শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি - "ছেলেবেলার নতুন বইয়ের গন্ধ " II written by @maksudakawsarII
আসসালামু আলাইকুম
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই বেশ ভালো আছেন। আমিও বেশ ভালো আছি। আসলে ভালো থাকাটাই যেন আজকাল আপেক্ষিক একটি বিষয়। চারদিকে তাকালে শুধু খারাপ সংবাদ। কেন জানি মনে হয় চারদিকে শুধু হাহাকার বিরাজ করছে। কি জানি শুধু কি আমার এমন মনে হচ্ছে নাকি. জানিনা।যাই হোক চলে আসলাম আজ আপনারনাদের মাঝে নতুন আরও একটি ব্লগ নিয়ে।আশা করি প্রতিদিনের মত আমার আজকের ব্লগটিও আমাদের কে কিছুটা হলেও মুগ্ধ করতে পারবে।
শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি
"ছেলেবেলার নতুন বইয়ের গন্ধ"
শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি
"ছেলেবেলার নতুন বইয়ের গন্ধ"
Banner credit --@maksudakawsar
জীবন এমন একটি জায়গা যেখান থেকে অতীত কে কেউ কখনও দূরে ঠেলে দিতে পারেনি। আর পারবে বলেও আমার ধারনা নেই। আমরা যত বড়ই হইনা কেন আমাদের অতীত কে কিন্তু আমরা কখন জীবন থেকে মুছে ফেলতে পারি না। জীবনের অতীত সময়টা আমাদের জীবনে রয়ে যায় অনুপ্রেরণা হয়ে। আর না হয় বেদনা হয়ে। তবুও জীবনের কিছু কিছু অতীত কে আমরা ভুলে যেতে চাই না। আর চাইলেও ভুলে যেতে পারি না। এক এক মূহূর্তে আমাদের অতীত গুলি আমাদের কাছে ধরা দেয় এক এক ভাবে। এই যেমন চলছে জানুয়ারী মাস। চারদিকে স্কুলগুলোতে চলছে বই উৎসব। আর এমন বই উৎসব গুলো দেখে মনে পড়ে যায় আমাদের ছেলেবেলার নতুন বই পাওয়ার অনুভূতি গুলো।
আমাদের সময়ে কিন্তু আবার এমন করে কোন বই উৎসব করা হতো না। বার্ষিক পরীক্ষার পর পহেলা জানুয়ারী থাকতো নতুন বই বিতরনের দিন। আর বার্ষিক পরীক্ষার পর এই দিনটির অপেক্ষায় থেকে কত যে সময় পার করেছি সেটা গুনেও শেষ করা যাবে না। কবে নতুন বই পাবো আর সেই নতুন বই গুলো কে নাড়াচাড়া করবো সেই চিন্তায় ঘুম আসতো না। অনেক অপেক্ষার পর যখন সেই নতুন বই নেওয়ার দিনটি আসতো। তখন দলে দলে সবাই নতুন জুতা মোজা পড়ে স্কুলে চলে যেতাম। শিক্ষকদের হাত থেকে নতুন বই পেয়ে তো আর দেরী করতাম না। দৌড়ে চলে আসতাম বাসায়। কারন বাসায় এসে সব গুলো বইকে উল্টিয়ে উল্টিয়ে দেখতাম।
আমি অবশ্য প্রতি বছর দুই সেট বই পেতাম। এক সেট বাবার অফিস থেকে আর এক সেট পেতাম স্কুল থেকে। তো বছরের প্রথমেই স্কুল থেকে যে সেট পেতাম সেটা আনার সাথে সাথে সুন্দর করে মলাট করে নিতাম। আর মাঝে মাঝে মলাটের ভাজে মুখ গুজে দিয়ে নতুন বইয়ের গন্ধ নিতাম। আবার নতুন বই গুলোতে ময়ূরের পাখ রাখতাম। গোলাপ আর রজনীগন্ধা ফুলের পাপড়ি দিয়ে বইয়ের গন্ধটাকে আরও সুগন্ধে ভরে দিতাম।
নতুন বই পেয়ে আমি সব সময় আগে থেকে অনেক পড়া এগিয়ে রাখতাম। আর নতুন বইকে দাগিয়ে নিয়ে বইয়ের অবস্থা বারটা বাজিয়ে দিতাম। আর বারটা বাজাবো নাই বা কেন। আমার তো আরও একটি নতুন বইয়ের সেট থাকতো। আর সেই জন্যেই নতুন বই পাওয়ার সাথে সাথে বইয়ের সব কবিতা আর ছড়া মুখস্থ করে নিতাম। আজও মনে আছে সরকারি কোয়াটারের মধ্যে বিশাল মাঠে এমন শীতের দিনে মাদুর বিছিয়ে বসে বসে নতুন বই গুলো পড়ে শেষ করে দিতাম। আর বছরের শুরুতেই পড়া অনেক দূর এগিয়ে রাখতাম।
আমার আজও মনে আছে, নতুন বই পাওয়ার সাথে সাথে আমার বাবা বেশ সুন্দর করে সবগুলো বই সূতা দিয়ে সেলাই করে মলাট দিয়ে বাধাঁই করে দিত। যাতে সারা বছর বই গুলো মনোযোগ সহকারে পড়তে পারি। কিন্তু আমি এমন বই পড়ুয়া ছিলাম যে নতুন বই গুলো কে দাগিয়ে দাগিয়ে শেষ করে দিতাম। আর আমার বই দেখলে যে কেউ ভাবতো আমি মনে হয় সব পড়া শেষ করে ফেলেছি। হি হি হি। আসলে না, আমি বছরের প্রথমেই দাগিয়ে রাখতাম কোন গুলো ভালো করে পড়তে হবে।
শেষ কথা
শেষ কথা
সত্যি এখন চারদিকে বই উৎসব দেখে মনে পড়ে যায় আমাদের ছেলেবেলার সেই সমস্ত দিন গুলোর কথা। নতুন বইয়ের গন্ধে তখন আমরা হয়ে যেতাম মাতোয়ারা। বন্ধুরা আমার মত আপনাদের যদি এমন কোন স্মৃতি থেকে থাকে তাহলে জানার অপেক্ষায় রইলাম।
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
আমার ব্লগটির সাথে থাকার জন্য এবং ধৈর্য সহকারে আমার ব্লগটি পড়ার জন্য সবাই কে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। সেই সাথে সবার প্রতি আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
আপু,এইকাজগুলি আমিও করতাম স্কুল জীবনে।নতুন বই পেলে আগে গল্পগুলো পড়তাম,আর নতুন পাতার গন্ধ শুকতাম আর পাতা উল্টে গন্ধরাজ ফুলের পাপড়ি রেখে দিতাম।মলাট বাঁধিয়ে দিতাম,আপনার সঙ্গে যেন সবকিছুই মিলে যাচ্ছে।ভালো লাগলো আপনার অনুভূতি পড়ে, ধন্যবাদ আপনাকে।
যাক আমার সাথে তাহলে মিলেই গেল আপনার। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করে উৎসাহিত করার জন্য।
আসলেই ছোটবেলায় নতুন বই পাওয়ার আগে, মনের মধ্যে অন্য রকম আনন্দ কাজ করতো। সারাক্ষণ অপেক্ষা করে থাকতাম কবে নতুন বই হাতে পাবো। নতুন বই পড়তে এবং ঘ্রাণ নিতে ভীষণ ভালো লাগতো। তবে আমি নতুন বইয়ে কলম দিয়ে দাগ দিতাম না, দেখতে খারাপ লাগবে বলে। সেজন্য পেন্সিল ব্যবহার করতাম সবসময়। যেদিন নতুন বই হাতে পেতাম,সেদিনই পুরনো ক্যালেন্ডার দিয়ে মলাট করে নিতাম। সেজন্য সারা বছর বই একেবারে নতুনের মতোই থাকতো। যাইহোক আপনার পোস্ট পড়ে ছোটবেলার স্মৃতিতে হারিয়ে গিয়েছিলাম আপু। এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার সুন্দর এবং সাবলীল মন্তব্যের জন্য।