লাইফ স্টাইল- 💝দুঃশ্চিন্তা আর আতংকের কয়েকটি রাত💝
আসসালামু আলাইকুম
আসসালামু আলাইকুম
জীবন মানেই এক দুঃশ্চিন্তার পাহাড়। মেঘ বৃষ্টির খেলার মত জীবনের প্রতিটি মূহূর্ত। এই মেঘ তো এই বৃষ্টি। চারদিকে যে অবস্থা তাতে অনেকটা দুঃশ্চিন্তায় যাচেছ দিন। মনটা বেশী ভালো লাগে না। কয়েকটা দিন যেন ঝড়ের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছি। তবুও প্রতিদিন চেষ্টা করেছি আপনাদের মাঝে কিছুটা সময় নিজেকে নিয়ে আসতে। কারন আপনারাই যে আমার দ্বিতীয় পরিবার। তো কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশা করবো যে যেখানেই থাকেন ভালো থাকেন এবং সাবধানে থাকেন।আমি @maksudakawsar। প্রতিদিনের মত করে আজও চলে আসলাম আপনাদের মাঝে।
ছবি সোর্স
Made By-@maksudakawsar
কি ভাবছেন? কি নিয়ে আবার এত চিন্তাভাবনা? আসলে চারদিকে এখন বেশ জ্বরের সিজন চলছে। ভাইরাস জ্বরের সাথে সাথে এখন ডেঙ্গুজ্বরও প্রকোট আকার ধারন করেছে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে আশেপাশের কোন না কোন ঘরে একজন জ্বরের রোগী আছে। তো যেহেতু মেডিকেল কলেজে চাকুরী করি তাই এই বিষয়টি আরও বেশী জানি। কারন প্রতিদিনই শুনছি কেউ না কেউ জ্বরে আক্রান্ত। তাও যদি হয় ডেঙ্গু তাহলে তো একটু বেশী চিন্তার ই কথা। আসলে কথায় আছে না যে বেশী ভয় পায় তার কাছেই সব আসে। তো আমার বেলায়ও তাই হলো।
এইতো গত শুক্রবারের কথা। বিকেলে একটু বাহিরে গিয়েছিলাম। তো বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ৯.০০ টা। হঠাৎ করে আপনাদের ভাইয়া বললো তার নাকি শরীরটা জ্বর জ্বর লাগছে। দৌড়ে গিয়ে নীচের থেকে থার্মোমিটার নিয়ে আসলাম। ওমা এ দেখি ৯৯.০০ ডিগ্রী জ্বর। ভাবলাম এটা তেমন কিছু না। তাই রাতে আর তেমন দুঃশ্চিন্তা করলাম না। রাত তখন দুটো কি তিনটে হঠাৎ অনুভব করলাম কেমন যেন গরম একটা তাপ। লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম। দেখি জ্বরে শরীরে হাত দেওয়া যায় না। সাথে সাথে জ্বর মাপলাম। তখন তো দেখি জ্বর ১০২ডিগ্রী। কোন চিন্তা ভাবনা না করে সাথে সাথে শরীর পন্স করে দিলাম।কিন্তু না জ্বর কিছুতেই থামছিল না। এরমধ্যে শুনলাম আমি ঘুমিয়ে থাকায় সে দু তিনবার বাথরুমেও গিয়েছে। আমার চিন্তাটা আরও বেড়ে গেল। তাকিয়ে দেখলাম দু চোখ লাল হয়ে আছে। এখন তো আরও বেশী চিন্তা বেড়ে গেল। চারদিকে যে হারে ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে নাকি হাসপাতালে সিটও পাওয়া যাচেছ না ।
আমাদের বাসায় আমরা মাত্র দুজনই থাকি। তাই বেশ ভয় ভয় লাগছিল। সারারাত আর ঘুমোতে পারলাম না। কিছুক্ষন পর পর গায়ে হাত দিয়ে তাপমাত্রা চেক করি। বেশ চিন্তা হতে লাগলো। এর মধ্যে কয়েকবার গা পোন্স করে দেওয়া হলো। না জ্বর নামছে না। ঘুম তো আমার আর হলো না। কারন তার মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের সব লক্ষনগুলোই খুঁজে পাওয়া গেল। অনেক চিন্তা হতে লাগলো। ভাবলাম পরদিন আগে ডাক্তার দেখাবো তারপর ডেঙ্গু টেস্ট করবো।পরদিন সকালে অফিস যেয়ে পাচঁদিনের ছুটি নিয়ে আসলাম। লাগলে পরে নিবো। তারপর আমার বেশ পরিচিত একজন মেডিসিনের অধ্যাপক কে ফোন দিলাম। উনি বলেন সন্ধ্যায় শান্তিনগর উনার চেম্বারে নিয়ে যেতে। সন্ধ্যায় পপুলারে যেয়ে তো আমার মাথা খারাপ হয়ে গেল। এ কি দেখছি আমি। কোথাও কোন ফাঁকা নেই। নেই লিফটে উঠার উপায়। তারপরও দাড়িঁয়ে রইলাম। এবার চলে গেলাম আমার সেই মেডিসিনের ডাক্তারের চেম্বারের সামনে। সেখানে তো বসার কোন জায়গা নেই। রোগীর সাথে রোগীর লোকও বসে। অনেক রিকোয়েস্ট করে একজন ইয়াং বয়সের ছেলে কে উঠিয়ে সেখানে আপনার ভাইয়া কে বসালাম। তারপর ডাক্তারের সহযোগীর কাছে আমার নাম লিখে একটা স্লিপ ধরিয়ে দিলাম। বেশ কিছুক্ষন যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম যে সেই সহযোগী আমার স্লিপ ডাক্তারের কাছেই দেয়নি।
কিন্তু সেদিন রাতে যেন জ্বর আরও পেয়ে বসলো। জ্বরের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। দুটি মানষ ঘরে একা একা। আমি বেশ আতংকের মধ্যে ছিলাম। সারারাত ঘুমনেই আমার। জ্বর মাপা, পোন্স করা, স্যালাইন, শরবত, সুপ ভিটামিন সি যুক্ত ফল। একটার পর একটা করে করে খাওয়াচ্ছি তাকে। অবশ্য একটা ভালো সাইন ছিল সেটা হলো তার রুচির কোন পরিবর্তন হয় নি। যাক এভাবেই তার পাশে থেকেছি। পরদিন বিকেল ৪টায় অনলাইনে রিপোর্ট চলে আসে। ডেঙ্গু নেগেটিভ। কিন্তু জ্বর তো আর কমছে না। তাই রোগীকে বাসায় একা রেগে সব খাবার সামনে দিয়ে চলে যাই ডাক্তারের চেম্বারে। ডাক্তার রিপোর্ট দেখে আরও কিছু টেস্ট দেয়। এতে করে আমার টেনশন আর বেড়ে যায়। অবশ্য ডাক্তার বলে দেয় যদি বুধবারের মধ্যে জ্বর না কমে তাহলে টেস্টগুলো করাতে। বেশ টেনশনে কাটে সেই সোমবার হতে বুধবার পর্যন্ত আমার। সেই সাথে রোগীর সেবা। কোন কুল কিনারা খুজেঁ পাচ্ছিলাম না।
প্রতিদিন নিয়ম করে জ্বর মাপা, বার বার এটা সেটা বানিয়ে দেওয়া, শরীর পোন্স করা, গোসল করিয়ে দেওয়া এসবের মধ্যে দিয়ে আমার সময় পার করতে হয়। সেই সাথে তো আছে রোগীর বিভিন্ন পথ্য তৈরি। তবে ভাগ্যিস যে আমার ভাই বোনগুলো ছিল। এ সময়ে আমার ঘরের সব বাজার গুলো তারাই আমাকে করে দেয়। আমার খোঁজ খবর নেয়। এদিকে আপনার ভাইয়ার অফিসের চাপ। বললাম চাকুরী ছেড়ে দাও।আগে জীবন।কিন্তু না সে শুনবে না। চাকুরী সে করবে। সে বলে যে সময় আসছে। তোমার অনেক কষ্ট হয়ে যাবে। যাক অবশেষে মঙ্গলবার রাত হতে জ্বর কমা শুরু করেছে এবং বুধবার হতে আপনাদের ভাইয়া অফিস করা শুরু করেছে।
কিন্তু গত কয়েক দিন একাধারে রাত জাগা, টেনশন, রোগীর সেবা আর রান্না বান্না সব মিলিয়ে আমার অবস্থা এখন নাজেহাল। কোমরে ব্যাথা, শরীর বেশ দূর্বল সহ নিজের কাছে নিজের বেশ অসুস্থি ’লাগছে। কিছুতেই যেন ভালো লাগছে না। বার বার মনে হচ্ছে আমি বেশ অসুস্থ্য হয়ে গেছি। সে যাই হউক। প্রিয় মানুষটি তো সুস্থ্য হয়ে পাশে বসে আছে। এর চেয়ে বেশী কিছু কি আশা করা ঠিক। যতই কাটুক না কেন দুঃশ্চিন্তা আর আতংকে কতগুলো রাত। প্রিয় মানুষটি যখন ভালোবাসার হাসি হাসে তখন সমস্ত পৃথিবী যেন আমায় দেখে হাসে। আপনারা সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
আজ এখানেই শেষ করছি। চেষ্টা করি প্রতিনিয়ত আপনাদের ভালো লাগার মতো করে কিছু ব্লগ শেয়ার করতে। তাই আশা করি আমার আজকের ব্লগটি আপনাদের কাছে কিছুটা হলেও ভালো লেগেছে। আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের আশায় রইলাম। আশা করি আপনাদের ভালো লাগা আর মন্দ লাগা দুটোই জানতে পারবো। সবাই ভালো থাকবেন এবং সাবধানে থাকবেন।
পোস্টের ধরন | লাইফ স্টাইল |
---|---|
ডিভাইস | VIVO-Y22S |
ফটোগ্রাফার | @maksudakawsar |
স্থান | ঢাকা, বাংলাদেশ |
আমি @maksudakawsar আমি একজন বাংলাদেশী ইউজার। পেশায় একজন চাকুরী জীবি কাম গৃহীনি কাম ব্লগার।প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি একজন ভালো মানুষ হয়ে মানুষের পাশে থাকার। কারন আমি বিশ্বাস করি দানে কমে না। বরং বারে। আর ভালো থাকা মানে শুধু নিজেকে একা নিয়ে নয়, সবাই কে নিয়েই ভালো থাকতে হয়।তাই যখনই কারো সমস্যার কথা শুনি ঠিক তখনই ছুটে যাই তার পাশে। চেষ্টা করি নিজের যতটুকু সম্ভব ততটুকু দিয়ে তার পাশে দাড়াঁতে। খুব মিস করি আমার হারানো মাকে। দোয়া করি ওপারে ভালো থাকুক আমার মা।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
সুস্থতা অনেক বড় নিয়ামত।
আমাদের ভাই সুস্থ হয়েছেন জেনে ভীষণ খুশি হলাম। এখনকার জ্বর বেশ মারাত্মক, যাক তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়েছে এটাই বড় বিষয়। আপনার এই কদিন বেশ কষ্ট হয়েছে বোঝাই যাচ্ছে।
জ্বী ভাইয়া অনেক কষ্ট হয়েছিল। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে একটি সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
অবশেষে সুসংবাদ পেলাম ভাইয়া অসুস্থতা কেটে গেল এখন সুস্থ আছে অবশেষে সৃষ্টিকর্তা মুখ ফিরে তাকালেন। কিন্তু আপনার লেখা গুলো যত পড়ছিলাম ততই আমার দুশ্চিন্তা বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু যখন ডেঙ্গু নেগেটিভ পেলেন তখন একটু শান্তি পেলাম। যাক সুস্থ হয়ে উঠল এখন আপনার জন্য দোয়া রইল। আপনি যেন সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন সেই কামনা করছি।
আরে বলেন না আপু অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছি। দোয়া করবেন আমার জন্য। ধন্যবাদ সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
আপু এখন কার সময় জ্বর এলেই সকলে ডেঙ্গু জ্বরের ভয়ে আতঙ্কিত হয়। যার কারনে হাসপাতালগুলোতে ছোট থেকে বড় সকলেরই ডেঙ্গু টেস্ট করতে দেখা যায়। আর এজন্যই হাসপাতালগুলোতে প্রচন্ড রকম ভিড় করেছে। যাইহোক আপু, আমাদের ভাইয়ের জন্য আপনিও বেশ কয়েকটা দিন ঘুমহীন চোখে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে ভাইয়ের সেবা শুশ্রুষা করে সুস্থ করে তুলেছেন, তা জেনে খুব ভালো লাগলো। যাক দুশ্চিন্তা আর আতঙ্কের কয়েকটি রাত কাটানোর পর আবারও সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে এজন্য এজন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।
ভাইয়া আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। খুব সুন্দর এবং অসাধারণ একটি মন্তব্য করে ধন্য করে দিলেন।