শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি- ঘুড়ি বানানোর প্রতিযোগিতার আনন্দ II written by @maksudakawsar II

in আমার বাংলা ব্লগ4 months ago

আসসালামু আলাইকুম

বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই? বেশ ভালো তাই না? ভালো থাকারই কথা। এখন তো দেখছি সূর্য মামার একটু মায়া হয়েছে আমাদের জন্য। তাই গরমের তাপটাও কিছুটা কমিয়ে এনেছে। আজ সারাদিন তেমন তাপমাত্রা পড়েনি। তাই একটু ভালো আছি। আর ভালো আছি। আমার মনে হয় আমার মত করে আপনারাও অনেকে বেশ ভালো আছেন। দোয়া করি বৃষ্টি মামা যেন তাড়াতাড়ি তার স্নেহের পরশে আমাদের কে একটু রাঙিয়ে তোলে। সেই অপেক্ষায় আছি।

বন্ধুরা আজ আবার চলে আসলাম আপনাদের মাঝে হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলা নিয়ে কিছু স্মৃতি শেয়ার করার জন্য। আসলে শৈশব আমাদের জীবনের সাথে এমন করে মিশে আছে যে আমরা হাজার চাইলেও সেই শৈশব কে ভুলতে পারি না। পারি না শৈশব কে দূরে ঠেলে দিতে। শৈশব আমাদের কে বার বার হাতছানি দেয়। চোখের সামনে মেলে ধরে হাজারও স্মৃতি। আর সেই শৈশব কে আকঁড়ে ধরে আজও আমরা বেঁচে আছি।

ai-generated-8612085_1280.png

Source

শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি
ঘুড়ি বানানোর প্রতিযোগিতার আনন্দ

কয়েকদিন আগে শেষ হয়ে গেল আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি পরিবারের ঘুড়ি বানানোর প্রতিযোগিতা উৎসব। কমিউনিটির সদস্যরা তাদের মেধা আর যোগ্যতা দিয়ে নিজ নিজ জায়গা থেকে সুন্দর সুন্দর ঘুড়ি বানিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেছেন। আর সেই সমস্ত ঘুড়ি দেখে আমার সেই ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে গেছে। মনে পড়ে গেছে ছোটবেলায় আমার ছোট ভাইয়ের এই ঘুড়ি বানানো নিয়ে কিছু হাস্যকর ঘটনা। আর তাই তো আজ চলে আসলাম সেই কথা গুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

যেহেতু সরকারি কোয়াটারে বড় হওয়া, তাই কোয়াটারের সমিতি থেকে প্রতি বছরই করা হতো ঘুড়ি বানানো এবং তা উড়ানোর প্রতিযোগিতার। কে কত সুন্দর করে ঘুড়ি বানাতে পারে । আর প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে ঘুড়ি উড়িয়ে নিজে বিজয় হতে পারে। আর সেই প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের জন্য ছোট ভাই প্রায় প্রতি বছরই করতো এক তুমুল কাণ্ড। স্কুলের টিফিনের টাকা বাচিঁয়ে ঘুড়ি বানানোর বিভিন্ন জিনিস কিনে আনতো। সেই সাথে কিনে আনতো সুতা মাঞ্জা দেওয়ার জন্য কি কি যেন। যার সুতা যত ধার হবে তার সূতায় অন্যের ঘুড়ি বেশী কাটবে। হায়রে কি যে করতো। কত রকমের রং যে কিনে আনতো। সাথে আনতো আরও কি কি যেন ছাঁই পাস। আর এসব কিছু করতে গিয়ে তার পড়াশুনা উঠতো লাটে।

যার কারনে বাবা আর মায়ের হাতে খেয়েছে অনেক মার। মাঝে মাঝে তো এসব এনে লুকিয়ে রাখতো। কখনও বা খাটের নীচে বসে বসে ঘুড়ি বানাতো। যাতে করে আব্বা না দেখে। কত বার যে তাকে মাইরের হাত থেকে বাচিঁয়েছি। তবে একটি কথা না বললেই কিন্তু নয়। আমারও অনেক আগ্রহ ছিল। আমিও চাইতাম আমার ভাইয়ের ঘুড়িটি সবচেয়ে সুন্দর হোক । আর সবার ঘুড়ি কে কেটে দিয়ে সেই হোক প্রথম। আর তার জন্য আমিও তাকে সাহায্য করতাম। পাহাড়া দিতাম তাকে। আব্বা যখন বাসায় না থাকতো তখন সব কিছু নামিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে , ঘুড়ি বানানো হতো আর সূতায় মাঞ্জা দেওয়া হতো। যেই না বাবার আসতো সেই দরজায় ধাক্কা দিলেই বুঝে যেত। আর ওমনিতেই সেই ঘুড়ি আর সূতা কোথায় যেন লুকিয়ে রাখতো। কিন্তু তাতে কি। আব্বা ঠিকই খুঁজে বের করে নিতো। তারপর সব কিছু ভেঙ্গে চুড়ে বাহিরে ফেলে দিতো। আর আমার ভাইটার কি কান্না। মাটিতে গোড় দিয়ে দিয়ে কান্না করতো।

তারপর আবার মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আবার নতুন করে ঘুড়ি বানাতো এবং মাঞ্জা দিতো। তখন আমরাও সাহায্য করতাম। আব্বা তখন থাকতো অফিসে। সবার সাহায্য পেয়ে ভাইটা আমার অনেক সুন্দর একটি ঘুড়ি বানিয়ে এবং সূতা মাঞ্জা দিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতো। আর তার ঘুড়িই হতো সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ঘুড়ি। সত্যি বলতে তার মাঞ্জা দেওয়া সূতার ধার এমন হতো যে সেই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতো। যার কারনে তার বন্ধু বান্ধব শুধু নয়, কোয়াটারের অনেক বড় ভাইয়েরাও তাকে হায়ার করে নিয়ে যেত ‍ঘুড়ি বানাতে আর সূতা মাঞ্জা দিতে। হি হি হি।

শেষ কথা

নিজেকে নিয়ে কিছু কথা

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।

image.png

Screenshot_1.png

Sort:  
 4 months ago 
 4 months ago 

ঘুড়ি বানানোর প্রতিযোগিতার আনন্দে আপনার শৈশবের স্মৃতিগুলো তুলে ধরেছেন ।আপনার প্রতিটা লেখা পড়ে অনেক ভালো লাগলো আসলে এখন তেমনটা আর হয় না আগে আব্বু আম্মুর ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে যে কাজগুলো করা হতো তার মধ্যে একটা আনন্দ ছিল কারণ তখন ওরকম রেডিমেট ঘুড়ি পাওয়া যেত কম। এখন সব রকম ঘুড়ি রেডিমেড পাওয়া যায়। আর তেমন কষ্ট করে ছেলেমেয়েরা করেনা বাবা মাকে বললেই কিনে এনে দেয়। আসলে আগেকার স্মৃতিগুলো বা পুরনো স্মৃতিগুলো মধ্যে অনেক আনন্দ লুকিয়ে থাকে যেগুলো মনে পড়লেই মনের মধ্যে একরকম ভাললাগা কাজ করে। ধন্যবাদ এমন পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 4 months ago 

আপু খুব সুন্দর একটি মন্তব্য করেছেন। তবে আপনার মন্তব্যটির যদি বিরাম চিহ্ন গুলো ঠিক মত দেওয়া হতো এবং বানান গুলো আরও একটু সঠিক হতো তাহলে কিন্তু বেশ ভালো লাগতো। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 4 months ago 

কোয়াটারে বড় হয়েছেন শুনে অনেক ভালো লাগলো। আপনার অতীতের স্মৃতিগুলো পড়ে অনেক ভালো লাগলো। কতটা চমৎকারভাবে ঘুড়ি বানাত এবং মান্জা দিতো। সে সব সময় গুলো এখন আমি ও অনেক মিস করি, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 4 months ago 

আপু আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ সুুন্দর মন্তব্য করে উৎসাহিত করার জন্য।

 4 months ago 

গত সপ্তাহে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির পক্ষ থেকে ঘুড়ি বানানোর প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়েছিল। আপনার ছোট ভাই তো দেখছি আমার থেকেও বেশ ঘুড়ি প্রেমী একজন মানুষ। আমিও অনেক সময় স্কুলের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে আপনার ছোট ভাইয়ের মতো ঘুড়ির অনেক জিনিসপত্র কিনেছিলাম। কিন্তু এইসব ঘুড়ি বানাতে গিয়ে সেই সময় অনেক পড়ালেখার ক্ষতি হয়েছে বাবা মায়ের হাতে অনেক মার খেয়েছিলাম। কিন্তু আপনাদের ওখানে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা হতো জেনে বেশ ভালো লাগলো আপু। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 4 months ago 

ইস্ আপনার ও তো দেখছি আমার ভাইয়ের মত অবস্থা। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।

 4 months ago 

বাহ আপু দারুন তো ঘুড়ি প্রতিযোগিতা দেখে আপনার শৈশবের স্মৃতি মনে পড়ে গেলো আর সেজন্যই আজ আপনার শৈশবের খুব সুন্দর একটি স্মৃতির কথা জানতে পারলাম। ছোটবেলায় আমিও আমার ভাইয়াকে এভাবেই বিভিন্ন কাজে সাহায্য করতাম। বাবার হাতে যাতে ধরা না পড়ে তারজন্য আমিও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতাম। যাই হোক আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে ছোট ভাই তো তাহলে বেল ভালো ঘুড়ি বানাতে পারে। আমার সেই ঘুড়ি খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। শৈশবের স্মৃতির খুব সুন্দর অনুভূতি শেয়ার করেছেন। ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর ব্লগ শেয়ার করার জন্য।

 4 months ago 

ধন্যবাদ আপু আপনার স্মৃতিময় মন্তব্যের জন্য।

 4 months ago 

আসলেই বেশ ভালো লাগতো আপু কোয়াটারের সেই দিন গুলো। এখন আর সেই দিন গুলো নেই। কোয়াটারের আকাশে ঘুড়িও উড়ে না, আর কেউ সূতায় মাঞ্জাও দেয় না। সেই ছেলেবেলার আনন্দ ঘন সময় গুলো মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আপু আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 4 months ago 

ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.032
BTC 58630.84
ETH 2465.03
USDT 1.00
SBD 2.38