শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি - "অমৃত স্বাদের কৎবেলভর্তার কথা আজও মনে পড়ে " II written by @maksudakawsarII

in আমার বাংলা ব্লগ9 months ago

আসসালামু আলাইকুম

শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি
"অমৃত স্বাদের কৎবেল ভর্তার কথা আজও মনে পড়ে"

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই বেশ ভালো আছেন। সকাল সকাল বেশ ভালো ফুরে ফুরে মন নিয়েই দিন যাচেছ। যতই ব্যস্ত থাকি না কেন আমরা কিন্তু জীবন থেকে মুছে দিতে পারিনা আমাদের অতীত কে। মুছে দিতে পারি না শৈশবের স্মৃতি মাখা কিছু স্মৃতিকেও। কি করে মুছবো বলেন তো? অতীত যে আমাদের মূল শেকড়। আজও মাঝে মাঝে যখন একা থাকি তখন বেশ মনে পড়ে অতীতে ফেলে আসা সেই দিনগুলো। তবে এখন কিন্তু বেশ ভালো লাগে। এখন আমরা চাইলেই আমাদের অতীত জীবনে ঘটে যাওয়া হাজারও মজাদার ঘটনাগুলো কে আপনাদের সামনে মেলে ধরতে পারি। আর সেটাও সম্ভব হয়েছে আমাদের সম্মানিত @rme দাদা । আর এ জন্য সম্মানিত ফাউন্ডার @rme দাদার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আশা করি আমার আজকের শৈশবের স্মৃতি আপনাদের অনেককেই নিয়ে যাবে সেই শৈশবের কিছুটা সময়ে।

প্রকৃতি ঘেরা বাংলার তাজমহলের ভিডিওগ্রাফি.png

source

ছেলেবেলায় আমরা যে কোয়াটারে থাকতাম সেখানে অনেকেই বাগান করতো। বিভিন্ন রকমের বাগান ছিল কোয়াটারের মাঠে। কোয়াটারে এক এক জন এক এক রকমের গাছ লাগাতো। কেউ পেয়ারা গাছ, কেউ কলা গাছ, কেউ আম গাছ , কেউ জাম গাছ আর কেউ বা কাঠাঁল গাছ। এ রকমের আরও হাজারও গাছ লাগানো হয়েছিল কোয়াটারের সামনের মাঠ। আর তার মধ্যে সবার নজরে পড়া গাছটি ছিল কৎবেল গাছ। শীতের সময় গাছটিতে কৎবেল ছড়িয়ে যেত। আর গাছটি ছিল আমাদের কোয়াটারের আলী চাচার। চাচা ছিল বেশ বদরাগী মানুষ। আর কটবেল হওয়ার সাথে সাথে সেগুলো কে মশারি দিয়ে ঢেকে দিত। যাতে কেউ তার গাছের কটবেল ছিড়তে না পারে।

আরে এলাকার ছেলেমেয়েরা কি আর সেই মশারি মানে? মশারি কেটে কেটে কৎবেল চুরি করে নিয়ে যেত এলাকার ছেলেমেয়েরা। আর এ নিয়ে প্রতিদিন কোয়াটারে বিচার বসতো। এমন কোন দিন নাই যে কৎবেল চুরি নিয়ে কোয়াটারে বিচার হয়নি। আমাদের কোয়াটারের সবচেয়ে দুষ্টু ছেলে ছিল পলাশ। পলাশ আর তার বন্ধুরা মিলে আলী চাচার গাছের সব বেল চুরি করে খেয়ে ফেলতো বলে সবার ধারনা। এমনকি অনেকে নাকি তাদের কে দেখেছেও কৎবেল চুরি করতে।

আমরা ছিলাম তিন বান্ধবী। আমরাও কিন্তু দুষ্টু কম ছিলাম না। এরকম শীতের দিন আসলে তো ফাইনাল পরীক্ষা শেষে স্কুল বন্ধ থাকতো। তখন আমরা কিন্তু বেশ মজা করতাম। সারাদিন শুধু খেলায় ডুবে থাকতাম। এ নিয়ে কিন্তু মায়ের হাতে বকুনী কম খাইনি। তবুও আমাদের দুষ্টামি কমেনি। খেলাধুলা আর গল্প করে কাটিয়ে দিতাম ফাইনাল পরীক্ষার পর এক দুটি মাস। একদিন আমাদের তিন জনের মাথায় আসে এক শয়তানি বুদ্ধি। আর শয়তানি বুদ্ধি বলে কি যেমন তেমন বুদ্ধি? আপনারাও শুনে টাস্কি খেয়ে যাবেন।

আমরা বুদ্ধি করলাম দুপুরে এলাকা যখন নিস্তব্দ হয়ে যাবে, তখন আমরা আলী চাচার বাগান হতে দুই তিনটি কৎবেল চুরি করে ভর্তা করে খাবো। তাতে কেউ আর আমাদের কে সন্দেহ করবে না। কারন সবাই তো জানে যে সব কৎবেল চুরি করে পলাশ। আর এই জন্য আমরা আগে থেকে এক এক জনের বাসা হতে শুকনো মরিচ পোড়া, লবন আর ধনেপাতা চুরি করে রেখেছিলাম আমাদের আড্ডার জায়গায়। যেখানে কেউ যায় না। তো যেই বুদ্ধি সেই কাজ। দুপুর এলাকা যখন একটু নিস্তব্দ হলো তখন তিনজনে গেলাম বেল চুরি করতে। দুইজন মিলে মশারি কেটে বেল চুরি করতে লাগলো। আর আমি পাহাড়া দিতে লাগলাম। এক সময়ে আমার বাকী দুই বান্ধবী সফলতা অর্জন করলো। মানে তিনটি টসটসে পাকা কৎবেল পেড়ে জামার নীচে লুকিয়ে নিল। কিন্তু কেউ দেখেনি।

তারপর আমরা আমাদের সেই লুকানো আড্ডার জায়গায় যেয়ে কৎবেল গুলো ভেঙ্গে লবন ধনেপাতা আর শুকনা মরিচ পোড়া দিয়ে ভর্তা করে খেলাম। আহ্ কি যে স্বাদ। আজও কি ভুলতে পারি সেই স্বাদ। এখনও মনে পড়লে জিভে জল টস টস করে। আমরা বেশ মজা করে আধ ঘন্টা লাগিয়ে পাকা কটবেল ভর্তা করে খেলাম। আর বুদ্ধি করতে লাগলাম আর একদিন চুরি করে ভর্তা করে খাওয়ার। কিন্তু কি বলেন তো। কপালে আর সইলো না আমাদের । বিকেল গড়াতে না গড়াতেই কোয়াটারের মাঠে বিচার বসলো। আলী চাচা এবার কড়া বিচার চায়। কারন সেই দিন শুধু আমরা কৎবেল চুরি করনি। সাথে সাথে পলাশের গ্রুপও ছিল। চাচার গাছের কৎবেল নাকি চার ভাগের তিন ভাগ চুরি হয়ে গেছে। তাই চাচা পলাশের অভিভাকের থেকে জরিমানা আদায় করলো। ফাঁক দিয়ে আমরা বেচেঁ গেলাম।

কিন্তু সমস্যা হলো আলী চাচা সেদিন এত রাগ করেছিল যে সে তার কৎবেলগাছটিই কেটে ফেলেছিল। তার কথা তিনি কৎবেল লাগাবে আর এলাকার পোলাপাইন চুরি করে খাবে। এটা হবে না। এত কষ্ট করে তিনি গাছ লাগায় আর বাহিরের মানুষ খায়। চাচার পোলাপাইন কোন ভাগ পায় না। তাই চাচা তার কৎবেল গাছটি চিরতরে কেটে ফেললো। আর আমাদেরও আর পরে সেই মজাদার কৎবেল ভর্তা চুরি করে খাওয়া হয়নি। তবে আজও ভুলিনি সেই মজাদার স্বাদের কৎবেল ভর্তার কথা।

image.png

আজ এখানেই রাখছি। আগামীতে আবারও ফিরে আসবো নতুন করে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে। কেমন লাগলো আমার আজকের ব্লগটি? জানার আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় রইলাম। আশা করি আপনাদের মূল্যবান মন্তব্য দিয়ে উৎসাহিত করবেন।

6bhseHAdLtYRoe4mZ6fU3gFc8eKGc3JgYMfqGaKxkR3mYxgugFkjBFNEHgnHxgjqRLKWnKFTwwKJ9vDEph9jyEpATxyrkzsRxUofieSXvW735LWMMgvNdmzY9gdTZLTvQUTjfuGerk7HkVFhydr9py91MzKuGJCHc5dMf2oCskaPxXaG7tSHnDFRpNk7aguG1SQ6oAXaRhaP3L8tnwaXyT.gif

নিজেকে নিয়ে কিছু কথা

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।

আমার ব্লগটির সাথে থাকার জন্য এবং ধৈর্য সহকারে আমার ব্লগটি পড়ার জন্য সবাই কে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। সেই সাথে সবার প্রতি আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

image.png

image.png

Sort:  
 9 months ago 

ছোটবেলার বন্ধু এবং ছোটবেলার স্মৃতিগুলো সত্যি ভুলতে চাইলেও কখনোই ভুলা যায় না।
আপনাদের তিন বান্ধবীর কদবেল চুরি করে খাওয়ার গল্প পড়ে সত্যি ভালো লাগলো।
আসলে আমাদের শৈশবে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যেগুলোর কিছু মনে আছে হয়তো অধিকাংশই ভুলে গিয়েছি তারপরও এগুলো যেন ফিরিয়ে নিয়ে যায় আবার সেই যুগে।

 9 months ago 

আমিও কিন্ত ভুলে গেছি। কিন্তু যতটুকু মনে আছে সেটাই শেয়ার করার চেষ্টা করছি। ধন্যবাদ সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

 9 months ago 

দারুন গল্প পড়তে পারলাম আপনার আজকের পোষ্টের মধ্যে। আসলে উঠতি বসে ছেলে মেয়েরা এমন একটু চুরি চামারি করেই থাকে। কারণ এগুলো এক প্রকার দুষ্টামিও আনন্দ লাগা। আর লক্ষ্য করা যায় অনেকের মধ্যে একজন বেশি শয়তান থেকে থাকে ঠিক পলাশ না হয় তেমনটা। অবশ্য আমাদের এদিকে কৎবেল ছিল না কোন সময় বেল পাওয়া যায়। যাই হোক ভালো লাগলো

 9 months ago 

একেবারে ঠিক বলেছেন ভাইয়া। পলাশ ছিল দুষ্টুর শিরোমনি। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।

 9 months ago 

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 58560.83
ETH 2491.85
USDT 1.00
SBD 2.40