হয়। ধন্যবাদ সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

 7 months ago 

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 58132.39
ETH 3138.08
USDT 1.00
SBD 2.44