"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ২৩ || শেয়ার করো তোমার স্কুল জীবনের কোন তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম

আমার প্রাণপ্রিয় বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই ? সবাই বেশ ভাল আছেন বুঝতে পারছি। কারন আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি প্রতিটি সদস্যদর কথা চিন্তা করে বিশেষ কিছু প্রতিযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।আর আমরা সকল ব্লগাররা অত্যান্ত্য খুশি আর উদ্দিপনা নিয়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করি। হারি আর জিতি যাই করি।আর এবার এমন একটি বিষয় কে প্রতিযোগীতার বিষয় হিসাবে আনা হয়েছে যা আমাদের প্রত্যেককে নিয়ে গেছে সেই নষ্টালজিয়ায়।

children-gf9c22d31c_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবিসোর্স

অতীত আমাদের জীবনে এমন একটি অধ্যায় যা হাজার চেষ্টা করলেও জীবন থেকে মুছে ফেলতে পারি না। কারন আমাদের আজকের যে অবস্থান সেটা সেই অতীত কে ঘিরেই। গানে আছে না- পারিনা ভুলে যেতে স্মৃতিরা মাল গাথে হারানো সেই স্মৃতিগুলি ডেকে নিয়ে যায়, আমারে কাদাঁয়, আমারে কাদাাঁয়।তেমনি একটি কাদাঁনো তিক্ত অভিজ্ঞতা আমি আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

আমাদের বিদ্যালয়টি ছিল বয়েজ এন্ড গালর্স স্কুল। আমি ষষ্ঠ শ্রেণী হতে বরাবরই ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করে আসছি। ক্লাসে প্রথম দিকে আমার তেমন কোন বন্ধু বা বান্ধবী ছিল না। ধীরে ধীরে সকলের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। এদিকে ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকারী হওয়ায় শিক্ষকরা সবাই আমাকে খুব আদর করেন।আমার আর একটি অভ্যাস ছিল যে আমি কখনই বাজারের গাইড বই মুখস্থ করতে পারতাম না।তাই আমি নিজে নিজে নোট তৈরি করে পড়তাম।তাছাড়া আমি কখনই স্কুলে যেয়ে কোন পড়া পড়তাম না। সব পড়া বাসা হতে কমপ্লিট করে যেতাম।বন্ধুরা সবাই স্কুলে এসে পড়ায় ব্যস্ত থাকতো। আর আমি ব্যাস্ত থাকতাম বন্ধুদের সাথে আড্ডায়। তাই নিয়ে বন্ধুরা আমাকে কত কথা যে শোনাতো।

possible-gd6b62ac6a_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবিসোর্স

স্কুলের সব বন্ধুদের মাঝখান হতে আমার দুইজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু তৈরি হয়। তাদের একজন পলি আর একজন রেজা। আমরা খুব ঘনিষ্ঠ ছিলাম। আস্তে আস্তে আমরা ক্লাসের গন্ডি পেরিয়ে নবম শ্রেনীতে উঠে গেলাম। আমি তখন আমার বিভাগ হিসাবে বিজ্ঞান বিভাগ নিলাম। আর পলি নিল মানবিক বিভাগ। এদিকে রেজা আমার সাথেই বিজ্ঞান বিভাগ নিলো। বলা বাহল্য যে যদিও আমরা তিনজন খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলাম কিন্তু রেজার সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা একটু বেশী ছিল। না অন্য কিছু না ‍শুধুই বন্ধু। রেজা আমার সাথে বেশী গল্প করতে পছন্দ করত। আর এদিকে রেজা তার চাচার কাছে থেকে লেখা পড়া করে বিধায় আমার মা তাকে অনেক আদরও করতেন।

আমাদের বন্ধুত্বের কিছু উদাহরণ আপনাদের সাথে শেয়ার করি। এই ধরেন আমার কোন একটি নোট বা বই লাগবে আমি যদি রেজা কে বললে সে যেখান থেকেই হউক আর যে ভাবেই হউক আমার জন্য খুজেঁ নিয়ে আসতো। আমি খুব গান ‍শুনতে পছন্দ করতাম। তাই রেজা আমাকে তখনকার দিনের নব্বই মিনিটের ক্যাসেট গুলোতে আমার প্রিয় প্রিয় সবগুলো গান রেকডিং করে এনে দিয়েছিলো। আমি হুমায়ুন আহমেদ এর বই পড়তে পছন্দ করতাম তাই আমার এ বন্ধুটি আমাকে যখনই সুযোগ হতো একটি করে হুমায়ুন আহমেদ এর বই গিফট করত। তাই তো হুমায়ুন আহমেদ এর বেশীর ভাগ বই আমার পড়া হয়েছে।

friendship-gd9771849f_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবিসোর্স

এদিকে আমার বান্ধবীটি সুযোগ পেলেই বা অবসর পেলেই আমার কাছে আসতো। আমরা স্কুল এর পরও প্রায় পড়াশুনা নিয়ে আলোচনা করার জন্য হয়ত ওর বাসায় নয়তো আমার বাসায়। জীবনের অনেকটা সময় পাড় করে এসেছি। আমরা এতই ঘনিষ্ঠ সহপাঠি বা বন্ধু ছিলাম যে কেউ আমাদের কে আলাদা করতে পাড়তো না। কিন্তু আমার এই বান্ধবীটি প্রায় আমাকে বলত যে রেজা তো আমাদের বাসায় যায় না। তোর বাসায় ও খুব আসা যাওয়া করে। এ নিয়ে পলির খুব দুঃখ ছিল। তাই আমি প্রায় রেজা কে বুঝিয়ে বলতাম পড়াশুনার ফাকে যতটুকু সময় পাস শুধু তো আমার সাথে গল্প করে কাটাস। একটু তো পলির বাসায় যেয়ে ওকে মাঝে মাঝে পড়াশুনায় সাহায্য করতে পারিস। কিন্তু রেজা বলতো দেখ দোস তোদের বাসায় আসলে মনে হয় আমি আমার পরিবারের সাথে আছি। কিন্তু পলির বাসায় আমি সেরকম ফিল করি না। তাই আমার কাছে ওদের বাসায় যেতে ভাল লাগে না।

friends-g979874e14_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবিসোর্স

এদিকে এ সএসসি পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসে। তাই আমাদের গল্প গুজবও কমতে থাকে । সবাই তখন পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করার জন্য উদগ্রীব। আমিও রেজা কে আসতে বারন করে দিয়েছি। এভাবে বেশ কয়েক মাস পার হয়ে যায় আর আমাদের এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। তারপর ‍শুরু হয় কলেজ ভর্তির বিষয় । তাই আমি কলেজ ভর্তির জন্য প্রিপারেশন নেওয়া শুরু করি।পাশাপাশি আমি দুই তিনটি টিউশনও শুরু করি। কিন্তু এর মধ্যে রেজা আমাদের বাসায় সব সময় আসতো কিন্তু আমি ব্যাস্ত থাকার কারনে তাকে তেমন একটা সময় দিতে পারিনি।

pedagogy-g386306c8e_1920.png

কপিরাইট ফ্রি ছবিসোর্স

আর এরই মধ্যে শুনতে পাই যে, আমার বান্ধবী পলির বাবা ঢাকা হতে বদলী হয়ে গেছেন তাই তারা গ্রামের বাড়ীতে চলে যাচ্ছে। এ কথা জানতে পেরে ছুটে যাই তার বাসায়। সুযোগ করে তাকে আমি কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসও কিনে দেই। তারপর তাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বিদায় দিয়ে দেই। গ্রামে চলে যাওয়ার পর আমার বান্ধবী আমাকে অনেক সুন্দর সুন্দর চিঠি লিখতো। আর আমিও তাকে সেই চিঠির উত্তর দিতাম।

এরই মাঝে কলেজে ভর্তির জন্য ফরম ফিলাপ শুরু হলো। তাই রেজা আমার জন্য তেজগাওঁ কলেজের ফরম নিয়ে আসলো কিন্তু আমার সিদ্ধান্ত আমি এবার গালর্স কলেজে ভর্তি হবো । তাই রেজা কে নিষেধ করে দিলাম। এদিকে আমি বেইলী রোডের সিদ্ধেশ্বরী গালর্স কলেজে ভর্তির সুযোগ পাই এবং ভর্তি ও হয়ে যাই। যার কারনে আমার রেজা কে বেশী সময় দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমি প্রায় ওকে বুঝাতাম লেখা পড়া ভালভাবে করার জন্য। কিন্তু ও আমার কোন কথাই শুনতো না। বরং প্রতি দিন আমার বাসায় আসত আর বিরক্ত করত।

laptop-g054256c74_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবিসোর্স

এইচ এস সি পরীক্ষা খুব কাছাকাছি। বেশ কিছুদিন হলো রেজা আসে না। আমি ভাবলাম যাক ভাল হলো তাহলে মনে হয় এবার পড়াশুনায় মন দিয়েছে। কিন্তু না আমার ভাবনা সম্পন্ন ভুল। একদিন আমার বাসায় রেজার চাচা লোক পাঠালো। তার কথা মতে রেজা প্রায় এক সপ্তাহ আগে বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলে চলে গেছে। সাথে ব্যাগে করে তার কাপড় নিয়ে গেছে। যেহেতু আমি তার বেস্ট ফ্রেন্ড তাই আমি এ বিষয়ে কিছু জানি কিনা? আর আমি তো এসব কথা শুনে অবাক। ভাবলাম ছেলেটা আবার কোথায় গেল। পড়ে জানা যায় রেজা তখন পলিদের গ্রামের বাড়ীতে গিয়েছিলো।


যেহেতু আমার পরীক্ষা সামনে তাই আমি আর এসব বিষয়ে কোন আগ্রহ প্রকাশ করিনি। এরপর পরীক্ষার রুটিন দিলো আর পলিও ঢাকায় আসলো পরীক্ষা দিতে। কিন্তু আমি পরীক্ষার ব্যাস্ততার জন্য ওকে তেমন সময় দিতে পারলাম না।আর পরীক্ষা শেষ হলে আমি মাকে বলে পলি কে আমাদের বাসায় নিয়ে আসি । ও আমার সাথে এক রাত ও থাকে। তখন পলির সাথে আমার অনেক বলা আর না বলা গল্প হয়। আমি কথার ফাকে তাকে রেজার বিষয় জিজ্ঞেস করি কিন্তু সে আমাকে কিছুই বলে না।পরদিন পলি কে বিদায় করে দেই। এরপর রেজা আমার বাসায় বেশ কিছুদিন এসেছে।

এভাবে বেশ কিছু মাস পাড় হয়। একদিন শুনতে পাই আমার সেই প্রিয় বান্ধবী আর প্রিয় বন্ধু বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। যে ঘটনা আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। না কষ্ট পেলাম এ ভেবে যে যদি আমি তাদের এত কাছের বন্ধুই হয়ে থাকি তাহলে আমি কি তাদের বিষয়ে জানার কোন অধিকার রাখি না। তাই এ ঘটনার পর হতে আজও আমি আর তাদের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ রাখিনি।


আমার কাছে মনে হয়েছে যে এটাই আমার স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা। যা আমার সহপাঠিদের সাথে ঘঠে গেছে।

আশা করি সম্মানিত বিচারক মন্ডলী যারা এই প্রতিযোগিতার বিচারকের দায়িত্বে আছেন, তাদের কাছে আমার স্কুল জীবনে সহপাঠির সাথে ঘটে যাওয়া এই তিক্ত অভিজ্ঞতাটি ভালই লাগবে।

pBMyo3B2Sao2EbuHAFTX1CNWMbam25xJGPs4sKmLS6XL7jPcLJ4PhfmbsQbXEmSBkiJH1y8vcCZLEDiVjH9fUC37Hpjmz6Czw4oJd4hidqWpdsEDnaUW3Rt3p3eTZGQkoiwZDyH4hdDt99wPqRBy3pVZE1qtEmMBB3MC4V4MJCpzUCii.png

Sort:  
 2 years ago 

ব্যপার টা কষ্ট পাওয়ার মত। আপনি তাদের বেস্ট ফ্রেন্ড তাই এব্যাপারে আপনাকে জানানো তাদের উচিৎ ছিল।বেস্ট ফ্রেন্ডরা কথা লুকালে সেটি মেনে নেওয়া যায়না।অনেক খারাপ লাগল আপু।আপনার জন্য শুভ কামনা রইল।

 2 years ago 

জি ভাইয়া সত্যি বলেছেন আসলে বিষয়টা অনেক কষ্ট পাওয়ার মতো। আমি আজও আসলো এ বিষয়টি ভুলতে পারিনা। মানুষ কিভাবে পারে এরকম কাজ করতে?

 2 years ago 

প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার তিক্ত অনুভূতি জানতে পেরে ভালো লাগলো। আসলে বেস্ট ফ্রেন্ড মানে একে অন্যের পরিপূরক বেস্ট ফ্রেন্ড মানে সকল ঘটনা শেয়ার করা। কিন্তু যখন বেস্ট ফ্রেন্ডগুলো কথা লুকায় তখন খুবই খারাপ লাগে।

 2 years ago 

আমি আপনাকে ধন্যবাদ আপনি আমার প্রতিযোগিতা বিষয়টি অনেক সুন্দরভাবে পড়েছেন। প্রতিযোগিতা হারি আর জিতি তাতে কোনো বিষয় নয়।তবুও অংশগ্রহণ অনিশ্চিত করলাম।

Hi, @maksudakawsar,

Thank you for your contribution to the Steem ecosystem.

Your post was picked for curation by @rex-sumon.


Please consider voting for our witness, setting us as a proxy,
or delegate to @ecosynthesizer to earn 100% of the curation rewards!
3000SP | 4000SP | 5000SP | 10000SP | 100000SP

 2 years ago 

ধন্যবাদ

 2 years ago 
প্রথমে আপনাকে "আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ২৩ তম তে অংশগ্রহন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।আসলে আপনার পুরো পোস্টটি পড়ে মনে হয়েছে রেজা ও পলি আপনার বন্ধু ছিল বটে কিন্তু উত্তম বন্ধু হতে পারেনি।কারন উত্তম বন্ধুর কাছে কোন কিছু গোপন থাকার কথা নয়।তারপর রেজাকে কয়েক দিন পাওয়া যায়নি এবং পরে জেনেছিলেন পলিদের গ্রামের বাসায় গিয়েছে।এরপর এইচ এস সি পরিক্ষা দেওয়ার জন্য পলি শহরে আসে এবং একদিন আপনার সাথে আমাদের বাসায় ছিল। তখনও রেজার কথা জিজ্ঞেস করছিলেন। কিন্তু তখন ও কিছুই বলেনি।এর কিছুদিন পরে শুনলেন ওরা বিয়ে করেছে।আসলে এই কথা শুনলে একসাথে কিছুদিন থাকলে তারই কষ্ট লাগার কথা। আর আপনি তো দুই জনেরই বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলেন।আসলে আমার কাছে এও মনে হয়েছে পলি হয়তোবা রেজাকে আগে থেকেই পছন্দ করত।তাই আপনাকে কিছু বলে নি।কারন আপনার কারনে যদি তাকে না পায়।আর আপনি রেজাকে বন্ধু ভেবেছিলেন।হয়তোবা রেজা আপনাকে পছন্দ করত। তাই যখন রেজাকে পরীক্ষায় জন্য বাসায় কম আসতে বলেছিলেন এবং সেই সময় পলিদের বাসায় যায় এবং তাদের সম্পর্কটা বিয়েতে পরিনত হয়।অবশ্য এটা আমার ধারনা।
 2 years ago 

আনিস শামীম ভাই বুঝা যাচ্ছে আপনি পোস্টটা পুরোপুরি পড়েছেন। আর আপনার কমেন্ট পড়ে বহু যাচ্ছে আপনি অনেক বুদ্ধিমান।

 2 years ago 

দেখতে হবে না কার ভাই, আপু।হা হা হা।

 2 years ago 

তাইতো

Coin Marketplace

STEEM 0.30
TRX 0.12
JST 0.034
BTC 63815.31
ETH 3124.40
USDT 1.00
SBD 3.99