শীতের কুয়াশার রাত্র আর একটি ভয়ংকর ঘটনা

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

আসসালামু আলাইকুম

আজ বৃহস্পতিবার, ৫ই জানুয়ারী ২০২৩ ইং
বাংলা ২০ই পৌষ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

হ্যালো, কেমন আছেন বন্ধুরা ? আশা করি সবাই বেশ ভালই আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে বেশ ভালই আছি।

চলছে শীতকাল। চারদিক যেন শীত আর কুয়াশায় স্তব্দ হয়ে গেছে। শীতের এই আমেজ যেমন একদিকে আমাদের জন্য বেশ আনন্দের, তেমনি কিছু কিছু মানুষের খুব কষ্টের ও বেদনাদায়কও বটে। কি আপনারা ভাবছেন তো শীত আবার কি করে বেদনা দায়ক হয়ে উঠে, তাই না? ভাবুন তো আমরা যখন শীতে বিলাসিতায় দালান ঘরে কম্বলের তলে অনায়াসে ঘুমিয়ে থাকি, তখন রাস্তায় পড়ে থাকা হাজারও অসহায় মানুষগুলো ঠান্ডায় জড়সড় হয়ে এক দূর্বিসহ জীবন যাপন করে। তাইতো বলি হ্যাপি নিউ ইয়ার কে বরণ করতে আমরা যে পরিমান অর্থ ব্যয় করেছি তা দিয়ে অনায়াসে ২/৩ জন অসহায় মানুষ কে কিছু শীতের পোষাক কিনে দেওয়া যায়। কি বন্ধুরা ঠিক তো?

সে যাই হোক, বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের মাঝে আবার আসলাম কুয়াশা ঘেরা এক শীতের রাত্রিতে আমার চাচার সাথে ঘটে যাওয়া সত্যিকারের একটি ভয়ংকর ঘটনা নিয়ে একটি গল্প শেয়ার করার জন্য। আসলে খুব ছেলেবেলায় বাবার মুখে শোনা এই গল্পটা। আপনাদের অনেকের গল্প পড়ে আজ আমার এই গল্পটি মনে হয়ে গেল।

Add a heading (12).png

ছবি সোর্স
Made By-@maksudakawsar

আমার ছোট চাচা ছেলেবেলা হতেই খুবই মেধাবী একজন ছাত্রছিল। পড়াশুনায় বেশ ভাল হওয়ায় আর গ্রামে তেমন ভাল কোন কলেজ না থাকায় দাদা তাকে পাশের একটি গ্রামের কলেজে ভর্তি করে দেয়। চাচা তখন প্রতিদিন বাড়ি থেকে যেয়ে কলেজ করতো। কারন লোক মুখে শোনা সেই গ্রামটি নাকি ভাল ছিল না। তাই চাচা প্রতিদিন খুব ভোরে উঠে পায়ে হেটেঁ হেটেঁ কলেজে যেত। আর বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হতো। এভাবে দিনের পর দিন যাচ্ছিল।

কিন্তু এতে করে চাচার পড়াশুনায়ও বেশ ক্ষতি হচ্ছিল। পড়ে দাদা আর আমার বাবা সবাই বসে সিদ্ধান্ত নিল চাচার পড়াশুনা যাতে ক্ষতি না হয় তার জন্য চাচা কে বাবার এক বন্ধুর বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দিবে। বাবার বন্ধু আবার সেই গ্রামের খুবই ধনী একজন ব্যবসায়ি । অবশ্য বিনিময়ে ছোট চাচা বাবার সেই বন্ধুর ছেলে মেয়েদের পড়াবে। যাকে বলে লজিং । সেই থেকে চাচা সেখানে থেকে পড়াশুনা করতো। আর সপ্তাহে বা মাসে বাড়িতে আসতো। ভালই দিন যাচ্ছিল ছোট চাচার তখন। কিন্তু পড়াশুনার পাশাপাশি চাচার তো আবার কিছু হাত খরচও ছিল। চাচা কখনই সেই অতিরিক্ত খরচ বাড়ি থেকে নিতো না। তাই তো চাচা বাড়িতে কাউকে না জানিয়ে সেই গ্রামে একটি প্রাইভেট টিউশনি ঠিক করে নেন। বিষয়টা শুধু বাবার সেই বন্ধুই জানতো।

একদিন রাতে খাবার টেবিলে বাবার বন্ধু চাচা কে বলল যে, আমির তুমি তো জানো এই গ্রামের বিষয়ে, সন্ধ্যার পর কিন্তু রাস্তাঘাট অনেক নিরব হয়ে যায়। কারন অনেকেই কিন্ত নিখোঁজ হয়েছে, গ্রাম থেকে। তাই তুমি যদি পারও প্রাইভেট টা ছেড়ে দাও। তোমার হাত খরচ আমি দিবো। চাচা উত্তরে বলেছিল আসলে ওসব কিছু না। এসব মানুষের বানানো গল্প। ভূত পেত্নী বলে কিছু নেই। এ কথা শুনে বাবার বন্ধু অনেক রাগ হয়ে গিয়েছিল। রেগে যেয়ে চাচাকে বলেছিলেন তুমি যদি আমার কথা না শোন তাহলে আমি তোমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিবো। তখন চাচা বলেছিল, ঠিক আছে আমি আগামী মাসে টিউশনিটা ছেড়ে দিবো।

এভাবে কিছুদিন পার হয়ে যায়। একদিন চাচা কলেজ করে সেই প্রাইভেট টিউশনি করতে যায়। সেখানে যেয়ে দেখে যে, যে বাসায় টিউশনি করে তাদের বাবা খুব অসুস্থ্য। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার মত কেউ নেই। চাচা নিজেই তখন তাদের বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ডাক্তার দেখিয়ে সেই ভদ্রলোক কে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে যখন বাড়ি ফিরবে তখন প্রায় রাত্র ৮.০০ টা বেজে গেছে। সেদিন আর টিউশনি করা হয়নি। তারা অনেক অনুরোধ করলেও চাচা আর সে বাড়িতে থাকেননি। শুধুমাত্র ঠান্ডা আর কুয়াশার রাত্রি হওয়ায় তাদের কাছ থেকে একটি মাফলার আর একটি টর্চ লাইট চেয়ে নিয়েছিল।

গ্রামের রাস্তা তখন খুব নিরিবিলি হয়ে গেছে। চারদিকে ঘন কুয়াশা। চাচা হাটছে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে মনের সুখে গান করতে করতে। বেশ কিছুদূর হাঁটার পর চাচা টের পেল তার সাথে সাথে এক ভদ্রলোক হেঁটে যাচ্ছে। ভদ্রলোক বেশ সুন্দর দেখতে। তিনি চাচা কে জিজ্ঞেস করলো কোথায় যাবেন? চাচা বলল এই তো একটু সামনে যাবো। ভদ্রলোক চাচাকে তখন বলল আপনি তো বেশ ভাল গান করেন। চাচা তাকে বলল, আপনি কে ? কিন্তু ভদ্র লোক চাচকে সে বিষয়ে কোন উত্তর না দিয়ে কথা ঘুরিয়ে ফেলে। সেই ভদ্র লোক চাচাকে জিজ্ঞেস করে, এত রাতে যে আপনি একা একা বাড়ি যাচ্ছেন ভয় লাগছে না? চাচা বলেন, কিসের ভয়? তখন ভদ্র লোক বলে, কেন আপনি কিছু শুনেন নি। তখন চাচা বলে, আরে ধাৎ ওসব কিছুই না। মানুষের বানানো গল্প।

হঠাৎ চাচা লক্ষ্য করলো চাচা যেন অন্য কোন রাস্তায় ঢুকে পড়েছে। আর সামনে শুধু জঙ্গল আর জঙ্গল। এদিকে চাচার সাথে যে ভদ্রলোক কথা বলছিল সেও তো নেই। এবার কিন্ত চাচা বেশ ভয় পেয়ে গেল।কিছুক্ষনের মধ্যে চাচা টের পেল কিছু দূরে কি যেন একটা দেখা যাচ্ছে। খুব বিশ্রী রকম চেহারার কি যেন দেখা যাচেছ। মনে হয় চাচার দিকে এগিয়ে আসছে। চাচা তো ভয়ে অস্থির। শুধু কি অস্থির ভয়ে চাচার কাপড় চোপড় ও নষ্ট হয়ে গেছে। চাচা কি করবে কিছুেই ভেবে উঠতে পারছিল না। মনে মনে দোয়া পড়ছে। কিন্তু সেই বিশ্রী আর ভয়ঙ্কর কি যেন, চাচার দিকে এগিয়ে আসছে। ব্যাস চাচার আর কিছু মনে নেই।

পরদিন চাচা নিজেকে হাসপাতালে আবিস্কার করলো। তারপর জানতে পারলো যে , বাবার বন্ধুর ভাই সেই সময়ে সেই রাস্তা দিয়ে বাজার থেকে আসছিল। সে চাচাকে উল্টো পথে হাটঁতে দেখে সন্দেহ করে এবং চাচার পিছন পিছন যেয়ে বুঝতে পারে অবস্থা খারাপ। আর তারা তো সব সময় ম্যাচ, লোহা আর হারিকেন নিয়ে চলাফেরা করে। কারন ভূত বা পেত্নী এরা কখনও এগুলোর সামনে দাড়াঁতে পারে না। সেই বিশ্রী জিনিসটি যখন চাচার কাছে চলে আসছিল তখন বাবার বন্ধুর ভাই হঠাৎ ম্যাচ জ্বালিয়ে দেয় আর তখনই তারা উধাও হয়ে যায়।

এই ঘটনার পর চাচাকে আর সেই কলেজে পাঠানো হয়নি। গ্রামেই যে কলেজ ছিল সেখানে ভর্তি করে দেয়া হয়। অবশ্য পড়ে এসব কথা আমরা চাচকেও জিজ্ঞেস করেছি এবং এসব নিয়ে চাচার সাথে অনেক মজাও করেছি।

কেমন লাগলো বন্ধুরা আপনাদের কাছে শীতের কুয়াশা ভরা রাত্রিতে ঘটে যাওয়া অঘটনের আজকের গল্প ? জানার অপেক্ষায় রইলাম।

❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

@maksudakawsar

image.png

image.png

image.png

Sort:  
 2 years ago 

আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লেগেছে।আসলে আপনার চাচার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা আমার কাছে বেশ ভালো লাগল। সত্যি আপু আমি ও ভুত প্রত্নি এসব বিশ্বাস করি না।তবে আমার মনে হয় মনের ভয় সব চেয়ে বড় ভয়। তবে আপনার চাচা যে বাড়িতে থাকে তার কথা শোনা উচিত ছিল। যাইহোক অবশেষে আপনার চাচা তাহলে ভূত প্রেত্নির তাড়া খেল হা হা হা।

 2 years ago 

না না মনের ভয় নয়। সত্যি সত্যি কিন্তু ভূত আছে।

 2 years ago 

শেষ পর্যন্ত তাহলে আপনার চাচা ভূত পেত্নী না বিশ্বাস করলেও তাদের দেখেছে। তাদেরকে দেখতে কেমন তা জানার বেশ আগ্রহ আমার। আমার কাছে এমনিতে ই ভূতের গল্প গুলো পড়তে ভীষণ ভালো লাগে। আপনার চাচার সাথে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটি পড়ে ভীষণ ভালো লেগেছে আমার কাছে। এভাবে কারো কাছ থেকে এরকম ঘটনা গুলো শুনতে একটু বেশি পছন্দ করি। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

চাচা জীবিত থাকলে না হয় ভূত পেত্নী কি রকমের তা জেনে নেওয়ার ব্যবস্থা করে নেওয়া যেত।

 2 years ago 

সত্যি আমি কিন্তু ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আপনার চাচার সাথে ঘটে যাওয়া এই গল্পটি পড়ে। আমার তো পড়ে ই ভীষণ ভয় লেগেছে জানিনা আপনার চাচার অবস্থা তখন কেমন ছিল। বাকি অংশ যদি আপনার চাচার মনে থাকতো তাহলে আপনি অবশ্যই শেয়ার করতেন তখন জানিনা কি করতাম। ভুতের গল্প এমনিতে ভীষণ ভালো লাগে। কিন্তু ভয়ংকর গল্প পড়তে একটু ভয় লাগে। ভয় করলেও আমি কিন্তু পুরো গল্প পড়ি। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

হয়ত ভূতের গল্পের বাকী অংশ পড়ে তখন ফিট হয়ে যেতেন। হা হা হা

 2 years ago 

আপনার গল্প টা পরে বেশ ভয় লাগছিলো আবার ভালোও লাগছিলো। আমার জীবনে কখনো ভূত দেখিনি। তবে অনেকের কাছেই গল্প শুনেছি। আপনার চাচার ভূত দেখার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আপু আমিও কখনও ভূত দেখিনি। তবে ভূতের আওয়াজ পেয়েছি।

 2 years ago 

ঠিক বলছেন শীতকালে অনেকে দালান ঘরে খুব আরাম করে ঘুমাচ্ছেন।আবার অনেকেই শীতের কাপড়ের অভাবে অনেক কষ্ট পাচ্ছেন রাস্তা ঘাটে।তবে আগেকার দিনে আমি অনেক শুনেছি ভূত-পেত্নী কথা।আমি মানি সে সব কথা সঠিক ছিল কারণ তখনকার সময় এত ঘরবাড়ি আর মানুষের বসবাস ছিল না তাই পেত্নী কিংবা জিনের আবাস ও বেশি ছিল।আর সুযোগ পেলে মানুষের ক্ষতি করে ফেলতো। অনেক ভয়ঙ্কর একটি মুহূর্তের কথা শেয়ার করেছেন ভয় ধরে গেছে।

 2 years ago 

ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি মন্তব্য করে সাথে থাকার জন্য।

 2 years ago 

আসলে বর্তমান সময়ে শীতের প্রকোপ টা অনেক বেশি। আপনি একদম সত্য কথা বলেছেন আপু হ্যাপি নিউ ইয়ার উপলক্ষে আমরা যত টাকা ব্যয় করি এই টাকা দিয়ে গরিব দুঃখী মানুষের মাঝে শীতের বস্ত্র বিতরণ করলে সেটা খারাপ হয় না। যাইহোক গল্পটা আমি যখন পড়ছিলাম তখন আমি রুমের মধ্যে একা ছিলাম খুবই ভয় লাগছিল। আসলে এরকম ভূতের গল্প শুনতে খুবই ভালো লাগে যার কারণে আমি প্রতিনিয়ত ভুত এফএম শুনি। আপনার চাচা প্রথম অবস্থায় সাহসী থাকলেও পরবর্তীতে সেই বিশ্রী চেহারাটা দেখে খুবই ভয় পেয়েছিল আসলে ভয় পাবারই কথা একা একা রাত্রে কোন কিছু দেখলে মানুষ ভয় পাবে এটাই স্বাভাবিক। তবে পরবর্তীতে আপনারা আপনার চাচার কাছে এই কথা বলে মজা নিয়েছেন শুনে খুবই হেসেছি হাহাহা।

 2 years ago 

বুঝা গেল আমার গল্পটি পড়ে আপনি যেমন হেসেছেন তেমন ভয় পেয়েছেন। হাহাহা

 2 years ago 

আপনার গল্পটি পড়ে আমি খুবই ভয় পেয়ে গেলাম। শীতকালে এমনিই কুয়াশার কারণে মানুষ অনেক ভয় পায়। আপনার চাচা এগুলো বিশ্বাস করে না। তারপরও আপনার চাচা ভুত পেত্নী দেখে ফেললেন। আর অন্ধকারের রাস্তা যখন জঙ্গলের বিতরের যাচ্ছিল আমি হলে তো মারাই যেতাম। তারপরও বলব আপনার চাচার একটু সাহস আছে। ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

হ্যাঁ আপু এটা সত্য বলেছেন আমার চাচা কিন্তু সাহস ছিল তবু কেন যে ভয় পেল?

 2 years ago 

আপনার চাচার সাথে ঘটে যাওয়া গল্পটি আমাদের সাথে শেয়ার করলেন। গল্পটি পড়ে আমার গায়ের লোমগুলো দাঁড়িয়ে গেলো। আপনার চাচা যখন অন্য এলাকায় পড়ালেখা করে জায়গাটি কিন্তু খারাপ তারপরও আপনার চাচা ভয় পেতেন না। রাতে যখন আপনার চাচা গান গাইতে লাগলো তখন যে লোকটি তাকে বলতে লাগলো আপনার গান তো অনেক সুন্দর। এরপর আপনার চাচা যখন অন্ধকারের দিকে যাচ্ছিল তখন তো অনেক ভয় লাগার কথা ছিল। গল্পটি পড়ে অনেক ভয়ও লাগলো এবং পড়তে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর করে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

কি বলেন ভাইয়া গল্পটি পড়ে আপনার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল!

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 62647.29
ETH 2439.61
USDT 1.00
SBD 2.66