শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি - "শৈশবে ফেলে আসা কিছু রোজার স্মৃতি"
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই পবিত্র রমজান গুলো সুস্থ ও ভালোভাবেই উৎযাপন করছেন। এখন চারিদিকে শুধু শোনা যাচ্ছে যে সবাই অসুস্থ্য। কারও পরিবারে কেউ সুস্থ নেই। কেউ না কেউ কোন না কোন ভাবে অসুস্থ্য হয়ে আছে। আমরা যে যেখানেই থাকি সবাই যেন সমসময় ভালো থাকি ও সুস্থ থাকি। এই রমজানে সবাই সবার জন্য এই দোয়াই করি। দেখতে দেখতে আজ ১৭ রোজা পার হয়ে গেলো আলহামদুলিল্লাহ্। এই জীবনে কতো রোজা পেয়েছি আর এই রোজাকে ঘিরে কতো স্মৃতি রয়েছে। তবে আমার মনে হয় শৈশবের রোজাই ভালো কাটাতে পেরেছি।
আমরা সবাই শৈশব আর কৈশর জীবন গুলো ফেলে এসেছি। আর এই জীবনের অংশটুকু আমরা চাইলেই আমাদের জীবন থেকে মুছে ফেলতে বা ভুলতে পারবো না। এই অংশটুকু যেন আমাদের সবার জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে মনের মনিকোঠায় গেঁথে আছে। যা কিনা আমাদের চলার পথগুলোতে বার বার টেনে নিয়ে যায় সেই স্মৃতিগুলোতে।।পরিবার আত্মীয় স্বজন ও বন্ধবান্ধব বিভিন্ন রকমের উৎবসকে ঘিরে রয়েছে আমাদের শৈশবের দিনগুলো। বিশেষ করে আমার জীবনে শৈশবে ফেলে আসা রোজাগুলো আমায় যেন বার বার হাতছানি দিয়ে ডেকে নিয়ে যায়। হ্যাঁ আমার প্রিয় পরিবারের একটি অংশ আমার বাংলা ব্লগ পরিবার। আজ আমি আমার জীবনের শৈশবে ফেলে আসা সেই রোজাগুলোর স্মৃতি নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হলাম।
শৈশবে আমাদের সবার জীবনেই রোযা নিয়ে অনেক মধুর স্মৃতি রয়েছে। আসলে সবার জীবনে সবার ফেলে আসা স্মৃতিগুলো এক এক রকম। কারও জীবনের কোন ফেলে আসা স্মৃতির অনুভূতি হয়তো শেয়ার করা যাবে। কিন্তু ভাগ করা যাবে না। সেইরকম ভাবে আমার শৈশবের রমজানগুলো নিয়ে অফুরন্ত স্মৃতি রয়েছে যা আজ কেন হাজার বছর লিখলেও মনে হয় শেষ করা যাবে না। তারপরও কিছু স্মৃতি আপনাদের সবার সাথে শেয়ার করতে আসলাম। তাহলে চলুন শৈশবে আমার ফেলে আসা কিছু রোজার স্মৃতিতে ঘুরে আসি।
শৈশবে ফেলে আসা কিছু রোজার স্মৃতি
আবারও চলে এলো নতুন আরও একটি রমজান। আর এই রমজানকে ঘিরে কতো মানুষ কতো আমেজে মেতে আছে। আর এত আমেজের মাঝেও আমরা যেন শুধু খুঁজে বেরাই সেই ফেলে আসা রমজানের স্মৃতিগুলোতে। শবেবরাত শেষ হলেই দিন গুনা শুরু করতাম যে রোজা কবে আসবে। আর রোজা আসার দুদিন আগেই শুরু হতো রোজার সকল প্রস্তুতি। আমাদের পরিবারে রোজাকে ঘিরে চলতো কতো রকমের প্ল্যান প্রোগ্রাম।
আর এইভাবেই শুরু হয়ে যেত রোজা। আর রোজার শুরুতেই যেন মনের মধ্যে একটি প্রশান্তি অনুভূত হতো। যদিও তখন ছোট ছিলাম। তারপরও নামাজ রোজা মজার মজার খাবারের লোভ। রোজার প্রথম তারাবি সবাই কতো আনন্দ আর উৎফুল্ল নিয়ে পরতো। আমিও আমার পরিবারের সবার দেখাদেখি মার সাথে নামায পরতাম। তারপর শুরু হতো ভোরে সেহেরীর ওয়াক্ত। আগে থেকেই বলে রাখতাম যে আমাকে ডাক দিতে হবে। আমি রোজা রাখবো।
ছোট ছিলাম তো পরিবারের কেউ ডাক দিতে চাইতো না। তাই ভাবতাম যে আমায় যদি ডাক না দেয় তাই মার শাড়ির আঁচলের সাথে আমার জামার একটি অংশ বেঁধে রাখতাম। দেখা যেত যে নিজেই আগে থেকে জেগে থাকতাম। তখন পরিবারের সবাই হাসতো আর বলতো যে তুই কি সারারাত ঘুমাসনি। যা এখনও সময় হয়নি ঘুমিয়ে থাক। সময় হলে ডাক দিবো।কিন্তু মনে কি আর সেইটা মানতো। যদি ডাক না দেয়। তাই বসে থাকতাম। মাকে দেখতাম ভোরে উঠে গরম ভাত রান্না করতো। তাই তখনতো আর রমজানের সোয়াব বুঝতাম না। সবার সাথে সেহেরী বা ইফতারের কাজগুলো আনন্দ নিয়ে কাজ করতাম।
মা বলতো রোজা রাখতে হবে না। এমনিতেই সেহেরী খেতে আর একটু বড় হলে রোজা রাখতে । আর বাবা বলতো যে থাক এইভাবে থাকতে থাকতে একসময় অভ্যাস হয়ে যাবে।আর বলতো ছোটদের নাকি দুবার খেলে রোজা হবে। কিন্তু আমি বলতাম আমি পারবো। তারপর সেহিরী খেয়ে এমন পানি খেতাম যে সারাদিন আর পানির পিপাসা না পায়। আর এত পানি খাওয়ার ফলে দেখা যেত নড়তে চরতে খুব কষ্ট হতো। পেটফুলে ভেতর থেকে পানি বেরিয়ে আসতো। আর দেখা যেতো এত পানি খাওয়ার ফলে ঘুমানোর কিছুক্ষন পর পর খালি ওয়াশরুমে যেতে হতো। ফলে ঘুমই হতো না হিহিহি ।এটা কি আপনারা কেউ করেছেন কিনা জানাবেন।
এরপর সকালে বাহিরে বের হলে সবাইকে বলতাম আমি রোজা। আর এলাকার বড় ভাই আর আপুরা দুষ্টমি করে বলতো কয়বেলা খেয়ে রোজা। কখনও দেখা যেত মাঝে মাঝে রোজা রাখতে পারতাম। আবার দেখা যেত কখনও বাবা মা মুখ দেখে মায়া লাগলে বলতো যে পানি খেলে রোজা ভাঙ্গে না। তাই একটু পানি খেতাম তখনতো আর বুঝতাম না। মনে করতাম সত্যি শুধু পানিতো।
স্কুল একমাস দশদিন বন্ধ থাকতো। কি খুশিনা হতাম। তখন আগে থেকেই দিন গুনতাম যে কবে স্কুল বন্ধ দেবে। আর বন্ধুদের জিজ্ঞাস করতাম যে কার স্কুল কয়দিন বন্ধ দিয়েছে। আর রোজায় স্কুল বন্ধ পেয়ে এরপর সারাদিন যেত খেলাধুলা আর দুষ্টমি করে। কতো রকমের খেলা খেলতালার ফাঁকে ফাঁকে বাসায় গিয়ে দেখতাম যে মা কত মজার মজার ইফতারি তৈরী করতো । আমদের জন্য কে কোনটা পছন্দ করি খেতে সেগুলোই রান্না করতো। আমাদের খাওয়ালেই মনে হতো যে মা আনন্দ পেতো। আবার দৌড়ে আসতাম খেলতে। আর সবাইকে বলতাম যে আমার মা পেঁয়াজু আলুর চপ, বেগুনি আরও অনেক মজার খাবার বানাচ্ছে।
তারপর একসময় দেখা যেত যে ইফতার সময় হয়ে এলো বলে। আমাদের এলাকায় আবার । কি সুন্দর অনেক বড় একটি পেটি। তার উপরে থাকতো ভৃুষ দেয়া। যেনো বরফ না গলে যায়। আর ডাকতো আয় বরফ বরফ। এখনও যেন সেই ডাক আমার কানে ভেসে বেড়ায়। শুধু সেই সময়টাতে ফিরে যাওয়া যায় না। এরপর মা বলতো যে বরফকিনে নিতে। দৌড়ে বাসায় গিয়ে বাটি নিয়ে বরফ আনতে যেতাম। দেখতাম একটি লোহা দিয়ে একটু বড় একটুকরা বরফ ভেঙ্গে দিত। এখনও মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা। তখন এই একটুকরো বরফের শরবতের মাঝেও ছিল অনেক স্বাদ। যেন আত্মাটার মধ্যে শান্তি পেতাম। কিন্তু এখন এত মজার মজার শরবত আর লাচ্ছি, লাবাংঙ্গ খেয়েও যেনো মনে শান্তি পাই না। মনে হয় হৃদয়টা গরমই থেকে যায়।
এরপর ইফতারির সময় হলে মা জানালা দিয়ে ডাক দিত। দৌঢ়ে গিয়ে ওযু করে সবার মাঝে আনন্দ নিয়ে বসতাম। ইফতার করার জন্য। আর অপেক্ষায় থাকতাম যে কখন সাইলেন দেবে। আমাদের এখনে একটি আনসার হেড কোয়াটার ছিল। সেখানে অনেক জোড়ে করে সাইলেন বাজাতো। আজ কিন্তু এখনও সেই আনসার হেড কোয়াটার আছে। শুধু নেই সেই সুর আর বাজে না সেই সাইলেন। এখনও সেই সাইলেনের আওয়াজ মিস করি। আসলে দিন বদলানোর সাথে সাথে চারিপাশের সবকিছুই বদলে গেছে।
এখন কোন কিছুতে নেই সেই হৃদয় ছোঁয়া শান্তির রোজা। নেই সেই মানুষ । নেই কোন মনের প্রশান্তি। আছে শুধু সব লোক দেখানো উপরের অভিনয় আর ভালোবাসা। তারপরও দিনগুলো এরই মাঝেও কেটে যাচ্ছে। কেটে যাচ্ছে বছরের পর বছর রোজা আর ঈদ। কিন্তু কেউ আর ভেবে দেখি না যে আজ এই বছর রোজা আমি পেয়েছি আগামী রোজা কি আমার জীবনে আসবে? এই যে আমি আপনাদের মাঝে এখানে একটি বন্ধন হয়ে কাজ করছি , বলি ইনশাল্লাহ্ সবসময় আপনাদের সাথে থেকে কাজ করবো। কিন্তু আমি যে আগামী রোজা পাবো তার কোন গ্যারন্টি নেই। তাই আমরা সবাই সবার জন্য দোয়া করি যেন আগামী এই রোজা পর্যন্ত সবাই ভালো ও সুস্থ থাকি।
পরিশেষে আর কি লিখবো। আমার ছেলেবেলার রোজাগুলো নিয়ে আপনাদের মাঝে কিছু কথা শেয়ার করে খুব ভালো লাগলো। আপনাদের কাছে যদি আমার ফেলে আসা রোজার স্মৃতিগুলো ভালো লাগে তাহলে যেনে খুশি হবো।
পরিচিতি
আমি মাহফুজা আক্তার নীলা আমার ইউজার নাম @mahfuzanila আমমি পছন্দ করি ঘোরাঘুরি ও ভ্রমন ছবি আঁকা, বিভি ন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে, ডাই প্রজেক্ট বানাতে ও আর্ট করতে দারুণ পছন্দ করি। আর বেশী পছন্দ করি মজার রেসিপি করতে,মন খারাপ থাকলে গান শুনতে ও গান গাইতে ঘুরতে যেতে আর সবচেয়ে বেশী ঘুমাতে।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
আসলে আপু শৈশব স্মৃতি নিয়ে অনেক সুন্দর লিখেছেন সত্যি আমি এখন আমার মেয়েকে বলি দুবেলা খেলে রোজা ভাঙে না। আসলে আমার মেয়ে এখন রাত জেগে থাকে কখন সেহরির সময় হবে। ওকে দেখে সত্যি আমাদের শৈশবের কথা মনে পড়ে যায়। আসলে এমন দিন সবারই থাকে। ধন্যবাদ সুন্দর লিখেছেন।
হি হি হি। আমার মাও ছেলেবেলায় একই কথা বলতেন। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
আমার কিন্তু আজও ছেলেবেলার সেই সমস্ত দিনের কথা মনে পড়ে। বেশ ভালো লিখেছেন। আবারও সেই সমস্ত দিনের কথা মনে করিয়ে দিলেন। যখন আমাদের পুরো পরিবার কতই না মজা করতাম আমরা। সব মিলিয়ে অনেক ধন্যবাদ ছেলেবেলার কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।
হুম একদম ঠিক তখন আমরা পুরো পরিবার কতই না মজা করতাম। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করে উৎসাহিত করার জন্য।
আমি সর্বদা শৈশ স্মরণ করতে পছন্দ করি। ঠিক তেমনি ভাবে আজকে আপনি আমাদের মাঝে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। যেখানে শৈশবের দিনগুলো তুলে ধরেছেন আমাদের মাঝে। শৈশবে ঈদ বা রোজার মুহূর্তে আমাদেরও বেশ চমৎকার স্মৃতি রয়েছে আপু। আপনার এই পোস্ট পড়ার মধ্য দিয়ে কিন্তু এই সমস্ত বিষয়গুলো মনে পড়ল। আপনি কিন্তু ঠিক কথা বলেছেন আপনার কথাগুলো আমার মনে ধরেছে। এখন শুধু দেখানো ভালোবাসা বা দেখানো মানবতা বিরাজমান।
আমাদের সবার জীবনেই কম বেশী মজার স্মৃতি রয়েছে ভাইয়া। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
আপনার শৈশবে ফেলে আসা কিছু রোজার স্মৃতি পড়ে খুব ভালো লাগলো। আসলে শৈশবে ফেলে আসা রোজার স্মৃতি মনে পড়ে এখনো অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। মায়ের সাথে কাটানো ইফতারের মুহূর্ত গুলো বেশ দারুন ছিলো। আপনার শৈশবে ফেলে আসা কিছু রোজার স্মৃতি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া এখনও শৈশবের সে সমস্ত কথা মনে হলে একটি অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
শৈশবের স্মৃতি খুব সুন্দরভাবে শেয়ার করেছেন আপনি৷ ছোটবেলায় আমাদের অনেকের অনেক ধরনের স্মৃতি রয়েছে যা এখন মনে পড়লে আমাদের অনেক ভালো লাগে৷ আপনি সেরকম একটি মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন৷ আপনার মায়ের সাথে কাটানো ইফতারের মুহূর্তগুলো বেশ দারুন ছিল৷ খুব সুন্দর সময় অতিবাহিত করেছিলেন৷ ধন্যবাদ এরকম সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য৷
ধন্যবাদ ভাইয়া সব সময় সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
চেষ্টা করি সবসময় সুন্দর মন্তব্য শেয়ার করে পাশে থাকার