আমার শৈশবকালে ঘটে যাওয়া একটি দূর্ঘটনা
আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই বর্তমানের এই করোনাকালীন পরিস্থিতিতে সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন।
শৈশবে প্রায় সকলেই দুরন্তপণা ও ডানপিটে স্বভাবের হয়ে থাকে। আমিও এর ব্যাতিক্রম ছিলাম না। আমার ছোট ভাইয়ের সাথে বয়সের পার্থক্য দুই বছরের হওয়ায় ওর সাথেই সবসময় দুষ্টুমি, খুনসুটিতে মেতে থাকতাম, খেলাধুলাও করতাম ওরই সাথে। তবে কখনো কখনো অতিরিক্ত দুষ্টুমি করতে গিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতো। আজ আপনাদের সাথে এমন একটি অপ্রীতিকর ঘটনাই শেয়ার করবো।
আগেই উল্লেখ করেছি আমার ছোট ভাইয়ের সাথে আমার খুনসুটির কথা। নিজেদের মধ্যে এভাবে দুষ্টুমি করতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে অনেক সময়েই মারামারি বেধে যেতো। যদিও আমাদের মধ্যে যতই মারামারি হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত দেখা যেত একবেলা যেতে না যেতেই সব সমস্যা মিটমাট হয়ে যেতো। কারন সেই শৈশবকালে সুযোগ পেলেই আমরা গল্পের রাজ্যে হারিয়ে যেতাম, যে রাজত্বে যেন কেবল আমাদেরই আধিপত্য। তবে একদিনের কথা আমার সবচেয়ে বেশী মনে পড়ে, যেদিন অতিরিক্ত দুষ্টুমি করতে গিয়ে ব্যাপারটা অঘটনের পর্যায়ে চলে গিয়েছিলো।
তখন আমার বয়স নয় কি দশ বছর হবে। যেদিন ঘটনাটি ঘটে সেদিন অন্যান্য যেকোনো দিনের মতোই আমরা নিজেদের মতো দৌড়াদৌড়ি, খেলাধুলা করছিলাম। দৌড়াদৌড়ির মাঝেই আমি হঠাৎ কি মনে করে যেন আমার ছোট ভাইকে পিছন থেকে জামা টান দিয়ে ধরে ফেলি, তখন ও আমার হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য জোরে দৌড় দেয়ার চেস্টা করছিলো। আমি ব্যাপারটাকে মজা হিসেবেই নিয়েছিলাম এবং ও দৌড়ানোর চেস্টা করতে থাকা অবস্থায়ই হঠাৎ করেই জামা হাত থেকে ছেড়ে দিই। ফলে ও বেকায়দা ভাবে ভারসাম্য হারিয়ে সামনের খাটের সাথে আঘাত পায়।
ওকে হঠাৎ ছেড়ে দেয়ার পর ওর মুখ খাটের সাথে বাড়ি খায় এবং সাথে সাথেই সামনে ২/৩ টি দাঁত ভেংগে যায়। আমি যদিও তখনো ঠিকমতো বুঝতে পারি নি যে কি হয়েছে, তবে যখন কাছে গিয়ে ওর দিকে তাকালাম তখন আসলেই ভয় পেয়ে যাই। কারন ওর দাঁত থেকে অঝোরে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছিলো এবং ও চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করেছিলো।
চিৎকার শুনে আমার আব্বু এগিয়ে আসে এবং ওর এই অবস্থা দেখে দ্রুততার সাথে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নেয়ার সময় আব্বুর চোখ থেকেও টল টল করে পানি ঝড়ছিলো এই দৃশ্যটি আমার স্পষ্টভাবে মনে আছে।
উপরের ছবিটিতে (ডানে) আমার ভাই বসে আছে। এই ছবিটি উপরোক্ত ঘটনার আগে তোলা, তাই দেখতেই পাচ্ছেন তখনকার সময়ে ওর কি সুন্দর দাঁত ছিলো, তবে ওই ঘটনার পরে বেশ কয়েকবছর লেগেছিলো ওর দাঁতগুলোর ক্ষত পুরোপুরি ভাবে রিকাভার হতে। নিজের দোষে ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনার জন্য মাঝে মাঝেই নিজের উপর আক্ষেপ হয়। বিশেষ করে ছোট ভাইয়ের রক্তমাখা মুখাবয়ব ও আব্বুর ছলছল চোখ আমি আজও ভুলতে পারি না।
এই ছিলো শৈশবকালে আমার দ্বারা ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর একটি ঘটনা। সময় নিয়ে পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। তবে এই ঘটনাটি আমি কখনোই ভুলবো না। এ থেকে আমি বড় রকমের একটি শিক্ষা পেয়েছি। সামান্য অসতর্কতার কারণে যেন কখনো এ ধরনের দূর্ঘটনা না ঘটে সেদিকে সবারই খেয়াল রাখা উচিত।
Best Regards: @mahirabdullah