ছোটবেলার কিছু স্মৃতি

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
আজ শুক্রবার • ৩রা অগ্রহায়ণ • ১৪২৯ বঙ্গাব্দ • ১৮ নভেম্বর - ২০২২


মার বাংলা ব্লগের সকল বাংলাভাষী ব্লগার ভাই এবং বোনদের আমার সালাম এবং আদাপ। সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান সৃষ্টিকর্তার রহমতে অনেক ভাল আছি।



field-6558125_1920.jpg

Pixabay Copyright Free Image Source



শৈশবকালটা বড়ই আজব ছিলো, না ছিলো কোন চিন্তা, না ছিলো কোন ভাবনা, না ছিলো কোন কিছুর পরোয়া। এই সময় টাকে আজব বললেও ভুল বলা হবে না। কারন জীবনে যতই এগিয়েছি ততই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, সম্মুখীন হয়েছি মানুষের নানারকম কথার। তাই সে সময়টা এখন আমার কাছে কিছুটা আজবই মনে হয় তখনতো আর এসব কথা, পিছুটান ছিলো না।

শৈশবে আমাদের যা ভালো লাগতো আমরা তাই করতাম, কে কি ভাবলো বা কে কি মনে করলো, তা নিয়ে আমরা সে সময় ভাবতাম না। তাই আমরা আমাদের সেই সময়ের আনন্দগুলোকে ভালোভাবে উপভোগ করতে পারতাম এখন যা করতে পারিনা। এখন কোন কিছু করতে গেলেই অন্য মানুষের কথা অথবা সমাজের কথা প্রথমেই মাথায় আসে তাই অনেক কিছু থেকেই এখন নিজেকে পিছিয়ে রাখতে হয় যদিও এটা উচিত নয়।

হ্যাঁ আমাদের সমাজের কথা অবশ্যই ভাবতে হবে কিন্তু নিজের ভালোর কথাটাও আমাদের চিন্তা করতে হবে কি করলে আমাদের ভালো হবে আর কি করলেই বা আমাদের খারাপ হবে তারপর ভাবতে হবে সমাজ এটাকে নিয়ে কি মনে করতে পারে। আমরা যদি আগেই সমাজের কথা চিন্তা করে পিছিয়ে পড়ি তাহলে আমরা আমাদের জীবনে কখনোই সাফল্য অর্জন করতে পারবোনা।

যাইহোক এখন আসি আমার ছোটবেলার কথায়। আজ দুপুর বেলা খাওয়া-দাওয়া পর বিছানায় গিয়ে শুয়ে কিছুক্ষণ মোবাইল ঘাটাঘাটি করলাম আর ভাবতে থাকলাম এখনকার সময়টা কতই না পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে ছোটবেলার থেকে। ছোটবেলায় দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে কিছুক্ষণ রেস্ট নিতে না নিতেই বেরিয়ে পড়তাম খেলার জন্য। বন্ধুরা এসে বাসার সামনে ঘোরাঘুরি করতো কখন আমি বের হব তারপর একসাথে সবাই মিলে মাঠে যেতাম কখনো নাটাই আর ঘুরি নিয়ে চলে যেতাম ৯৬ এর মাঠে সেখানে কতইনা মজা হত ঘুড়ি উড়াতাম ঘড়ি কাটাকাটি করতাম। ৯৬ এর মাঠ আমার বাসা থেকে কাছেই ছিল রোজ বিকেলবেলা আমি সেখানেই খেলাধুলা করতে যেতাম।

তখন কোন কিছুই নেই মাথায় চিন্তা টেনশন ছিল না মাথায় শুধু একটাই চিন্তা ছিল কখন বাসা থেকে বের হয়ে খেলতে যাব। আর এখনকার দিনগুলো দেখুন কতটা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে এখন আর কেউ বাড়ির সামনে খেলার জন্য ডাকতে আসে না এখন আর আগের মত নাটাই ঘুড়ি নিয়ে ৯৬ এর মাঠে যাওয়া হয় না। খুব মনে পড়ে সেই স্মৃতিগুলো।

তারপর শীতকাল যখন আসতো তখন আমরা সেই মাঠেই বন্ধুরা মিলে ব্যাডমিন্টন খেলার কোড কাটতাম, আর শীতের সময় আমাদের বার্ষিক পরীক্ষা ও শেষ হতো সে সময় পড়াশোনারও কোন চাপ ছিল না বলতে গেলে একদম ফ্রি বিন্দাস লাইফ ছিল শীতের সময়টায়। তখন আমরা ব্যাডমিন্টন খেলার কোড কেটে রোজ সন্ধ্যায় খেলা শুরু করতাম রাত ১০-১১ টা অব্দি আমাদের খেলা চলত। খেলা ছাড়াও সেখানে বন্ধু-বান্ধবের সাথে হাসি ঠাট্টা মজা তামাশার মজাগুলোর কথা তো না বললেই নয়, খুব মিস করি সেই সময় গুলো আর বন্ধুগুলোকেও খুব মিস করি তাদের সাথে এখন আর দেখা হয় না হয়তো তারা আমাকে ভুলে গিয়েছে কিংবা মনের এক কোণে চেনা মানুষ হিসেবে শুধুই আমার নামটা রেখে দিয়েছে।

এখন আসি সেই সময়ে লোডশেডিং এর কথায়, সে সময় লোডশেডিং মানে ছিল এক আনন্দঘন মুহূর্ত। লোডশেডিং হলেই আমার সকলে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়তাম। আমরা যেখানে থাকতাম সেই এলাকাটা লোকজন দিয়ে একদম ভর্তি হয়ে যেত, কোথাও দেখা যেত মহিলাদের গল্পের আসর কোথাও বা লোকেদের গল্পের আসর। আর আমরা যারা ছোট ছিলাম তারা মেতে উঠতাম বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায় বেশিরভাগ সময়ই লুকোচুরি খেলা হতো। লুকোচুরি খেলতে খেলতেই বিদ্যুৎ চলে আসতো আর আমরা সকলেই হইহুল্লোড় করে যে যার বাসায় চলে যেতাম। এখন আর সেই আনন্দগুলো উপভোগ করতে পারি না সেই আনন্দগুলো এখন শুধু স্মৃতি হয়েই মনের মধ্যে গেঁথে রয়েছে।

সে সময় আরেকটা স্মৃতি আমার ভীষণ মনে পড়ে, আমরা তখন যে মহল্লায় থাকতাম সেখানে বেশিরভাগ মানুষই থাকতো ভাড়াটিয়া বাসায় তাই যেকোন ভ্যাকেশনে সবাই গ্রামের বাড়ি চলে যেত। ঈদের ছুটিতে আমরা যখন সবাই গ্রামের বাড়িতে যেতাম যাওয়ার আগের দিন সবাই মিলে একসাথে কুশল বিনিময় করতাম সে সময়টা সত্যিই দারুণ ছিল। এই স্মৃতিগুলো মনে পড়লে এখনো চোখের কোনে জল চলে আসে।

তারপর শহর থেকে যখন গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যেতাম সেখানের মজার কথা তো না বললেই নয় সেখানের মজা গুলো শহরের থেকে একদমই আলাদা ছিল। গ্রামের বাড়িতে আমার বন্ধুদের থেকে ভাই বোনেদের সংখ্যায় বেশি তাদের সাথেই আমার সবগুলো মজার স্মৃতি। গ্রামের বাড়িতে গেলে ভাই-বোনদের সাথে পুকুরে গোসল করা বিকেলবেলা মাঠে খেলতে যাওয়া তারপর সন্ধ্যা হলে খেজুরের রস চুরি করে খাওয়া এগুলোর কথা কি আর ভুলতে পারি। আমার গ্রামের বাড়ি সীমান্তবর্তী এলাকায় তাই মাঝে মাঝেই ভারতের দিকটায় সে সময় ঘুরতে যাওয়া হত সেদিকে আমাদের আত্মীয়ও রয়েছে তাদের সাথেও দেখা সাক্ষাৎ হয়ে যেত।

এভাবে লিখতে থাকলে হাজারো স্মৃতির কথা লিখে ফেলা যাবে। আজ আর বেশি স্মৃতির কথা লিখলাম না, হয়তো কোন একদিন অন্য কোন এক পোস্টে ছোটবেলার স্মৃতিগুলো নিয়ে আপনাদের মাঝে আরো লেখালেখি করব। আজ তাহলে এ পর্যন্তই, সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার এই পোস্টে আসার জন্য। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন শুভকামনা রইল সকলের জন্য।

image.png


PicsArt_03-22-02.27.17.png

আমি মাহির । আমার বাসা বাংলাদেশের রংপুর বিভাগে । আমি একজন ব্লগার, ফটোগ্রাফার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। নতুন কোন বিষয়ে লিখতে এবং সবাই কে অজানা বিষয়ে জানাতে আমার ভিষণ ভালো লাগে। ছবি তুলতে, জাঙ্ক ফুড খেতে এবং ঘুরতেও আমি ভিষণ পছন্দ করি । আর আমার সব থেকে বড় শখ ছবি তোলা।

FacebookTwitterYouTube

2bP4pJr4wVimqCWjYimXJe2cnCgnMqDPMwPqFHimR5p.png

standard_Discord_Zip.gif


আমাদের উইটনেসকে সাপোর্ট করুন

"Please support Bangla Witness"


https://steemitwallet.com/~witnesses




VOTE @bangla.witness as witness
witness_proxy_vote.png
OR

SET @rme as your proxy

witness_vote.png

Sort:  
 2 years ago 

তোমার পুরো পোস্টটি পড়ে কোথায় যেন বারবার হারিয়ে যাচ্ছিলাম। সত্যিই বলতে ছোট্ট বেলার স্মৃতি কখনো ভোলার নয়। দুষ্টু মিষ্টি এই খুনসুটির সময়গুলো কখনো ভোলার নয়। আমি মনে হয় কিছু সময়ের জন্য বেশ কিছু বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিলাম। বিশেষ করে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যেতে, এটা কি বিপদজনক ছিল না 😕 যাক অনেক ধন্যবাদ চমৎকার গুছিয়ে পোস্টটি লেখার জন্য।

 2 years ago 

সে সময় সীমান্তে যাওয়াটা অতটা বিপদজনক ছিল না ভাইয়া।
আর আপনি একদম ঠিক বলেছেন ভাই সে সময়ের কথাগুলো আসলেই ভোলার মত নয়। ধন্যবাদ এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago (edited)

আপনার এই ছোটবেলার স্মৃতি সাথে আমারও অনেক ছোটবেলার স্মৃতি মিল পাচ্ছি। যেমন ঘুড়ি ওড়ানো,লুকোচুরি খেলা,গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ভাই বোনদের সাথে খেলাধুলা অনেক অনেক মজা করা ইত্যাদি। আসলে ছোটবেলায় আমরা তেমন কিছু ভাবতাম না যা ভালো লাগবে সেটাই করতাম। তাই আমাদের মাথায় তখন এত টেনশনও ছিল না। যাইহোক আপনাদের ছোটবেলা স্মৃতিগুলো পড়ে বেশ ভালো লাগলো। ধন্যবাদ এগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

বেশিরভাগ মানুষেরই ছোটবেলাটা ঠিক এমনই হয় ভাইয়া । আসলেই ভাই আপনি একদম ঠিক বলেছেন। খুব ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পড়ে।

 2 years ago 

ছোটবেলার স্মৃতিগুলো বোধহয় এরকমই হয়। তোমার ছোটবেলার স্মৃতি গুলো পড়তে পড়তে আমিও যেন আমার ছোটবেলায় ফিরে গিয়েছি। মধুর সেই স্মৃতিগুলো আজও যেন চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে। বিশেষ করে খেজুরের রস চুরি করে খাওয়ার ব্যাপার, আমার বন্ধুরা মিলে হর হামেশাই করে থাকতাম। নতুন করে আবারো ছোটবেলার সেই স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

ছোটবেলার ঘটনাগুলো মনে করলে কতই না ভালো লাগে তাই না মামা। তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ মামা এত সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

মাঠের নাম ৯৬ এমন মাঠের নাম আগে কখনো শুনিনি ।আসলেই শৈশব জীবন ভলার নই । শৈশব জীবন মনে পরলে অনেক হাসি পায় কেননা এখন বড় হয়ে ছোটবেলার যেসব কাজকর্ম করতাম সেগুলো মনে পড়লে এখন ভাবি ছোটবেলায় এসব কাজকর্ম করে বেরাতাম। আপনার ছোটবেলার গল্পটি শুনে অনেক ভালো লাগলো।

 2 years ago 

ওই মাঠ এর নাম ৯৬ এর মাঠ কেন ছিল এটা আমার জানা নেই। তবে সেই মাঠেই আমার শৈশব কেটে ছিল আপু এখনো সেই মাঠের কথা খুব মনে পড়ে। মাঝে মাঝে আমারও সেসব কাহিনী মনে পড়লে হাসি পায় কিন্তু। ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 
ছোটবেলার স্মৃতিগুলো মনে করলে খুব ভালোই লাগে। আপনার শৈশবের কাটানো স্মৃতিগুলো পড়ে আমার ভালো লেগেছে। কি মজার ছিল সেই দিনগুলি। বন্ধুদের সাথে মাঠে খেলতে যাওয়া খেজুর গাছ থেকে রস চুরি করা এগুলো আমার মনে হয় অনেকের সাথে মিলে যাবে। আপনার স্মৃতি গুলো পড়তে পড়তে আমিও কখন আমার ছোটবেলায় হারিয়ে গিয়েছি বুঝতে পারিনি। ধন্যবাদ ভাইয়া পুরনো স্মৃতিগুলো আবার জাগিয়ে তোলার জন্য।
 2 years ago 

জি ভাই বেশিরভাগ মানুষেরই শৈশব টা এরকম করেই কেটেছে। খুব ভালো লাগলো আপনার মতামত পড়ে। ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.033
BTC 64041.25
ETH 2762.17
USDT 1.00
SBD 2.66