শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি- যেমন ছিল শৈশবের রমজান II written by @maksudakawsar II

in আমার বাংলা ব্লগ6 months ago (edited)

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই বেশ ভালো আছেন। আমিও বেশ ভালো আছি। আর সব সময়ই চাই ভালো থাকতে। কারন নিজে ভালো না থাকলে পাশের মানুষগুলো কে ভালো রাখাটা মুশকিল হয়ে পড়ে। আর তাই তো সব সময়ে ভালো থাকার কাজ করে যেতে হবে। আর ভালো থাকতে বা নিজেকে ভালো রাখতে যে জিনিস গুলো বেশী প্রয়োজন তা হলো নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে সমস্ত অসুস্থ্যতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। দোয়া করি সবাই যে সুস্থ এবং সুন্দর জীবন যাপন করতে পারেন।

শৈশব আমাদের জীবনের সাথে এমন করে মিশে আছে যে আমরা হাজার চাইলেও সেই শৈশব কে ভুলতে পারি না। পারি না শৈশব কে দূরে ঠেলে দিতে। শৈশব আমাদের কে বার বার হাতছানি দেয়। চোখের সামনে মেলে ধরে হাজারও স্মৃতি। আর সেই শৈশব কে আকঁড়ে ধরে আজও আমরা বেঁচে আছি।বন্ধুরা আজও চলে আসলম সুন্দর সেই শৈশবের কিছু দূরন্ত পানার স্মৃতি নিয়ে আপনাদের মাঝে।

শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি
" যেমন ছিল শৈশবের রমজান "

family-8551931_1280.jpg

Source

চলছে রমজান মাস। চারদিকে রমজানের আমেজে ভরপুর। আর এমন রমজান আসলেই কিন্তু আমরা সবাই চলে যাই আমাদের শৈশবের সময়টাতে। আমরা সবাই খুজেঁ ফিরি আমরা শৈশবের রমজান মাস কে। কারন শৈশবের প্রতিটি জিনিসেই আমাদের কাছে স্মৃতিময়। আর রমজান মাসে ঘটে যাওয়া হাজারও স্মৃতিগুলো কেন জানি মনের মনি কোঠায় স্থান করে আছে আজও। রমজান আসে রমজান চলে যায় । কিন্তু জীবন থেকে মুছে যায় না শৈশবের সে সব স্মৃতিময় দিনগুলো। তাই তো দুদিন ধরে মনে হচ্ছে সেই সকল দিন গুলোর কিছু স্মৃতি আপনাদের সাথে শেয়ার করলে কেমন হয়?

রমজানের চাদঁ দেখার সাথে সাথে আব্বা ব্যাস্ত হয়ে পড়ন্ত তারাবির জন্য। আর মা ব্যাস্ত হতো সেহেরির খাওয়া দাওয়ার ইনতেজাম করার জন্য। বাবার করা নির্দেশ ছিল সাত বছর হলেই রোজা রাখার চেষ্টা করতে হবে। তাই তো ভরে বাবা ডেকে তুলে দিতো রোজা রাখার জন্য। আবার আমারও কম আগ্রহ ছিল না। রোজা রাখবো বলে সারারাত ঘুমাতাম না। যদি মা না ডাক দেয়। আর ভোর বেলায় সবার সাথে সাথে আমিও সেহেরী খেতাম। কিন্তু বয়স তো তত বেশী না। সারাদিন রোজার ক্ষুধায় একেবারে কাতর হয়ে যেতাম।বার বার পানির পিপাসা লাগতো। আর তখন পিপাসা মিটানোর জন্য চুপে চুপে পানি খেয়ে নিতাম ভাবতাম কেউ হয়তো দেখছে না। অবশ্য বাসার সবাই ভাবতো যে আমি মনে হয় সারাদিন রোজা ছিলাম।

আমাদের শৈশবে রোজার দিন গুলোতে স্কুল বন্ধ থাকতো। তাই আমরা তখন হয়ে যেতাম ঘর ছাড়া গরু। আরে বুঝলেন না। দৌড় ঝাপ আর খেলাধুলায় কাটিয়ে দিতাম রোজার দিনগুলো। এই খেলা সেই খেলা কত রকমের খেলা খেলে যে সময় পার করতাম। মাঝে মাঝে যখন সত্যি সত্যি রোজা থাকতাম তখন খেলার জন্য সারাদিনের ক্ষুধার যে কষ্ট সেটা বুঝতে পারতাম না। বুঝতে পারতাম না কখন সময় চলে যা্চ্ছে। বিকেল হলেই দেখতাম রাস্তায় রাস্তায় ইফতার আর বরফ বিক্রি করার ধুম। আর আমরা তখন দৌড়ে যেতাম বরফ আনার জন্য।বেশী দিন আগের কথা নয় কিন্তু এটা। কিন্তু এখন আর কোথাও এমন করে বরফ বিক্রি করতে দেখা যায় না।

আমাদের কোয়াটারের কাছেই ছিল আনসার হেড কোয়টার। রোজার দিনগুলোতে প্রতিদিন সকাল আর সন্ধ্যায় সেখানে সাইলেন বাজানো হতো। আর আমরা অপেক্ষা করতাম কখন সাইলেন বাজবে। কিন্তু এখন সব পরিবর্তন হয়েগেছে। এখনও আছে সেই আনসার হেডকোয়াটার। কিন্তু এখন আর সেই সাইলেন বাজে না। আর আমরাও সেই সাইলেনের জন্য অপেক্ষাও করি না। সন্ধ্যায় যখন ইফতারি করতে বসতাম ঘরের সবার সাথে তখন সবার চোখের আড়ালে আলুর চপ আর পিঁয়াজু চুরি করে লুকিয়ে রাখতাম চিপায়। মানে যেখানে কারও চোখ পড়েনা। রাতে চুরি করে করে খেতাম সেই আলুর চপ আর পিঁয়াজু।

রোজার দিনে দেখতাম কোয়াটারের এর বাসায় তার বাসায় মা ইফতারি পাঠাতো।আবার তারাও আমাদের বাসায় ইফতার পাঠাতো। কি যে আনন্দ ভরা দিন ছিল তখন। তখন তো আর নামায বোঝতাম না। তখন শুধু বুঝতাম খেলাধুলা। আর তাই তো নামায না পড়েও সবাই কে বলতাম নামায পড়ছি। পড়ে অবশ্য আব্বার বোকা ঝোকায় নামায ধরতে হয়েছে। তবে শৈশবের রোজা গুলো ভুলার নয় কারন তখন মা তৈরি করে দিতো আর আমি খেতাম। আর এখন প্রতিদিন শত ব্যাস্ততার মধ্যেও নিজের সংসারের জিনিস নিজেকেই তৈরি করে দিতে হয়। তাহলে ভেবে দেখেন কত সুন্দর ছিল আমাদের শৈশবের রোজা।কখনও কি এই স্মৃতিগুলো কে ভুলে থাকা যায়।

শেষ কথা

আসলে ভেবে দেখেন তো আমাদের ছেলেবেলার রোজা গুলো কত স্মৃতিময় ছিল। এমন স্মৃতিময় দিন গুলোকে কি আপনারা বা আমি কখনও ভুলতে পারবো। আমার কিন্তু মনে হয় পারবো না। তবে আপনাদের অভিমত গুলো জানতে পারলে ভালো লাগতো।

নিজেকে নিয়ে কিছু কথা

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।

আমার ব্লগটির সাথে থাকার জন্য এবং ধৈর্য সহকারে আমার ব্লগটি পড়ার জন্য সবাই কে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। সেই সাথে সবার প্রতি আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

image.png

Screenshot_1.png

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 6 months ago 

শৈশব এর সৃতি যা আর কখুনো ফিরে পাব না।এই দিন গুলো যে কতোটা সুন্দর ছিল তা এখন শুধু কল্পনা বাবার সাথে তারাবি নামাজ পরা রান্নার পাশে বসে থাকা এবং সেহরি করা রোজা রেখে বার বার জিজ্ঞাসা করা যে কখুন ইফতার এই দিন গুলো যেনো স্বপন এখন শুধু।দারুন একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন।

Posted using SteemPro Mobile

 6 months ago 

ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 6 months ago 

আপু বেশ ‍সুন্দর করে আপনি শৈশবের স্মৃতি চারন করলেন। আবার নাকি পেঁয়াজু চুরি করে খেতেন। সেটা তো জানা ছিল না। শৈশবের স্মৃতি গুলো কে ধরে রাখতে বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে আজকের পোস্টটি আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। ধন্যবাদ আপু এমন সুন্দর একটি পোস্টি শেয়ার করার জন্য।

 6 months ago 

ধন্যবাদ আপু আপনাকে আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 6 months ago 

আসলেই আপু সেই দিনগুলো মধুর ছিলো। শৈশবে রোজার সময় কি যে আনন্দ হতো, সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। মা বাবা রোজা রাখতে নিষেধ করলেও, সেহরির সময় ঠিকই ঘুম থেকে উঠে যেতাম। তারপর সেহরি খেয়ে রোজা রাখার পর, সকাল থেকেই বলতাম ক্ষুধা লেগেছে। তখন মা বলতেন দুপুর ১২ টা পর্যন্ত রোজা রাখতে, তাহলে অর্ধেক রোজা হবে। পরের দিন আবারও একইভাবে অর্ধেক রোজা রাখতে। তাহলে সম্পূর্ণ একটি রোজা রাখা হয়ে যাবে। এভাবেই চলতে থাকতো পুরো রমজান মাস। রোজা রেখে ক্রিকেট খেলতাম, ক্যারাম বোর্ড খেলতাম,আরও কতো কি। সেই দিনগুলো আসলে মিস করি। যাইহোক দারুণ লিখেছেন আপু। এতো সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 6 months ago 

আমার মত দেখে আপনার ছেলেবেলার রমজানে অনেক স্মৃতি ছিল। যাইহোক সুন্দর একটি মন্তব্য করবের উৎসাহিত করার জন্য ধন্যবাদ।

Posted using SteemPro Mobile

 6 months ago 

খুব সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন আপনি। আসলে ছোটবেলায় অনেক ধরনের স্মৃতি রয়েছে যা এখনও মনে পড়ে৷ ছোটবেলায় যখন আমরা রোজা রাখতে চাইতাম তখন আমাদেরকে আমাদের বাবা-মা উঠাতেন না৷ তবুও আমরা উঠে যেতাম৷ পরবর্তীতে যখন সকাল হয়ে যেত এরপর থেকেই আমরা কিছু খাওয়ার জন্য ওনাদেরকে বলতাম৷ তখন ওনারা বলতো যে আজকে অর্ধেক রাখতে এবং পরদিন অর্ধেক৷ তাহলেই পরিপূর্ণ একটি রোজা হয়ে যাবে৷ আমরাও তা বুঝে নিতাম এবং এভাবেই সম্পূর্ণ রোজার মাস এভাবে রোজা রাখতে রাখতে শেষ হয়ে যেত৷
অনেক ধন্যবাদ এরকম সুন্দর একটি স্মৃতি শেয়ার করার জন্য৷

 6 months ago 

খুব সুন্দর করে মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 6 months ago 

আপনাকেও অনেক অনেক শৈশবের এরকম একটি স্মৃতি শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

Congratulations @maksudakawsar. You received an upvote from @supportive

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 58211.91
ETH 2476.26
USDT 1.00
SBD 2.38