বেশ কিছুদিন পরের কথা। রিয়া বিকেলের সব কাজ শেষ করে ফুফাতো ভাই কানন কে নিয়ে ছাদে উঠে। বিকেলের পরিশুদ্ধ বাতাসে ছাদের উপর ভালই সময় কাটছে রিয়ার। ফুপুর বাড়ীর ছাদে নানা রং এর ফুলের বাগান আছে। তাই রিয়া ঘুরে ঘুরে ফুল গাছগুলো দেখছে। হঠাৎ রিয়া খেয়াল করল রাস্তায় দাড়িঁয়ে থাকা সেই ছেলেটি আজ পাশের বাসার ছাদে দাঁড়ানো। কিন্তু ছেলেটি অন্য দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে। রিয়া কে সে লক্ষ্য করেনি। রিয়া মনে মনে ভাবতে লাগলো এ আবার এখানে কি করে, ছেলেটি আবার এখানে এসে তার পিছু নিচ্ছে নাকি? এরপর সে তার ফুপাতো ভাই কানন কে জিজ্ঞেস করলো। কানন ঐ ছেলেটি কে কি চেনো? কানন বলল আপু এটা তো সুজন ভাই, এটা উনাদের বাড়ি, কয়েক মাস আগে ভাইয়ার মা মারা গেছে? তখন থেকে সুজন ভাই অনেক চুপ হয়ে গেছে। কারো সাথে তেমন কথা বলে না। একাকি থাকে। এসব শুনে রিয়া ভাবতে লাগলো ছেলেটির সাথে তার একটা মিল আছে।

রিয়া ছেলেটির দিকে একটু লক্ষ্য করলো ছেলেটি দেখতে বেশ উচা-লাম্বা আর গায়ের রং টা ও অনেক ফর্সা। দেখতে ছিমছাম, চেহারাতে যেন একটা মায়ার ছাপ। আর দূর এসব কি ভাবছে আর কি করছে রিয়া। কিছুক্ষন পর রিয়া নিচে নেমে গেল। এরপর বেশকিছুদিন পার হয়ে গেল আর রিয়াও পড়ালেখা নিয়ে খুব ব্যাস্ত হয়ে গেল।ছাদে যাওয়অ তেমন একটা হয়ে উঠে না। এরই মধ্যে আবার স্কুল গ্রীস্মকালীন ছুটি দিয়ে দিলো।

স্কুল ছুটির সময়টা রিয়া ফুপুর বাসায় রয়ে গেল। এখন পড়াশুনার তেমন কোন চাপ নেই। তাই বিকেল হলেই বাড়ির ছাদে উঠে পড়ে সবার সাথে। একদিন ছাদে রিয়া একা একা হাটছে। হঠাৎ লক্ষ্য করল সেই ছেলেটিও পাশের ছাদে হাটাহাটি করছে। তবে আজকে ছেলেটি রিয়াকে দেখেছে এবং রিয়ার দিকে বার বার তাকাচ্ছে। হঠাৎে ছেলেটি ছাদের কিনারে এসে রিয়া কে ডাক দিলো আর বলল একটু শুনবেন প্লিজ, আমি একটু আপনার সাথে কথা বলতে চাই, আমার মনে হয় আপনি আমাকে ভুল ভাবছেন, আমার কথাগুলো একটু শুনেন প্লিজ। রিয়া একবার ভাবলো ছাদ থেকে নেমে যাবে। আবার কি যেনো ভেবে আর নামলো না, বরং ভাবতে লাগলো একটু দেখবে নাকি ছেলেটা কি বলতে চায়।তারপর রিয়া ছেলেটিকে ইশারা করে জিজ্ঞেস করলো কি আমাকে কিছু বলছেন। ছেলেটি একটু কাছে এগিয়ে এসে বলল জি আপনাকে বলছি। আপনি তো আমার সাথে কথা বলেতে ভয় পান। জানিনা কেন আপনি আমাকে ভয় করেন। যাক সেসব কথা। আপনি মনে হয় আমাকে ভুল বুঝছেন। আমি আপনার কথা আন্টির কাছে অনেক শুনেছি। সেই যে আপনাকে প্রথম যেদিন দেখলাম আমি চমকে গেলাম। কারন আপনি দেখতে হুবাহু আমার এক কাজিন এর মত । আমার কাজিন টা মারা গেছে। আর আমার সাথে আমার কাজিন এর খুব ভাল একটা সম্পর্ক ছিল। তাই সেদিন আপনাকে দেখে চমকে গিয়েছিলাম। আপনি প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবেন না। আর আমি আপনার নামও জানি। আন্টি অর্থাৎ কাননের মা আমাকে আপনার বিষয়ে সব কিছু বলেছে। আন্টির সাথে আমার মাঝে মাঝে কথা হয়। আপনার ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যাক কতদিন থাকবেন এখানে। ছেলেটি একা একা বক বক করতে লাগলো। কিন্তু রিয়া ভিশন লজ্জা পাচ্ছে ছেলেটির সাথে কথা বলতে। একসময়ে রিয়া দৌড়ে নিচে নেমে গেল।

রাতে খাবার টেবিলে সবাই যখন একত্রে খেতে বসলো, তখন রিয়া ও তার ফূপু ও ফুপাতো ভাই সবাই মিলে অনেক আলোচনাই করছিল। সেখানে হঠাৎ কি যেন প্রসঙ্গে ফুপু বলল পাশের বাড়ির সুজন তো পরীক্ষায় এবার ভাল রেজাল্ট করলো। মা মরা ছেলেটা। আবার এই অল্প বয়সে আর একটি কষ্ট নিয়ে বেড়চ্ছে। রিয়া আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো কেন ফুপু কি হয়েছে। ফুপু বলল ছেলেটির ওর মামাতো বোনের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল এবং দুজন দুজনাকে অনেক পছন্দ করত। কিন্তু অল্প বয়সে মেয়েটি ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেল। আর মা ও কাজিন কে হারিয়ে ছেলেটি একে বারে নিস্তব্দ হয়ে গেল। এসব কথা শুনার পর রিয়া ভিতরে কিছুটা মায়া অনুভব করলো ছেলেটির জন্য। আজ সারারাত রিয়া ঘুমাতে পারেনি বার বার মায়ের কথা মনে পড়ছে। মায়ের জন্য রিয়ার অনেক কষ্ট হচ্ছে। এর সাথে মাঝে মাঝে পাশের বাড়ির ছেলেটির কথাও মনে পড়ছে। নানান ভাবনা চিন্তার মাঝে রিয়া মনে মনে ভাবলো না ছেলেটিকে সে অবজ্ঞা করবে না। কথা বলতে চাইলে কথা বলবে। কি হয়েছে মানুষ তো মানুষের জন্যই। কথা বললে ক্ষতি কি?