অদৃশ্য জ্বীনের ছোয়াঁয় নানার মৃত্যু

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম

বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই ? নিশ্চয় পরিবার পরিজন নিয়ে ভাল ‍ও সুস্থ্য আছেন। আমিও আপনাদের দোয়া ও মহান আল্লাহর রহমতে বেশ ভাল আছি।যাক আজ আবার আপনাদের মাঝে আসলাম আর একটি নতুন গল্প নিয়ে।

আমি ইতোমধ্যে আপনাদের সাথে শেয়র করেছি আমি পারিবারিক কারনে নানা বাড়ী যশোর জেলার ঝিকরগাছা গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে জীবনে আমি প্রথমবার যাই। যার কারনে নান বাড়ীর সকল আত্নীয়দের আপ্যায়নে আমরা অস্থির হয়ে উঠি। কিন্তু এরই মাঝে আমদের গল্পের কমতি ছিল না। প্রতি রাতে খাওয়ার পর শুরু হয়ে যেত আমাদের গল্প বলার আসর। আর ঢাকার মেহমান তাই আমাদের সকল আত্নীয়ও একত্রে হয়ে গেল।


আজ আমি সেসব গল্পের মধ্য হতে একটি গল্প আপনাদের মাঝে শেয়ার করব। আমার আজকের গল্পটি একটি সত্য ঘটনা অবল্বনে। আর এই গল্প টা আমার খালার মুখে শোনা।


তাহলে শুরু করা যাক।

halloween-g538434a84_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবিসোর্স

এটা হলো আমার নানার মৃত্যুর ঘটনা। নানা ছিলেন একজন ব্যবসায়িক। বাজারে তার আড়ৎ ছিল। তাই সারা দিন কাজ করে সন্ধ্যার পর বের হতো টাকা কালেকশনের জন্য। আর এটা ছিল ১৯৭২-১৯৭৩ সালের ঘটনা। তখন আমাদে জন্ম হয়নি।

আমার নানা বাড়ীর চারপাশ ছিল অন্ধকারে ভরা। সন্ধ্যা হলেই সেখানে নিরব হয়ে যেত । চারদিকে ছিল বেশীর ভাগ বাশঁ ঝাড়ে ভরা। এলাকার মানুষও জায়গাটাকে ভিষন ভয় করতেন। প্রায় নাকি শোনা যেত সেই বাশঁ ঝাড় হতে মানুষের কান্নার চিৎকার। আমার তখন আমার মায়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বাড়ীেতে থাকতো আমার বড় মামা-মামী, নানা নানী আর দুই খালা। নানী আবার খুব সাহসী ছিল। প্রতিদিন নানা বের হলে সাথে বড় মামা ও যেত। পড়ে রাতে গ্রামের অনেক মানুষ মিলে সেই বাশ ঝাড় একত্রে বাতি জ্বেলে পাড় হতো।

hacker-g0566300cb_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবিসোর্স

নানী মামা আর নানাকে নিয়ে প্রতিদিন রাতে চিন্তায় থাকতো। খালার কাছে জানতে পারলাম যে অনেকেই নাকি সেখানে অনেক কিছু দেখতে পেত। এমনকি আমার নানী খালারাও নাকি দেখেছে। একদিন নাকি সন্ধ্যায় আমার নানী আর খালা সেই বাশঁ ঝাড় দিয়ে বাড়ীতে আসছিল। হঠাৎ পথে এসে আমার নানার রুপে একজন লম্বা মানুষ আমার নানী কে বলল তোমারা কোনে গেছালা। নানী কিছু বুঝতে পারে নি। নানী ভাবলো এটা নানা। তখন নানী বলল যে কবিরাজ বাড়ী গিয়েলাম। তারপর নানা বেসি সে লোকটা বলল আমার সাথে বাশঁ ঝাড়ের ভিতরে যেতে হবে কয়টা বাশঁ কাটবো। তখন নানীর একটু সন্দেহ হলো। নানা তো কখনও নানী কে বাশঁ ঝাড়ের বাশঁ কাটতে বলে নাতো, তাহলে আজ কে বলছে কেন? তখন নানী বুদ্ধি করে বলল আজকে সন্ধ্যা হয়ে গেছে, আজকে থাক কাল সকালে কাটবানে। কিন্তু না উনি কথা শুনছে না উনি নানার মত ধমক দিয়ে বলল, আমি যা বলি তাই করো। নানী আর খালা খুব ভয় পেয়ে গেল ততকক্ষনে নানী বুঝে গেল যে না এটা নানা না। তাই নানী খালা কে ইশারা দিয়ে বলল খালার সাথে রাখা কপি টা জ্বেলে দিতে, আর নানাীর কথা শুনে খালা সাথে সাথে কুপি টা জ্বেরে দিল। যেই কুপিটা জ্বেলে দিলো আর তাদের সামনে কাউকে দেখতে পেল না। তখন নানী আর খালা তাড়াতাড়ি বাড়ী ফিরে গেল।এরকম ভাবে নানা কে ও অনেক বার ধরে ছিল। কিন্তু অনেক মানুষের সাথে থাকায় আর সবার সাথে কুপি লাইট থাকায় তাদের কে কিছুই করতে পারেনি।

horror-g7e572f9e9_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবিসোর্স

সেদিন ছিল বৃষ্টির রাত্রি। মামা সেদিন খুব জরুরী কাজে শ্বশুর বাড়ী যায়। দূরের রাস্তা দেখে তাই রাতে আর বাড়ী ফিরবে না। এদিকে নান সেদিন বাজার থেকে ফিরতে ও দেরি করে। এর জন্য গ্রামের কাউকেই নিজের সঙ্গী হিসাবে পায়নি। নানা সব সময় টর্চ লাইট নিয়ে চলা ফেরা করতেন। আর তার সাথে যারা থাকতো তারা কুপি আর অন্যান্য লাইট নিয়ে চলাফেরা করত। যাক নানা একা একা বাড়ী ফিরে আসতে থাকে। কিছুদূর যাওয়ার পর নানা তার টর্চ লাইট টা জ্বালিয়ে দেন। কিন্তু দূর ভাগ্য বসত নানার টর্চ লাইটে চার্জও ছিল না। নানা যখন বাশঁ ঝারের কাছে যায় তখন ভিতর থেকে কাদেঁর যেন কান্নার শ্বদ শুনতে পান। নানা ছিল সাহসী। তাই তিনি ভয় না করে জোরে হাটা শুরু করে। এর মধ্যে নানার টর্চ লাইটের আলো কমে যাওয়া শুরু করে। কিছু দূর যাওয়ার পর নানাকে সাত আটজন সাদা কাপড় পড়া লম্বা লম্বা মানুষের মত দেখতে কারা যেন ঘিরে ফেলে। নানা বুঝতে পারে। ততক্ষনে নানার হাতে থাকা টর্চ লাইটও নিভে যায়।

samurai-g1470adfaf_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবিসোর্স

নানা কিছুটা ভয় পেলেও তাদের কে বলে কি চাস তোরা। নানার কথার উত্তরে বলে তুই আজকে আমাদের মেহমান আমাদের সাথে চল। নানা বলে না আমি তোদের সাথে যাবো না। এ কথার পর তারা নানা কে অনেক মারে। যেখানটা তে এ ঘটনা সেখান থেকে আমার নানা বাড়ী বেশী দূরে না। তাই নানা কিছু টা জোরে সোরে চিৎকার করা শুরু করে। এদিকে নানী নানার দেরী দেখে চিন্তায় পড়ে যায় সে নাকি মামী কে আর আমার খালা কে বলে কিরে তোদের আব্বা এখনও আসছে না কেন? চলতো আমরা একটু সামনে আগিয়ে দেখি রাত ও অনেক হলো। তখন নানী, মামী আর আমার খালা তিনজনে তিন কুপি জ্বালিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আর তখনকার মানুষের সাহস ও বেশি ছিল। কিছু দূর যাওয়ার পর নানী শুনতে পায় সামনে কে যেন গুগাচ্ছে। তাই নানী একটু তারা হুরা করে সেখানে যায়। সামনে যেয়ে নানাকে অজ্ঞান অবস্থায় পায়। আর নানার সমস্ত শরীরে কাদা মাখানো। দেখে মনে হচ্ছে কারো সাথে মারামারি করেছে।যাক এ অবস্থায় বাসায় নিয়ে আসা হয় নানা কে। ঐ রাতে আর কোন কবিরাজ ডাকা যায়নি। কিন্তু নানী নানাকে সুন্দর করে গোসল করিয়ে দেয়।

ghosts-g5b7582eac_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবিসোর্স

সেদিন রাতে নানার প্রচন্ড জ্বর আসে। সেই অবস্থায় নানা নানী কে সব কিছু খুলে বলে। পরদিন সকালে নানার শরীরে জ্বরের সাথে বসন্ত দেখা যায়। এরপর নানাকে অনেক ডাক্তার কবিরাজ দেখানো হয়। কিন্তু নানার শরীরের সেই বসন্ত আর ভালো হয় না। কিছুদিন এভাবে কেটে যায়। অবশেষে একদিন বাদ ফজর আমার নানা দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে যান।

আসলে এ পৃথিবীতে যেমন আমরা মানুষ বাসকরি। তেমন পৃথিবীতে জীন জাতিও রয়েছে। তাই যুগে যুগে এসব বিষয় নিয়ে অনেক গল্পও লেখা হয়েছে। কিন্তু আমার আজকের গল্পটি আমার পরিবার থেকে নেওয়া।

আশা করি আমার আজকের গল্পটি আপনাদের অনেক ভাল লেগেছে। বন্ধুরা গল্পটি পড়ে আমাকে জানাতে ভুলবেন না যেন আমার আজকের গল্পটি কেমন হলো।

ভাল থাকবেন সবাই , সুস্থ থাকবেন সবাই।

4bEjbgCbFMvA8T33kKpp3RsBvZue1Hns5Cwuz57pgmmNsNm69BvSk1AJmpxNTS4pL3vHiENLbAz3uRYvkzCHo62J16v8SBo7zpHgViW2yotwk1h5RE41hP2qzb7ELuJ3M646bDwEPdWALxxSwivrhMnjnGhcCBFuAKUHSjQuMNQZSJx9eV.gif

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovTUshBEnxRTgb9n2LUqHX7h1H2p2D18YQFUDgxbpg8bp7AxwH9vK7k1SRqaoEJbCQrboh4ga6xfDvigcW6zfkH8S.png

আমি মাকসুদা কাউছার। আমি একজন বাঙ্গালী। ভালবাসি বাংলায় কথা বলতে এবং মনের ভাব প্রকাশ করতে। বাংলা আমার মায়ের ভাষা। আমি পেশায় একজন চাকুরীজীবি। তবে চাকুরীর পাশাপাশি আমি বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে ও ইউটিউব চ্যানেলে কনটেন্ট লিখে থাকি। আমি ভালবাসি আমার মাকে, ভালবাসি আমার বাংলাব্লগ কে।

pBMyo3B2Sao2EbuHAFTX1CNWMbam25xJGPs4sKmLS6XL7jPcLJ4PhfmbsQbXEmSBkiJH1y8vcCZLEDiVjH9fUC37Hpjmz6Czw4oJd4hidqWpdsEDnaUW3Rt3p3eTZGQkoiwZDyH4hdDt99wPqRBy3pVZE1qtEmMBB3MC4V4MJCpzUCii.png

Sort:  
 2 years ago 

আপু আপনার এই গল্প গল্পটি পড়ে তো আমার একেবারে ভয়ে শরীরের লোমগুলো দাঁড়িয়ে গেছে। আসলেই আগেকার দিনে এরকম ঘটনা অহরহই ঘটতো। আমরাও আমার বাবার কাছ থেকে এরকম গল্প অনেক শুনেছি । আমাদের গ্রামেও এরকম একটি বাঁশঝার ছিল সেখান দিয়ে আসতে আমরাও ভয় পেতাম ছোটবেলায়। আপনার নানা সবসময় আপনার মামার সাথে যাওয়া আসা করতে সাথে অনেক লোক থাকতো সেদিন একা আসার কারণে জিনগুলোও মনে হয় তাকে পেয়ে ভয় দেখিয়েছে ।তবে এটাও শুনেছি জিনরা নাকি মানুষের রুপ ধরে অনেক সময় মানুষকে ভয় দেখাতে আসে। গল্পটি আসলেই অনেক ভয়ের ছিল।

 2 years ago 

আপু শুনে খুশি হলাম যে আপনাদের গ্রামে এরকম একটা বাস যাচ্ছিল আজকাল তো এরকম কথা কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। তবে আপনাকে ধন্যবাদ আপনি আমার গল্পটা অনেক সুন্দরভাবে সময় নিয়ে পড়েছেন।

 2 years ago 

জি আমিও বিশ্বাস করি পৃথিবীতে দুটি জাতি রয়েছে জিন জাতি এবং মানুষ জাতি।

যাই হোক আপনার এই ঘটনাটি ঘাসিউরে ওঠার মত। আপনার নানি একটু বেশি সাহসী ছিল। একটা প্রশ্ন ছিল আপু সেই বাঁশঝাড় কি আপনি দেখেছেন মানে এখনো কি সেই বাঁশঝাড় আছে?

 2 years ago 

না আপু গ্রামে এখন আর সেই বাজারগুলো নেই । সেই বাগান কেটে এখন সেখানে অনেক দালানকোঠা উঠে গেছে।

 2 years ago 

আমার মনে হচ্ছে সেই জায়গার উপর যে বিল্ডিংগুলো তৈরি হয়েছে সেখানেও মানুষ ভয় থাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59264.94
ETH 2604.33
USDT 1.00
SBD 2.38