আমি বৃদ্ধাশ্রম থেকে বলছি--10% Beneficiary To @shy-fox 🦊 & 5% @ abb-school📚

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম।

কেমন আছেন সবাই? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভাল আছেন।
বন্ধুরা আজ আমি এমন একটি বিষয় নিয়ে লিখতে বসেছি। যে বিষয়টি এখন আমাদের প্রায় প্রত্যেকেটি মানুষের মনকে নাড়া দেয়। সমাজে এই বিষয়টি ব্যাঙের ছাতার মত বাসা বেধেঁছে। আর তা হলো বৃদ্ধাশ্রমে জীবন অতিবাহিত করা কিছু বৃদ্ধা পিতা- মাতার গল্প। আমি আমার লিখনীর মাধ্যমে তাদের জীবন নিয়ে কিছু কষ্টের কথা আপনাদের মাঝে শিয়ার করার চেষ্টা করব। জানিনা কতটুকু পারবো।
রাহেলা বেগম প্রায় তিন-চার বছর যাবৎ বৃদ্ধাশ্রমে বসবাস করেন। এখানে থাকতে তার ভালই লাগে। তার কারন এখানে নিজের মত করে থাকা যায়। এখানে তার যখন যা মন চায় তাই করতে পারেন। মনে চাইলে অন্য কারো সাথে গল্প করে সময় কাটান। মনে চাইলে বই পড়েন। আবার মনে চাইলে কখনও বা মনের সুখে গান করেন।

pexels-edu-carvalho-2050994.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

রাহেলা বেগম এর বৃদ্ধাশ্রম কে

জীবনের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে গ্রহণ করার গল্প-
তিনি পেশায় একজন শিক্ষিকা ছিলেন। স্বামী সরকারী উচ্চ পদস্থ্য অফিসার ছিলেন। স্বামী গত হয়েছেন প্রায় সাত আট বছর হবে। সংসারে তার দুই ছেলে আর এক মেয়ে । রাহেলা বেগমও চাকুরী হতে অবসর গ্রহণ করেন প্রায় দুই বছর হয়ে গেল।বড় ছেলে রবিন পেশায় একজন ডাক্তার। আর ছোট ছেলে শামীম পেশায় একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। দুজনেই ঢাকায় বসবাস করে। বাবার রেখে যাওয়া বাড়ীতে। আর তাদের স্ত্রীরা ও চাকুরী করেন। একজন হলো কলেজের শিক্ষক আর একজন হলো একটি বেসরকারী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার। আর একমাত্র মেয়ে সায়েরা একটি বেসরকারী ব্যাংকে চাকুরী করে।

image.png

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

রাহেলা বেগম হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়েন এবং সেই সময় তাকে বেশ কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হয়। কিন্তু হাসপাতালের জীবন ছিল তার কাছে দুর্বিসহ। কারন হাসপাতালে সারাক্ষন কাউকে না কাউকে থাকতে হয়। ডাক্তারের সাথে কথা বলা, ঔষুধ আনা আরো কত কি? কে করবে এত কাজ।
আবার হাসপাতাল হতে বাসায় এসে আরেক বিড়ম্বনা। কারন তাকে দেখাশুনা ও যত্ন করার জন্য একজন সার্বক্ষণিক লোক প্রয়োজন। ছেলে মেয়ে আর ছেলের বউরা সবাই তো চাকুরীজীবি। এরই মধ্যে মেয়েটা যদিও কিছুটা সময় বের করে আসে কিন্তু তাও অনেক মুশকিল। নিজের সংসার অফিস সব কিছুর পর আবার রাহেলা বেগম এর সেবা করা। এ নিয়েও আবার শুরু হয়ে গেল জামাইর সাথে পারিবারিক দন্ধ। জামাই মেয়েটা কে অনেক কথা শুনায় এ নিয়ে। জামাই বলে দায়িত্ব তোমার একার না তোমার ভাইদের ও তো কিছু দায়িত্ব আছে। রাহেলা বেগম ভাবতে লাগলো এটাই তো স্বাভাবিক। তাই তিনি মেয়ে কে বুঝিয়ে বলল বিষয়টা। অনেক কষ্ট ভরা মন নিয়ে মেয়েটা মার জন্য একজন পারমানেন্ট লোক রেখে দিল। রাহেলা বেগম ধীরে ধীরে সুস্থ্য হয়ে উঠলেন।
এদিকে রাহেলা বেগম প্রায় বারান্দায় হাটাহাটির সময় ছেলের বউদের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পায়। আর এই চেঁচামেচির বেশীর ভাগ কারনই হচ্ছে রাহেলা বেগম এর অসুস্থ্যতা ঘিরে। কারন রাহেলা বেগম হাসপাতাল থেকে বাসায় আসার পর তার জন্য আলাদা করে খাবার বানানো, অফিস করা, এছাড়াও তাকে একটু বাড়তি যত্ন করতে হয়। আবার রাহেলা বেগম অসুস্থ্য হওয়ায় তাকে দেখতে বাড়ীতে মেহমানদের আনাগোনার কারনে ছেলে মেয়েদের পড়াশুনায় প্রায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। আর এসব কিছু নিয়ে রাহেলা বেগম এর ছেলেদের প্রায় বউদের কথা শুনতে হয়। যা রাহেলা বেগম কে বিষণ কষ্ট দেয়।
রাহেলা বেগম প্রায় ত্রিশ বছর কলেজে অধ্যাপনার দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই তিনি তার নিজের মত করে বিষয়টি ভাবতে শুরু করলেন। তিনি মনে মনে ভাবতে লাগলেন আমি অসুস্থ্য, আমার বাড়তি সেবা করা, আমাকে যারা দেখতে আসে তাদের যত্ন আতি করা, অফিস করা, আবার বাসায় এসে সংসার সামলানো সব মিলিয়ে বউদের উপর অনেক চাপ পড়ে যাচ্ছে।
রাহেলা বেগম বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। তিনি কি করবেন, কি করা উচিত তার । অবশেষে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে সম্পত্তি আর টাকা পয়সা সব সন্তানদের মাঝে ভাগ করে দিয়ে তিনি বৃদ্ধাশ্রমে জীবনের শেষ সময়টুকু কাটিয়ে দিবেন। এতে করে তার ও সময় কেটে যাবে। আবার ছেলে মেয়ে সবাই একটু শান্তিতে জীবন কাটাতে পারবে। তাই কাউকে কিছুই না জানিয়ে খুব তাড়াতাড়ি সব ব্যবস্থা করে ফেললেন।

woman-65675_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

রাহেলা বেগম সব সন্তান, ছেলের বউ আর মেয়ের জামাতা কে নিয়ে একত্রে বসলেন। তারপর প্রথমে তার স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি ও তার কিছু সম্পত্তি সন্তানদের মাঝে ভাগ করে দিলেন। আর নিজের শেষ জীবন টা কাটানোর জন্য প্রয়োজনীয় সম্পত্তি নিজের জন্য রাখলেন।
এবার রাহেলা বেগম সন্তানদের উদ্দেশ্যে ধীরে ধীরে বলতে লাগলেন, দেখ আমার সন্তানরা আমি এখন বৃদ্ধ বয়সে পা রেখেছি। তোমরা সবাই যার যার কাজে ব্যাস্ত থাকো। আমি সারাদিন ঘরে একাকিত্ত জীবন যাপন করি । যেটা আমার জন্য অনেক বেদনা দায়ক বিষয়। আমি এ বিষয়ে তোমাদের কে কোন দোষ দিচ্ছিনা। কারন আমি জানি তোমরা আমাকে অনেক ভালবাসো ও শ্রদ্ধা করো। কিন্তু আমি এই জীবনটা কে একটু অন্য ভাবে উপভোগ করতে চাই। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমি কোন বৃদ্ধাশ্রমে আমার শেষ জীবনটা কাটিয়ে দিবো। আর আমার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আর এ বিষয়ে আমি সকল ব্যবস্থাও করে ফেলেছি। আমি তোমাদের কে এ বিষয়ে আগে জানায়নি কারন আমি জানি তোমরা জানলে আমাকে কিছুতেই যেতে দিবে না।

pexels-himesh-mehta-3104713.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

রাহেলা বেগম এর সন্তানরা একে একে সবাই হাউ মাউ করে কেদেঁ দিল। এবং মাকে জড়িয়ে ধরে বলল মা তুমি কেন আমাদের কে ছেড়ে যাবে? আমরা কি অপরাধ করেছি। তুমি আমাদের কে ছেড়ে যাবে না। তোমার এত বিশাল বাড়ী রেখে তুমি কেন বৃদ্ধাশ্রমে যাবে? তাহলে মা তুমি আমাদের ভালবাসনা, আমাদের আপন মনে করনা,তাই আমাদের কারো সাথে থাকতে চাওনা?
রাহেলা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠল, নারে বাবা ভালবাসি, তোদের কে অনেক ভালবাসি। তাইতো চাই তোদের সাথে আমার সম্পর্কটা ভালবাসার হয়ে থাকুক চিরটা কাল। আর তাইতো তোদের কে সুখি দেখতে চাই। আমি দূরে যাচ্ছি না, তোদের যখন মন চায় তখন আমার কাছে চলে আসবি । তাহলে তো আর তোদের খারাপ লাগবে না।. সেই থেকে রাহেলা বেগম আজবধি বৃদ্ধাআশ্রমে। তার সন্তানরা তাকে প্রায় দেখতে আসে। তাকে আদর করে । আসার সময় অনেক অনেক খাবার ও আনে। এতে করে বৃদ্ধাশ্রমে সবাই বলে সন্তানরা এত আদর করে আর আপনি কেন এই বৃদ্ধাশ্রমে পড়ে আছেন?

old-lady-2724163_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

কিন্তু আমি মনে মনে হাসি আর ভাবি আমি এখানেই অনেক ভাল আছি।
মা সেতো মায়েই । সন্তানদের কে বড় করে তোলা আর মানুষ করে তোলা মায়ের দায়িত্ব। কিন্তু তাই বলে বৃদ্ধ বয়সে সন্তানদের আয়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া কিছুতেই কোন মায়ের কাম্য নয়।
সন্তান যখন বড় হয়, তখন তারা তাদের একটা নিজস্ব জগৎ তৈরি করে নেয়। সেই জগতে বৃদ্ধ পিতা মাতা আর কখনই অংশ হতে পারে না। আর এটাই হলো বাস্তবতা।
তো বন্ধুরা কেমন লাগলো আমার আজকের পোস্টি জানাতে ভুলবেন না যেন।
ভাল থাকো, সুস্থ্য থাকো।

🕵🏾 আমার পরিচয়🕵🏾
আমি মাকসুদা কাউছার, খিলঁগাও, ঢাকায় বসবাস আমার। আমি গল্প পড়তে ও লিখতে পছন্দ করি। আমি ভালবাসি আমার মা যিনি আমাকে এই পৃথিবী দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন। আর ভালবাসি মায়ের ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করতে।

Sort:  

আপনি অনেক সুন্দর করে একটি মমতাময়ী মায়ের জীবনী আমাদের মাঝে শেয়ার করছেন। মা মমতাময়ী বলেই সন্তানদের সুখে রাখার জন্য এত ধনসম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে চলে গিয়েছেন। এই মায়ের জীবনীর মত আর কোন মায়ের জীবনী না হয়। ধন্যবাদ আপনার পোষ্টের জন্য।

 2 years ago 

জি সত্যি কথাই বলেছেন মা মমতাময়ী হয় তাইতো আমি চেষ্টা করেছি মায়ের মমতা কে আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে দোয়া করবেন আমার জন্য আমি যেন আগামীতে আরও ভাল ভাল পোস্ট করতে পারি

 2 years ago 

অনেক ভালো লিখেছেন আপু। আমার অনেক খারাপ লাগে যখন শুনি কোনো ছেলে মেয়ে তার বাবা মা কে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসছে। যে মা বাবা এতটা কষ্ট করে সন্তান বড় করে তারা কি ভাবে এই কাজ করে?

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া আমার পোস্টে অনেক যতসুখ আপনি পড়েছেন বুঝাই যাচ্ছে.হা এটা আমার কাছে কষ্ট লাগে যখন আমিও শুনি কোন সন্তান তার চেয়ে মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসছি.

 2 years ago 

খুব অসাধারণ ভাবে এক বৃদ্ধ মায়ের মনের অনুভূতিটুকু খুব সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন। আসলে কোন মা ই পারে না সন্তানের কষ্ট সহ্য করতে। নিজের মনের ভেতরের লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলো কখনো সন্তানকে বুঝতে দেন না।সন্তানের সুখের জন্য সবকিছু বিলীন করে দেন।কিন্তু সন্তানরা অনেক সময় তা বুঝে পারে না।এ ও বুঝতে চায় না যে,এক সময় আমরা ও বৃদ্ধ হবো।আপনার লিখা গল্পটি পড়ে মনটা যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেল। এত সুন্দর করে এক বৃদ্ধাশ্রম মায়ের মনের অনুভূতিগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া আসলে সমাজে এইধরনেরআমি মনে অনেক কষ্ট পাই.বেশ কিছুদিন যাবৎ ভাবছি এ ধরনের একটি পোস্ট করব.আমার জীবনে দেখা সত্য একটি ঘটনা নিয়ে আজ আমি এই ঘটনাটি লিখেছি.আপনার জন্য শুভেচ্ছা ও ও দোয়া রইল.ভালো থাকবেন

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 68773.73
ETH 2716.62
USDT 1.00
SBD 2.72