শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি - " আজও ভুলিনি তোকে " II written by @maksudakawsarII
আসসালামু আলাইকুম
আসসালামু আলাইকুম
"আজও ভুলিনি তোকে" |
---|
কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই বেশ ভালো আছেন। তাই না? সবার ভালো থাকাটাই যে আমার সব সময়ের চাওয়া। আমরা মানুষ। তাই আমাদের আছে আবেগ আর অনুভূতি। সেই সাথে আছে স্মৃতি বিজড়িত জীবন। জীবনে চলতে চলতে অনেক দূর চলে আসলেও আজও হাত ছানি দেয় ফেলে আসা সে সমস্ত স্মৃতি। তাই তো মাঝে মাঝে সুর করে গাইতে মনে চায় - মুছে যাওয়া দিন গুলো আমায় যে পিছু ডাকে, স্মৃতি যেন বারে বারে .......। ফেলে আসা সে সকল স্মৃতি কে শুধু মনে করা নয়, সকলের সাথে শেয়ার করার সুযোগ করে দিয়েছে আমাদের সম্মানিত @rme দাদা । আর এ জন্য সম্মানিত ফাউন্ডার @rme দাদার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আজও আসলাম আপনাদের মাঝে আমার শৈশবের আরও একটি স্মৃতির উম্মোচন করতে । আশা করি আমার আজকের স্মৃতিগুলোও আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
আমি আগেও বলেছি যে বাবার চাকরি সূত্রে আমরা সরকারি কোয়াটারে থাকতাম। আপনারা যারা আমার পোস্ট নিয়মিত পড়েন তারা অবশ্যই এ কথা জানেন। তাই ছেলেবেলা থেকে কোয়াটারের সবার সাথে পরিবারের মত বেড়ে উঠা। আর তাই সেই ছেলেবেলায় বন্ধুর অভাব ছিল না। সবার মত মামুন ও ছিল আমাদের সেই ছেলেবেলার বন্ধু। এক সাথে দাড়িয়াবান্ধা, বৌচি, হা ডু ডু সহ আরও হাজার খেলা খেলতাম।আর এমন করেই খেলতে খেলতে কখন যে আমরা বড় হয়ে গিয়েছি সেটা বুঝতেই পারিনি।
খেলার মাঠের হাজারও ঝগড়া , মন কষাকষি আজও মনে পড়ে। চাইলেও কিন্তু ভুলে যাওয়া যায় না সেই সমস্ত স্মৃতি গুলো। কি করে ভুলবো ? আপনারা কি কেউ ভুলতে পেরেছেন। একদিন তো আমরা দু ভাগে ভাগ হয়ে দাড়িয়াবান্ধা খেলছিলাম।আমরা কয়েকজন মেয়ে ছিলাম সেখানে। কিন্তু এরই মধ্যে মামুন এসে সেখানে বায়না ধরে তাকে আমাদের সাথে খেলায় নিতে হবে। তা না হলে সে আমাদের খেলা পন্ড করে দিবে। আর আমরা তো কিছুতেই তাকে নিবো না নিবো না। আর সেও নাছোর বান্দা। বেশ কিছুক্ষন তার সাথে আমাদের ঝগড়া হয়ে গেল। তারপর এক সময়ে মামুন কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। আমরা তো বেশ খুশি মনে খেলা খেলতে লাগলাম। কিন্তু কিছুক্ষন পর হঠাৎ দেখলাম আমাদের খেলার জায়গায় পানি পড়ে ভিজে যাচ্ছে। পিছে তাকিয়ে দেখি মামুন এক বালতি পানি নিয়ে এসে আমাদের খেলার জায়গায় ঢেলে দিয়ে গেছে। এমন হাজারও ঘটনা আছে মামুনের সাথে আমাদের ছেলেবেলার।
মামুন ছিল বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। বেশ মেধাবী ছাত্র ছিল মামুন। দেখতে দেখতে এক সময়ে আমরা এস এস সি এবং এইচ এস সি পাশ করে ফেললাম। আমরা যে যার মত কলেজে ভর্তি হলাম। কিন্তু মামুন আর ভর্তি হলো না । পরিচিত এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ওর চাকরি হয়ে গেল একটি মেডিসিন কোম্পনীতে। বেশ ভালো বেতন পেত মামুন। তাছাড়া কোম্পানী থেকে তাকে হোন্ডাও দেওয়া হয়েছিল। আমরা কিন্তু সবাই বেশ খুশি হয়েছিলাম। আমরা ভাবতাম যাই হোক ওর জীবনটা সুন্দর হোক। তাছাড়া শুনেছি যে খুব তাড়াতাড়ি ওর প্রমোশনও হবে। এমন কি কোম্পানী থেকে বাহিরে পাঠাবে। আর এত এত ভালো খবর গুলো শুনে আমাদেরও বেশ ভালো লাগতো।
বেশ কিছুদিন পর মামুনের সাথে আমার দেখা হয়। বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। আর আমি তখন ঐ রাস্তা দিয়ে কলেজে যাচ্ছিলাম। আমাকে দেখে মামুন দৌড়ে আসলো আমার দিকে। এসে আমার খবরা খবর নিল। তারপর বেশ কিছু সময় ওর সাথে গল্প হলো। ওর ভালো মন্দ সব কিছু জানতে পারলাম। তাছাড়া সামনে চাকরির আরও উন্নতি হবে সেটাও জানতে পারলাম। ওর কথা শুনে বেশ মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম। আমারও ভালো লাগা কাজ করছিল। এক সময় জানতে পারলাম যে ও বিয়েও করে নিয়েছে। অবশ্য নোয়াখালীর সাইটটাতে বেশ তাড়াতাড়ি ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়। আর মামুনের স্ত্রীর গর্ভে সন্তানও ছিল। তো কিছুক্ষন পর ও আমায় বেশ জোড়াজুড়ি করলো ওর হোন্ডায় উঠে বসতে। আমাকে কিছু টা সময়ে ঘুরিয়ে আনবে। আমি কিছুতেই উঠলাম না। কারন দুটো-প্রথমত আমি হোন্ডা কে অনেক ভয় পাই। আর দ্বিতীয়ত্ব - আমি কোন পুরুষ মানুষের সাথে হোন্ডায় উঠতে নারাজ। তাই সেদিনের মত বিদায় নিয়ে চলে আসলাম।
কিন্ত দুদিন না যেতেই মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল। আমাদের এলাকায় খুব সাড়া পড়ে গেল। কারন মামুন হোন্ডা চালাতে গিয়ে রোড এক্সিডেন্ট হয়ে স্পর্ট ডেড। মানে মামুন আর এই দুনিয়াতে নেই। খবরটা শুনে কেন জানি বার বার সেদিনের সেই কথা কানে ভাসছিল। যেদিন মামুন আমাকে ওর হোন্ডায় চড়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। আর ভেসে আসছিল ওর সেই মায়াবী মুখ খানা। কি হলো এটা। এত চঞ্চল ছেলেটা চলে গেল।সব কিছু যেন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল।মামুনের এমন করে চলে যাওয়া কেন যেন মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল।
যাই হোক মামুনের এই মৃত্যু কে আমি কেন আমাদের কোন বন্ধু বান্ধবই মেনে নিতে পারে নি। তাই তো মামুনের নামে করা হয় একটি ক্রীড়া পরিষদ। যেখানে বছর বছর মামুনের স্মরণে বিভিন্ন টুর্ণামেন্টের আয়োজন করা হয়। আর আমরা মনে করি মামুন বেচেঁ আছে আমাদের মাঝে আজও। আর বলতে চাই -আজও ভুলিনি তোকে বন্ধু।
আজ এখানেই রাখছি। আগামীতে আবারও ফিরে আসবো নতুন করে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে। কেমন লাগলো আমার আজকের ব্লগটি? জানার আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় রইলাম। আশা করি আপনাদের মূল্যবান মন্তব্য দিয়ে উৎসাহিত করবেন। |
---|
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
আমার ব্লগটির সাথে থাকার জন্য এবং ধৈর্য সহকারে আমার ব্লগটি পড়ার জন্য সবাই কে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। সেই সাথে সবার প্রতি আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
আমার ব্লগটির সাথে থাকার জন্য এবং ধৈর্য সহকারে আমার ব্লগটি পড়ার জন্য সবাই কে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। সেই সাথে সবার প্রতি আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
আপনার পোস্ট পড়ে অনেক খারাপ লাগলো। আসলে আপু মানুষ মৃত্যু বরণ করবেই। তবে এমন মৃত্যু যেন কখনো মেনে নেওয়া যায় না। সত্যি আপু মানুষ মরে যায় তার স্মৃতি পড়ে থাকে। আর এমন আপনজনের স্মৃতি সব সময় চোখের সামনে ভেসে থাকে।ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে একটি মন্তব্য করেছেন আপু। ধন্যবাদ সুন্দর একটি মন্তব্য শেয়ার করার জন্য।
Tweet