শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি - "খেলতে গিয়ে মারামারি" II written by @maksudakawsarII

in আমার বাংলা ব্লগ10 months ago

আসসালামু আলাইকুম

শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি
"খেলতে গিয়ে মারামারি"

শুভ দুপুর ভালোবাসার আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি পরিবার। সকলের সুস্থ জীবন, সুস্থ মন আর সুস্থ দেহ কামনা করে আজ আবার চলে আসলাম নতুন আরও একটি ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে । স্মৃতি হয়তো বেদনাময়, নয়তো আনন্দের। আর সেই স্মৃতি যদি হয় জীবনের ছেলেবেলার তাহলে তো কথাই নেই। ছেলেবেলার সেই সব মধুর স্মৃতি কিন্তু আজও কেউ ভুলতে পারেনি। আর পারবেও না। আমি কিন্তু আজও ভুলতে পারিনি সেই স্মৃতিগুলো। মাঝে মাঝে যখন একা একা থাকি বা কারো সাথে সেই ছেলেবেলার গল্প করতে বসি তখন নিজের অজান্তেই অনেক স্মৃতি বেড়িয়ে আসে মনের গভীর হতে।

ছেলেবেলার এমন কিছু কথা আছে যে গুলো মনে হলে নিজে নিজেই খিটখিট করে হাসি। আর হাসবোই না কেন বলেন তো? এমন সুন্দর ছেলেবেলা যার আছে সে কি কোন ভাবে চুপ থাকতে পারে। তবে এখনকার এ সময়ে কিন্তু আমাদের সেই ছেলেবেলা খুঁজে পাওয়া যায় না। যায় না খুঁজে পাওয়া সেই আনন্দ। তবে আজকাল কিন্তু ছেলেবেলার সেই স্মৃতিগুলো বেশ অনায়াসে আপনাদের সাথে শেয়ার করা যায়। আমাদের @rme দাদা আমাদের কে সেই ছেলেবেলার স্মৃতিগুলো তুলে ধরার সুযোগ করে দিয়েছে। আর এ জন্য সম্মানিত ফাউন্ডার @rme দাদার প্রতি আমি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তাই তো আজও আসলাম আপনাদের মাঝে ছেলেবেলার নতুন কিছু স্মৃতি নিয়ে। আশা করি আমার আজকের স্মৃতিগুলোও আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।

robert-collins-tvc5imO5pXk-unsplash.jpg

source

এখনকার বচ্চারা বেশ অভাগা। কারন এখনকার বাচ্চারা তেমন কোন খেলার সাথে পরিচিত নয়। আর আমাদের সময়ে আমরা কত রকমের যে মজার মজার খেলা খেলতাম তার হিসাব দিতে গেলে পুরোটা দিনই যেন শেষ হয়ে যাবে। কত যে মজার দিন ছিল সেই দিন গুলো। মাঝে মাঝে মনে হয় সেই দিন গুলিতে আবার ফিরে যাই। ঘুরে আসি ছেলেবেলার সোঁনালি সেই দিন গুলোর মাঝখান হতে কিছুটা সময়। মনে হয় বেশী দিনের কথা নয়, এই তো সেদিনকার কথা। সমবয়সি সবাই মিলে বৌচি, কুতকুত, দাঁড়িয়া বান্ধা, লুকোচুরি, চোর পুলিশ এবং ইচিংবিচিং সহ আরও কত যে মজার মজার খেলা খেলতাম। আর খেলতে খেলতে কখন কখনও নিজেদের মাঝে লেগে যেত বিরাট মারামারি। আর মারামারি করে হাত পা ছিলেনি এমন কোন দিন নেই।

কখনও যদি কোন খেলায় কেউ চুরি করতো তার সাথে হয়ে যেত এক হাত। দিন শেষে শরীরের নানা জায়গায় খোঁজ করলে যে কত গুলো খামচির দাগ দেখা যেত। আর এই দাগ গুলো যখন মায়ের চোখে পড়তো তখন মাও আবার দিত ধুরুম ধরুম মাইর। কি যে যন্ত্রণায় যেত সেই দিনগুলি। একদিকে সহপাঠির চুল ছিড়া, খামচি। আর অন্য দিকে মায়ের হাতের মাইর।তারপরও পরদিন আবার খেলতে যেতাম। আবার মিল হয়ে যেতাম সবার সাথে। তো এর মধ্যেই একদিন ঘটে গেল বিরাট এক মারামারি। আর হবেই না কেন বলেন তো? ইচিং বিচিং খেলতে যেয়ে আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল। তার সাথে ডান পায়ের হাটুঁর নীচে বিরাট কেটে গিয়েছিল। অনেক রক্ত পড়েছিল। আজও সেই দাগটি আছে।

তখন আমাদের স্কুল বন্ধ। তো আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম সেদিন আমরা সবাই ইচিং বিচিং খেলবো। তাই আমরা সেই ভাবেই বিকেলে সবাই বের হই কোয়াটারের খেলার মাঠে। তারপর টস করা হয় কে আগে বসবে। এরপর আমাদের খেলা শুরু হয়। এই খেলার একটি নিয়ম ছিল যে বসে থাকবে সে এক পায়ের উপর আরও একটি পা রাখতো তারপর সেই দু পায়ের উপর একে একে দু হাতের দশ আঙ্গুল রাখতো। মানে পাচঁ আঙ্গুলের উপর আরও পাচঁ আঙ্গুল। তো আমরা একে একে সেই হাতের উপর দিয়ে লাফ দিয়ে দিয়ে যাচিছলাম। অবশ্য যে বসেছিল তার সাথে আমাদের কয়েকজনের এর আগে একদিন মারামারি হয়েছিল। তো আমি যখন লাফ দিতে গেলাম সে হঠাৎ করে তার দু পা উপরে তুলে দিলো। আর তার পায়ের সাথে লেগে আমি তো বহুদূরে ছিটকে গেলাম। সাথে সাথে একদিকে আমার মাথায় আঘাত লাগলো। আর অন্যদিকে আমার হাঁটুর নিচেও কেটে গেল।

অনেক রক্ত ক্ষরণ হতে লাগলো তখন। আমার এই অবস্থা দেখে আমার অন্য সহপাঠিরা তো রেগে আগুন। তারা যেয়ে সেই মেয়েটিকে চুল ধরে তো বেদম পেটানো শুরু করে দিল। কারন তারা বুঝতে পেরেছে যে সেই মেয়েটি এটা ইচ্ছা করেই করেছে। তারপর সেই মেয়ের চিৎকার শুনে তার বড় ভাই আর বোন তেড়ে আসলো । আর আমার সহপাঠিদের বেদম মারলো। আচ্ছা এই অবস্থা দেখে কি কেউ বসে থাকতে পারে। তখন সবার ভাইবোনরা দৌড়ে এলো। হায় হায় কি যে মারামারি লেগে গেল। কেউ নেয় লাঠি আর কেউ নেয় খুনতি। হাতাহাতি আর মারামারি। সেই সাথে তো আছে চিল্লা চিল্রি। আমি কিন্তু ততক্ষনে পাশের একটি ডাক্তার খানায়। যখন আমার বেন্ডেস হয়ে গেল তখন আমি ফিরে আসলাম আমাদের সেই মাঠে। মানুষ আর মানুষ ততক্ষনে মাঠ ভরে গেছে। কোয়াটারের মানুষ আর মুরব্বীরা এসেছে তখন সবার ঝগড়া মিমাংসা করতে।

কিন্তু কেউ কাউকেই মানে না। তারা সবাই সবার বিচার চায়। কিন্তু মুরব্বীরা কার বিচার করবে? সবাই তো মারামারি করেছিল। সবাই চায় মাইরের বদলে মাইর। প্রায় দুই ঘন্টা বিচার শালিশ করে অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো যে এখন থেকে মাঠে আর কোন ছেলেমেয়ে খেলতে পারবে না। যার যার ছেলেমেয়ে কে তার সামলাতে হবে। সেই থেকে বেশ কিছুদিন আর খেলাধুলা করতে পারিনি। কারন তখন কেউ আর কারো ছেলেমেয়ে কে খেলার জন্য বাহির হতে দেয় না। আর সেই দিনগুলি বেশ কষ্ট হচ্ছিলো আমার। কারন আমি ছিলাম খেলার পাগল।

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো কিছুদিন পার না হতেই, যে আমার মাথা ফাটিয়েছে আর পা কেটেছে তার সাথেই কুত কুত খেলা শুরু করে দিলাম। আর আমার দেখা দেখি একে একে সবাই আবার চলে আসলো খেলা করতে। আচ্ছা আপনারাই বলেন, এভাবে কি না খেলে থাকা যায়? খেলার জায়গায় খেলা আর মারামারির জায়গায় মারামারি।তারপর আমরা আবার শুরু করে দিলাম আমাদের সেই প্রিয় খেলাগুলো। কথায় তো আছে -বণ্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।

আজ এখানেই শেষ করছি। আবার আসবো আপনাদের মাঝে নতুন করে নতুন কোন ব্লগ নিয়ে। সকলের সুস্থ্তা কামনা করে বিদায় নিচ্ছি। কেমন লাগলো আমার আজকের শৈশবের কাহিনী। আপনাদের সুন্দর সুন্দর মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।

❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️

image.png

Add a heading (1).png

image.png

image.png

Sort:  
 10 months ago 

একটা সময় ভাবতাম যে কবে বড় হব। অনেক আনন্দ হবে মজা হবে কিন্তু আমাদের সব থেকে শৈশবের সময়টা অনেক সুন্দর মুহূর্ত কাটে। বড় হলে আবার আমরা শৈশবে ফিরে যেতে চাই কিন্তু বাস্তবতা অনেক কঠিন। চাইলেও আর ফিরে আসতে পারি না। আপনি ঠিকই বলেছেন খেলতে গেলে অনেক সময় মারামারি হয় কিন্তু দিনশেষে আবার আমরা এক হয়ে যায় খেলাধুলার মধ্যে। আপনার মত আমরাও ভাই টস নিয়ে মারামারি করতাম। যার ব্যাট বল সে আগে ব্যাট করবে বল করবে আগে ওপেনিং উঠবে এই মুহূর্তটা মিস করি ভাই। যাই হোক আপনার শৈশবটা অনেক সুন্দর ছিল

Posted using SteemPro Mobile

 10 months ago 

জ্বী ভাইয়া সত্য কথা, আগের শৈশবটা বেশ সুন্দর ছিল। ধন্যবাদ সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

 10 months ago 

আসলে ছোটবেলায় আমরা অনেক ধরনের খেলাধুলা করেছি। পাশাপাশি বন্ধুদের সাথে কত রকম মারামারি হুড়োহুড়ি লেগে থাকত তার কোন শেষ নেই। তবে সেই অতীতের স্মৃতিগুলো স্মরণ করে আজকে আপনি আমাদের মাঝে অনেক সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন তাই পড়ে অনেক ভালো লাগলো আমার। যখনই কাউকে দেখি অতিত স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দেয় বেশ ভালো লাগে

 10 months ago 

ধন্যবাদ ভাই আপনাকে আমার শেয়ার করা পোস্টটি পড়ার জন্য।

 10 months ago 

ইচিং বিচিং খেলার নামটি আমার কাছে নতুন মনে হচ্ছে ,হয়তো আমরা অন্য নামে খেলতাম খেলাটি।আসলেই শৈশব জীবন অনেক সুন্দর হয়।তাছাড়া আপনার মাথা ফেটে গিয়েছিল জেনে খারাপ লাগলো। মারামারির জন্য খেলা বন্ধটা সত্যিই বাচ্চাদের জন্য কষ্টের,ধন্যবাদ আপু।

 10 months ago 

হুম হয়তো বা আপনারাও খেলেছেন এই খেলাটি, তবে সেটা অন্য নামে। ধন্যবাদ ‍সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.031
BTC 61236.82
ETH 2672.65
USDT 1.00
SBD 2.61