আলম চাচা

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)
আজ বুধবার • ৮ই অগ্রহায়ণ • ১৪২৯ বঙ্গাব্দ • ২৩ নভেম্বর - ২০২২


মার বাংলা ব্লগের সকল বাংলাভাষী ব্লগার ভাই এবং বোনদের আমার সালাম এবং আদাপ। সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান সৃষ্টিকর্তার রহমতে অনেক ভাল আছি।



fantasy-2847724.jpg

Pixabay Copyright Free Image Source



আজ আপনাদের মাঝে একটি হরর গল্প নিয়ে এলাম, এই গল্পটি আমার এক চাচার কাছ থেকে শোনা যার নাম আলম। তার সাথেই সেই ভুতুড়ে ঘটনাটি ঘটেছিল। এই গল্পটি আমি যখন শুনেছিলাম তখন আমার নিজেরই গায়ের লোম শিউরে উঠেছিল, আশা করছি এই গল্পটি আপনাদেরও গায়ের লোম শিউরে তুলবে। আমি গল্পের মুখ্য চরিত্র হয়ে আপনাদের সামনে গল্পটি উপস্থাপন করছি এতে আমার পক্ষে গল্পটি লিখতে এবং আপনাদের বুঝতে সুবিধা হবে।



আমার নাম আলম, আমার বাসা ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় । আমি ছোট থেকেই বাইরে থাকতাম গ্রামের বাড়িতে একটু কমই যাওয়া আসা হতো। আজ আপনাদের মাঝে আমি যে ঘটনাটি বলব এটা আমার সাথে ছোটবেলায় ঘটেছিল। দীর্ঘ তিন বছর পর গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম এটা সেই তখনকারই ঘটনা। এই ঘটনাটি আজও মনে পড়লে আমার গায়ের লোম শিউরে ওঠে। আগে আমি এ সকল ভৌতিক ব্যাপার স্যাপার বিশ্বাস করতাম না, কিন্তু সেদিনের ঘটনার পর থেকে বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছি।

এই ঘটনাটি যখন ঘটেছিল আমি তখন ক্লাস সেভেন কি এইটে পড়ি, বাবা মা সহ বাহিরে থাকতাম। দীর্ঘ তিন বছর পর শীতের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তখন আমাদের গ্রামে ইলেকট্রিসিটিও ছিল না। সন্ধ্যা হলেই গ্রামটা একদম ফাঁকা হয়ে যেত মনে হতো কতই বা রাত হয়েছে। ইলেকট্রিসিটি না থাকাতে গ্রামের মানুষজন অনেক সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়তো আবার তারা অনেক ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে পড়তো।

আমি বাহিরে থাকলেও গ্রামে আমার অনেক বন্ধু বান্ধব ছিল, ছুটি পাওয়ার পর আমরা যেদিন গ্রামে যাই সেদিন আমাদের যেতে যেতেই অনেকটা রাত হয়ে গিয়েছিল তাই সেদিন আর কারো সাথে দেখা করিনি। খাওয়া-দাওয়া সেরে মা-বাবা দাদুর রুমে শুয়ে পড়ে। আমি শুয়েছিলাম আমার চাচাতো ভাইয়ের রুমে, আমার চাচাতো ভাই মালেক তখন বিভোর ঘুমে আচ্ছন্ন তাই তাকে আর ডাকলাম না। এভাবে শুয়ে থাকতেও আমার ভালো লাগছিল না কারন এত তাড়াতাড়ি আমার ঘুমানোর অভ্যাস নেই।

অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পর যখন ঘুম আসছিল না তখন চিন্তা করলাম বাজারের দিকে যাই বাজারের দিকে গেলে বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা হয়ে যেতে পারে কারণ তারা গভীর রাত পর্যন্ত বাজারেই আড্ডা মারে। রাত নটা কি সাড়ে নটার দিকে আমি বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হই বাজারে যেতে যেতে দশটা বেজে গিয়েছিল আগেই বলেছিলাম আমাদের বাড়ি থেকে বাজার অনেকটা দূরে। আমি শহরে থাকি রাত দশটা আমার কাছে খুব একটা বেশি কিছু নয়। গিয়ে সৌভাগ্যবশত দুজন বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেল। তারা আমাকে দেখে ভীষণ খুশি হয়ে গেল কারণ অনেক বছর পর আমি গ্রামে গিয়েছিলাম। একসাথে আড্ডা মারতে মারতে কখন যে রাত বারোটা পার হয়ে গিয়েছে তা লক্ষ্যই করিনি। আমার সেই দুজন বন্ধুর বাসা বাজারের কাছেই ছিল দু এক মিনিট হাটলেই তাদের বাসায় পৌঁছানো যায়।

তারপর তারা বলল তাদের এখন বাসায় চলে যেতে হবে অনেক বেশি রাত হয়ে গিয়েছিল তাই আমাকেও বলেছিল তাদের বাসায় গিয়েই রাতটা কাটাতে কিন্তু আমি ভাবলাম আমি তো বাসায় কাউকে বলে আসিনি তারা আবার চিন্তায় পড়ে যাবে তখন মুঠোফোন ও ছিল না। বাজারের বেশিরভাগ দোকানগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাই বেশি দেরি না করে সেই বন্ধু দুজনকে বিদায় দিয়ে দেই। তখন ঘড়িতে সাড়ে বারোটা বেজে গিয়েছিল।

চারিদিকে বিদঘুটে অন্ধকার আমাকে আরো অনেকটা পথ যেতে হবে হাতে কোন টর্চলাইটও ছিল না। আমি ভুতুড়ে ভয় পাচ্ছিলাম না তবে পোকামাকড়ের ভয় পাচ্ছিলাম। তারপর বাজার ছেড়ে হাঁটতে শুরু করলাম। বাজার থেকে চার পাঁচ মিনিট হাঁটার পরেই হবু চাচার সাথে দেখা হয়ে গেল তার হাতে টর্চ লাইটও ছিল। মনের ভেতর তখন একটু সাহস পেলাম যাক এখন আলোয় আলোয় বাড়িতে ফেরা যাবে।

তার সাথে গল্প করতে করতেই এগোচ্ছিলাম কিন্তু সে খুব একটা কথা বলছিল না আমি প্রশ্ন করছিলাম আর সে উত্তর দিচ্ছিল তা ছাড়া আর কোন কথা এসে বলছিল না। আমি এতদিন পর গ্রামে এলাম সেটা নিয়ে তার জন্য কোন ইন্টারেস্টই ছিল না। সে শুধু আমার সাথেই এগোচ্ছে আমি একটু আগে ছিলাম সে আমার থেকে একটু পেছনে ছিল। তবে আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছিলাম না বাড়িতে যাওয়ার আসল রাস্তা ছেড়ে সে আমাকে বারবার অন্য রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল কেন। সেদিন যদি আমি অন্য রাস্তা দিয়ে যেতাম তাহলে হয়তো আমার আর বাড়িতে ফেরা হতো না। চাচা অন্য রাস্তায় যেতে যাচ্ছিল কিন্তু আমি বারবার চাচাকে বলেছিলাম চাচা ওই রাস্তা দিয়ে যেতে তো অনেকটা সময় লাগবে এই রাস্তা দিয়েই যাই চাচা তখন আর কিছু না বলে আমার সাথে সাথে হাঁটতে শুরু করে।

তারপর অনেকটা পথ এগিয়ে এলাম তখন অবধি আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। হবু চাচা আমার সাথে এগিয়েই চলেছে নেই কোন কথা নেই কোন সারা শব্দ শুধু এগোচ্ছে আর এগোচ্ছে আর আমি কোন প্রশ্ন দিলে সেটার উত্তর করছে শুধু হ্যাঁ আর না বলে।

তারপর দেখতে দেখতেই বাসার কাছে চলে এলাম। হবু চাচার বাসা আমাদের বাসার পাশেই ছিল। কিন্তু সে আমার সাথে আমার বাসাতেই ঢুকে ছিল তারপর আমি মায়ের রুমের সামনে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়লাম আর মাকে বললাম মা দেখো কাকে নিয়ে এসেছি। মা দরজা খুলে বলল এত রাতে তুই কোথায় গিয়েছিলি আর কাকেই বা সাথে নিয়ে এসেছিস। তারপর আমি মাকে বললাম বাজার থেকে একা ফিরছিলাম তখন হবু চাচার সাথে দেখা হয়ে যায় হবু চাচাকে নিয়ে এসেছি আসো দেখা করবে। তারপর মা যখন দরজা খুলল আমি পিছন ফিরে দেখি আমার পিছনে কেউ ছিলনা। বাড়ির দরজা দিয়েও কেউ বের হয়নি তাহলে কে আমার সাথে ছিল।

তারপর আমি কিছুক্ষণ হতভঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। তারপর মা আমাকে টেনে রুমে বসালো এবং বলল তোর হবু চাচাতো অনেকদিন আগেই মারা গিয়েছে তাহলে তুই কার সাথে আসলি। তখনই আমার মাথার উপর যেন বাজ ভেঙ্গে পড়েছিল হবু চাচা যদি মরে গিয়েই থাকে তাহলে এত দূর রাস্তা আমার সাথে কে আসলো। আমি একটুও ভুল দেখিনি আমার সাথে যে ছিল সে হবু চাচাই ছিল কিন্তু মা কেন বলছে হবু চাচা মারা গিয়েছে। তখন আমার আর বুঝতে দেরি থাকলো না আমার সাথে যে বাজার থেকে এসেছে সে হবু চাচা নয় সে অন্য কিছু ছিল আমি তারপর ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম। সেদিন মা বাবার সাথেই ঘুমিয়ে ছিলাম রাতে আমার শরীর জ্বরে ফেটে যাচ্ছিল। পরের দিন মা একজন হুজুরকে ডেকে আমাকে তাবিজ পরিয়ে দিয়েছিল যেন আমি আর ভয় না পাই, তারপর যতদিন আমি গ্রামের বাড়িতে ছিলাম একদিনও রাতের বেলা বাহিরে বের হয়নি।



আশা করি আমার আজকের গল্পটি আপনাদের ভালো লেগেছে, সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার এই পোষ্টে আসার জন্য। আপনাদের সাথে আবারও দেখা হবে এমন নতুন কোন পোস্টে সে অব্দি সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন শুভকামনা রইল সকলের জন্য।



image.png


PicsArt_03-22-02.27.17.png

আমি মাহির । আমার বাসা বাংলাদেশের রংপুর বিভাগে । আমি একজন ব্লগার, ফটোগ্রাফার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। নতুন কোন বিষয়ে লিখতে এবং সবাই কে অজানা বিষয়ে জানাতে আমার ভিষণ ভালো লাগে। ছবি তুলতে, জাঙ্ক ফুড খেতে এবং ঘুরতেও আমি ভিষণ পছন্দ করি । আর আমার সব থেকে বড় শখ ছবি তোলা।

FacebookTwitterYouTube

2bP4pJr4wVimqCWjYimXJe2cnCgnMqDPMwPqFHimR5p.png

standard_Discord_Zip.gif


আমাদের উইটনেসকে সাপোর্ট করুন

"Please support Bangla Witness"


https://steemitwallet.com/~witnesses




VOTE @bangla.witness as witness
witness_proxy_vote.png
OR

SET @rme as your proxy

witness_vote.png

Sort:  
 2 years ago 

বেশ ভয়ানক একটি গল্প ছিল। পড়তে পড়তে আমি নিজেই বেশ ভয় পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল এগুলো আমার সাথে ঘটছে। যাইহোক সেদিন হয়তো আপনি অন্য পথে গেলে ,আসলেই আপনার বাড়ি ফেরা হতনা।আসলে দেশের বাড়িগুলোতে এত রাতে বাহিরে না যাওয়ায় ভালো।

 2 years ago 

জি আপু আলম চাচা ভাগির সেদিন অন্য পথে যায়নি অন্য পথে গেলে হয়তো তাকে আমরা আর দেখতে পেতাম না।

 2 years ago 

ভূতের গল্প পড়লেই আমি কেমন যেন গল্পটার ভেতরে ঢুকে যাই। বেশ ভয় পেয়ে যাচ্ছিলাম যখন লোকটার সাথে তিনি হেঁটে আসছিলেন আর বার বার ভিন্ন পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। মনে হচ্ছিল এই বুঝি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখবে কিংবা আরো ভয়ানক কিছু ঘটবে। যাক খারাপ কিছু ঘটেনি এটাই বড় বিষয়।
গল্পটি দারুন ছিল।

 2 years ago 

এই গল্পটা আমি যার কাছে শুনেছিলাম এটা তার জীবনে ঘটে যাওয়া লোমহর্ষক একটি ঘটনা। তার মুখে যখন এই ঘটনাটি শুনেছিলাম তখন আমিও প্রচুর ভয় পেয়েছিলাম।
ধন্যবাদ ভাই এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য

 2 years ago 

আপনার গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। আপনি খুব চমৎকার গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আসলে আপনার গল্পটি পড়ে খুবই ভয় লেগেছে। তবে গল্পটি খুবই রোমাঞ্চকর ছিলো। এত সুন্দর ভুতুড়ে গল্প শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

 2 years ago 

আপনার ভালো লেগেছে শুনে খুবই খুশি হলাম ভাইয়া। ধন্যবাদ আমাকে উৎসাহিত করার জন্য। শুভ কামনা রইলো। 🥰

 2 years ago 

ভাইয়া কি গল্প সেয়ার করলেন পড়ছিলাম আর ভয়ে শরীরের পশম দাড়িয়ে যাচ্ছিলো। প্রতি মুহূর্তে মনে হয়েছে এই বুঝি আপনার জীবন শেষ। আপনার ভাগ্য অনেক ভাল যে সেদিন ভাল ভাবে বাড়ি ফিরেছেন।

 2 years ago 

জি ভাই সে দিন আলম চাচার ভাগ্য আসলেই অনেক ভালো ছিলো।
ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মতামত দেয়ার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 68156.06
ETH 3517.56
USDT 1.00
SBD 2.81