যশোর রেলস্টেশনের ছোট চায়ের দোকানের মেধাবী ছেলের কিছু কথা
আসসালামু আলাইকুম
আজ মঙ্গলবার, ১৮ই অক্টোবর
কেমন আছেন সবাই? ভাল আছেন নিশ্চয়। আমিও ভাল আছি। আসলে আমাদের প্রত্যেকেরই এখন ভাল থাকতে হবে। নিজেকে সুস্থ্য রাখার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করতে হবে। যাক আমি আজ আবার আপনাদের মাঝে আসলাম নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। বলেন তো আজ আমি কি পোস্ট করবো? গল্প, ফটোগ্রাফি, রেসিপি নাকি রিভিউ?
গত কিছু দিন যাবৎ আমি ঢাকা হতে ঝিকরগাছায় প্রায় তিনবার ভ্রমন করেছি। আর এতদিন ভ্রমন করে আমি বেশ কিছু বিষয়ে জানতে ও বুঝতে পেরেছি। আসলে ভ্রমন আমাদের কে করে তুলে প্রানবন্ত, উচ্ছল আর মন ও দেহ কে করে তুলে উজ্জীবিত। আর এই ভ্রমনের মধ্য দিয়েই আমরা আবার নানাবিধ জ্ঞান অর্জন করতে পারি। তাই তো যশোর রেলস্টেশনের পাশ্বে ছোট চায়ের দোকনের সেই ছো বাচ্চাটির থেকেও আজ নতুন কিছু জ্ঞান অর্জন করলাম। আশা করি আপনাদের ও ভাল লাগবে।
ছবির অবস্থান সোর্স
ফটোগ্রাফার- মাকসুদা কাউছার
ক্যামেরা-Opp-A16
আমরা এবার আবার বেনাপোল এক্সপ্রেসে টিকেট করলাম ঝিকরগাছা যাওয়ার জন্য। আসলে রাতে ট্রেনে করে ভ্রমন করলে মজাই লাগে। আমার দ্বিতীয়বার ট্রেন ভ্রমনের বিষয়ে আমি আপনাদের সাথে আর একদিন গল্প করবো। যাক সেসব কথা। আমাদের ঢাকা হতে রাত ১১ টার সময়ে ছেড়ে যাওয়া বেনোপোল এক্সপ্রেসটি সকাল ৮.৩০ মিনিট যশোর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়। বেনাপোল এক্সপ্রেস সাধারণত যশোর পৌঁছে তাদের বগি চেঞ্জ করে। আর এর জন্য প্রায় ২০-৩০ মিনিট সময় লেগে যায়। এবারও সেরকম সময় লাগলো। প্রথমবার আমরা এ সময়টাতে ট্রেনেই বসে ছিলাম কিন্তু এবার আমরা একটু সময়ের জন্য ট্রেন থেকে নামলাম। আর কিছু ফটোগ্রাফিও করলাম। এরপর ভাবলাম এই ফাঁকে একটু হালকা নাস্তা সেড়ে নেওয়া যায়।
ছবির অবস্থান সোর্স
ফটোগ্রাফার- মাকসুদা কাউছার
ক্যামেরা-Opp-A16
খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম এখানে গরুর দুধের চা পাওয়া যায়। তাই ট্রেন থেকে ফটোগ্রাফি করার পর আমরা সেই গরুর দুধের চায়ের দোকান খোজঁ করতে লাগলাম। কিছুদূর হাটতেই স্টেশনের পাশ্বে একটি দোকান চোখে পড়লো। আমরা ভাবলাম হাতে যেহেতু ২০ মিনিট সময় আছে তাহলে গরুর দুধের চা তো খাওয়াই যায়। আমরা সেই দোকানের দিকে গেলাম। দোকানে ঢুকে দেখলাম একটি ছোট ছেলে কাপে কাপে চা বানাচ্ছে আর পরিবেশন করছে।
ছবির অবস্থান সোর্স
ফটোগ্রাফার- মাকসুদা কাউছার
ক্যামেরা-Opp-A16
আমরাও আমাদের মত ছেলেটিকে দুই কাপ গরুর দুধের চা বানাতে বললাম আর সাথে দুইটি বন রুটি নিলাম। আমি লক্ষ্য করে দেখলাম যে ছেলেটি খুব যত্ন সহকারে চা বান্নাচ্ছে। সুন্দর করে গরম পানি দিয়ে মগ আর কাপ গুলো ধুয়ে নিচ্ছে। তার সেই চায়ের স্বাদ সত্যি আজও আমার মুখে রয়েগেছে। ছেলেটি কে কোন কথা জিজ্ঞেস করার সুযোগ নেই। কারন এই সময় টা সে বেশী ব্যাস্ত থাকে। আমরা চা আর বন রুটি খাওয়া শেষ করলাম। কিন্তু এরই ফাঁকে ছেলেটির একটি ছবি ও আশেপাশের কিছু ছবি তুলে নিলাম।
ছবির অবস্থান সোর্স
ফটোগ্রাফার- মাকসুদা কাউছার
ক্যামেরা-Opp-A16
তখনও ট্রেন এর বগি চেঞ্জ হয়নি। আরও ১০-১৫ মিনিট সময় লাগবে। আমি আমার ভাই কে বললাম দেখি যদি ছেলেটি সম্পর্কে কিছু জানতে পারি তাহলে আমি আমার কমিউনিটিতে সেটা শেয়ার করতে পারবো। যাক আল্লাহর রহমতে একটা সুযোগ পেয়ে গেলাম। কিছুক্ষন পর দোকানে লোকজন কমে গেল । আমি তার ফাঁকে ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলাম, কি নাম তোমার বাবা? ছেলেটি বলল- তার নাম আশিক। তারপর আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম এত মজার চা বানানো তুমি কি করে শিখলা। ছেলেটি বলল এই চা বানানো তার বাবার কাছ থেকে শিখেছে।
এরপর ছেলেটির সাথে আমার প্রায় ১০ মিনিটের মত কথা হলো। আমি জানতে পারলাম যে ছেলেটির বাবা সারারাত স্টেশনে দোকান চালায়। আর ভোর হলে বাড়ীতে যেয়ে ঘুমায়। আবার দুপুর ১২ টায় দোকানে আসে। তখন ছেলেটি স্কুলে চলে যায়। আবার সন্ধ্যায় এসে দোকানে বসে। ছেলেটি স্থানীয় একটি স্কুলে ক্লাস সেভেন এ পড়াশুনা করে। যেখানে ছেলেটি ক্লাসের ফাস্ট বয়। তার কাছে আরও জানা গেল বাবাকে সাহায্য করতেই তার এই দোকানে বসা। পড়াশুনার পাশাপাশি সেই ক্লাস ফাইভ হতে সে বাবা কে সাহায্য করে আসছে। আর এই দোকনের আয় দিয়েই তার আরও দুই ভাই বোন সহ সবার লেখাপাড়ার খরচ ও সংসার খরচ চলে।
ছবির অবস্থান সোর্স
ফটোগ্রাফার- মাকসুদা কাউছার
ক্যামেরা-Opp-A16
ততক্ষনে আমাদের ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে গেল তাই ছেলেটির সাথে আর বেশী কথা না বাড়িয়ে আমরা ট্রেনের দিকে রওনা হলাম এবং ট্রেনে বসলাম। আমি ট্রেনে বসে বসে ভাবতে লাগলাম ছেলেটি কি মজা করে চা বানায়। আবার এও ভাবলাম যে ছেলেটি কি সুন্দর নিজের কথা না ভেবে অর্থাৎ এই বয়সে ছেলেরা কত খেলাধুলায় করে। ছেলেটি সেসব কিছু বির্সজন দিয়ে কিভাবে বাবার পাশে দাড়ালো। আর কি মেধাবী ছাত্র সে এতকিছুর পরও সে কিভাবে এত ভাল রেজাল্ট করে।
ছবির অবস্থান সোর্স
ফটোগ্রাফার- মাকসুদা কাউছার
ক্যামেরা-Opp-A16
যেখানে সমাজের বিত্তবান মানুষের ছেলেরা এ বয়সে সারাক্ষন কয়েকজন শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ে ভাল রেজাল্ট করতে হিমশিম খায়। সেখানে গ্রাম্য এক দরিদ্র পিতার ছোট একটি বাচ্চা ছেলে বাবার কাজে সহায়তা করার পর আবার পড়াশুনা করে ভাল রেজাল্ট করছে। বিষয়টি আমার কাছে বেশ ভাল লেগেছে। আর আপনাদের কাছে কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না যেনো।
ভাল থাকবেন , সুস্থ্য থাকবেন।
thank you
আসলে আমাদের দেশে অনেক জায়গাতে এই রকম কিছু ঘটনা দেখা যায়। যেখানে শিশু কাজও করে আবার পড়াশোনাও করে। আর যদিও এটি খুব একটা বেশি দেখা যায় না, শুধুমাত্র ইচ্ছা শক্তি থাকলে এটা সম্ভব, যেটা ছোট ছেলেটির মধ্যে ছিল। ধন্যবাদ আমাদের সাথে তুলে ধরার জন্য।
জি ভাই আপনি সত্যি কথা বলেছেন ছোট ছেলেটির মধ্যে অনেক ইচ্ছা শক্তি ছিল।
জি আপু সেটাই দেখতে পেলাম আপনার পোষ্টের মাধ্যমে। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের রিপ্লে দেওয়ার জন্য।
বাস্তবতা অনেক কঠিন। ছেলেটি ক্লাস ফাইভে পড়ার সময়েই বাস্তব জীবনের মুখমুখি হয়েগেছে। যে বয়সে তার খেলার মাঠে থাকার কথা সে বয়সে বাবার সাথে চা বিক্রয় করে সংসারের হাল ধরেছে। এটা জেনে ভাল লাগলো যে ছেলেটি এত কষ্ট করে সংসারে সময় দিয়েও ক্লাসের ফাষ্ট বয়। ধন্যবাদ আপু।
আমি এই বিষয়টি উপলব্ধি করেই গল্পটা আপনাদের মাঝে তুলে ধরছি। ধন্যবাদ ভাইয়া ভালো থাকবেন।
আপনার টাইটেল এ ছোট বানানটি ভুল হয়েছে,ঠিক করে নিন।টাইটেল ভুল হলে দেখতে ভালো লাগেনা।
জি আপু বানান ঠিক করেছি.
আপনি অনেক সুন্দর করে ছোট বাচ্চাটির লেখাপড়াও তার বাবাকে সাপোর্ট দেওয়া খুব সুন্দর করে আমাদের মাঝে পোস্ট করেছেন। সত্যি আপনার কল্পটি পড়ে আমার কাছে খুব ইন্টারেস্ট লাগলো। সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র তাও আবার ক্লাসের পাশ বয়। স্কুল শেষ করে তার বাবাকে চায় দোকানে হেল্প করে। তার বাবা রাতভর কাজ করে ভোরবেলা ঘুমাই এই দোকানে ইনকাম দিয়ে তাদের দুই ভাই বোনের পড়ালেখা ও ফ্যামিলি খরছ চালাই। আপনার লেখাটি পড়ে খুব ভালো লাগলো খুব সুন্দর করে সাজিয়ে উপস্থাপনা করেছেন ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ আপু আপনাকে সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য। আসলে আমি সবসময় সচেষ্ট থাকে যাতে আপনাদের কে ভালো কিছু পড় দিতে পারি।
বর্তমান সময়ে এমন অনেক আশিক নামের ছেলেরা স্টেশনের ছোট্ট একটি দোকানে তাদের পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে কাজ করে। যদিও তারা অনেক মেধাবী তাদেরকে যদি একটু যত্ন নেওয়া হয় তাহলে ভবিষ্যতে তারা অনেক ভালো কিছু করতে পারবে। ট্রেনের বিশ্রাম মুহূর্তে খুবই চমৎকার মুহূর্ত অতিবাহিত করেছেন গরুর দুধের চা বরাবরই অনেক বেশি সুস্বাদু লাগে। সুন্দর মুহূর্ত অতিবাহিত করার পাশাপাশি মেধাবী ছেলের গল্পও আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন,ধন্যবাদ আপনাকে।
ভাইয়া প্রথমে আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি যে আপনি আমার প্রত্যেকটা পোস্টে কমেন্ট করার চেষ্টা করেন। আপনাকে আবারো ধন্যবাদ আমার পোস্টে একটি সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।