ফেরিঘাট
আ মার বাংলা ব্লগের সকল বাংলাভাষী ব্লগার ভাই এবং বোনদের আমার সালাম এবং আদাপ। সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান সৃষ্টিকর্তার রহমতে অনেক ভাল আছি।
![]() |
---|
আজ অফিসের কাজ সেরে অফিস থেকে বেরোতে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। আজ বাড়িতে কিছু কাজও ছিল বাস দিয়ে ফুলবাড়ী থেকে শীতলপুর যেতে অনেকটা সময় লাগবে তাই অফিস থেকে বেরিয়ে ভাবছিলাম কি করা যায়। তখন ঘড়িতে ১০ বেজে ৩০ মিনিট। তখনই আমার অফিসের রিমন ভাই এসে বললেন কুলোঘাট থেকে ফেরি ধরে শীতলপুর চলে যাও খুব কম সময়েই পৌঁছাতে পারবে। রিমন ভাইয়ের কথা শুনে আমি বেশি চিন্তা ভাবনা না করে সোজা ফেরিঘাটের দিকে রওনা হলাম। ফেরিঘাট পৌঁছতে পৌঁছাতে আমার প্রায় এগারোটা বেজে গেল।
ফেরিঘাটে গিয়ে দেখি ফেরিঘাট একদম ফাঁকা একটা মানুষ যেন ফেরিঘাটে নেই। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর কাউকে দেখতে পেলাম না তখন ভাবতে লাগলাম এখন কি করে বাড়িতে ফিরব। বাস দিয়ে ফিরতে গেলেও অনেকটা সময় লেগে যাবে। তখনই এক ভাইয়ের সাথে দেখা, তাকে জিজ্ঞাসা করলাম ভাই লাস্ট ফেরি কি ঘাট ছেড়ে চলে গিয়েছে তিনি বললেন আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে লাস্ট ফেরি আজ একটু আগেভাগেই বেরিয়ে গিয়েছে আপনি এখানে আর দেরি না করে বাস ধরে শীতলপুর চলে যান না হলে এখানে আপনাকে সারারাত কাটাতে হবে।
তার কথা শুনে বড় টেনশনে পড়ে গেলাম এখন কি করব আমি, আস্তে আস্তে ফেরিঘাটের লাইটগুলো নিভে যেতে লাগলো অনেকটা রাত হয়ে গিয়েছে যে। তারপর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই নদীর দিকে তাকিয়ে দেখি দূর থেকে একটি লাইট ঘাটের দিকে এগোচ্ছে। কিছুক্ষণ যেতেই বুঝলাম এটা কোন ফেরির লাইট হবে। তারপর লাইট টি ঘাটের কাছে আসতেই মনের ভিতর এক প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেল এটা তো একটা ফেরি। যাক ভালই হল এখন খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরা যাবে।
ঘাটে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে না থেকে ফেরিতে উঠে বসলাম ফেরিতে খুব একটা লোকজন ছিল না তাই ফাঁকা জায়গা দেখে এক সাইডে গিয়ে চেপে বসলাম। ফেরিটাও ছেড়ে দিল তখন ঘড়িতে এগারোটা বেজে দশ মিনিট। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার চোখটা লেগে আসলো। তারপর কিছুক্ষণ পর মানুষের কোলাহলে আমার চোখটা খুলে গেল তখন দেখলাম ফেরীতে মোটামুটি ভালই লোকজন উঠেছে।
সামনেই তাকিয়ে দেখি আমার একজন চেনা হয়ে উঠেছে তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বললাম সেও শীতলপুরেই যাচ্ছে যাক ভালই হলো ঘাটের নামে একসাথে টোটো তে চেপে বাড়ির দিকে যাওয়া যাবে। সেই ভাইয়ের সাথে তার অর্ধাঙ্গিনী ও ছিল। অনেকদিন পর সেই ভাইয়ের সাথে দেখা সে আগে আমার অফিসেই কাজ করতো পরে চাকরি ছেড়ে দিয়ে অন্য কোথাও চাকরিতে ঢুকেছিল।
কিছুক্ষণ পরেই আমার পাশের সিটে চোখ পরল পাশের সিটেই বসে ছিল এক মেয়ে। তখনই আমি ঘড়ির দিকে চোখ দিয়ে দেখি আমার ঘড়িতো এখনো এগারোটা বেজে দশ মিনিটই হয়ে রয়েছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আমার গা টা কেমন শিউরে উঠলো কি ব্যাপার এই ফেরি তো অনেকক্ষণ আগেই ঘাট থেকে রওনা হয়েছে তাহলে কিভাবে এখনো ১১ টা বেজে দশ মিনিট।
তারপর পাশের সিটে বসা মেয়েটি আমাকে বলল কি ব্যাপার আপনি কি অসুস্থ , আমি তাকে উত্তর বললাম না আমি ঠিক আছি। তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করলাম সে কোথায় যাবে সে উত্তরে বলল সেও শীতলপুরেই যাবে। যাক ভালই হলো গল্প করতে করতেই নদী পথটা পাড়ি দেয়া যাবে।
তারপর আমি বাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বাহিরে নদীর কালো জল ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বাহিরে থেকে চোখ ফিরিয়ে লঞ্চের ভিতরে দেখতেই আমি হক চকিয়ে গেলাম। ফেরির ভেতরের সব মানুষজন কেমন জানি, পানিতে ডুবে গেলে মানুষের শরীর যেমন ফ্যাকাসে হয় ঠিক তেমন, তারপর আমার সামনে একজন ভদ্রলোকের মাথা বেয়ে অনবরত রক্ত ঝরছিল এসব দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তখনই আমার পাশে বসা মেয়েটি আমার কাঁধে হাত রাখল বলল আপনি ঠিক আছেন তো। তাকে বললাম হ্যাঁ আমি ঠিক আছি এই বলে চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম না সকলেই তো ঠিক আছে তাহলে হয়তো আমি ক্লান্তির কারণে ভুল দেখছি।
বাহিরে ভালই বৃষ্টি ঝরছে বৃষ্টি ভেজা শীতল হাওয়া গায়ে এসে লাগছিল। তখন উপলব্ধি করতে পারলাম ফেরিটা সামনের দিকে এগোচ্ছে না দাঁড়িয়ে রয়েছে। তখনই এক ভাই ফেরির চালককে বলল ভাই এখানে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে আমাদের ঘাটে পৌঁছাতে তো অনেক রাত হয়ে যাবে। তখন ফেরি চালক উত্তরে বললেন আবহাওয়া একদম ভালো না এ অবস্থায় ফেরি ছারলে ফেরি ডুবে যেতে পারে। তখন সেই ভাইসহ ফেরির বাকি লোকজন বললেন কোন সমস্যা হবে না আপনি ফেরি ছেড়ে দিন আমাদের তাড়াতাড়ি ঘাটে পৌঁছাতে হবে। ফেরি চালক এই শুনে বলে উঠলেন এই আমি আপনাদের কথা শুনে ফেরি ছাড়লাম পরে কোন বিপদ হলে আমাকে কিছু বলতে পারবেন না।
দমকা হাওয়া আর নদীর স্রোতের সাথে আমাদের ফেরি বেশ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আমার বেশ ভয় লাগছিল কখন যেন এই ঢেউ ফেরিটাকে আছড়ে নিয়ে পানির তলে গ্রাস করে ফেলে। তখনই আমাদের ফেরির উপর বাজ পড়লো আর লোকজন ভয়ে এদিক সেদিক ছুটতে শুরু করল। তখনই আমি লক্ষ্য করলাম ফেরির পাটাতন দিয়ে পানি ফেরির ভিতরে প্রবেশ করছে। এদিক সেদিক লোক ছুটছে কেউ কেউ আবার নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। তখন যেই লোকটার মাথা বেয়ে রক্ত পড়তে দেখেছিলাম সামনে তাকিয়ে দেখলাম সেই লোকের মাথায় কিছু একটা পরে মাথা ফেটে গিয়ে, তখন এর মতই রক্ত পড়ছে আমি এগুলো দেখে বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। আমার পাশাপাশি মেয়েটি তখন আমার হাত ধরে ভয়ে চিৎকার করছিল আমি তাকে বললাম ভয় পেয়ো না কিছু হবে না। এই বলে আমি সামনের দিকে গেলাম লাইফ জ্যাকেট নিতে। লাইফ জ্যাকেট নিয়ে ফেরার সময় ফেরির এক দিকটা পানির নিচে তলিয়ে গেল, সেই ধাক্কায় আমার পাশে বসা মেয়েটিও পানিতে ছিটকে গিয়ে পড়ল। আর আমিও চিৎকার দিয়ে উঠলাম। আর আমিও সেখানে চোখ বন্ধ করে বসে পড়লাম।
তারপর কি হয়েছিল আমি জানিনা, সকালে চোখ খুলতেই আমি নিজেকে ফেরি ঘাটেই আবিষ্কার করলাম আমার পাশে লোকজন দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর আমাকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো ভাই কি হয়েছে আপনি এখানে শুয়ে আছেন কেন। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম আমি এখানে কি করে এলাম কাল রাতে যেই ফেরিটি ঝড়ের কবলে পড়েছিল সেটা কোথায়।
সেই লোকগুলোর মধ্যে থেকে একজন আমাকে বলল কিসের ফেরি আপনি কোন ঝড়ের কথা বলছেন কাল রাতে তো কোন ঝড় হয়নি। এই শুনে আমার মাথায় যেন বাজ ভেঙ্গে পড়ল তাহলে আমি কাল রাতে কোন ফেরিতে উঠেছিলাম।
তারপর আমি খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলাম আমার সাথে কাল রাতে যে ঘটনাটি ঘটেছে আর যে ফেরি কাল রাতে ডুবে গিয়েছে সেটা আসলে দু বছর আগের ঘটনা। আমার যে চেনা ভাইয়ের সাথে ফেরিতে দেখা হয়েছিল সেও সেই ফেরিতেই ছিল। সেই ফেরিতে থাকা প্রত্যেকটি মানুষই দু'বছর আগেই মারা গিয়েছিল। আমি তাহলে কাল রাতে সেই ভুতুড়ে ফেরিতেই উঠেছিলাম। তারপর এও জানতে পারলাম মাঝে মাঝে গভীর রাতে এখনো সেই ফেরিকে কুলোঘাট ফেরিঘাটে দেখা যায়।
YouTube |
---|
VOTE @bangla.witness as witness
![witness_proxy_vote.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRXkkCEbXLYwhPEYqkaUbwhy4FaqarQVhnzkh1Awp3GRw/witness_proxy_vote.png)
OR
![witness_vote.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmW8HnxaSZVKBJJ9fRD93ELcrH8wXJ4AMNPhrke3iAj5dX/witness_vote.png)
TWITTER LINK
আপনার গল্পটি পড়ে আমার কাছে খুব ভয় লেগে গেলো। কারণ অফিস থেকে একটু দেরিতে বাইর হওয়ার কারণে বাড়ি যাওয়ার জন্য আপনি ফেরিতে পার হওয়ার জন্য গেলেন। তখন রাত অনেক হওয়ার কারণে এবং আবহাওয়ার খারাপ থাকার কারণে ফেরিটি আগে চলে গেলেন। তারপরে আপনি যে ফেরিটির কথা বলতে লাগলেন আমার কাছে পড়তে খুব ভয় লাগলো। তবে আপনার গল্পটি বাস্তব নাকি কল্পনা সেটা বুঝতে পারলাম না। ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য আমাদের মাঝে।
আপু এটা যে কাল্পনিক গল্প তা নিচে লিখে দিয়েছি।
ধন্যবাদ।
খুবই ভয়ানক একটি গল্প শেয়ার করেছেন আপনি আমাদের মাঝে। খুবই ভয় লাগলো আপনার গল্পটি পড়ে। একটি কি সত্যি ঘটনা ছিল আমি তা বুঝতে পারলাম না। দুই বছর আগে ঘটে যাবে সেই ঘটনাটি সত্যি এরকম ঘটনা তো ভুতুড়ে কোন মুভি বা আহটে দেখা যায়। বেশি রাত হয়ে যাওয়ার কারণে আপনি ফেরিতে করে বাড়িতে যাওয়ার চিন্তা করলেন। পরে আপনার সাথে যা ঘটলো সত্যি তা অবিশ্বাস্য ঘটনা। আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না। এমনিতে খুবই ভালো লিখেছেন। ভীষণ ভালো লাগলো পড়ে।
এটা একদমই কাল্পনিক গল্প ভাইয়া, নিচে তা আমি উল্লেখ করে দিয়েছি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
প্রথম থেকে গল্পটা পড়তে পড়তে ভাবছিলাম হয়তোবা এটা একদম সত্যি। আমি যেন একেবারে ভয় পেয়ে গিয়েছি। আপনার সাথে এই ঘটনাগুলো ঘটছিল। তবে শেষে যখন পড়লাম গল্পটা কাল্পনিক আমি তো কিছুটা স্বস্তি পেলাম। কিন্তু যখন ফেরিতে একটি লোকের মাথা থেকে রক্ত ঝরছে এটা শুনেই ভয় লেগেছিল। যেন একটা ভয়ের জগতে চলে গেলাম।
প্রায় বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম যে এটা আপনার জীবনের ঘটনা পরে দেখলাম গল্প। যাই হোক ভালো লিখেছেন। উপস্থাপন অনেক ভালো হয়েছে। চালিয়ে যান। শুভকামনা রইল।
আপনাদের ভাল লাগাই আমার গল্প লেখার সার্থকতা, অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া৷
ভাইয়া আপনার গল্প পড়ে গলা শুকিয়ে গেছে। আপনার আলম চাচার গল্পটা পড়েও অনেক ভয় পেয়েছিলাম। আজকের গল্পের পটভূমিটা নিয়ে গেলেন ফেরিঘাটে। রাত একটু বেশি হলে এমনি ফেরিঘাটে ভয় লাগে। যায়হোক আপনার গল্প গুলো সেই মানের হয়। ধন্যবাদ ভাইয়া।
ধন্যবাদ ভাইয়া আমাকে উৎসাহিত করার জন্য। দোয়া করবেন। শুভ কামনা রইলো।