গল্প পোস্ট- প্রেম একবার এসেছিল নিরবে- ১ম পর্ব || written by@maksudakar ||

in আমার বাংলা ব্লগlast year (edited)

আসসালামু আলাইকুম

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি বেশ সবাই বেশ ভালো আছেন। আমিও আছি আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো আছি তাও আবার আপনাদের ভালোবাসায়। সবাই কে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা জানিয়ে আজ আবার শুরু করছি আমার আজকের ব্লগ। তবে আমার সবসময়ের চাওয়া আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য এবং সুন্দর জীবন। কোন একটি গানে যেন শুনেছিলাম ‘’ ভালোবাসা ভালোলাগা এক নয়’। কিন্তু আমি বলি কাউকে ভালো লাগা থেকেই কিন্তু ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। তবে ভালোবাসার কিন্তু কোন রং হয় না। বা কাউকে বুঝানোও যায় না। আমার মনে ভালোবাসা শুধুই অনুভব আর অনুভূতির বিষয়।

জীবনে বহুবার প্রেমের হাতছানি পেয়েছি। কিন্তু কখনও প্রেম করবো বা কাউকে ভালোবাসবো এমন অনুভূতি নিজের মনের ভিতর কখনও অনুভব করিনি। অনুভব করিনি কারো প্রতি কোন আকর্ষণও। কেন জানি প্রেম বা ভালোবাসার প্রতি আমার কোন মোহ কাজ করেনি কখনও। অথচ সেই আমিই এক সময়ে প্রেম বা ভালোবাসার আবেগে নিজেকে বিলিয়ে দিলাম অকাতরে। হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের মাঝে আমার নিজের জীবনের একটি সত্য ঘটনা শেয়ার করার জন্য আসলাম। গতকাল আড্ডায় আপনারা অনেকেই আমার জীবনে ঘটে যাওয়া প্রেম বা ভালোবাসার বিষয়টি জানতে চেয়েছেন। অনেকে আবার একটি পোস্ট করার জন্যও অনুরোধ করেছেন। আর আপনাদের হাজারও উৎসাহ আর উদ্দীপনার সমাপ্তি ঘটাতেই কিন্তু আমার আজকের গল্প। যা হয়তো বা আপনাদের কারো কারো চোখে বয়ে দিতে পারে বৃষ্টির ঝর্ণা। আর এ জন্যই আমার আজকের গল্পটি আমি আপনাদের সকলকে ‍উৎসর্গ করলাম। @everyone। চলুন পড়ে আসা যাক আমার জীবনে পেয়েও হারানো সেই ভালোবাসার গল্প।

heart-239667_1280.jpg

source

জীবনে প্রেম হাতছানি দিয়েছে বহুবার। কিন্তু কখনও যে কারো জন্যে এভাবে কাঁদতে হবে সেটা কিন্তু বুঝে উঠতে পারিনি। কারন ভালোবাসা নামক জিনিসটার উপর বিশ্বাস ছিল কম। আর তাই তো জীবনে এই অধ্যায়টার মধ্যে ডুব দিতে চাইনি। যখন ক্লাস টেইনে পড়ি তখন থেকেই ভালোবাসার হাতছানি প্রতিবার আমায় স্পর্শ করতে চাইলেও আমি কিন্তু তাতে গা ভাসায়নি। অথচ এই মরিচিকায় পা কাটলো আমার। আর সেই মরিচিকার সর্বশেষ কাহিনীই আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

বাবা গত হয়েছেন প্রায় অনেক বছর। পরিবারের দায়িত্ব বড় ভাইয়ের ‍উপর থাকলেও তিনিই হঠাৎ হন অসুস্থ্য। যার কারনে পরিবারে বড় অনেকে থাকা শর্তেও আমার উপর চলে আসে পরিবারের দায়িত্বের অনেক অংশ। পরিবারের কারনেই আমার সরকারি চাকরি হয় বড় ভাইয়ের অফিসে। না কোন যোগ্যতায় নয়। বরং বড় ভাইকে ভালোবেসে আমাকে চাকরি টা দেন। যাতে করে আমি পরিবারের দায়িত্বটা নিতে পারি। সে যাই হোক সে গল্প না হয় অন্য দিন করবো। তবে পৃথিবীতে যদি আমাকে কোন কিছু কে প্রাধান্য দিতে বলেন তবে সবার আগে আমি আমার পরিবার কেই দিবো।তারপর অন্য কিছু। তো যাই হোক। সরকারি চাকরির সুবাদে তখন অফিসের অনেক ছেলেরাই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু না আমি শুধুমাত্র পরিবারের কথা ভেবেই সে গুলো কে অপেক্ষা করি। কিন্তু চাকরির কয়েক বছর পার হওয়ার পর ঘটে যায় আমার জীবনে এক ঘটনা।

আমার এক অফিস কলিগ একদিন আমাদের বাসায় আসে। তিনি আমার মায়ের সাথে আমার বিয়ে নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন যে তার স্ত্রীর বড় বোনের দেবর। যিনি ইউরোপ কান্ট্রি তে থাকেন বহু বছর। তিনি বেশ তাড়াতাড়ি দেশে আসবেন। তাই তার জন্য একটি ভালো মেয়ে দরকার। যেহেতু আমাকে সে বেশ কিছুদিন যাবৎ চিনে তাই আমাকে তার বেশ ভালো লাগে এবং সেই ছেলেটির জন্য তিনি আমাকেই পছন্দ করছেন। এখন আমাদের বাসা থেকে যদি সম্মতি দেয় তাহলে ছেলের অভিভাবক আসবে কথা বলেতে। আমার মা এবং পরিবারের অন্যরা ছেলের ছবি দেখে এবং আমার সেই কলিগ এর মুখে ছেলে সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে আর না করতে পারেন নি। তাই সেই ছেলের অভিভাবক দের আসতে বলেন।

এক সময়ে ছেলে অভিভাবকরাও আসেন। তারা আমাকে দেখেন। মানে ছেলের বড় ভাই এবং ছেলে বড় ভাইয়ের স্ত্রী। তার মানে তাদের পছন্দই সব। তখন তারা আমাকে দেখে পছন্দ করে। তারপর আমার মায়ের সাথে কথা বলে । তখন পারিবারি ভাবে কথা হয় যে পাত্র সেপ্টেম্বরে দেশে কোরবানির ঈদ করতে আসবে। আর তখন ছেলে মেয়ে দুজন দুজন কে দেখবে। যদি তাদের কোন আপত্তি না থাকে তাহলে পারিবারিক ভাবে তাদের বিয়ে ফাইনাল করা হবে।

বেশ কয়েকদিন কেটে যাওয়ার পর আমার সেই অফিস কলিগ অফিসে আমার কাছে আসে। তখন তিনি আমাকে সেই ছেলেটির একটি ছবি মোবাইলে দেখান। তারপর সেই কলিগ আরও একদিন আসেন। তিনি আমাকে বলেন যে যদি আমার আপত্তি না থাকে তাহলে সেই পাত্র আমাকে ফেইস বুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে চায়। আমি তাকে না করে দিলাম। কারন অপরিচিত কারো সাথে আমি ফেইস বুকে ফ্রেন্ডশীপ করি না। এরপর আমার সেই কলিগ প্রায় প্রতিদিন আমার কাছে আসতো একই অনুরোধ নিয়ে। কিন্তু আমি কোন ভাবেই সম্মতি দিতাম না। তবে এই বিষয়টি নিয়ে আমি বাসায় আলোচনা করলাম। যেহেতু ছেলে বেশ কোয়ালিফাইড ছিল। তাই বাসা থেকেও তেমন আপত্তি করলো না। তার উপর ছেলেদের পুরো পরিবারই শিক্ষিত এবং কোয়ালিফাইড। তাদের পরিবারের বড় ভাই সহ মোট ৩ ভাই সরকারি চাকরি জীবি এবং এক ভাই একটি বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ।কিন্তু তাতেও আমি সম্মতি দিলাম না।

কিছুদিন কেটে গেল এভাবেই। একদিন আমার অফিসের কিছু ফ্রেন্ড এক সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। তখন আমার সেই অফিস কলিগ আমাদের সেখানে আসেন এবং আমার ফ্রেন্ডদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তখন আমার ফ্রেন্ডরা আমাকে অনেকক্ষন বিষয়টি বুঝায় এবং বলেন সমস্যা কি তাতে? আগে থেকে কথা বলা থাকলে তো ভালোই হয়। তাহলে পরে আর কষ্ট হবে না। ভালো না লাগলে না করে দিবি। এরপর আমি ফেইসবুকে রিকোয়েস্ট পাঠাতে অনুমতি দিয়ে দেই। কিন্তু অনুমুতি দিতে দেরি। আর রিকোয়েস্ট পাঠাতে দেরি হয়নি। আমি সাধারনত অফিস আওয়ারের পর রাতে কিছুটা সময় ফেইস বুকে থাকতাম তখন।

একদিন রাতে আমি ফেইসবুকে ঢুকে দেখলাম যে একটি রিকোয়েস্ট। তখন আমি তার প্রোফাইল চেক করে দেখলাম যে সেই ছেলেটি। ও হ্যাঁ ছেলেটির নাম ছিল হাসান। তিনি কুমিল্লার কোন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে মাস্টার্স করা। সে যাই হোক রিকোয়েস্ট এর সাথে সাথে আমার মেসেঞ্জারেও তার একটি ছবি সহ কয়েকটি কথা লেখা ছিল। তার পরিচয় তিনি বেশ সুন্দর করে তুলে ধরেছেন সেই লেখায়। তারপর আমাকে অনুরোধ করা হলো যদি আমার আপত্তি না থাকে তাহলে মেসেঞ্জারে টুক টাক কথা বলতে চায় সে। তো আমি আর আপত্তি করলাম না। সেই থেকে প্রতিদিন একই সময় তিনি আমাকে টুকটাক ম্যাসেজ পাঠাতেন। আর আমিও টুকটাক রিপ্লাই দিতে লাগলাম। এভাবেই যাচিছল সময় আর দিন। বেশ কয়েক মাস আমাদের এভাবেই কেটে গেল।

দু এক মাস পরের কথা। এখন যেন নিয়ম হয়ে দাড়িঁয়েছে হাসান সাহেবের ম্যাসেজ এর জন্য অপেক্ষা করাটা । একি নিজের অজান্তেই যেন কিসের সাথে জড়িয়ে পড়ছি। আর পড়বোই বা না কেন। ভদ্রলোক তো শুধু আমায় মেসেজ পাঠাতেন না। মাঝে মাঝে আমার কিছু প্রিয় গানও পাঠাতেন। আর আমিও বুঝতে পারতাম তার পছন্দের সাথে আমার পছন্দের বেশ অনেকটা মিল রয়েছে। যে গান গুলো সে আমাকে পাঠাতেন তার সব গুলোই আমার ভালো লাগা গান। মনে মনে ছেলেটির প্রতি একটু ভালো লাগাও কাজ করতে শুরু করে দিল। আর ভালো লাগেবেই না কেন? হাসান সাহেব ছিল যেমন স্মার্ট, শিক্ষিত, তেমনি একজন রোমান্টিক মাইনডেড ছেলে।(চলবে)।

গল্পটি একটি পর্বে শেয়ার করা সম্ভব নয়। তাই আজ এখানে শেষ করতে হচেছ। গল্পটির শেষ পর্যন্ত জানতে আমার ব্লগের সাথেই থাকুন। আর আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম।সকলেই ভালো থাকবেন।

❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️

image.png

আমার নিজের কিছু কথা

384549715_171479776007493_3210441826564088767_n.jpg
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। আমি একজন বাংলাদেশী নাগরিক। পেশাগত জীবনে আমি একজন চাকরি জীবি এবং গৃহীনি। সেই ছেলেবেলা হতেই আমি গল্প আর কবিতা লেখার চেষ্টা করে আসছি। অনলাইন প্লাটফর্মে কাজ করা আমার যেমন সখ, তেমনি ভাবে নিজেকে কিছুটা স্বচছতার মধ্যে পরিচালিত করাও আমার প্রতিজ্ঞা। সেই ছেলেবেলা হতেই গান বেশ ভালোবাসি। গান শুনতে ও গাইতে আমি বেশ পছন্দ করি। সেই সাথে পছন্দ করি গল্প কবিতা লিখতে। আমি ভিডিও এডিটিং সহ অনলাইন প্লাটফর্মের নানাবিধ কাজ করতে পারি। মাঝে মাঝে গলা ছেড়ে গান করতে বা গান রেকডিং করা আমার এক সময়ের বেশ জনপ্রিয় সখগুলোর একটি। তবে ইচ্ছে আছে নিজের দক্ষতা কে আরও বেশী বৃদ্ধি করে নতুন নতুন কাজ নিজের আয়ত্বে আনা। অবশ্য আল্লাহ যদি চান। ভালোবাসি প্রাণপ্রিয় মাকে। ‍যিনি মহান আল্লাহর মেহমান হয়ে চলে গেছেন ওপারে। তবে জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখ হলো আমার প্রাণপিয় মাকে নিজের ভালোবাসার কথা বলতে না পারা। সবার কাছে আমার জান্নাতি মায়ের জন্য দোয়া চাই ।

আমার ব্লগটির সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

image.png

image.png

Sort:  
 last year 

আপু এটা কি ঠিক হলো? এখানেই থামতে হলো?? হাসান সাহেব তারপর কি করলো? জানার অপেক্ষায় রইলাম। যারা ভালোবাসায় জড়াতে চায় না।তারাই কিন্তু জড়িয়ে গেলে একটু বেশী মাত্রায় আটকে যায়।আর কষ্ট ও পায় বেশী।ধন্যবাদ আপু সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য।

 last year 

ধন্যবাদ আপু আপনার সুন্দর এবং সাবলীল মন্তব্যের জন্য।

 last year 

শুরু থেকে কী রকম একটা মোড নিয়ে গল্পটা পড়ছিলাম, কিন্তু আপনি এই জায়গায় পোস্টটা শেষ করে ভালো করলেন না? প্রথম প্রথম যদিও রাজি ছিলেন না, তবে দেখছি ওই ছেলেটাকে অনুমতি দিয়েছিলেন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানোর জন্য। আর কথা বলার মধ্য দিয়ে তার মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছিলেন। এর পরবর্তীতে কি হল এটা দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।

 last year 

আপু একটু কষ্ট করে অপেক্ষায় থাকুন। আগামী সপ্তাহেই সব জট খুলে যাবে। ধন্যবাদ সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

আপনার জীবনের গল্পটি পড়ে সত্যি অনেক ভালো লাগলো আপু। আমি আপনার সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম। আর আপনি আমার অনুরোধ রেখেছেন দেখে সত্যি খুশি হলাম। এরপর কি হয়েছিল জানতে চাই আপু।

 last year 

অপেক্ষা করুন। খুব তাড়াতাড়ি জানতে পারবেন।ধন্যবাদ আপু আপনার মন্তব্যের জন্য।

 last year 

প্রেম একবার এসেছিল নিরবে ----খুব ভালো লাগলো পড়ে।পরে আপনাদের সাথে কি হয়েছিল সেটা জানারও আগ্রহ বেড়ে গেল। নেক্সট পার্ট খুব দ্রুত চাই আপু।

 last year 

আপু আগ্রহ আরও বাড়ুক সামনে অবশ্যই জানতে পারবেন। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 last year 
 last year 

সম্পূর্ণ গল্পটি বেশ মনোযোগ সহকারে পড়লাম আপু। যারা প্রেম ভালোবাসার সম্পর্কে জড়াতে চায় না, তারা একবার জড়িয়ে গেলে, ভালোবাসার বন্ধন থেকে ছুটতে পারে না। এমন ঘটনা আমি অনেক দেখেছি। মায়া জিনিসটা খুব খারাপ,কারো সাথে মায়ার বন্ধনে আটকে গেলে,সেই মানুষের কাছ থেকে পরবর্তীতে অবহেলা পেলে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না। যাইহোক ফেসবুক মেসেঞ্জার এর মাধ্যমে বেশ ভালোই মনের কথাবার্তা বলা হতো। পরবর্তী পর্ব পড়ার আগ্রহ অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছে। গল্পটি পড়ে সত্যিই খুব ভালো লাগলো আপু। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

ইতি মধ্যে গল্পটির দ্বিতীয় পর্ব শেয়ার করেছি। লিংক। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর এবং সাবলিল মন্তব্যের জন্য।

 last year 

হ্যাঁ আপু দ্বিতীয় পর্বটি পড়ে এইমাত্র কমেন্ট করলাম। গল্পটি পড়ে সত্যিই মর্মাহত হলাম। ভালো থাকবেন সবসময়।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.18
JST 0.034
BTC 90853.98
ETH 3221.27
USDT 1.00
SBD 2.82