নিঃশ্বব্দ ভালবাসার হাহাকার প্রথম পর্ব
আসসালামু আলাইকুম
আজ বুধবার, ২লা নভেম্বর, ২০২২ ইং
বাংলা ১৬ই কার্তিক ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
কেমন আছেন সবাই বন্ধুরা? আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় বেশ ভাল আছি।
আপনারা হয়তো বা জানেন যে আমি ভ্রমন, ফটোগ্রাফি,রেসিপি, রিভিউ ও গল্প লেখাসহ প্রায় সব ধরনের পোস্ট করে থাকি। কারন আমি প্রতিটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে চাই। ছেলেবেলা থেকেই মাঝে মাঝে আমি গল্প লেখতাম। আর আজ আমি আমার বাংলা ব্লগের একজন ভেরিফাইড মেম্বার। তাই ভাবছি আজ একটি রোমান্টিক গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
বন্ধুরা, আমার আজকের গল্পটিকে আমি পর্ব ভিত্তিক করে নিয়েছি। গল্পটির মধ্যে একটি মেয়ের নিঃশব্দ ভালবাসার হাহাকার আপনারা দেখতে পাবেন। আর সেই নিঃশব্দ ভালবাসার হাহাকার কি জানতে হলে আপনাদের কে অবশ্যই আমার আজকের গল্পটি পড়তে হবে। আর আমি জানি গল্পটি পড়লে আপনাদের খারাপ লাগবে না।
তাহলে চলুন বন্ধুরা দেখে আসি নিঃশব্দ ভালবাসার হাহাকার কেন-।
নিঃশব্দ ভালবাসার হাহাকার প্রথম পর্ব
স্বপ্না পড়াশুনা শেষ করে একটি সরকারি চাকুরীতে প্রবেশ করে। যদিও চাকুরী করা স্বপ্নার পছন্দ না। স্বপ্না চায় নিজে স্বাবলম্বি হতে। তবুও পরিবারের কথা ভেবে তাকে চাকুরীতে প্রবেশ করতে হয়। বাবা হারা পরিবার কে সহায়তা করার জন্য তেমন কেউ না থাকায় স্বপ্না তাদের একমাত্র ভরসা। এদিকে পরিবার আর অফিস করতে করতে বিয়ের বয়সও প্রায় পার হয়ে যাচ্ছে। সমাজের মানুষ, অফিসের কলিগরা তাকে নিয়ে প্রচুর আলোচনায় মেতে উঠে। এই স্বপ্নার পরিবার তার রুজি খাওয়ার জন্য তার বিয়ের কথা ভাবে না। আরও অনেক কথা।
জীবনে অনেক ভাল ভাল প্রস্তাব পেয়েছে স্বপ্না । কিন্তু পরিবারের কথা ভেবে স্বপ্না প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছে। অনেক ছেলের হয়ত অভিশাপ আছে স্বপ্নার জীবনে। তবুও স্বপ্না এরই মাঝে নিজেকে নিয়ে ছুটে চলছে এক অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। কখনও যে বিয়ে করতে হবে এটা শুধু স্বপ্নার কল্পনাতেই রয়ে যায়। এরই মধ্যে পরিবার থেকে চাপ আসে স্বপ্না কে বিয়ে করতে হবে। এইজন্য স্বপ্নার পরিবার তার জন্য যোগ্য পাত্র খোঁজা শুরু করে। এমনকি পরিবার হতে স্বপ্নার অফিস কলিগদের কে ও বলা হয় স্বপ্নার জন্য ভাল ছেলে দেখতে। আর স্বপ্নার অফিস কলিগরাও তাকে বেশ পছন্দ করে। তাই তারাও বিষয়টি আমলে নিলো।
হঠাৎ একদিন ছুটির দিনে স্বপ্নার অফিসের একজন কলিগ স্বপ্নাদের বাসায় যায় এবং স্বপ্নার পরিবারের সাথে কথা বলে স্বপ্নার বিয়ের বিষয়ে। ছেলেটি স্বপ্নার অফিস কলিগের বিয়াই। প্রায় দশ বছর যাবৎ ছেলেটি ইটালী প্রবাসী। অফিস কলিগ আরও জানান ছেলেটি শিক্ষিত ও ভদ্র। এরপর অফিস কলিগ ছেলেটির একটি ছবি স্বপ্নার পরিবার কে দেন। সবকিছু শুনে স্বপ্নার পরিবার এর কাছে ছেলেটি কে ভালই লাগে। তাই স্বপ্নার পরিবার ছেলেটির পরিবারের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তারপর দুই পরিবারের আলাপ চারিতায় সিদ্বান্ত হয় যে ছেলেটি ডিসেম্বরে দেশে আসলে আগে দুজন দুজনকে দেখবে তারপর যদি তাদের আপত্তি না থাকে তাহলে ডিসেম্বরেই বিয়ের কাজ সম্পন্ন হবে।
এরই মধ্যে একদিন স্বপ্নার অফিস কলিগ স্বপ্নাকে বলে ছেলেটি নাকি স্বপ্না কে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। স্বপ্না যেন এক্সসেপ্ট করে। স্বপ্না রাতে বাসায় যেয়ে ফ্রি হয়ে ছেলেটির প্রোফাইল চেক করে। কিন্তু তার রিকোয়েস্ট এক্সসেপ্ট করে না। স্বপ্না ভয় পায়। আজকাল যে যামানা। এভাবে কয়েকটা দিন কেটে যায়। স্বপ্না আর ছেলেটির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সসেপ্ট করে না। স্বপ্নার কলিগ আবার তার কাছে আসে এবং স্বপ্না কে বলে আরে ভাই সমস্যা কি রিকোয়েস্ট গ্রহণ করলে তো আর সব হয়ে যাচ্ছে না। দুইজনের মাঝখানে জানাশোনা হলে পরবর্তী সময়ে আর সমস্যা হবে না। তারপর ডিসেম্বরে তো ও দেশে আসছে। স্বপ্না বিষয়টি তার পরিবার এর সাথে শেয়ার করে এবং পরিবারের সবার সম্মতিক্রমে ছেলেটির রিকোয়েস্ট এক্সসেপ্ট করেন।
অফিস থেকে বাসায় ফিরে রাতে খাওয়ার পর এক আধ ঘন্টা ফেসবুকে একটু চোখ রাখে স্বপ্না। হঠাৎ একদিন স্বপ্নার ফেসবুক মেসেঞ্জারে একটি মেসেজ আসে। আমি হাসান, ইটালি থেকে বলছি। আমি আপনার কলিগ রিয়াজ ভাইয়ের রিলেটিভ। কেমন আছেন আপনি? এই মেসেজটা দেখে স্বপ্না খুব অবাক হয়। আর একটু রাগও করে। তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিন একটা করে মেসেজ স্বপ্নার মেসেঞ্জারে আসে। এদিকে এসব কথা স্বপ্না তার পরিবার কে জানালে তারা বলে সমস্যা কি দেখ কি বলতে চায়। ভাল হলে খারাপ কি?
এরপর থেকে স্বপ্নার সাথে হাসানের মেসেঞ্জারে চ্যাট করা, ছবি আদান প্রদান চলতে থাকে । এভাবে বেশ কিছুদিন চলে যায়। হঠাৎ একদিন হাসান স্বপ্না কে মেসেজ পাঠায়, ”যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই।’’ স্বপ্না ভাবে কি বিষয় লোকটা এমন শুরু করছে কেন? স্বপ্না এই বিষয়টাও তার পরিবার কে জানায়। কারন স্বপ্নার কাছে সবার আগে তার পরিবার। সে কিছুতেই চায় না যে তার পরিবার তার জন্য কোন রকম কষ্ট পাক। এসব কথা শুনে স্বপ্নার পরিবারের লোকজন বলে সমস্যা কি কথা বলে দেখ কি বলতে চায়? রাতে হাসান স্বপ্না কে আবার মেসেজ পাঠায় যে ”আমি একটু আপনার সাথে কথা বলতে চাই। আমাকে একবার কথা বলার অনুমতি দেন।” স্বপ্না তখন হাসান কে রিপ্লাই করে যে, ঠিক আছে আগামী কাল দুপুরে লাঞ্চ আওয়ারে ফোন দিবেন।
পরদিন দুপুরে স্বপ্না আগে আগে লাঞ্চ করে অফিসের ছাদে চলে যায়। কারন অফিসের লোকজন ভাল না। তারা আবার কি বলে বসে। কিছুক্ষণ পর স্বপ্না মেসেঞ্জারে একটি ফোন আসে। স্বপ্না ফোনটি রিসিভ করার সাথে সাথে তার সমস্ত দেহ যেন শিউরে উঠে। কারন ওপাশ হতে এমন মিষ্টি একটি কন্ঠ ভেসে আসলো, স্বপ্নার মনে হলো জীবনে প্রথম হয়তো সে এ রকম কন্ঠ শুনলো। ওপাশ থেকে বার বার বলছে-”কেমন আছেন আপনি? কেমন আছেন আপনি?” কিন্তু স্বপ্না স্তব্দ হয়ে গেল কোন কথা বলছে না। বেশ কিছুক্ষণ পর স্বপ্না নিজেকে ফিরে পেল। দেখলো ফোনের ওপারে কে যেনো কথা বলছে। এবার স্বপ্না উত্তর দিল ”ভাল, আপনি কেমন আছেন”। তারপর শুরু হলো তাদের মাঝে কথাবার্তা।
এরপর থেকে হাসান প্রতিদিন স্বপ্নাকে লাঞ্চ আওয়ারে ফোন করে। না স্বপ্না কিছুই বলে না। স্বপ্না লক্ষ্য করলো হাসানের কথায় কি যেন এক মায়া আছে। এভাবে দিনের পর দিন যায়। এখন স্বপ্না প্রতিদিন লাঞ্চ আওয়ার আসার আগেই সব কাজ শেষ করে হাসান এর ফোন এর অপেক্ষায় থাকে। আর স্বপ্না ও হাসান সিদ্ধান্ত নেয় যে, দেশে ফিরে তারা প্রথমে দুজন দুজনকে দেখবে। আর এরজন্য হাসান দেশে ফিরে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার আগে স্বপ্নার সাথে দেখা করবে। স্বপ্না লক্ষ্য করলো ছেলেটির প্রতি তার একধরনের মায়া পড়ে যাচ্ছে। তাই সে তার পরিবারের সাথে এ বিষয় নিয়ে কথা বলে। স্বপ্না তার পরিবার কে জানিয়ে দেয় যে, তার কাছে ছেলেটি কে ভাল লেগেছে। তবে ছেলেটি দেশে ফিরলে তারপর ফাইনাল সিদ্ধান্ত হবে।
নভেম্বর মাস চলছে। দিন যতই যাচ্ছে হাসানের দেশে আসার সময় তত ঘনিয়ে আসছে। তাই দেশে আসার আগে হাসান তার বিয়ের সমস্ত কেনাকাটা ইটালি থেকে করে আনতে চায়। এই জন্য হাসান কসমেটিক্স থেকে শুরু করে বিয়ের যাবতীয় কিছু কেনার আগে প্রতিদিন স্বপ্নার সাথে আলোচনা করে নেয়। আর স্বপ্নার পছন্দ মতই বিয়ের সব কেনাকাটা করা হয়।
এভাবে ডিসেম্বর মাস ঘনিয়ে আসে। হাসান স্বপ্নাকে জানায় তার টিকেট হয়ে গেছে। সে ১২ই ডিসেম্বর ঢাকায় পৌঁছবে। ১৩ই ডিসেম্বর স্বপ্নার সাথে দেখা করবে। আর ১৪ই ডিসেম্বর সে গ্রামের বাড়ি তার মায়ের কাছে যাবে।
কিন্তু এদিকে স্বপ্নার বাড়িতে ঘটলো আর এক কাহিনী। সব কিছু যখন প্রায় ঠিক। তখন স্বপ্নার বড় বোন গেল বেকে। না সে কোন ভাবেই তার বোন কে কুমিল্লার ছেলের সাথে বিয়ে দিবে না। কারন কুমিল্লার একটি ছেলের সাথে স্বপ্নার বোনের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ছেলেটি তার সাথে প্রতারণা করেছে। তাই সবকিছু জানার পর স্বপ্নার বড় বোন তার মা কে বলে দিলো যে, যদি তোমরা এখানে মেয়ে বিয়ে দাও, তাহলে আমি আর তোমাদের সাথে যোগাযোগ রাখবো না। এদিকে স্বপ্না তো হাসানের সাথে দেখা করার জন্য উদগ্রীব। আর স্বপ্না তো জানে এখানে তার বিয়ে হবে। কিন্তু কি আর করবে স্বপ্না। এদিকে হাসানের আসার ডেট তো ফাইনাল।
বন্ধুরা তাহলে স্বপ্না এখন কি করবে? সে কি হাসানের সাথে দেখা করবে? আপনাদের কি মনে হয়? জানতে চান ? তাহলে এই গল্পের আগামী পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন।
আপনারা সবসময় প্রাণবন্ত, ভাল ও সুস্থ্য থাকুন।
আমার মনে হয় স্বপ্না হাসানের সঙ্গে দেখা করবে । কারন হলো স্বপ্না হাসানকে পছন্দ করে ফেলেছে। তবে তাদের সম্পর্ক নিয়ে বড় ধরনের একটা ঝামেলা হবে।
যাই হোক গল্পটা বেশ ভালোই হবে সামনের দিকে আমার মনে হচ্ছে। তবে স্বপ্নার মতো পরিবারের খেয়াল রাখা মেয়ে এখন পাওয়া দুষ্কর। ভালো লিখেছেন আপু।
ধন্যবাদ ভাই এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য আর আমাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য। দেখা যাক সামনে পড়বে কি হয়।
যেহেতু স্বপ্না তার প্রত্যেকটা পদক্ষেপে পরিবারের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এক্ষেত্রে আমার মনে হয় স্বপ্না পরিবারের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবে না। তবে আবার এই ক্ষেত্রে এটাও মনে হচ্ছে যে যেহেতু সে প্রত্যেকটা পদক্ষেপই পরিবারের সাথে আলোচনা করে করেছে এমন একটা সময় পরিবারের এমন সিদ্ধান্ত সে কোনভাবেই মেনে নিতে পারবে না। যাইহোক আপু ভালই লিখেছেন পড়ে ভালো লাগলো। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
ভাইয়া আপনি দেখছি দুই দিকেই ভাবছেন? তাহলে দেখা যাক সামনে পড়বে কি হয়।
আমার মনে হচ্ছে স্বপ্না যে কোন মূল্যে দেখা করবে। কারণ সে তো তাকে মন থেকে পছন্দ করে ফেলেছে। মনে হচ্ছে ঝামেলা হবে কিন্তু আশা করছি সবকিছু ভালো ভাবে সম্পন্ন হবে। সুন্দর লিখেছেন আপু। পরবর্তীতে কি হয়েছে জানার জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
ধন্যবাদ ভাইয়া আমাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য। তবে আপনার আমার পাশে থাকলে আমি আর ভালো করতে পারব ইনশাল্লাহ। আর দেখা যাক আগামীতে সপ্নার ভাগ্যে কি আছে।
আপু গল্পের প্রথম দিকে তো স্বপ্নার কোন বড় বোনের কথা জানতাম না। গল্পের শেষে বড় বোন এসে জামেলা বাধিয়ে দিলো। কুমিল্লার কোন ছেলের সাথে বড় বোনের সম্পর্ক থাকলে কি হয়ছে। সবাই তো খারাপ না। আমার মনে হয় স্বপ্না হাসানের সাথে দেখা করবে। তবে সন্দেহ হচ্ছে হাসানই স্বপ্নার বড় বোনের এক্স বয়ফ্রেন্ড কিনা। ধন্যবাদ আপু পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
ভাইয়া আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। গল্পের প্রয়োজনেই সপ্নার বড় বোনকে পরে দেখানো হয়েছে। দেখা যাক সামনের পড়বে কি হয় আপনার ধারণা কতটুকু সত্য হয়।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম দিদি। স্বপ্না এবং হাসানের সম্পর্ক পূর্ণতা পাক এটাই আশা করি। পরের পর্বে যেনো দেখতে পাই ওদের সাক্ষাৎ হয়েছে। আসলে যে কোন ভালোবাসার গল্পে হ্যাপি এন্ডিং টাই দেখতে ভালো লাগে।
জি দিদি একটু অপেক্ষা করুন
গল্পটা বেশ ভাল লাগলো। স্বপ্না মনে হয় হাসানের সাথে দেখা করবে। কারন ভালবেসেছে যখন, তখন দেখা করার আগ্রহ ত হবেই। তবে সামনে আর কি অপেক্ষা করছে, তাই ই ভাবছি 🤔 অনেক ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। অনেক অভিনন্দন আপনাকে। ভাল থাকবেন।
ধন্যবাদ আপু। আপনি তো দেখি স্বপ্না আর হাসানকে নিয়ে অনেক কল্পনা করছেন। কিভাবে ঘটানো যায়। অপেক্ষায় থাকুন একটু কষ্ট করে।