হৃদয়ের গহীনে লুকানো ভালোবাসা দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম

আজ ,রবিবার,২৫ শে ডিসেম্বর ২০২২ ইং
১০ই পৌষ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই বেশ ভাল আছেন।আমিও আপনাদের দোয়া ও ভালবাসায় বেশ ভাল আছি।

ভালবাসা সেতো ভালবাসা। ভালবাসার নেই কোন সীমানা, নেই কোন সময়। জীবনের সব ভালবাসাই কিন্তু প্রকাশিত হয় না। কিছু কিছু ভালবাসা রয়ে যায় অব্যক্ত। ভালবাসার মানুষগুলো সব সময়ই খুঁজে ফিরে ভালবাসার মানুষের স্পর্শ, সানিধ্য আর সহযোগিতা। মানুষ তখনই বেশী কষ্ট পায়, যখন বুকে নিয়ে বেড়ায় হাজারও অব্যক্ত ভালবাসার কথাগুলো।

বন্ধুরা কিছুদিন আগে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম একটি রোমান্টিক এবং বাস্তব জীবনের ভালবাসার গল্পের প্রথম পর্ব । আপনারা হয়তো জানেন আমার সে গল্পটিরর নাম ছিল হৃদয়ের গহীনে লুকানো ভালোবাসা। আজ আমি আপনাদের মাঝে হৃদয়ের গহীনে লুকানো ভালোবাসা গল্পটির দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব শেয়ার করার জন্য আসলাম। আশা করি গল্পটি আপনাদের কাছে বেশ ভালই লাগবে। তবে আপনারা যারা গল্পটির প্রথম পর্ব পড়েননি তাদের জন্য নীচে গল্পটির প্রথম পর্বের লিংক দিয়ে দিলাম।

প্রথম পর্ব লিংক

হৃদয়ের গহীনে লুকানো যে ভালোবাসা (6).png

ছবি সোর্স
Made By-@maksudakawsar

হৃদয়ের গহীনে লুকানো ভালোবাসা

দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব

নির্ঝর এসমস্ত সব বিষয়গুলো নিয়ে তার বন্ধুদের সাথে কথা বলে এবং তাদের কে সকল বিষয় খুলে বলে। এবার তার বন্ধরা নির্ঝরকে বলে, আপততঃ ছেলেটির সাথে প্রেমের অভিনয় করে যেতে। তাতে করে নির্ঝরদের পরিবারটা ভাল থাকতে পারবে। আর নির্ঝরের বড় ভাইয়েরও কোন সমস্যা হবে না। নির্ঝর বিষয়টা নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। অবশেষে অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয় সে কিছুদিনের জন্য একটু অভিনয় না হয় করলো। বেশ কিছুদিন যাবৎ শাহীন আসে না। আর বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তায় নির্ঝরদের পরিবার। পরদিন নির্ঝর কলেজ ছুটির পর শাহীন এর সাথে দেখা করে। অবশ্য এর আগের দিন রাতেই নির্ঝর শাহীন কে খবর দিয়ে রেখেছিল। শাহীন নির্ঝর কে বলে, কেন ডেকেছো বল। নির্ঝর বলে বাসায় আসেন না কেন? তখন শাহীন বলে, কোন বাসায় যাবো? যেখানে আমার ভালবাসার মানুষ আমার চোখের সামনে ঘুরে বেড়াবে?এবার নির্ঝর বলে, যদি ভালবাসার মানুষটি পাশে থাকে। শাহীন বলে, সত্যি? সেই থেকে শুরু হয়ে গেল নির্ঝর আর শাহীন এর প্রেম।

এভাবে চলছিল শাহীন আর নির্ঝর এর প্রেম। আজ এখানে কাল সেখানে তারা দেখা করে। আর যদি দেখাই না করতে পারে, তাহলে চিঠি চালাচালি হয়। শাহীন নির্ঝর কে খুব সুন্দর সুন্দর চিঠি লেখে। শাহীন এর পিড়াপিড়িতে নির্ঝরও শাহীন কে চিঠি লেখে। তবে তাদের প্রেম ছিল পবিত্র, স্পর্শ বিহীন আর অতুলনীয়। এভাবে বেশ কিছু দিন চলে যায়, দিনে দিনে নির্ঝর অনুভব করে শাহীন এর প্রতি তার একটা কেমন যেন মায়া পড়ে যাচ্ছে। শাহীন এর পাশে থাকতে তার বেশ ভাল লাগে। শাহীন দূরে গেলে কেমন যেন একটা শূন্যতা অনুভব করে। এরই নাম কি ভালবাসা? এদিকে শাহীন আর নির্ঝর এর সম্পর্ক টা নির্ঝরের পরিবারের কাছে ধরা পড়ে যাচ্ছে। নির্ঝর বিভিন্ন ভাবে বুঝতে পারে যে, তার পরিবার কখনও এই সম্পর্ক টা মেনে নিবে না। এদিকে আবার শাহীন এর পরিবারও বিষয়টি জানতে পারে। শাহীন এর মা মাঝে মাঝে নির্ঝরদের বাসায় আসে। অনেক সময় তিনি নির্ঝর-কে শুনিয়ে শুনিয়ে বিভিন্ন কষ্ট দায়ক কথাও বলেন। এদিকে নির্ঝরের বড় ভাইয়ের যে সমস্যা ছিল সামাজিক ভাবে সব কিছুর সমাধার হয়ে গেছে। নির্ঝর লক্ষ্য করে দেখলো যে , তার পড়াশুনা সবই গুল্লায় যাচ্ছে। সামনে আবার তার এইচ এস সি পরীক্ষা। সব নিয়ে নির্ঝর ভাবনায় পড়ে গেছে।

অবশেষে অনেক ভাবনা চিন্তা করে নির্ঝর ভেবে দেখলো, যে সম্পর্কের কোন ভবিষৎ নেই. কি লাভ সে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার। তাই সে শাহীন এর সাথে দেখা করলো এবং শাহীন কে বলল তাকে ভুলে যেতে। কিন্তু শাহীন বলে এটা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। যে মন একবার পুড়ে যায় তা আর কোন ভাবেই ঠিক হয় না। এবার নির্ঝর বিষয়টাকে এভোয়েড করার জন্য শাহীন এর সাথে একটু অভিনয় করা শুরু করে দেয়। নির্ঝর শাহীন কে বলে প্রেম করলে বিয়ে করতে হবে এমন কোন কথা নেই। তারপক্ষে আর সম্পর্ক কন্টিনিউ করা সম্ভব নয়। এ বলে নির্ঝর চলে আসে। এরপর থেকে নির্ঝর আর শাহীন এর সাথে আর দেখা করেনি। এমন কি শাহীন বহু চেষ্টা করার পরও নির্ঝর আর দেখা করে নি।

দুই এক বছর পরের কথা , একদিন নির্ঝর শুনতে পায় তার বড় ভাই তার মাকে বলছে যে, শাহীন নাকি তার চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী কে বিয়ে করেছে। বিষয়টি ক্লিয়ার করে বলি, শাহীন এর চাচাতো ভাই তখন কুয়েত থাকতো। কুয়েত আর ইরানের যুদ্ধে তার চাচাতো ভাই মারা যায়। সেই চাচাতো ভাই এর দুই সন্তান সহ বউ বিধবা হয়ে যায়। তখন কুয়েত সরকার ঘোষণা করেন যে, যদি চাচাতো ভাইয়ের বিধবা স্ত্রীকে কেউ বিয়ে করে তবে তাকে কুয়েত সরকার কুয়েতে নিয়ে যাবে। তাই শাহীন তার চাচাতো ভাই এর বিধবা স্ত্রী কে বিয়ে করে কুয়েতে চলে যায়। অবশ্য নির্ঝর এর সাথে এরই মধ্যে শাহীন এর দুই একজন বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছে।সবাই যেন নির্ঝর কে অন্যভাবে টিট করে কথা বলে। অবশ্য শাহীন এর এসমস্ত ঘটনায় নির্ঝর বেশ আঘাতও পায়। কিন্তু সে কাউকেই তার মনের কষ্ট বুঝতে দেয় না বা বুঝায় না। শুধু রাতে বালিশে মুখ লুকিয়ে কাদেঁ।এভাবে বেশ কয়েক বছর কেটে গেল। শাহীন এর বিষয়টা নির্ঝর কে এখন আর তেমন কষ্ট দেয় না।

একদিন নির্ঝর হঠাৎ স্বপ্নে দেখে যে, শাহীন মারা গেছে। আর নির্ঝর তাকে দেখতে গেছে। স্বপ্নটি দেখে নির্ঝর বেশ ভয় পায় এবং বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন বেশ টেনশন ও করে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা যে কি, কেউ তা বলতে পারে না। কয়েকদিন পরের কথা নির্ঝর তার বোনদের কে নিয়ে একটু ঘুরতে বের হয়েছে। হঠাৎ পরিচিত একজন মেয়ের সাথে দেখা। সেই মেয়েটির সাথে আবার শাহীন এর ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে। তার মুখে নির্ঝর শুনতে পায়। শাহীন নাকি স্টক করে মারা গেছে। পরে অবশ্য নির্ঝর বিষয়টি নিয়ে অনেকের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারে বিষয়টি সত্য। আর এভাবেই পরিসমাপ্তি ঘটলো একটি নীরব প্রেমের।

কেমন লাগলো আপনাদের কাছে আমার লেখা বাস্তব জীবনের গল্পটি। জানার অপেক্ষায় রইলাম।

image.png

❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

@maksudakawsar

image.png

Sort:  
 2 years ago 

গল্পটা বেশ ভালো লাগলো। আর স্বপ্ন যে মাঝে মাঝে এমন সত্যি হয়ে যায় আসলে এটা ভাবতে খুব খারাপ লাগে। নির্ঝরের স্বপ্নটা যে সত্যি হবে এটা কখনোই ভাবতেই পারিনি। পড়তে পড়তে বুজলাম।খুব ভালো ছিল গল্পটি আপু।

 2 years ago 

আপু ধন্যবাদ। গল্পটা আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারও বেশ ভালো লাগছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 62311.78
ETH 2418.00
USDT 1.00
SBD 2.67