গল্প পোস্ট-ভালোবাসি হয়নি বলা || written by@maksudakar ||
আসসালামু আলাইকুম
আসসালামু আলাইকুম
শুভ সকাল আমার প্রাণ প্রিয় কমিউনিটির পরিবারের সকল কে। আজও আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য এবং সুন্দর জীবন কামনা করে শুরু করতে যাচ্ছি আমার আজকের ব্লগটি। জীবন এক সময় ফুরিয়ে যাবে। কিন্তু জীবনের স্মৃতিগুলো রয়ে যাবে স্মৃতি হয়ে। জীবনের স্মৃতিগুলো আমাদের সাথে এমন ভাবে মিশে থাকে যে আমরা চাইলেও তাকে ভুলতে পারি না। বা সে সকল স্মৃতি কে ভুলে যাওয়া যায় না। আর এমন সব স্মৃতিগুলো নিয়েই যুগে যুগে গল্প, উপন্যাস, গান আর কবিতা রচনা করা হয়।
ভালোবাসা চিরন্তন, ভালোবাসা অবিনশ্বর। চাইলেও ভালোবাসা কে অস্বীকার করা যায় না। তবে ভালোবাসার কিন্তু রয়েছে প্রকারভেদ। ভালোবাসা শুধু স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, নয় সীমাবদ্ধ প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যে। ভালোবাসা হতে পারে বন্ধুর জন্য বন্ধুর, হতে পারে ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের। অথবা অন্য কোন রকমের। বন্ধুরা আজ আমি তেমনি একটি ভিন্ন রকমের ভালোবাসার গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হলাম। আশা করি আমার আজকের গল্পটিও আপনাদের বেশ ভালো লাগবে। ছুয়েঁ দিবে আপনাদের মন কে কিছু সময়ের জন্য।
রাত্রি আর নিলয়। ছেলেবেলা থেকেই এক সাথে খেলাধুলা করতে করতে বড় হয়েছে। এমন কি পড়াশোনাটাও একই সাথে হয়েছে তাদের। রাত্রি ছেলেবেলা হতেই বেশ মেধাবী একজন ছাত্রী। বাবা মায়ের ইচেছ বড় হয়ে রাত্রি দেশের একজন সুনামধন্য ডাক্তার হবে। আর বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে রাত্রি পড়াশোনায় বেশ মনোনীবেশ প্রদান করে। এদিকে কাছে ধারে ভালো কোন বিদ্যালয় না থাকায় রাত্রি নিলয়ের সাথে একই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। তাই রাত্রি আর নিলয় একই সাথে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যায়। আবার একই সাথে বাড়ি ফিরে। আর এভাবেই চলে যাচ্ছিল তাদের পড়াশুনার জীবন। এক সময়ে দেখতে দেখতে দুজনেই নবম শ্রেণীতে পা রাখে। রাত্রি তার বাবা মায়ের স্বপ্ন অনুযায়ী বিজ্ঞান বিভাগে চলে যায়। আর রাত্রির দেখা দেখি নিলয়ও তাই করে। অথচ ক্লাসের বেশীর ভাগ ছেলেমেয়েরাই মানবিক বিভাগে চলে যায়। এদিকে ক্লাস নাইনে উঠার পর রাত্রি নিজেকে শুধু পড়াশোনায় ব্যস্ত রাখতেই পছন্দ করে। অন্যদিকে তার কোন মনযোগ নেই।
এক সময়ে দেখতে দেখতে তাদের এস এস সি পরীক্ষা চলে আসে। রাত্রি কোন প্রাইভেট কোচিং করে না। তবে বাসায় তার একজন ভালো শিক্ষক আছে। এদিকে নিলয় বেশ কয়েক জায়গায় কোচিং করে। আর সে সমস্ত কোচিং এর নোটস্ এনে রাত্রি কে দেয়। কিন্তু রাত্রি বাহিরের নোটস্ না পড়ে নিজের করা নোটস্ দিয়েই পড়াশোনা করে। দেখতে দেখতে এস এস সি পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। এবার রাত্রি কে ভালো একটি কলেজে ভর্তি হতে হবে। তাই সে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দেয়। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাড়াঁয় নিলয়। এস এস সি পরীক্ষার পড়ে নিলয় বেশীর ভাগ সময়ই রাত্রির কাছে চলে আসে। তার সাথে গল্প করে। কিন্তু রাত্রি এগুলো চায় না। কারন নিলয় কে সে বন্ধু হিসাবেই দেখতে চায়। আর তাই রাত্রির মনে হয় না যে নিলয়ের সাথে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোন গল্প করার প্রয়োজন আছে।
এদিকে রাত্রির প্রতি নিলয়ের দৃষ্টি ভঙ্গি দিনে দিনে পরিবর্তন হতে থাকে। নিলয় এখন রাত্রি কে অন্য চোখে দেখে। নিলয়ের কাছে রাত্রি এখন তার স্বপ্ন। রাত্রির প্রতি তার কেমন যেন একটি অন্য রকমের ভালোবাসার জন্ম নেয়। প্রতিদিন দুই একবার রাত্রিকে না দেখলে নিলয়ের ভালো লাগে না। তাই প্রতিদিন বিভিন্ন অজুহাতে নিলয় রাত্রির কাছে আসে। কখনও গল্পের বই নিয়ে আসে। আবার কখনও বা রাত্রির কিছু প্রিয় গানের রেকডিং ক্যাসেট করে নিয়ে আসে। কিন্তু নিলয়ের এ সমস্ত বিষয় গুলো রাত্রি বুঝতে চায় না। এমন কি নিলয় মাঝে মাঝে গল্পের বইয়ের মধ্যে রাত্রি কে দুই একটি চিঠিও দেয়। যেখানে রাত্রির প্রতি নিলয়ের ভালো লাগার কথা গুলো ইনডাইরেক্ট বলা থাকে। কিন্তু রাত্রি চিঠি পড়েও এ এ সমস্ত বিষয় গুলো বুঝতে পারে না। আর পারবেই বা কেমন করে ? রাত্রি তো বই ছাড়া আর কিছুই বুঝে না। আর এভাবেই যেতে থাকে দিনের পর দিন।
এক সময়ে নিলয় বেশ বিরক্ত বোধ করে। সে হাজার চেষ্টা করেও রাত্রি কে তার মনের কথাগুলো বুঝাতে পারেনি। ধীরে ধীরে সময় চলে যায়। দুজনে কলেজে ভর্তি হয়। নিলয় চাইলেও রাত্রি আর একই কলেজে নিলয়ের সাথে ভর্তি হয়নি। রাত্রি একটি সুনামধন্য বেসরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হয়। আর বেসরকারি কলেজে পড়াশোনার চাপ এত বেশী যে সে এখন আর নিলয় কে তেমন সময় দিতে পারে না। অথচ নিলয় প্রতিদিন রাত্রির বাসায় এসে তার সাথে এতটুকু কথা বলার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে চলে যায়। আর রাত্রির এমন সব অবহেলায় কেটে যায় নিলয়ের জীবন। একদিন নিলয় নিজ থেকেই রাত্রির সাথে কথা বলার চেষ্টা করে। সেদিন রাত্রি নিলয় কে বেশ অপমান করে। রাত্রি নিলয় কে সময়ের মূল দিতে বলে। পড়াশোনা করতে বলে। আর রাত্রির কাছে এমন সব পন্ডিতি কথা শুনে নিলয়ের ভালো লাগেনি। কি করবে নিলয়? সে না পারছে রাত্রিকে ছাড়তে, আর না পারছে নিজেকে পরিবর্তন করতে। আর এভাবেই কষ্ট করে আর রাত্রির দেওয়া অবহেলা সহ্য করে নিলয়ের দিন যায়।
এদিকে দেখতে দেখতে নিলয় এবং রাত্রি দুজনেই এখন এইচ এস সি পাশ করে গ্র্যাজুয়েশন করছে। রাত্রির আর ডাক্তারি পড়া হয় না। কারন ডাক্তারি পড়তে হলে ভালো ভালো টিচারের কাছে পড়তে হবে। আর রাত্রির মত এত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে এত এত টাকা সংগ্রহ করাও সম্ভব নয়। তাই রাত্রি বাধ্য হয়ে কমার্স নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে দেয়। এদিকে নিলয়ও রাত্রির মত কমার্স নিয়ে পড়াশোনা করে। আজও রাত্রি কে নিলয় সেই একই ভাবে ভালোবাসে। যদি কোন দিন রাত্রির বোধদয় হয়। কিন্তু না রাত্রি একেবারেই অবুঝ। একদিন রাত্রির এক স্কুল জীবনের বান্ধবী আসে রাত্রির সাথে দেখা করতে। সে রাত্রিকে বিভিন্ন কথার এক পর্যায়ে নিলয়ের কথা বলে। এমন কি নিলয় যে তাকে পছন্দ করে তাও বলে। কিন্তু রাত্রি তার সেই বান্ধবী কে পরিস্কার জানিয়ে দেয় যে সে নিলয় কে ভালোবাসে না। তাকে জাস্ট বন্ধু হিসাবে জানে। নিলয় কে সে কখনও এমন দৃষ্টিতে দেখেনি।
এদিকে সেই বান্ধবীর মুখে এসব কথা শুনে নিলয় বেশ কষ্ট পায়। সে ধীরে ধীরে রাত্রির কাছে যাওয়া কমিয়ে দেয়। কিন্তু তবুুও নিলয় রাত্রির সাথে একবার এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে চায়। যার কারনে নিলয় রাত্রির কাছে আসে এবং তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে। নিলয়ের মুখে এসব কথা শুনে রাত্রি বেশ রেগে যায়। রাগের কোন এক পর্যায়ে রাত্রি নিলয় কে একটি চড়ও পর্যন্ত দেয়। আর সেই দিন থেকে নিলয় কিন্তু আর কখনও রাত্রির কাছে আসেনি। এমন কি রাত্রির সাথে দেখাও করেনি। বেশ কয়েক মাস হয়ে গেল নিলয় আর রাত্রির কাছে যায় না। আর যাবেই বা কেন। রাত্রি তো আর নিলয় কে ভালোবাসে না। আর নিলয়ও রাত্রিকে অন্য ভাবে মেনে নিতে পারে না। এদিকে নিলয়ের সাথে রাত্রির অনেক দিন দেখা হয় না। রাত্রি ধীরে ধীরে কিসের যেন একটা শূণ্যতা অনুভব করে। দিনে দিনে রাত্রির মনে হতে থাকে যে রাত্রির কাছ হতে কি যেন হারিয়ে গেছে। এখন আর রাত্রির কিছুই ভালো লাগে না। কেমন যেন এক বিষন্নতা ঘিরে ধরে রাত্রিকে।
রাত্রি বুঝতে পারে না এটা কিসের টান অনুভব করছে নিলয়ের প্রতি। কেন তার বার বার নিলয়ের কথা মনে পড়ছে ? কেন তার ঘুরে ফিরে নিলয় কে দেখতে মনে চাইছে? একসময় রাত্রি অনুভব করে নিলয় কে তার মন চায়। তাই রাত্রি এখন নিলয় কে খোঁজে ফিরে। বহুবার নিলয়ের খোঁজে তার বাসায় লোক পাঠায়। কিন্তু নিলয় কে সে বাড়িতে পায় না। বেশ কয়েক মাস পড় নিলয় আসে রাত্রির বাসায়। কিন্তু সেদিন কিন্তু নিলয় একা আসেনি। নিলয়ের সাথে রাত্রির সেই স্কুল জীবনের বান্ধবীও ছিল। আজ আর নিলয়ের মধ্যে রাত্রির প্রতি সেরকমের কোন টান রাত্রি দেখতে পায়নি। দেখবে কি করে ? আজ নিলয় রাত্রিকে আর তুই বা তুমি বলে সম্বোধন করে না। আজ নিলয় রাত্রিকে আপনি বলে সম্বোধন করে। আর নিলয়ের এমন আচরণ দেখে রাত্রিও বেশ কষ্ট পায়। ভেঙ্গে যায় রাত্রির হৃদয়। কিন্তু কিছুতেই সে নিলয়ে কে তা বুঝতে দেয় না। আর তার কিছুদিন পরই রাত্রি তার অন্যান্য বন্ধুদের মুখে শুনতে পায় নিলয় নাকি তার সেই বান্ধবীকে বিয়ে করেছে।
নিলয়ের এমন আচরণে রাত্রি বেশ আঘাত পায়। ভেঙ্গে পড়ে রাত্রি। আর তারপর হতে রাত্রি নিলয় আর তার সেই বান্ধবীর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। যদিও বহু বছরপর রাত্রির সাথে নিলয়ের আবার দেখা হয়। দুজন স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে। ফোন নাম্বার আদান প্রদান করে। পরে অবশ্য রাত্রি নিলয় কে একদিন ফোন করেছিল। রাত্রির ফোন পেয়ে নিলয় প্রথমেই রাত্রিকে চিনে নিলো। রাত্রি অবাক হয়ে নিলয় কে জিজ্ঞেস করলো কি করে আমায় চিনলি? নিলয়ের সে দিনের সে উত্তরে রাত্রি কিন্তু বেশ বিব্রত হয়ে গিয়েছিল। নিলয় রাত্রি কে বলেছিল এই কন্ঠ কখনও ভুলার নয়। অবশ্য এসব কথা এখন আর রাত্রিকে নড়াতে পারে না। এদিকে একদিন হঠাৎ রাত্রির সেই বান্ধবী রাত্রিকে ফোন করে বেশ গালাগালি করে। যার পর হতে রাত্রি চিরতরে নিলয়ের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আর নিলয় কে কখনও হয় না বলা রাত্রির ভালোবাসার কথা। কিন্তু আজও নিলয় আছে রাত্রির হৃদয়ের মনিকোঠায় একজন ভালো বন্ধু, সহপাঠি আর ভালোবাসার মানুষ হয়ে।
আজ এখানেই শেষ করছি। কেমন লাগলো আপনাদের কাছে আমার আজকের গল্পটি। আশা করি আপনাদের ভালো লাগা আর মন্দ লাগা মন্তব্যের মাধ্যমে জানতে পারবো। সকলেই ভালো থাকবেন।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
আপনি কিন্তু এখন অনেক সুন্দর গল্প লিখে থাকেন। আজকেও অনেক সুন্দর করে এই গল্পটা লিখেছেন। নিলয় কিন্তু রাত্রিকে সব সময় অনেক বেশি ভালোবাসতো তবে রাত্রি তাকে অবহেলা করেছিল। কিন্তু নিলয় যখন রাত্রির সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল তখন রাত্রি নিলয়ের প্রতি তার ভালোবাসাটা বুঝতে পেরেছিল। নিলয়ের সাথে রাত্রির সেই বান্ধবীর বিয়ে হয়েছিল দেখছি। অনেক খারাপ লাগলো না বলা ভালোবাসার গল্পটা পড়ে।
আসলে ভালোবাসা গুলো এমনই হয়, থাকতে কেউ বুঝে না। ধন্যবাদ সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
রাত্রি ও কিন্তু নিজের অজান্তে নিলয়কে ভালোবেসে ফেলেছিল, যা সে বুঝতে পারেনি। কিন্তু যখন তার এরকম অবহেলা এবং অপমান পেয়ে নিলয় চলে গিয়েছিল, তখন সে নিলয়ের প্রতি ভালোবাসাটা অক্ষরে অক্ষরে বুঝতে পেরেছিল। পরবর্তীতে সে যদিও নিলয়ের কাছে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু অনেক বেশি দেরি হয়ে গিয়েছিল। কারণ নিলয়ের সাথে অন্য একটা মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
গল্পটি কিন্ত বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি। চেষ্টা করেছি কিছু মাধুরী দিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে কষ্ট পেলে সবাই ভেঙে দুমড়ে মুছড়ে যায়৷ রাত্রি ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে আঘাত পেয়েছিল যার কারণে সে অনেক কষ্ট পেয়েছে। মূলত নিলয় তার বান্ধবীকে বিয়ে করার কথা শুনে রাত্রি মনে মনে খুবই কষ্ট পেয়েছে গল্পটি পড়ে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।
সত্যিই কিন্তু রাত্রি বেশ কষ্ট পেয়েছিল এবং আজও কষ্ট পায় নিলয় কে মনে করে। ধন্যবাদ সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
সু স্বাগতম আপু। ভালো থাকবেন সব সময়