শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি- মাকে মনে পড়ে আমার মাকে মনে পড়ে II written by @maksudakawsar II

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago (edited)

আসসালামু আলাইকুম

আমরা যারা আমাদের শৈশবটাকে ফেলে এসেছি। তারা কিন্তু প্রত্যেকেই চাই আবার সেই শৈশবে ফিরে যেতে। চাই শৈশবটাকে আবার খুব কাছ হতে উপভোগ করতে। মাঝে মাঝে হয়তো আমরা কেউ কেউ আমাদের সেই শৈশবে ফিরে যাই। ফিরে যাই হাজারও স্মৃতির মাঝে। কারন আমরা কেউ কখনও আমাদের জীবন থেকে ফেলে আসা শৈশব কে মুছে দিতে পারবো না।

কেমন আছেন সবাই? বেশ ভালো আছেন নিশ্চয়। আসলে প্রিয় মানুষগুলো ভালো থাকুক এই কামনাই করি। প্রতিদিনের মত করে আজও চলে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন করে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আসলে সব সময়ই ভাবী যে নিজের মনের মাঝে ঘুরপাক খাওয়া কথা গুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো। তাই তো আজও আবার সেই ছেলেবেলার কিছু স্মৃতি কথা নিয়ে চলে আসলাম আপনাদের মাঝে। আশা করি আমার আজকের পোস্টটিও আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে।

অলির কথা শুনে বকুল হাসে কই, তাহার মতো তুমি আমার কথা শুনে হাসো না তো! (3).png

CANVA দিয়ে তৈরি

শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি-মাকে মনে পড়ে আমার মাকে মনে পড়ে

জানিনা মা আমার কোথায় আছে, কেমন আছে। শুধু এতটুকু জানি যে মা আছে আমার সমস্ত ‘অনুভব জুড়ে। দেখতে দেখতে প্রায় ৪ বছর হতে চলছে মা চলে গেছে। চলে গেছে আমাদের ছেড়ে। তবুও মা যেন সারাক্ষন আমার সাথে থাকে। মাকে ভুলে যাওয়ার দুঃসাহস আমার নেই। কারন আমার মা যে আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ। কেন জানি মাকে মনে কদিন যাবৎ বেশ মনে পড়ছে। মনে পড়েছে ছেলেবেলার সেই দিনগুলোর কথা যখন মা আমাদের সুখের জন্য নিজের জীবন কে করেছে বিপন্ন। তাই ভাবলাম আজ মা কে নিয়ে আপনাদের সাথে কয়েকটি কথা শেয়ার করি। তবে তার আগে দোয়া করি আমার মা যেখানে থাকুক, তিনি যেন ভালো থাকেন। তিনি যেন তার না পাওয়া সকল কষ্ট গুলো কে ভুলে যেতে পারে। আর তার সকল অপ্রাপ্তি গুলো কে অর্জন করতে পারে।

যখন খুব ছোট ছিলাম মা ব্যস্ত থাকতো আমাদের জন্য অনেক কিছু করতে। আমার আজও মনে পড়ে প্রতিটি সিজনে মা আমাদের জন্য নানা রকমের খাবার তৈরি করতো। শীতের দিনে সকাল সকাল ঘুম থেকে ‍উঠেই দেখতাম গরম গরম রুটি আর নতুন আলু ভাজি। মা যে কোন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমাদের জন্য এমন নাস্তা করতো সেটাই তো বুঝতে পারতাম না।বুঝতে পারতাম না মায়ের ভালোবাসা। আবার শীতের দিনে আরও একটি বিখ্যাত খাবার ছিল নানা বাড়ীর ঝোলা গুড়্। এখন আর ঝোলা গুড় দেখা যায় না। অথচ ছেলেবেলায় দেখতাম ছোট মামা হাড়িতে হাড়িতে ঝোলা গুড় নিয়ে আসতো। আর আমরা মজা করে খেতাম।

আমাদের সময় নভেম্বর ডিসেম্বরে খুব শীত পড়তো। আর তখন চলতো স্কুলে পরীক্ষা। পরীক্ষায় যাতে করে পাশ করি তা নিয়ে মায়ের সে যে কি চিন্তা। প্রতিদিন সন্ধ্যা মা যখন রান্না ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকতো তখন আমরা ঘরের ভিতরে পড়তাম। কিন্তু মায়ের শর্ত ছিল জোড়ে জোড়ে চিৎকার করে পড়তে হবে। যাতে করে আশেপাশের মানুষজন শুনতে পারে। যদি পড়ার কোন আওয়াজ মায়ের কানে না পৌঁছাতো, তখন মা রান্না ঘর হতে লাঠি হাতে দৌড়ে আসতো। আর সেই লাঠির বাড়ী কিন্তু দু একটি পিঠে পড়েছিল আমারও। এমনও হাজারও স্মৃতি বিজড়িত আমার শৈশব। মায়ের হাতের সেই ইলিশ মাছ রান্নার কথা আজও ভুলতে পারি না। ভুলতে পারি না ইলিশ মাছের সেই জ্বাল দেওয়া ঝোলের কথা। আর ভুলতে পারি না জোড় করে রাতে ঘুমের আগে মায়ের দুধ খাওয়ানোর কথা।

শীতের দিনে মায়ের পেরেশানী উঠে যেত কখন পিঠা বানাবে আর আমাদের কে খাওয়াবে। তাই বেশ ঘটা করে পিঠে বানানোর আয়োজন করা হতো। পাশের বাসার একজনের ঢেকি ছিল। মা সেই ঢেকিতে চাল গুড়ো করতো। তারপর সেই চলের গুড়ি দিয়ে ভাপা পিঠা, বিবিখানা পিঠা, চিতই পিঠা, দুধ চিতই পিঠা, কুলি পিঠা আর কত যে পিঠা বানাতো সেটা মনে করে বলতে বলতে রাত পার হয়ে যাবে। আর মায়ের বানানো সেই পিঠা খেলে আর রাতের ভাত, সকালের নাস্তা খেতে হতো না কখনও। আজও জিভে লেগে আছে সেই স্বাদে ভরা পিঠার স্বাদ। অথচ আজ মা নেই বলে সেই দিনগুলি এখন শুধু স্মৃতি হিসাবে জীবনের সাদা খাতায় রয়ে গেল। রয়ে গেল ফেলে আসা ছেলেবেলার স্মৃতিগুলোও।

শেষ কথা

সত্যি বলতে মুছে যাওয়া দিন গুলো আমায় যে পিছু ডাকে। তাই তো মনে ইচ্ছে জাগে একবার যদি সুযোগ পেতাম তাহলে আবার শৈশবে ফিরে যেতাম। আপনাদের ইচ্ছে কি একটু জানাবেন তো। অপেক্ষায় রইলাম আপনাদের মতামতের।

নিজেকে নিয়ে কিছু কথা

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।

image.png

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 2 months ago 
 2 months ago 

আপু আপনি আজকে আমাদের মাঝে খুবই সুন্দর একটি স্মৃতিময় পোস্ট শেয়ার করেছেন। সত্যিই আপু মায়ের কোনো তুলনা হয় না। প্রতিটা মা তার সন্তানকে খুবই বেশি ভালোবাসে। তাছাড়া শীতের সময় আপনার মা আপনার জন্য পিঠা তৈরি করে দিত সেই সাথে সকালে গরম গরম রুটি ও আলু ভাজি। আর এমনিতেও শীতে পিঠা খেতে খুবই ভালো লাগে। তবে মা সব সময় আমাদের জন্য ব্যস্ত। মায়ের ভালোবাসার মতো এমন ভালোবাসা আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। পোস্টটি দারুণ ছিল ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

 2 months ago 

ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 2 months ago 

খুবই সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন আপনি ৷ আসলে মায়ের ভালবাসার সাথে কোন কিছুই তুলনা হয় না৷ পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে মা৷ অন্য কেউই তার থেকে বেশি ভালোবাসে না৷ শীতের সময় আপনার মা আপনার জন্য পিঠা তৈরি করে দিত শুনে খুবই ভালো লাগছে৷ আসলে মায়েরা সবসময় চায় যে তাদের সন্তান ভালো কিছু পাক এবং ভালো কিছু খেতে পায়৷ তাই আপনার মা আপনার জন্য পিঠা তৈরি করে দিত৷ যাই হোক খুব সুন্দর একটি মুহূর্ত শেয়ার করেছেন৷ অসংখ্য ধন্যবাদ৷

 2 months ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 76535.07
ETH 2962.73
USDT 1.00
SBD 2.65