কুড়িগ্রাম থেকে দিনাজপুর ট্রেন ভ্রমণ - পর্ব ২

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
আজ মঙ্গলবার • ৮ই ভাদ্র • ১৪২৯ বঙ্গাব্দ • ২৩ আগস্ট - ২০২২


মার বাংলা ব্লগের সকল বাংলাভাষী ব্লগার ভাই এবং বোনদের আমার সালাম এবং আদাপ। সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান সৃষ্টিকর্তার রহমতে অনেক ভাল আছি।



Picsart_22-08-22_21-44-17-324.jpg

• Edited By PicsArt App



কুড়িগ্রাম থেকে দিনাজপুর ট্রেন ভ্রমনের প্রথম পর্বে আপনারা দেখেছেন আমি পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশন পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলাম। এবার আমাদের এখান থেকে যেতে হবে দিনাজপুর। আমরা কুড়িগ্রাম থেকে বের হওয়ার আগে ভেবে এসেছিলাম পার্বতীপুর থেকে অন্য আরেকটি ট্রেন ধরে দিনাজপুর অব্দি যাব কিন্তু পার্বতীপুর পৌঁছানোর পর রেল কর্মকর্তাদের কাছে জানতে পারি আজ সারাদিন আর কোন ট্রেন দিনাজপুর যাবেনা। এই কথা শুনে আমরা রীতিমত চিন্তায় পড়ে যাই। আমাদের খুব তাড়াতাড়ি দিনাজপুর পৌঁছাতে হবে কারণ তাড়াতাড়ি দিনাজপুরে না গেলে বোর্ড অফিস বন্ধ হয়ে যাবে। আর ট্রেন দিয়ে যেতে খুব কম সময় লাগে তাই চিন্তায় পড়েছিলাম আর কি।

আজ আর ট্রেন পাব না শুনে আমরা রেলওয়ে জংশনের বাহিরে চলে যাই অন্য কোন উপায়ে দিনাজপুর পৌঁছানোর আশায়। তারপর বাহিরে গিয়ে রিকশা খুঁজতে লাগলাম কিন্তু আশেপাশে কোন রিক্সা চোখে পড়ল না। তারপর একজনকে জিজ্ঞেস করার পর বলল আমাদের এখানে কোন রিক্সা নেই এখানে ভ্যান গাড়িতেই সবাই চলাফেরা করে। ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ মজার লেগেছে ভ্যান গাড়িতে উঠে ঘুরতে আমার কাছে খুব ভালো লাগে। তারপর একটা ভ্যান গাড়িওয়ালা মামাকে ডাক দিয়ে বললাম আমাদের দিনাজপুর বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে যেতে যেখান থেকে দিনাজপুরের বাস ছাড়বে।

Picsart_22-08-22_21-39-35-562.jpg

রেলওয়ে স্টেশন থেকে পার্বতীপুর বাসস্ট্যান্ডের দূরত্বটা আমার কাছে একটু বেশি মনে হয়েছিল। কারণ একজনের ভাড়াই ২০ টাকা করে নিয়েছিল। তবে আমার কাছে ব্যান দিয়ে যেতে ভীষণ ভালো লেগেছিল। এভাবে সচরাচর ভ্যান গাড়িতে করে ঘোরা হয় না তাই হঠাৎ করে এভাবে ভ্যান গাড়িতে করে ঘুরতে পেরে আসলেই ভীষণ ভালো লেগেছিল আমার। আমার বন্ধুরাও ভ্যান গাড়িতে উঠে বেশ আনন্দ করছিল।

IMG_20220814_115436.jpg

পার্বতীপুরের বেশিরভাগ স্থান গুলি আমার কাছে খুব ভালো লেগেছিল কারণ সেখানে মানুষজন আর গাড়ি ঘোরার ভিড় খুব কম ছিল। আমাদের শহরের তুলনায় পার্বতীপুরে গাছপালার পরিমাণ প্রচুর, সেই সবুজ গাছের ছায়া দিয়ে ভ্যান গাড়িতে চড়ে যেতে বেশ ভালোই লাগছিল। মোবাইল ফোনে একটা গান ছেড়ে দিয়েছিলাম যার কারণে ভ্যান যাত্রাটি আরো মজার হয়ে উঠেছিল।

IMG_20220814_120703.jpg

তারপর ভ্যান দিয়ে অনেকটা পথ পাড়ি দেয়ার পর আমরা পার্বতীপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে গেলাম। ভাগ্য তখন এতটাই সহায় হয়েছিল যে বাসস্ট্যান্ডে যেতেই একটি গাড়ি পেয়ে গেলাম যেটা দিনাজপুর অব্দি যাবে। তারপর আমরা আর বেশি দেরি না করে বাসে উঠে পড়ি। সেদিন যতটা ভোরে ঘুম থেকে উঠেছিলাম তেমন ভরে আর কোনদিন ঘুম থেকে ওঠা হয়নি তাই গাড়িতে উঠতেই আমার কেমন যেন ঘুম পাচ্ছিল। তাই সিটের সাথে মাথাটা লাগিয়ে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলাম। ঘুম থেকে উঠেই দেখি আমরা দিনাজপুরের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছি।

IMG_20220814_131846.jpg

দিনাজপুর পৌছাতেই ঘুম থেকে উঠে চোখ ঘষে নিচে নেমে পড়লাম। এবার আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য আমাদের দিনাজপুর বোর্ডে যেতে হবে। দিনাজপুর বোর্ডে আমার বন্ধুর মামা চাকরি করেন তাই তাকে আগে ফোন দিয়ে জানালাম যে আমরা চলে এসেছি তিনিও আমাদের তাড়াতাড়ি বোর্ড অফিসে ডাকলেন। এই অফিসগুলোতে চেনা পরিচিত লোক থাকলে সত্যিই খুব তাড়াতাড়ি কাজ সম্পন্ন করে বেরিয়ে আসা যায়। দিনাজপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে বোর্ড অফিস অনেকটা দূরে ছিল রাস্তায় যেতে যেতেই আমার বন্ধুর মামা আমাদের অনেকবার ফোন করেছিল। তার আন্তরিকতা দেখে আমার বেশ ভালই লেগেছিল।

IMG_20220814_131723.jpg

তারপর আমরা বাস স্ট্যান্ড থেকে একটি অটো রিক্সা ঠিক করলাম বোর্ড অফিস পর্যন্ত, আমাদের তিনজনের ভাড়া চেয়েছিল মোট ৬০ টাকা। ভাড়া দেখে ভেবেছিলাম বোর্ড অফিস হয়তো অনেকটা দূরে কিন্তু বোর্ড অফিসে পৌঁছানোর পর ঠিক তেমনটা মনে হলো না। বোর্ড অফিসে পৌঁছাতে আমাদের সময় লেগেছিল ১৫-২০ মিনিট এর মত। এই অঞ্চলে অটো ভাড়া কিংবা রিক্সা ভাড়া আমাদের অঞ্চলের থেকে একটু বেশি মনে হলো আমার কাছে।

IMG_20220814_132903.jpg
IMG_20220814_133012.jpg

তারপর দিনাজপুর বোর্ডের সামনে যখন গিয়ে নামলাম তখন সেখানে আশেপাশের পরিবেশ দেখে আমার ভীষণ ভালো লাগছিল। বোর্ড অফিসের ভবনটি যেমন সুন্দর তেমন আশেপাশের নিরিবিলি পরিবেশটাও ছিল ভালোলাগার মত। তারপর বোর্ড অফিসে ঢোকার সময় গেটেই সেখানে ওয়াচম্যান আমাদের গেটেই আটকে দিল তারপর আমরা সেই মামার পরিচয় দেয়াতে আমাদের খুব সহজেই সে বোর্ড অফিসে ঢুকতে দিল কারণ আমার বন্ধুর সেই মামা ছিল বড় অফিসের সেকশন অফিসার মোটামুটি বড় পোস্টে চাকুরী করতো মামা।

IMG_20220814_133109.jpg
IMG_20220814_133529.jpg

বোর্ড অফিসে ঢোকার পরে মামার চেম্বার খুঁজে পেতে বেশ কষ্ট হয়েছিল কারণ বোর্ড অফিসটা ছোট হলেও সেখানে একসাথে অনেকগুলো চেম্বার ছিল। অবশেষে মামার চেম্বার খুঁজে পেলাম তারপর দেরি না করেই আমার মামার চেম্বারে ঢুকে পড়লাম। পরিচিত হয় আমাদের বাহিরে বসে অপেক্ষা করতে হলো না। দুঃখজনক ব্যাপার মামা আমার বন্ধুর সব কাগজপত্র দেখার পর কাজ করে দিতে পারল না কারণ আমার বন্ধুর কাগজে একটু ভুলভাল ছিল তাই মামা কুড়িগ্রাম থেকে আবার কাগজগুলো ঠিক করে নিয়ে যেতে বলল। এখন আমাদের দিনাজপুর ঘোরা ছাড়া আর কোন কাজ বাকি রইল না।

IMG_20220814_140032.jpg

বোর্ড অফিস থেকে আমরা বেরিয়ে সোজা চলে গেলাম হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। এই বিশ্ববিদ্যালয় উত্তরবঙ্গের সুনামধন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়। অনেক আগে থেকে আমার ইচ্ছে ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটা একটু ঘুরে দেখান তাই এই ইচ্ছাটা পূরণ করলাম আরকি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কিছু খাওয়ার হোটেল ছিল আমরা সেখানেই আমাদের খাওয়া দাওয়া সেরে নিয়েছিলাম।

এরপর আমাদের কান্তজির মন্দির ঘোরার পালা। এরপরের পর্বে আমি আপনাদের সমাজে কান্তজির মন্দির ঘোরার আমার অভিজ্ঞতা নিয়ে পোস্ট করার চেষ্টা করব। সে ব্যক্তি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন শুভকামনা রইল সকলের জন্য।

image.png


PicsArt_03-22-02.27.17.png

আমি মাহির শাহরিয়ার ইভান। আমার বাসা বাংলাদেশের রংপুর বিভাগে । আমি একজন ব্লগার, ফটোগ্রাফার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। নতুন কোন বিষয়ে লিখতে এবং সবাই কে অজানা বিষয়ে জানাতে আমার ভিষণ ভালো লাগে। ছবি তুলতে, জাঙ্ক ফুড খেতে এবং ঘুরতেও আমি ভিষণ পছন্দ করি । আর আমার সব থেকে বড় শখ ছবি তোলা।

FacebookTwitterYouTube

2bP4pJr4wVimqCWjYimXJe2cnCgnMqDPMwPqFHimR5p.png

standard_Discord_Zip.gif

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

Sort:  

Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
I have little voting completed for you.. I support you^^

 2 years ago 

কুড়িগ্রাম থেকে দিনাজপুর যাওয়ার প্রথম পর্বটি আমি পড়েছিলাম। আজ দ্বিতীয় পর্বটি পড়ে ভালো লাগলো। ভ্যান গাড়িতে উঠতে খুব ভালোই লাগে। খোলামেলা ভ্যান গুলোতে পা ঝুলিয়ে বসতে আমার অনেক মজা লাগে।অনেক ধন্যবাদ ভাই এর সুন্দর মুহূর্তে আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

এরপরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন আপু এর পরের পর্বে আপনাদের কান্তজির মন্দির দেখাবো।
ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মতামত দেয়ার জন্য।

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
default.jpg

 2 years ago 

কুড়িগ্রাম থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত ট্রেন ভ্রমণ। টেনে ভ্রমন করতে আমার অনেক বেশি ভালো লাগে।অনেকদিন আগে আমি একবার রাজশাহীতে ট্রেন ভ্রমণ করেছিলাম সত্যি ভ্রমণ করতে আমার অনেক বেশি ভালো লাগে। আর আপনার ভ্রমণ করা দেখে আমার আরো বেশি ভালো লাগলো ধন্যবাদ।এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

আপনার ভ্রমণের বিভিন্ন দৃশ্যগুলো খুব ভালো লাগলো সাথে খুবই সুন্দর ভাবে আপনি আপনার এই ভ্রমণ কাহিনী বর্ণনা করেছেন আপনার বরাবরই শুভযাত্রা কামনা করি ।

 2 years ago 

ঘুরাঘুরি করতে আমি খুবই পছন্দ করি। যেটা অনেকদিন হলো করা হয় না । আপনার ভ্রমণ কাহিনী পড়ে অনেক ভালো লাগলো দারুন সময় অতিবাহিত করছেন।

 2 years ago 

প্রথম পর্বটি আমি দেখেছিলাম প্রথম পর্ব দেখার সাথে সাথে আজ আবার দ্বিতীয় পর্বটি দেখে নিলাম খুবই ভালো লাগলো। ঘোরাঘুরির মুহূর্তে ট্রেন ভ্রমণ সত্যিই অনেক বেশি ভালো লাগে ফটোগ্রাফি গুলো অনেক বেশি আকর্ষণীয় ছিল।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59264.94
ETH 2604.33
USDT 1.00
SBD 2.38