পৈত্রিক সম্পত্তি ও বিশ্বাসঘাতকতার গল্প প্রথম পর্ব

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম

আজ রবিবার, ২৫ ই , সেপ্টেম্বর,২০২২

সবাই কেমন আছেন ? ভাল আছেন নিশ্চয়? আমিও আপনাদের দোয়া ও আল্লাহর অশেষ রহমতে বেশ ভাল আছি।

কিছুদিন আগে আমি আমার নানা বাড়ী যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলায় বেড়াতে গেলাম। নানা বাড়ী বেড়ানোর আনন্দ-উদ্দীপনার মাঝখানে মামা খালাদের আপ্যায়নের পাশাপাশি ঘুরাঘুরিও কিন্তু কম করিনি। তবে সেগুলো আপনাদের মাঝে আমি ধীরে ধীরে শেয়ার করবো। তবে আজকে আমি একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে একটি গল্প আপনাদের মাঝে শেয়ার করব। যা জেনে আপনারাও কিছুটা হলে বুঝতে পারবেন যে মানুষ কিভাবে আপনজনের হক নষ্ট করে। গল্পটি আমি দুটি এপিসোডে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো।

pexels-pixabay-247597.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

তাহলে শুরু করা যাক আমার আজকের গল্প।

পৈত্রিক সম্পত্তি ও বিশ্বাসঘাতকতার গল্প প্রথম পর্ব

ঘটনাটি ঘটে ১৯৭৫-১৯৭৬ সালের দিকে। তখনও আমাদের জম্ম হয়নি। তখন গ্রামগঞ্জে শিক্ষিত পরিবারের চেয়ে অশিক্ষিত পরিবারের হার ছিল বেশি। তখন মানুষ কৃষি কাজকেই একমাত্র অবলম্বন মনে করত। গ্রামের মানুষের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান ছিল সম্পত্তি। আরে এই সম্পত্তির জন্যই তখন গ্রামে মারামারি আর হানাহানি লেগেই থাকতো। যা আমরা হয়তো বই পুস্তকে পড়েছি।

গ্রামের কৃষক ছিলেন রহমান সাহেব। সংসারে তার কোন কিছুর অভাব ছিল না। গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ আর গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ্ ছিল তার সংসার। তখনকার সময়ে ১০০ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন তিনি। স্ত্রী ছাড়াও দুই ছেলে এবং তিন মেয়ে রয়েছে তার সংসারে। রহমান সাহেব তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়েকে গ্রামে আর এক মেয়েকে ঢাকায় বিয়ে দেন। যেহেতু তখন কার সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন ছিল না তাই তার বড় মেয়ে বছরে একবার যেত বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে। এছাড়া রহমান সাহেবের মেজো মেয়ে ও ছোট মেয়ে প্রায় সব সময়ে আসতেন।

pexels-pixabay-314937.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

আর অন্য দিকে রহমান সাহেবের দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে কামাল ১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর গুলিতে নিহত হন। মৃত্যকালে তিনি স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান রেখে যান। যাদের মধ্যে দুইজন পুত্র সন্তান আর তিনজন কন্যা সন্তান। এদিকে ছোট ছেলে জামাল একটু দুষ্ট প্রকৃতির ছিল। ছোট ছেলের সংসারে দুই ছেলে আর এক মেয়ে।

হঠাৎ একদিন রহমান সাহেব অসুস্থ্য হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এ অবস্থায় রহমান সাহেবের পরিবার খুবই অসহায় হয়ে পড়েন। বড় ছেলের এতিম সন্তান, বিধবা স্ত্রী কে দেখবে তাদের কে এসব দুঃচিন্তা রহমান সাহেবের স্ত্রীকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। তাই তিনি ছোট ছেলে জামাল কে বলেন পরিবারের দায়িত্ব নিতে। কিন্তু ছোট ছেলে জামাল সংসারের কোন দায়িত্ব নিলো না। বরং জামাল ও তার স্ত্রী বুদ্ধি করে তার অংশের জমিটুকু গ্রামের অন্য একজনের কাছে বিক্রি করে দেয়। তার সাথে বাড়ীর মধ্যে যত গাছগাছালী ছিল তাও বিক্রি করে দেয়। অবাক করা বিষয় হলো মূর্খ জামাল জমি বিক্রি করার সময় কোন ফারায়াজও করেন নি। অথচ সেই জমিতে তার বাবার পারিবারিক কবরস্থান রয়েছে। এবার জামাল ও তার স্ত্রী সব টাকা পয়সা ও সন্তানদের নিয়ে শশুড়বাড়ীতে চলে যান। এমন কি যাওয়ার সময় তার অসহায় মা আর ভাইয়ের সন্তানদের কথাও চিন্তা করেন নি।

farm-yard-g070298fb6_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

রহমান সাহেবের স্ত্রী এখন অসহায় তাই সে ছোট মেয়ের সাথে থাকেন। কিন্তু কঠিন এই পৃথিবীতে রহমান সাহেবের বড় ছেলের এতিম সন্তানগুলির কারো কাছে স্থান হয়নি। তাই গ্রামের লোকজন সবাই মিলে এতিম সন্তানগুলোকে এতিমখানায় রেখে আসেন। আর তাদের মা মানুষের বাসায় কাজ করে কোন রকমে দিন কাটাতেন। এদিকে ছোট ছেলের সম্পত্তি বিক্রি করায় গ্রামের লোকজন ও সাবরেজিট্রি অফিসের সহায়তায় রহমান সাহেবের বাকী সম্পত্তি তার বাকী ওয়ারিশদের মধ্যে বন্টন করা হয়। যার মধ্যে রহমান সাহেবের বিধবা স্ত্রী, মৃত ছেলের পরিবার ও তিন মেয়ের অংশ রয়েছে।

village-g48497f061_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

এদিকে রহমান সাহেবের স্ত্রী অসহায় অবস্থায় তার ছোট মেয়ের সাথে দিনযাপন করতে থাকেন। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস! ছোট মেয়ের জামাইও শাশুড়ীর সামান্য সম্পত্তির লোভ সংযোজন করতে পারলো না। শাশুড়ীকে ফুসলিয়ে সে তার অংশ তার ছোট মেয়ের নামে লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া শুরু করলো। আবার শাশুড়ীকে এমন কথাও বলল যে, আপনার কোন সন্তান আপনাকে দেখবে না। আপনি ছোট মেয়ের নামে আপনার সম্পত্তি টুকু লিখে দেন । আমরা আপনাকে সারা জীবন দেখবো। অসহায় সহায় সম্বলহীন বিধবা মহিলা কি আর করবে তার ভাগের অংশটুকু ছোট মেয়েকে রেজিট্রি করে দিল। কিন্তু এখানেও সমস্যা মানুষ কতটা জানোয়ার এর রুপ নিতে পারে। সম্পত্তি নেওয়া হয়ে গেলে মেয়ে আর মেয়ের জামাই রহমান সাহেবের বিধবা স্ত্রীর প্রতি অসহনীয় আচরণ শুরু করে দেয়। শুনা যায় তিনি পরে মানুষের বাসায় ভিক্ষা করে জীবিকা চালাতেন।

street-gc3aaf4090_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

(চলবে)

গল্পটির আজ প্রথম পর্ব তুলে ধরলাম। কেমন লাগলো আমার আজকের পর্ব জানাতে ভুলবেন না যেন। খুব তাড়াতাড়ি আসছি এই গল্পের পরবর্তী পর্ব নিয়ে ততদিন অপেক্ষায় থাকুন।

আপনারা ভাল ও সুস্থ্য থাকুন।

4bEjbgCbFMvA8T33kKpp3RsBvZue1Hns5Cwuz57pgmmNsNm69BvSk1AJmpxNTS4pL3vHiENLbAz3uRYvkzCHo62J16v8SBo7zpHgViW2yotwk1h5RE41hP2qzb7ELuJ3M646bDwEPdWALxxSwivrhMnjnGhcCBFuAKUHSjQuMNQZSJx9eV.gif

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovTUshBEnxRTgb9n2LUqHX7h1H2p2D18YQFUDgxbpg8bp7AxwH9vK7k1SRqaoEJbCQrboh4ga6xfDvigcW6zfkH8S.png

আমি মাকসুদা কাউছার। আমি একজন বাঙ্গালী। ভালবাসি বাংলায় কথা বলতে এবং মনের ভাব প্রকাশ করতে। বাংলা আমার মায়ের ভাষা। আমি পেশায় একজন চাকুরীজীবি। তবে চাকুরীর পাশাপাশি আমি বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে ও ইউটিউব চ্যানেলে কনটেন্ট লিখে থাকি। আমি ভালবাসি আমার মাকে, ভালবাসি আমার বাংলাব্লগ কে।

pBMyo3B2Sao2EbuHAFTX1CNWMbam25xJGPs4sKmLS6XL7jPcLJ4PhfmbsQbXEmSBkiJH1y8vcCZLEDiVjH9fUC37Hpjmz6Czw4oJd4hidqWpdsEDnaUW3Rt3p3eTZGQkoiwZDyH4hdDt99wPqRBy3pVZE1qtEmMBB3MC4V4MJCpzUCii.png

Sort:  
 2 years ago 

সম্পত্তির জন্য আসলে মানুষ যে কি করে। সম্পত্তির লোভে পড়ে নিজের মা বাবা ভাই বোনকে ভুলে যায়। রহমান সাহেবের স্ত্রী তার নিজের সম্পত্তিটুকু মেয়ের নামে লিখে দেওয়া ঠিক হয়নি কারণ নিজের নামে সম্পত্তি থাকলে তাও একটু জোর থাকে এখন সম্পত্তিও নেই অন্যের বাড়িতে ঝিগিরি করতে হচ্ছে। জামাই না হয় খারাপ ব্যবহার করে মেয়ে কিভাবে পারে মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে।এদিকে বড় ছেলে মারা যাওয়াতে ছেলের বউ ও বাচ্চারাও পরেছে বিপদে ।ভালো লেগেছে আপু আপনার গল্পটি আমার কাছে।

 2 years ago 

আসলে আপু আপনি সত্য কথা বলেছেন রহমান সাহেবের স্ত্রীর উচিত হয়নি তার নিজের সম্পত্তি তার মেয়ের নামে লিখে দেওয়া।

সম্পত্তি নেওয়া হয়ে গেলে মেয়ে আর মেয়ের জামাই রহমান সাহেবের বিধবা স্ত্রীর প্রতি অসহনীয় আচরণ শুরু করে দেয়।

এটাই হয়, সম্পত্তি একবার হাতে চলে আসলে মানুষ খুবই নিষ্ঠুর হয়ে যায়, সে আর মানুষ থাকেনা। তখন আপন লোকজন গুলোও গলার কাঁটা হয়ে যায়।

প্রথম দিকটাতে রহমান সাহেব পরিবার যেভাবে বিস্তার লাভ করেছিল তাতে আমার সবকিছু হিসাব করতে একটু সমস্যা হয়। কিন্তু লাস্টের দিকে এসে মোটামুটি কিছুটা বুঝতে পেরেছি।

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া। আসল সত্য কথা কি সংসারে যদি জামাল দের মত দুই একটি সন্তান থাকে তাহলে আর ঐ সংসার ধ্বংস করার জন্য কিছু লাগেনা

 2 years ago 

কথাই আছে না অর্থই অনর্থের মূল। কথাটা একেবারেই সত্যি। সম্পত্তি জিনিসটা যেমন ভালো তেমন খারাপ যেটা রহমান সাহেব এর স্ত্রীর অবস্থা দেখে বোঝা যাচ্ছে। অনেক সুন্দর লিখেছেন আপু। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।।

 2 years ago 

আসলে সত্য বলেছেন ভাইয়া আমার মতে উচিত ছিল রহমান সাহেব নিজেই সব সম্পত্তি বিক্রি করে সুখ স্বাচ্ছন্দ্ কাটিয়ে যাওয়া

 2 years ago 

এজন্য সম্পদ থাকলেও সমস্যা না থাকলেও সমস্যা।আমার পাশের বাসার এক লোক সম্পদ লিখে নেওয়ার জন্য মা কে গ্রাম থেকে শহরে এনে আটকে রেখেছিল আর অকথ্য নির্যাতন করত পরে আমার আম্মু তাকে কৌশলে গ্রামে পাঠিয়ে দেয়।পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।আশা করি জালিম রা শাস্তি পাবে।

 2 years ago 

গ্রাম গঞ্জের আনাচে-কানাচে লক্ষ্য করলে এরকম দৃশ্য ভুরিভুরি দেখা যায়। দেখা যাক আগামী পর্বে কি হয়

 2 years ago 

আপু আপনার গল্পের মুল বিষয় হচ্ছে সেকালের ধন সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক কলহ। আসলে লোভ লালাসা ছিল এবং থাকবে সেটাই স্বাভাবিক , কিন্তু তাই বলে এইভাবে? জামাল সাহেবের বিশ্বাসঘাতকতা, ছোট মেয়ের জামাইয়ের বিশ্বাসঘাতকতা এইগুলো আসলেই কষ্টদায়ক। আসলে আপু রহমান সাহেবের সম্পত্তি কি ১০০ শতাংশ নাকি ১০০ বিঘা? ধন্যবাদ আপু সমাজের বাস্তবতাকে নিয়ে এমন একটি পোষ্ট আমাদের সকলের মাঝে তুলে ধরার জন্য।

 2 years ago 

না ভাইয়া রহমান সাহেবের সম্পত্তি 100% ছিল। 100 বিঘা নয়।

 2 years ago 

সুন্দর ছবি

 2 years ago 

আমাদের সমাজে অনেক সময় দেখা যায় সম্পত্তি নিয়ে পরিবারের মধ্যে কোলাহর লেগে রয়েছে। যা আপনার গল্পের মূল বিষয়। গল্পটি পড়ে আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। সুন্দরভাবে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59403.33
ETH 2607.28
USDT 1.00
SBD 2.38