শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি - " সখের মোবাইল চুরি " II written by @maksudakawsarII
আসসালামু আলাইকুম
আসসালামু আলাইকুম
"সখের মোবাইল চুরি" |
---|
শুভ রাত্রি ভালোবাসার আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি পরিবার। সকলের সুস্থ এবং সুন্দর জীবন কামনা করে আজ আবার চলে আসলাম নতুন আরও একটি ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে । জীবনে এমন কিছু স্মৃতি থাকে যা চাইলেও কোন দিন ভুলা যায় না। সেই সমস্ত স্মৃতি গুলো মনের মনিকোঠায় পেরেকের মত করে লেগে থাকে। হাজার চেষ্টা করলেও তাদের কে ছুটানো যায় না। তেমনি অনেক অনেক স্মৃতি জড়ানো আমার এ জীবন। মাঝে মাঝে মনে করি সব গুলো স্মৃতি ধীরে ধীরে আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো কিন্তু ব্যস্ত এই জীবনে সব কিছু সব সময় মনে করে উঠতে পারি না।
জীবন চলার পথে ঘটে যাওয়া হাজারও স্মৃতিগুলো হৃদয়ের মাঝে বাসা বেধেঁ থাকে যুগ যুগ ধরে। এ সমস্ত স্মৃতি গুলো কে আর মেলে দেখা হয়ে উঠেনা সময়ের কারনে। শুধু মনের মাঝেই থেকে যায় অনন্তঃ কাল। সুখ আর দুঃখের এমন কিছু কথা আছে যে গুলো মনে হলে কখনও হাসি বা কখনও কাঁদি। তবে আমাদের @rme দাদা আমাদের কে সেই ছেলেবেলার স্মৃতিগুলো তুলে ধরার সুযোগ করে দিয়েছে। আর এ জন্য সম্মানিত ফাউন্ডার @rme দাদার প্রতি আমি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তাই তো আজও আসলাম আপনাদের মাঝে আমার শৈশবের আরও একটি স্মৃতির উম্মোচন করতে যাচিছ। আশা করি আমার আজকের স্মৃতিগুলোও আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
সবেমাত্র আমি এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়েছি। তাই পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় আছি। আর সেই সময়টাতে আমার হাতে অনেক গুলো প্রাইভেট ছিল। আমি অবশ্য এস এস সি এর পর হতেই প্রাইভেট টিউশনি করি। তো যাই হোক যেহেতু পরিবারের এক ভাই বাহিরের দেশে থাকে এবং পরিবারের প্রয়োজনে একটি মোবাইল বা ফোন দরকার। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো পরিবারের জন্য ফোন না এনে একটি সিটিসেল সেলুলার মোবাইল কেনার। তাই বড় ভাই সম্ভবত ৫৬০০০/- হাজার টাকা দিয়ে একটি মটোরোলা মোবাইল নিয়ে আসলো। যে মোবাইলটি বেশির ভাগ সময়েই আমার হাতে থাকতো।
এই মোবাইলটি দিয়েই কিন্তু আমাদের বাহিরে সব যোগাযোগ রক্ষা করা হয়। বিদেশে ভাইয়ের সাথে, বাসায় বাবা মার সাথে। এমন কি সকল আত্নীয় স্বজনদের সাথেও এই একটি মাত্র মোবাইলের মা্ধ্যমে যোগাযোগ করা হতো। তাহলে বুঝেন সেই মোবাইল সেটটি আমাদের কাছে কত প্রিয় ছিল। তারপর আবার দামী একটি মোবাইল। তাই এই মোবাইল সেটি ঘরেই ব্যবহার করা হতো। বাহিরের কোন কাজে কিন্তু এই মোবাইলটি ব্যবহার করা হতো না।
তো যাই হোক একদিন দুপুরে আমি প্রাইভেট টিউশনি করে বাসায় আসলাম। তো বাসায় আসার পর খাওয়া দাওয়া করে রেস্ট নিচ্ছিলাম। তো এমন সময় কে যেন দরজায় কলিং বেল দিচিছলো। তো দরজা খুলে দেখি একজন পুরুষ মানুষ। হুজুরের পোশাক পড়া। তো তিনি আমার কাছে সাহায্য চাইলো। আমি তাকে সাহায্য দিতে গেলে তিনি আমাকে সাহায্য নিলেন। এরপর আমাকে দেখে বললেন যে আমি নাকি অনেক সরল মনের মানুষ। আর আমার নাকি খুব বিপদ। আমি তো সেই লোকের কথা শুনে বিশ্বাস করে নিলাম। আর তাকে ঘরের ভিতরে এনে বসালাম।
লোকটি আমাদের তিন বোন কে ওজু করে আসতে বললেন। আমার ছোট বোন একটু বুদ্ধিমতি। তাই সে আমাদের কে একত্রে যেতে বারন করে দিলেন। তারপর আমরা একজন একজন করে ওজু করে আসলাম। তখন লোকটি আমাদের কে এক সাথে দাড়ঁ করিয়ে বললো সুরা ফাতিহা পড়তে এবং চোখ বন্ধ করে পড়তে। তারপর আমাদের কে দক্ষিন দিকে ফিরিয়ে দিলেন। কারন তিনি আমাদের কে বললেন এই সূরা নাকি দক্ষিন দিকে ফিরে পড়তে হয়। তা যাই হোক আমরা দক্ষিন দিকে ফিরে সূরা পড়ে নিলাম। তারপর লোকটি আমাদের কে বলল যে আমি বের হয়ে গেলে দরজার উপরের ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় বসে এক নিশ্বাসে ৪১ বার সূরা ফাতিহা পড়তে।
আমরা তখন সেই লোকের কথা মত তাই করলাম। লোকটি বের হলে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ৪১ বার সূরা ফাতিহা পড়লাম। কিছুক্ষন পর বুঝতে পারলাম যে এক নিঃশ্বাসে কোন ভাবেই কিন্তু ৪১ বার সূরা পড়া সম্ভব নয়। তাই আমরা তখন সূরা পড়া বাদ দিলাম। কিছুক্ষন পর জানতে পারলাম যে আমাদের ঘরের সেই সখের সিটিসেল মোবাইলটি আর খুঁজে পাওয়া যাচেছ না। বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম। আর তখন সবাই মিলে বুঝে গেলাম যে মোবাইলটি কোথায় গেছে। ঐ যে সেই লোক যে আমাদের কে দক্ষিন দিকে ফিরিয়ে সূরা পড়িয়ে ছিল তিনিই মোবাইলটি নিয়েছে। তিনি দক্ষিন দিকে ফিরতে বলে উত্তর দিক রাখা সুকেছ হতে মোবাইলটি নিয়ে গেছে।
তখন আমরা দৌড়ে নিচে যাই। কিন্তু সেই ভন্ড লোকটিকে আর দেখতে পাই না। কিন্তু কথা হলো এত সখের মোবাইল চুরি হয়েছে এটা শুনলে তো আমার বড় ভাই আমাদের কে ঘর থেকে বের করে দিত। তাই আমরা বোনেরা মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম কারো থেকে টাকা ধার করে নিয়ে বড় ভাই বাসায় ফিরে আসার আগেই মোবাইলটি কিনে এনে এখানে আবার রেখে দিতে হবে। আর আমরা তাই করলাম। তার সাথে সিটিসেল অফিস হতে আমাদের সেই মোবইলটির সিম বন্ধ করে দেওয়া হলো। আর সিটিসেল অফিস হতে এটা আমাদের কে নিশ্চয়তা দিল যে সেই লোকটি সেই মোবাইলটি কোথাও বিক্রি করতে পারবে না। আর এটা যেনে একটু ভালোই লেগেছিল।
আসলে জীবনে চলার পথে এমন অনেক মানুষ আসে যারা মুখোস পড়ে আমাদের ক্ষতি করে থাকে। তাই জীবনে মানুষ কে কখনওই অন্ধ বিশ্বাস করা ঠিক না। কারন অন্ধ বিশ্বাস গুলো বিপদ ডেকে আনে এবং জীবন কে করে তুলে দূর্বিসহ।
আজ এখানেই শেষ করছি। আবার আসবো আপনাদের মাঝে নতুন করে নতুন কোন ব্লগ নিয়ে। সকলের সুস্থ্তা কামনা করে বিদায় নিচ্ছি। কেমন লাগলো আমার আজকের শৈশবের কাহিনী। আপনাদের সুন্দর সুন্দর মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।
এটা ঠিক বলেছেন জীবনে চলার পথে কাউকে অন্ধ বিশ্বাস করা উচিত নয়। তবে এটাও ঠিক অপরিচিত মানুষকে ঘরে প্রবেশ করানো ঠিক নয়। আপনারা যদি ঐ লোকটিকে ঘরে ঢুকতে না দিতেন তাহলে হয়তো এমন হতো না। তবে এমন কিছু সময় থাকে যখন প্রয়োজনীয় ও শখের জিনিস চুরি হয়ে যায় তখন খুব খারাপ লাগে। আপনারা আবার আপনার বড় ভাইয়ার ভয়ে টাকা ধার এনে আরও একটি মোবাইল কিনেছেন? এত ভয় পেতেন বড় ভাইয়াকে।
বেশ ভালো লাগলো আপনার সু্ন্দর মন্তব্য পড়ে। ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
ঠিক বলেছেন আপু,,জীবনে চলার পথে এমন অনেক মানুষ আসে যারা মুখোস পড়ে আমাদের ক্ষতি করে থাকে।কাউকেই অন্ধবিশ্বাস করা আমাদের উচিত না।যাইহোক,, আপনার শৈশবে স্মৃতিটি পড়ে কিন্তু খুবই মজা পেলাম। গতকাল আড্ডায় এই গল্পটা বলেছিলেন,কিন্তু নেট সমস্যার জন্য ভালো করে শুনতে পেরেছিলাম না। আজ আপনার পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পেরে খুবই ভালো লাগলো আর মজা পেলাম আপু। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য।
জি আপু একদম ঠিক। যদি নেটওয়ার্কের কারনে সবাই শুন না থাকে তাই শেয়ার করা। ধন্যবাদ সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
Tweet