শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি- বৃষ্টির দিনের আনন্দময় কিছু স্মৃতি II written by @maksudakawsar II

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago

আসসালামু আলাইকুম

ইস্ কেউ যদি আমায় বলতো কি চাই আমি? তাহলে বলতাম আবার ছোট হতে চাই। কারন ছোট মানুষের আর যাই থাকুক না কেন কোন যন্ত্রণা থাকে না। থাকে না কোন চিন্তা ভাবনা আর টেনশন। হেসে খেলে জীবনটা পার করে দেয় তারা। আমরাও যখন ছোট ছিলাম আমরাও ঠিক তেমনই ছিলাম। কিন্তু আজ বড় হয়ে হয়েছে এক যন্ত্রণা। না পারি কিছু বলতে আর না পারি সইতে। টেনশনে টেনশনে জীবন শেষ।

কেমন আছেন সবাই? বেশ ভালো আছেন নিশ্চয়। আসলে প্রিয় মানুষগুলো ভালো থাকুক এই কামনাই করি। প্রতিদিনের মত করে আজও চলে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন করে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আসলে সব সময়ই ভাবী যে নিজের মনের মাঝে ঘুরপাক খাওয়া কথা গুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো। তাই তো আজও আবার সেই ছেলেবেলার কিছু স্মৃতি কথা নিয়ে চলে আসলাম আপনাদের মাঝে। আশা করি আমার আজকের পোস্টটিও আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে।

অলির কথা শুনে বকুল হাসে কই, তাহার মতো তুমি আমার কথা শুনে হাসো না তো! (7).png

CANVA দিয়ে তৈরি

শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি
বৃষ্টির দিনের আনন্দময় কিছু স্মৃতি

শৈশব আমদের জীবনের সাথে এমন ভাবে জড়িয়ে আছে যে আমরা চাইলেও সেই দিন গুলোকে ভুলতে পারি না। পারি না জীবন থেকে মুছে দিতে। আর পারি না সেই সব শৈশব কে ভুলে যেতে। জীবন চলার পথে বারে বারে সেই সমস্ত শৈশব আমাদের মাঝে উকিঁ দেয় । কি করে ভুলবো? ছেলেবেলা যে মিশে আছে আমাদের রক্তে রক্তে। আজও মনে পড়ে ছেলেবেলার বৃষ্টির দিনে কাটানো আনন্দ ঘন কিছু সময়। যখন বাহিরে বৃষ্টি হতো রিমঝিমঝিম করে তখন আমরা ঘরের ভিতরে মেতে উঠতাম হাজারও আনন্দ আর উদ্দীপনায়। তেমনই কিছু স্মৃতি আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলে আসলাম।

বৃষ্টির দিন মানে কড়মড় করে ভাজাপোড়া খাওয়া ছিল সবচেয়ে আনন্দের সময়। মা আগে থেকেই বাসায় ছোলা, বাদাম, সিমের বিচি রেখে দিতো। আর বৃষ্টির দিন আসলে এসব জিনিসের সাথে থাকতো চাউল ভাজা আর কাঁঠালের বিচি ভাজা। সব কিছু মিলিয়ে তখন এক বোল হয়ে যেত। আর আমরা ভাইবোনেরা বেশ মজা করে এই ভাজাপোড়া খেতাম। আবার কখনও কখনও পাশের বাসার লোকজনও আমাদের সাথে এসব খাবার খাওয়ার জন্য যুক্ত হতো। আমি তো গরম গরম এসব ভাজা পোড়া আগে হতে সবার আড়ালে আগে থেকে চুরি করে কিছু সরিয়ে রাখতাম। তবে আমরা যখন এমন ভাজা পোড়া খেতাম তখন শুধু করমর করমর আওয়াজ হতো।

এমন বৃষ্টির দিনের দুপুরের খাবারের মেনু থাকতো যে মজার তা বললে আপনাদেরও বেশ লোভ হবে। খিচুড়ির সাথে বিভিন্ন রকমের ভর্তা, বেগুন ভাজা আর ইলিশ মাছ ভাজা। হায় হায়! এমন গরম গরম মজাদার খাবারের লোভ কি কিছুতে সামলানো যায়। তাই তো সবার আগেই খাবারের টেবিলে যেয়ে জায়গা দখল করে বসে থাকতাম। অবশ্য আমার মায়ের হাতের ভর্তার কোন তুলনা ছিলনা। স্বাদে ভরা সেই ভর্তার স্বাদ আজও মাঝে মাঝে অনুভব করি। আর বৃষ্টির দিন গুলোতে আমার মা কখনও এমন রেসিপি করতে ভুল করতো না। ভুল করতো বর্ষার সময়কার আনন্দটুকু আমাদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেও। তাই ছেলেবেলার বৃষ্টির দিন গুলোকে আজও বড্ড মিস করি।

আমরা যে কোয়ার্টারে ছিলাম সেখানে বিরাট মাঠ ছিল। প্রচুর বৃষ্টি হলে সেখানে পানি জমে নদী হয়ে যেত। আর বৃষ্টির রাতে সেই পানিতে ব্যাঙ ডাকতো সারারাত। আজও সেই ব্যাঙ ডাকার শব্দ কানের মাঝে বেজে উঠে মাঝে মাঝে। অবশ্য এখন তো আর ছেলেবেলার মত অমন বৃষ্টি হতে দেখি না। আগে যেমন এক সাথে দু তিনদিন বৃষ্টি হতো এখন কিন্তু সেই দু তিন দিন ধরে বৃষ্টির আমেজ আর দেখা যায় না। দেখা যায় না বৃষ্টি শেষে আকাশে রংধনুর ঘনঘটা। কিন্তু তাতে কি ছেলেবেলার স্মৃতিতো আর মুছে যায়নি। সেগুলোকে কল্পনা করেই কিছু মজা নেই।

বৃষ্টির দিন আসলেই আমরা মেতে উঠতাম বিভিন্ন খেলায়। পিনবোর্ড, চারগুটি, পাচঁগুটি, চোর পুলিশ,লুডু, ক্যারাম সহ আরও অনেক খেলাই খেলতাম আমরা। বিশেষ করে চোর পুলিশ খেলা কিন্তু বেশ মজার ছিল। চারজন মিলে এই খেলা খেলা হতো। চোর ছিল -৪০, পুলিশ ছিল-৮০, ডাকাত-৬০ এবং দারোগা ছিল-১০০। হায়রে চোর কে না ধরতে পারলেই দুটো গোল্লা খেত। কত যে চুরি করে দারোগা নিজে নিয়েছি। আর চারগুটির খেলার কথা কি বলবো চারগুটি যদি সব উল্টো হয়ে উঠতো তখন আমরা পেতাম ১৬ নম্বর। আর সেই জন্য মাঝে মাঝে সব গুটি যদি উল্টো হয়ে না উঠতো তাহলে নিজে নিজেই চুরি করে উল্টিয়ে দিতাম। আর লুডু খেলার কথা কি বলবো চুরি করে কাঁচা গুটি নিয়ে পাকিয়ে নিতাম।হি হি হি। তবে সেই সময় আমাদের কোন পড়াশুনার চাপ থাকতো না। তাই মনে হয় এমন আনন্দ করতে পারতাম।

শেষ কথা

সত্যি বলতে মুছে যাওয়া দিন গুলো আমায় যে পিছু ডাকে। তাই তো মনে ইচ্ছে জাগে একবার যদি সুযোগ পেতাম তাহলে আবার শৈশবে ফিরে যেতাম। আপনাদের ইচ্ছে কি একটু জানাবেন তো। অপেক্ষায় রইলাম আপনাদের মতামতের।

নিজেকে নিয়ে কিছু কথা

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।

image.png

Screenshot_1.png

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 2 months ago 
 2 months ago 

শৈশবের খুব সুন্দর মুহূর্তগুলো আপনি আমাদের মাঝে স্মরণ করে দিয়েছেন। আপনার এই পোস্ট করতে গিয়ে কিন্তু আমিও আমার চেয়ে অতীতের অনেকগুলো স্মৃতি মনে করতে পারলাম খুব সহজে। বেশ ভালো লাগলো আপনার এই পোস্ট পড়ার মধ্য দিয়ে। দারুন ভাবে ব্যক্ত করেছেন সবকিছু।

 2 months ago 

ধন্যবাদ আপনার ‍সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 2 months ago 

আপু আপনার আজকের পোস্ট পড়ে সেই ছেলেবেলার কথা মনে হয়ে গেল। খুব সুন্দর করে ছেলেবেলার কথা গুছিয়ে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার পোস্ট পড়ে কিন্তু মায়ের কথা খুব মনে পড়ে গেল। ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোস্ট করে কিছু পুরানো স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।

 2 months ago 

ধন্যবাদ সুন্দর করে মন্তব্য করে উৎসাহিত করার জন্য।

 2 months ago 

আপনি আজকে শৈশবের স্মৃতি নিয়ে চমৎকার একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। আপনার পোস্টটি পড়ে সেই ছোট বেলার কথা মনে পড়ে গিয়েছিলো। আসলে ছোট বেলার সেই সোনালী দিনের কথা মনে পড়লে ভীষণ ভালো লাগে। তাছাড়া ছোট বেলায় সব ছেলে ফেলে মিলে বৃষ্টিতে ভিজে অনেক মজা করেছি। সেই দিন গুলো কখনোই আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। পোস্টটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 2 months ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া সব সময় সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করে উৎসাহিত করার জন্য।

 2 months ago 

শৈশবে হাজারো স্মৃতি বিজড়িত বৃষ্টির দিনগুলো ছিল। আপনি সুন্দর কথা বলেছেন, কড়মড় করে ভাজাপোড়া খাওয়া বৃষ্টির দিনে একটি আনন্দময় মুহূর্ত ছিল। বৃষ্টির সময় খেলাধুলা খেলার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে যেতাম, বিশেষ করে ফুটবল খেলা অনেক বেশি খেলতাম। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এমন স্মৃতি বিজড়িত মুহূর্তের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য।

 2 months ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 2 months ago 

শৈশবের স্মৃতি নিয়ে দারুন একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন আপু। বৃষ্টির দিনে ছোটবেলায় আমরা অনেক খেলাধুলা করতাম। সাথে ভাজা পোড়াও বেশ মজা করে খেতাম।এখনো সেই ভাজাপোড়া গুলো এখনও বৃষ্টির মধ্যে খাওয়া হয়।কিন্তু খেলাধুলা টা আগের মতো করা হয়ে ওঠে না। বৃষ্টির দিনে এখন নিজেকে আমরা গুটিয়ে নেই। কিন্তু ছোটবেলায় বৃষ্টির দিনে কোন কিছু মানতাম না ঝড় বৃষ্টি এলে যেন আমরা নতুন সাজে সেজে উঠতাম। নিজেকে মাতিয়ে তুলতাম বৃষ্টির আনন্দে। আপনার লেখা গুলো পড়ে সেই শৈশবের স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেল। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য

 2 months ago 

বেশ ভালো লাগলো আপু আপনার শৈশবের কিছু কথা জেনে। ধন্যবাদ সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.15
JST 0.031
BTC 60794.44
ETH 2623.30
USDT 1.00
SBD 2.62