নিবিড় আর নীলাদ্রির প্রেম -১
আ মার বাংলা ব্লগের সকল বাংলাভাষী ব্লগার ভাই এবং বোনদের আমার সালাম এবং আদাপ। সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান সৃষ্টিকর্তার রহমতে অনেক ভাল আছি।
![]() |
---|
নিবিড় একদম সাধারন মন মানসিকতার একজন ছেলে, সাধারণভাবে চলাচল করতেই সে বেশি পছন্দ করে। আজকাল অন্যান্য ছেলেমেয়েদের সাথে তার কোনো মিল নেই বললেই চলে। অন্যান্য ছেলেমেয়েরা তো যার যার প্রেম ভালোবাসা নিয়ে ব্যস্ত কিন্তু নিবিড়ের মনে এই ধরনের কোনো ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষাই কখনো জাগে না। দু-একজন বন্ধুবান্ধব নিয়েই সে সময় কাটাতে বেশি পছন্দ করে। কোন মেয়েকে দেখেই তার মনে কখনো প্রেমের অনুভূতিটা আসেনি, আর সে সব সময় তার বন্ধু বান্ধবদের এটাও বলে যে তার দ্বারা কখনো প্রেম ভালোবাসা সম্ভব নয়।
বাবা-মার ছোট ছেলে নিবিড়, তার একজন বড় বোন রয়েছে, নিবিড়ের বড় বোন বাহিরে পড়াশোনা করে তাই বাসায় সে একা ভালই আদরে থাকে। দিনের বেশিরভাগ সময় নিবিড় বাসাতেই বসে বই পড়ে অথবা গান শুনে সময় কাটায়। ওই তো আগেই বলেছিলাম খুব সাধারণ ভাবে জীবন যাপন করে নিবিড়। এই সাধারন ছেলেটির মধ্যে অসাধারণ একটি ইচ্ছা আছে আর সেটা হল ভ্রমণ করা। নতুন নতুন জায়গায় ভ্রমণ করতে নিবিড় খুব বেশি পছন্দ করে। তবে তার কাছে সব থেকে বেশি ভালো লাগে তার গ্রামের বাসায় সময় কাটাতে। কিছুদিন পরপরই সে তার গ্রামের বাসায় যায় ঘুরতে। সেখানে তার ফুফাতো চাচাতো ভায়েরা সহ সে বেশ ভালই সময় কাটায়।
নিবিড়ের গ্রামের বাসা সীমান্তবর্তী এলাকায়, মোটামুটি ভালোই গ্রাম্য একটা ভাব আছে সেই গ্রামে। সন্ধ্যা হতে না হতেই বেশিরভাগ মানুষই ঘুমিয়ে পড়ে। তবে বাজারের দিকে গেলে দু একটা মানুষ দেখতে পাওয়া যায়। সেই সন্ধ্যাবেলায় নিবিড় এবং তার ভায়েরা সহ আড্ডা দিতে বের হয়। তাদের বাসা থেকে কিছুটা দূরে একটা পুল রয়েছে, সেই পুলে বসে তারা আড্ডা দেয়। নিবিড় ছেলেটা ভালোই গান পারে তাই গানের আড্ডায় তারা বেশ ভালই মেতে ওঠে।
শীতকাল চলে এসেছে, নভেম্বর মাসের ০৯ তারিখ নিবিড় ঠিক করল সে তার গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাবে। এদিকে সকাল-সকাল সে তার ভাই শৈশবকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে যে সে আসছে। শৈশব এটা শুনে ভীষণ খুশি কারণ তারা যখন একসাথে থাকে তখন অন্যরকম মজা হয়।
নিবিড় বাসা থেকে সকাল সকাল বেরিয়ে পরে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। বাসে বসলে তাদের গ্রামের বাড়িতে যেতে সময় লাগে ৬-৭ ঘন্টা। রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়া কম থাকলে একটু কম সময় লাগে। সেদিন সৌভাগ্যবশত রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়া কমই ছিল তাই সন্ধ্যা হওয়ার কিছুক্ষণ আগে আগেই নিবিড় গ্রামের বাড়ির বাজারে পৌঁছে যায়।
বাস থেকে নেমে বাসায় যেতে সময় লাগে আরো ৩০ মিনিটের মত। এই পথটুকু হেঁটে যেতে হবে একা যেতে ভালো লাগবে না তাই সে শৈশব কে আগে ভাগেই বাজারে ডেকে রেখেছিল। তারপর শৈশব এবং নিবিড় একসাথে হাঁটতে শুরু করল বাসার উদ্দেশ্যে। নিবিড় সারাদিন বাসায় ছিল তাই আজ তারা ঠিক করল খেয়েদেয়ে শুয়ে গল্প করবে, আজ আর কোথাও আড্ডা দিতে বেরোবে না।
গ্রামের সবাই একটু তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে যেমন নিবিড় এবং শৈশবও সেদিন একটু তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে জেগে যায়। তাদের বাসার পাশ দিয়েই ভারতের সীমান্ত। সেই সীমান্তের পাশ দিয়ে ছিল একটি রাস্তা, রাস্তা দিয়ে কে আসতো আর কে যেত স্পষ্টভাবেই দেখা যেত।
সেখানে এমন একটি জায়গা ছিল যেখানে দাঁড়ালে ভারতের সেই রাস্তাটি আরো অনেক কাছে চলে আসে। নিবিড় এবং শৈশব সকাল সকাল সেখানেই গিয়ে দাঁড়ায়। সেখানে বসে তারা গল্পগুজব করতেই থাকে। ঠিক তখনই ভারতের সেই রাস্তা দিয়ে একটি মেয়ে সাইকেল নিয়ে যাচ্ছিল। সম্ভবত স্কুলে যাচ্ছিল কারণ মেয়েটির ঘাড়ে স্কুল ব্যাগ এবং শরীরে ইউনিফর্ম ছিল। তখন নিবিড় কিছু বলল না।
বাসায় ফিরে নিবিড় এবং শৈশব বিছানায় শুয়ে গল্প করছিল। কিছুক্ষণ গল্প করতে করতেই নিবিড় শৈশব কে প্রশ্ন করেই ফেলে তখন ভারতের রাস্তা দিয়ে সাইকেল নিয়ে যে মেয়েটি যাচ্ছিল সেই মেয়েটিকে কি চিনিস? আসলে সেটা ভারত বাংলাদেশের বর্ডার হলেও দুই বাংলার মানুষ মানুষকে চেনে। শৈশব বলল হ্যাঁ চিনি সেই মেয়েটির নাম নীলাদ্রি। নামটা শুনে নিবিড়ের মুখে কেমন একটা মুচকি হাসি ফুটে উঠল। শৈশব তখনও ব্যাপারটি ঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারেনি।
পরেরদিন নিবিড় সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে শৈশবকে ডাক দিয়ে ঘুম থেকে তোলে এবং বলে চল ভারতের রাস্তার কাছে গিয়ে বসে আড্ডা দেই। শৈশব প্রথমের দিকে একটু বিরক্ত হয়েই বললো ঘুম থেকে উঠেও তো আড্ডা দিতে যাওয়া যেত। তারপর নিবিড় শৈশবকে বলে আরে চল চল একটু আড্ডা দিয়ে আসা যাক। তারপর দুজন বিছানা থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ল।
তারপর নিবিড় এবং শৈশব সেই রাস্তায় গিয়ে বসে। শৈশব এদিকে বকবক করে চলেছে কিন্তু নিবিড় তার কোন কথাটি পাত্তা না দিয়ে সেই রাস্তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে কখন সে আসবে। দীর্ঘক্ষন সেখানে বসে থাকার পর হঠাৎ সেই মেয়েটি আবার সেদিনের মতোই সাইকেল নিয়ে সে দিক দিয়ে যায় এটা দেখে নিবিড় এর মুখে আবার হাসি ফুটে উঠে। এই ব্যাপারটি শৈশব লক্ষ্য করে এবং নিবিড় কে প্রশ্ন করে ব্যাপার কি তুই তখন থেকে মনমরা হয়ে বসে আছিস কিন্তু নীলাদ্রি কে দেখার পর হেসে উঠলি যে। নিবিড় উত্তরে বলে আরে ছাড় কিছু না এমনিই।
চলবে
YouTube |
---|
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
![default.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmNwBDPMPvL1yaKWTYF4wxyUmxWiEJgAy1WZWTJyCha5wE/jswit_comment_initial.w320.jpg)
খুব সুন্দর হিয়েছে নিবিড় আর নীলাদ্রির প্রেমের গল্পের প্রথম পর্বটি। খুবই সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন কাহিনী গুলো। ভালোবাসার মানুষ কে দেখার তৃষ্ণা আমাদের কোনো কালেই মিটবে না। জীবনের যেকোনো পরিস্থিতি তে ভালোবাসার মানুষ টির মুখের দিকে তাকালে একটি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলা যায়। দারুণ ছিলো পর্ব টি। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকবো।
আপনি একদম পারফেক্ট একটি নাম সিলেক্ট করেছেন। নিবিড় এবং নিলাদ্রি। তাদের ভালোবাসার কাহিনী পড়ে আমার খুব ভালো লাগলো। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি ভাই।আপনার জন্য শুভকামনা থাকলো