লাইফ স্টাইল পোস্ট -“মন খারাপের কিছুটা সময়- ২য় পর্ব” || Written by @maksudakawsar ||

in আমার বাংলা ব্লগ11 days ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন সবাই ? আশা করি আপনারা সবাই বেশ ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। বেশ ব্যস্ততায় যাচেছ সময়। সেই সাথে তো রয়েছে প্রচুর মানসিক চাপ। সব মিলিয়ে বেশ হিমশিম খেতেই হরো চ্ছে। তবুও এরই মধ্যে চলে যাচ্ছে সময় আর দিন। আর সেই সাথে জীবন থেকে চলে গেল কিছু সুন্দর সময়ও। বুঝতেই পারলাম না সময়গুলো কখন আসলো আর কখন গেল। যাই হোক আমিও চলে আসলাম আজ আবার আপনাদের মাঝে নতুন করে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।


image.png

এই তো কয়েকদিন আগের কথা। পূজার ছুটিতে চারপাশ যেন নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছিল। রাস্তাঘাটে আগের মতো ভিড় নেই। মানুষের মুখে তাড়াহুড়া নেই। বাতাসেও ছিল এক অদ্ভুত প্রশান্তি। যারা চাকরিজীবী তারা সবাই ব্যস্ত সময়ের ভেতর থেকে একটু স্বস্তি খুঁজে নিজেদের পছন্দের জায়গায় ঘুরতে চলে গিয়েছিল। কেউ পাহাড়ে কেউবা সমুদ্রের ধারে। কেউ আবার গ্রামের টানে ফিরে গিয়েছিল শৈশবের ঘরে। শহর তখন যেন একদম নিস্তব্ধ একাকী এক শহর হয়ে উঠেছিল।

WhatsApp Image 2025-10-19 at 22.54.39_f884b3e2.jpg

তো যাই হোক সেদিন বিকেলের পর থেকেই শহরের রাস্তায় একটা আলাদা রূপ ছিল। চারদিকে হালকা আলো ছড়িয়ে পড়েছে। বাতাসে একটা মিষ্টি ঘ্রাণ। শহরের রিকশাগুলো ধীরে ধীরে চলছিল রাস্তার ধারে। দোকানগুলোর বাতিগুলো একে একে জ্বলে উঠছিল। আমি আর আপনাদের ভাইয়া তখন হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গিয়েছিলাম এজিবি কোলনীর কাছে। সেখানে বেশ কিছু খাবারের দোকান সারি সারি সাজানো আছে। ছোট ছোট দোকান কিন্তু ভেতরে অনেক মানুষ। কেউ পরিবার নিয়ে এসেছে, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে, কেউ আবার একা বসে গরম চা খাচ্ছে। পুরো জায়গাটাতেই একটা আনন্দময় পরিবেশ ছড়িয়ে ছিল। আমরা দুজনে হাঁটতে হাঁটতে দোকানগুলো দেখতে লাগলাম প্রতিটি দোকানে আলাদা আলাদা খাবার। কারো দোকানে ফ্রাইড রাইস, কারো দোকানে বারবিকিউ আবার কোথাও কাবাব পরোটা আর ঠান্ডা পানীয়র আয়োজন। সব মিলিয়ে একধরনের উৎসবের আবহ ছড়িয়ে ছিল। মনে হচ্ছিল সবাই যেন একটুখানি শান্তি খুঁজে পেয়েছে এই ব্যস্ত শহরের ভেতর।

WhatsApp Image 2025-10-19 at 22.54.36_a884115e.jpg

আমরা প্রথম থেকেই ভেবে রেখেছিলাম আজকে লুচি আর গ্রীল খাওয়া হবে। আপনাদের ভাইয়া আগেই বলেছিল আজ সে ট্রিট দেবে। আমি তখন খুশিতে ছিলাম কারণ এমনভাবে হুট করে বাইরে খেতে যাওয়া আমার জন্য আনন্দেরই ছিল। তাছাড়া পুরো দিনটা এত সুন্দর লাগছিল যে মনে হচ্ছিল এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলোই জীবনের আসল আনন্দ। আমরা হাঁটতে হাঁটতে একটা দোকানের সামনে দাঁড়ালাম। যেখানে টেবিলের উপর সাজানো ছিল গরম গরম লুচি আর পাশে ধোঁয়া ওঠা গ্রীল। দোকানদার হাসিমুখে বলল কি খাবেন? আমি আর আপনাদের ভাইয়া একে অপরের দিকে তাকিয়ে বললাম লুচি আর গ্রীল দেবেন। দোকানদার খুশি মনে বলে উঠল এখনই দিচ্ছি বসে পড়ুন। আমরা একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলাম দোকানের সামনে।হালকা বাতাস বইছিল পাশে। কিছু মানুষ বসে গল্প করছিল কারো হাসির শব্দ ভেসে আসছিল কারো ফোনে গান বাজছিল সব মিলিয়ে পরিবেশটা ছিল খুবই প্রাণবন্ত।

WhatsApp Image 2025-10-19 at 22.54.36_6c6e9c8a.jpg

খাবার আসার আগেই গন্ধে মন ভরে গিয়েছিল গ্রীলের ধোঁয়া বাতাসে ভেসে এসে মনে হচ্ছিল ক্ষুধাটা যেন আরও বেড়ে যাচ্ছে দোকানের আলোতে খাবারগুলো আরও মজাদার লাগছিল কিছুক্ষণ পর দোকানদার প্লেটে করে গরম লুচি আর মজার গ্রীল এনে দিল লুচির গায়ে তখনও গরম ভাপ উঠছে গ্রীলের ওপরে হালকা ঝাল মসলা দেওয়া সুন্দরভাবে গ্রিল করা মুরগির টুকরোগুলো দেখতে এত আকর্ষণীয় লাগছিল যে আমি একটু না খেয়েই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। আমরা খাওয়া শুরু করলাম প্রথম লুচিটা গরম গরম হাতে নিয়ে একটু ছিঁড়ে গ্রীলের সাথে খেয়ে দেখি স্বাদটা সত্যিই অসাধারণ সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল দিনভর যত কষ্ট ছিল সব ভুলে গেছি যেন প্রতিটি কামড়ে একটুখানি সুখ লুকিয়ে আছে ভাইয়াও বলল আজকের ট্রিটটা সত্যিই জমে গেছে আমরা খেতে খেতে গল্প করতে লাগলাম জীবনের ছোটখাটো কথা অফিসের গল্প পুরোনো স্মৃতি সব কিছুই একে একে চলে এলো কথায় কথায় সময় কেটে যাচ্ছিল বুঝতেই পারছিলাম না

WhatsApp Image 2025-10-19 at 22.54.37_c0db61f4.jpg

খাবারের মাঝে মাঝে দোকানদার এসে পানি দিচ্ছিল হাসিমুখে বলছিল কেমন লাগছে আমি হেসে বললাম খুব ভালো লাগছে তিনি বললেন এখানকার সব খাবারই নিজের হাতে বানানো তাজা মশলা ব্যবহার করা হয় যেন মানুষের মুখে হাসি ফোটে এমন খাবার দেওয়াই তার আনন্দ এই কথাটা শুনে ভালো লাগল মনে হলো শহরের ভেতরেও এমন মানুষ আছে যারা শুধু ব্যবসা নয় ভালোবাসা নিয়েও কাজ করেন। আমাদের আশেপাশের মানুষজনও মজার সময় কাটাচ্ছিল কেউ গল্প করছে কেউ আবার শুধু বসে থেকে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে কেউ কেউ হালকা হেসে কথা বলছে যেন সবাই ব্যস্ত জীবন থেকে একটুখানি মুক্তি পেতে এসেছে আমি সেই মুহূর্তে ভাবছিলাম হয়তো এভাবেই মানুষ নিজেদের ক্লান্তি ভুলে কিছু সময় বাঁচতে চায়

WhatsApp Image 2025-10-19 at 22.54.38_3e288971.jpg

আমরা ধীরে ধীরে খাবার শেষ করলাম গরম লুচি আর গ্রীলের স্বাদ এখনো জিভে লেগে আছে মনে হচ্ছিল এমন খাবার আগে কখনো খাইনি খুবই সহজ আর মজাদার এক অভিজ্ঞতা ছিল সেটি খাওয়া শেষে দোকানদার বিল দিল পাঁচশ পঞ্চাশ টাকা ভাইয়া বিলটা পরিশোধ করলো আর বলল আজ আমার ট্রিট তোমার জন্য এই একটুখানি আনন্দই অনেক আমি হেসে বললাম হ্যাঁ সত্যিই আজকের দিনটা অনেক সুন্দর হয়ে গেল। খাবার শেষে আমরা দোকান থেকে বের হয়ে এলাম রাস্তার বাতিগুলো তখন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে চারপাশে হালকা বাতাস বইছে রাস্তার ধারে কিছু মানুষ হাঁটছে কেউ আইসক্রিম খাচ্ছে কেউ চা হাতে দাঁড়িয়ে গল্প করছে আমরা ধীরে ধীরে হেঁটে যাচ্ছিলাম রাস্তার পাশের গাছগুলোর পাতা হালকা নড়ছিল আকাশে তখন চাঁদের আলো পড়েছে সব মিলিয়ে একটা শান্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছিল

আমি ভাবছিলাম একদিন না হয় ঘরে বসে মন খারাপ করছিলাম কিন্তু আজ এই সামান্য বেরিয়ে আসা মনটাকে যেন একদম হালকা করে দিল কখনো কখনো জীবনের আনন্দ এমন ছোট ছোট জায়গাতেই লুকিয়ে থাকে বড় কোনো আয়োজনের দরকার হয় না শুধু সময় নিয়ে ভালো মানুষের সঙ্গ পেলে সাধারণ মুহূর্তগুলোও হয়ে ওঠে বিশেষ। আমরা কিছুক্ষণ হাঁটতে হাঁটতে কথা বললাম ভাইয়া বলল মাঝে মাঝে এভাবে বের হওয়া দরকার মনটা ভালো থাকে আমি বললাম একদম ঠিক বলেছো অনেকদিন পর এমনভাবে রাস্তায় হাঁটা এত আনন্দ লাগছে মনে হচ্ছিল পুরো শহরটা যেন নতুন রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে আশেপাশে ছোট ছোট দোকানের আলো গাছের ছায়া আর ঠাণ্ডা হাওয়া সব মিলিয়ে এক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছিল।

WhatsApp Image 2025-10-19 at 22.54.39_b491379b.jpg

রাস্তার পাশে এক দোকান থেকে ভেসে আসছিল ভাজা মাছের গন্ধ আমি বললাম পরের বার এখানে এসে এটা খেতে হবে ভাইয়া হেসে বলল ঠিক আছে পরের বার তোমার পছন্দমতো খাওয়া হবে আমি তখন বললাম পরের বার কিন্তু আমি তোমাকে ট্রিট দেব এইভাবে গল্প করতে করতে আমরা হাঁটছিলাম একসময় মনে হলো শহরের ভেতরেও এমন শান্তি পাওয়া যায় যদি কেউ খুঁজে নিতে চায়। বাড়ি ফেরার সময় মনে হচ্ছিল দিনটা সত্যিই সুন্দর কেটেছে কোনো পরিকল্পনা ছিল না কোনো বড় আয়োজনও না শুধু দুজন মানুষ রিকশায় চড়ে শহরের পথে ঘুরেছে একটু ভালো খাবার খেয়েছে আর গল্প করেছে কিন্তু সেই সাধারণ মুহূর্তই মনে এক অনন্য স্মৃতি তৈরি করে গেল রাতে ঘরে ফিরে জানালার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে ভাবছিলাম শহরের বাতাস তখনও হালকা ঠাণ্ডা চারপাশে আলো ঝলমল করছে মনে হচ্ছিল এই মুহূর্তটাই যেন পূর্ণতা।

আমরা সেদিন লুচি আর গ্রীল খেয়েছিলাম কিন্তু দিনটা শুধু খাবারের জন্য মনে থাকবে না বরং মনে থাকবে সেই সময়টা সেই হাসিটা সেই কথা আর সেই শান্তি যা আমরা পেয়েছিলাম ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে মাঝে মাঝে এমন ছোট্ট সময়ই আমাদের আবার বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয় হয়তো পরের পর্বে বলবো এরপর আমরা কি খেয়েছিলাম আর কেমন কেটেছিল আমাদের রাত।

পোস্ট বিবরণ

শ্রেণীলাইফস্টাইল
ক্যামেরাVivo y18
পোস্ট তৈরি@maksudakawsar
লোকেশনবাংলাদেশ

আমার পরিচিতি

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।


3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeF5StuMqDPqgYjRhUxqFbXTvH2r2mDgNbWweA4YGBo825oLh4oqEqeynn5EZL11LdCrppngkM (1).gif

VOTE @bangla.witness as witness

witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

1000206266.png

1000206267.png

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️

Coin Marketplace

STEEM 0.08
TRX 0.29
JST 0.035
BTC 107869.41
ETH 3771.08
USDT 1.00
SBD 0.58