শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি - "ছেলেবেলার বিজয় দিবস " II written by @maksudakawsarII
আসসালামু আলাইকুম
আসসালামু আলাইকুম
শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি
"বিজয় দিবস"
শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি
"বিজয় দিবস"
Banner credit --@maksudakawsar
কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই বেশ ভালো আছেন। আমিও বেশ ভালো আছি আপনাদের দোয়ায়। সবার প্রতি জানাচ্ছি বিজয় দিবসের লাল সবুজের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। চলছে ডিসেম্বর মাস। আর এই ডিসেম্বর মাসেই বাঙালি জাতি ফিরে পেয়েছে তাদের নিজের স্বাধীনতা। ফিরে পেয়েছে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার। আর এর জন্য হারাতে হয়েছে লাখো তরতাজা প্রাণ। তাই তো প্রতি বছর বিভিন্ন জাতীয় দিবসের মধ্য দিয়ে সমগ্র বাঙালি জাতি স্মরণ করে সেই সকল শহীদদের কে। আর ১৬ই ডিসেম্বর হচ্ছে তেমননি একটি দিন। যে দিনে বাঙালি জাতি ফিরে পেয়েছে তাদের স্বাধীনতা। প্রতি বছর অনেক আনন্দ আর উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে বিজয়ের সেই ক্ষনটিকে স্মারণ করে সমগ্র বাঙালি জাতি। আর সেই ছেলে বেলা হতেই ১৬ই ডিসেম্বরের সাথে মিশে আছি আমরা, বিশেষ করে আমি। আর আজ তাই সেই গল্পই আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। তার আগে শৈশবের এমন হাজারও স্মৃতি সবার মাঝে শেয়ার করার যে সুযোগ করে দিয়েছে আমাদের প্রিয় @rme দাদা । তার জন্য তাকে তো একটু কৃতজ্ঞতা জানানোই যায়।
আমাদের ছেলেবেলায় ১৬ই ডিসেম্বরের বিজয় দিবস পালন করা হতো বেশ আনন্দ উদ্দীপনায়। কোয়াটারের মাঠে বানানো হতো জাতীয় স্মৃতিসৌধ। অবশ্য সেই স্মৃতিসৌধ বানানো হতো বাশঁ আর রঙিন কাগজ দিয়ে। তার মধ্যে আবার লাইটিংও করা হতো। কিন্তু একটি কথা আছে এখানে। যেহেতু বেশ কিছু সরকারি কোয়াটার ছিল এক সাথে, তাই প্রতিটি কোয়াটার যার যার মত করে আয়োজন করতো বিজয়ের এই দিন টিকে। আর এক কোয়াটারের চেয়ে যদি অন্য কোয়াটারের স্মৃতিসৌধ দেখতে সুন্দর হতো। তাহলে রাতের আধাঁরে সেটা ভেঙ্গে দিয়ে আসতো। আর এ নিয়ে যে এলাকায় কত মারামারি হয়েছে তার শেষ নেই। অবশেষে রাত জেগে পাহাড়া দিতে হতো সেই স্মৃতিসৌধ কে। হি হি হি
এদিকে সমগ্র এলাকা থাকতো সরগম। জোড়ে জোড়ে দেশের গান বাজানো হতো সারারাত ধরে। কি যে ভালো লাগতো সে সমস্ত গান গুলো।এদিকে পোস্টার টানিয়ে করা হতো চিত্র প্রদর্শনী। সবাই দলে দলে যুদ্ধের ফটোগ্রাফি গুলো দেখতো। তারপর আবার করা হতো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা। সেখানে কোয়াটারের প্র্রতিভা সম্পন্ন ছেলেমেয়েরা অংশ গ্রহণ করতো। কি যে সুন্দর সুন্দর গান আর ছোট ছোট নাটকে মুখরিত করে রাখতো সমস্ত বিকেল টাকে। সবাই বেশ খুশি মনেই সে সকল অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করতো।অবশ্য এর জন্য পুরুস্কার এর ব্যবস্থাও করা হতো।
এদিকে আবার আয়োজন করা হতো বিভিন্ন রকমের ক্রিয়া প্রতিযোগিতার। বিস্কুট খেলা, দৌড়, হাড়িভাঙ্গা সহ নানা রকমের খেলার আয়োজন করা হতো। আমি কিন্তু কয়েক বার পুরুস্কারও পেয়েছি। আর আমি পুরুস্কার পেয়েছিলাম হাড়িভাঙ্গা খেলায়। আর অন্য খেলায় আমি কোন দিনও পুরস্কার পাইনি। কি যে মজা হতো সেই ছেলেবেলার সে সকল খেলাগুলোতে। আর তখন আমরা মেতে উঠতাম বিজয়ের উল্রাসে।
তবে ১৬ই ডিসেম্বর আসলে আজও মনে পড়ে যে আমাদের একটি গ্রুপ কে পিটি সেখানো হতে ব্যান্ডের তালে তালে। তারপর আমাদের কে কুচ কাওয়াজে অংশ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করতো। প্রায় কয়েকবার এমন প্রোগ্রামে অংশ গ্রহণ করেছি । বেশ ভালো লাগতো সবাই এক সাথে বাজনার তালে তালে পিটি করতে কিন্তু বেশ ভালোই লাগতো। আর আন্তঃ জেলা পিটি প্রোগ্রামে আমরাই হতাম তখন প্রথম। বেশ সুন্দর করে জুতা পড়ে আর একই রকমের পোশাক পড়ে আমাদের কে সেই প্রোগ্রামে অংশ গ্রহণ করতে হতো।
কিন্তু কই ছেলেবেলার সেই স্মৃতি তো আর দেখি না। এখন আর আগের মত করে বিজয় দিবসে আনন্দ করতে কাউকেই দেখি না। দেখি না সেই পিটি। আসলে দিন যতই যাচেছ ততই যেন আনন্দ গুলো মলিন হয়ে যাচ্ছে। এখন বিজয় দিবসের প্রাক্কালে জোড়ে আওয়াজ করে বাজানো হয় হিন্দি আর ইংরেজি গান। যুগ যত আপডেট হচেছ জীবন ততই জটিল হচেছ। এখন বিজয়ের আনন্দ হয়ে গেছে মলিন।
শেষ কথা
শেষ কথা
আজও ছেলেবেলার সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়ে। জীবনের যদি কোন সুন্দর অনুভূতি থেকে থাকে তা হলো ছেলেবেলা। যা জীবন থেকে কখনও মুছে ফেলা যায় না। আর যাবেও না কোন দিন। কি সুন্দর দুশ্চিন্তা মুক্ত ছিল আমাদের জীবন। জীবনে ছিল না কোন হতাশা বা না পাওয়ার বেদনা।
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
আমার ব্লগটির সাথে থাকার জন্য এবং ধৈর্য সহকারে আমার ব্লগটি পড়ার জন্য সবাই কে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। সেই সাথে সবার প্রতি আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
আসলে আমাদের শৈশব আর এখনকার সময়ের মানুষের শৈশব ব্যাপক পার্থক্য। আমাদের শৈশবের বিজয় উল্লাস ছিল বেশ কিছু ভদ্র কোয়ালিটির,আর এখনকার বিজয় উল্লাস হয়ে পড়েছেন নোংরামি আড্ডাবাজি কোয়ালিটির। আমার মনে হয় অনেকে জানে না কেন আজকে আড্ডা দিচ্ছি। আর এর পটভূমি কি? আমাদের সময় দেখতাম মানুষের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতো, আর খুবই মানুষের আবেগ প্রবল হয়ে যেত। দেশকে রক্ষা করতে এত মানুষ রক্ত বিসর্জন দিয়েছে! যেন অনেক কম বয়সীদের ভয়ে বুক কেঁপে উঠত। গভীর চিন্তার মধ্যে চলে যেত। আর এখন সবার কাছে হয়ে গেছে স্বাভাবিক ব্যাপার, এমন একটা দিবস পেলেই হয় পথেঘাটে আড্ডা দিয়ে বেড়ানো আর নিজেদের প্রদর্শন করা এমন নোংরামির মধ্যে চলে গেছে।
ধন্যবাদ ভাইয়া প্রধানমূলক একটি মন্তব্য করার জন্য।
আমি যেহেতু সরকারি কোয়ার্টারে বড় হয়েছি,তাই এমন অভিজ্ঞতা আমারও আছে। আমাদের কলোনিতেও বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে এ ধরনের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। আপনার লিখা পড়ে সেই স্মৃতি মনে পড়ে গেল। ধন্যবাদ ছোট বেলার মজার মজার স্মৃতি শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
আপু যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ। ছোটবেলায় বিজয় দিবসে কতো আনন্দ করতাম। কতো ধরনের খেলা খেলতাম। যখন একেবারে ছোট ছিলাম, আশেপাশের বিভিন্ন মাঠে যেতাম বড়দের ক্রিকেট খেলা দেখতে বিজয় দিবসের দিন। বিজয় দিবসে ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করা হতো। তাছাড়া সকাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের খেলায় অংশগ্রহণ করতো অনেকে এবং বিকেল বেলা পুরষ্কার বিতরণ করা হতো। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো যেমন খুশি তেমন সাজো খেলাটা। সেই দিনগুলো বড্ড মিস করি। যাইহোক আপনার পোস্টটি পড়ে ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে গেল আপু। এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
বেশ সাবলীল কিছু কথার মাধ্যমে পোস্টের মন্তব্য করার জন্য ভাইয়া অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এই সরকারি কোয়ার্টারের ব্যাপার গুলো যে বেশ মজা হয় তা আমিও জানি।যদিও আমি থাকিনি,তবে ছোট বেলায় বেশ অনেকজন স্কুল ফ্রেন্ড ছিলো।ওদের কাছে এই ব্যাপার গুলো দেখতাম।
জি আপু। আমরা কিন্তু আমাদের ছেলেবেলাটা কাটিয়েছি বেশ আনন্দ করে। ধন্যবাদ আপু আপনাকে মন্তব্য করে উদ্দীপনা দেওয়ার জন্য।
Tweet