আমার মেজো বোনের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনা || পর্ব-১
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।
আজ আবারও ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আর সেই পোস্ট হচ্ছে আমার মেজ বোন অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। আর এই ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার প্রায় ১২ বছর অতিক্রম হয়ে গেছে। আজ দুপুরে যখন আমার বোনকে ও দুলাভাইকে ঈদ উপলক্ষে আমাদের বাসায় দাওয়াত করেছিলাম, তখন সকলে মিলে আমার বড় বোনের ওই অগ্নিদগ্ধের ঘটনাটি আলাপ আলোচনা করছিল। আর তাই ভাবলাম আমার বড় বোন কিভাবে অগ্নিদগ্ধ হয়েছিল, সে বিষয়ে না হয় আপনাদের মাঝে পোস্ট উপস্থাপন করা যাক।
আমার বড় বোন একজন সরকারি কর্মচারী। সে প্রাইমারি স্কুলের একজন স্কুল শিক্ষিকা হিসেবে নিযুক্ত আছেন। ১২ বছর আগে এরকম ঈদের সময় আমার বড় দুই বোন আমাদের বাসায় এসেছিল, ঈদ করার জন্য। যথারীতি ঈদের আনন্দ খুব সুন্দর ভাবে কাটিয়ে ছিল আমার দুই বোনেরা। ঈদের পরপর যে যার বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। তবে আমার মা কেন জানি বারবার আমার মেজ বোনকে থেকে যাওয়ার কথা বলছিল। তবে তার ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে, সে কোনভাবে থাকতে চায় নি।
তাই সকাল সকাল আমাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। যেহেতু আমার বাড়ি থেকে তাদের বাড়ি যেতে প্রায় ৪-৫ ঘন্টা সময় লাগে, তাই আমার বড় বোনের শ্বশুরবাড়ি গিয়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর হয়ে গিয়েছিল। আর দুপুরবেলায় পৌঁছে আমার বড় বোন তার দুটি ছেলের খাবার তৈরি করার জন্য, রান্নাঘরে প্রবেশ করেছিল। যখন রান্না করে প্রবেশ করেছিল তখন পর্যন্ত আমার বড় বোন জানতো না, তার সাথে কি ঘটতে চলেছিল। আমার বড় বোন জার্নি করে বাড়িতে পৌঁছার সাথে সাথে দুপুরের খাবার রেডি নেই বলে কিছুটা বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল।
কেননা আমার বোনের শাশুড়ি ঠিকই জানতো তার ছেলে ও দুজন নাতিসহ আমার বড় বোন তাদের বাসায় যাচ্ছে। তবুও তিনি কোন ধরনের খাবারের আয়োজন করে রাখেনি। আর এতে করে আমার বড় বোনের মনটা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তাই তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে, আমার বড় বোন গ্যাস সিলিন্ডার অন করে চুলা জ্বালাবার জন্য সুইচ অন করেছিল। তবে চুলার সুইচ এর সমস্যা ছিল বিধায় গ্যাস ফায়ার হচ্ছিল না। যার কারণে আমার বড় বোন মনে করেছিল হয়তোবা তুলার সুইচ নষ্ট হয়ে গেছে।
এজন্য সে চুলার সুইচ অন রাখা অবস্থায় বাইরে এসেছিল ম্যাচ খোঁজার জন্য। আর তখন গ্যাস চুলা থেকে বের হয়ে সারা ঘর ছড়িয়ে গিয়েছিল। আমার বড় বোন যখন ম্যাচ খুজে পেয়েছিল, তখন সে চুলার কাছে গিয়ে ম্যাচ জ্বালাতেই, আগুন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। আর এই আগুন আমার বোনের দুই হাত, পেট বুক, ও গলায় বেশি লেগেছিল, যার কারণে সাথে সাথেই আগুনে লাগা জায়গাগুলো ঝলসে গিয়েছিল। মুহূর্তের মধ্যে এলাকাবাসী আমার বোনের শ্বশুরবাড়িতে এসে আগুন নেভানোর জন্য চেষ্টা করেছিল।
আর হ্যাঁ বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, যখন আগুন ধরেছিল তখন আমার দুলাভাই দৌড়ে গিয়ে আমার বোনকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল, তখন আমার দুলাভাইয়ের দুটো হাতও ঝলসে গিয়েছিল। এমন পরিস্থিতি হওয়ার কারণে সাথে সাথেই অ্যাম্বুলেন্সে করে, আমার বড় বোন ও দুলাভাইকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। যতক্ষণ ঢাকা পৌঁছায়নি ততক্ষণ পর্যন্ত আমার বড় বোন ও দুলাভাই সারা রাস্তায় ঝলসে যাওয়া শরীর নিয়ে, কি যে আহাজারি করেছিল তা মনে পড়লে আজও গায়ে শিহরণ দিয়ে ওঠে। কি যে বিভীষিকাময় দিন ছিল সেদিন, তা আজও চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে।
আমার বড় বোন এম্বুলেন্সে যখন শুয়েছিল তখন সে তার পুরা শরীর নিয়ে, ভালোভাবে শুয়ে থাকতে পারছিল না, যদিও বা বাড়িতে ডাক্তার নিয়ে এসে প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা দিয়ে, দ্রুত ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। তবুও সেই প্রাথমিক চিকিৎসা তার শরীরে যেন বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলছিল না। কেননা দগ্ধ হয়ে যাওয়া শরীরের অংশ কি যে যন্ত্রণাময়, তা শুধু আমার বনই উপলব্ধি করতে পেরেছিল। এছাড়া যারা এমন দুর্ঘটনার কবল থেকে ফিরে এসেছে শুধু তারাই জানে এ জ্বালা যন্ত্রণা ঠিক কতটুকু। যাই হোক বন্ধুরা আজ আমার বোনের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনাটি পুরো শেষ করতে পারলাম না, তাই পরবর্তীতে পর্বের জন্য আপনাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে।
আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
https://twitter.com/mahbubullemon/status/1778057863115804982?t=Vtp07QioYEMprLM0ADYJCg&s=19
কমেন্ট করতে এসে শুরুতে একটি মর্মান্তিক ঘটনা জানতে পারলাম। খুবই খারাপ লাগলো আপনার আপুর এই গ্যাস সিলিন্ডারের ত্রুটির কারণে শরীরের বিশেষ বিশেষ অংশ পুড়ে যাওয়ার কথা শুনে। দোয়া করি যেন দ্রুত সুস্থ হন এবং এমন ঘটনা যেন আর কারো পরিবারের না ঘটে। আসলে তাড়াহুড়ার মুহূর্তে অনেকেই অনেক দিকে খেয়াল করতে পারেনা। যদি আগে থেকে রান্না করে রাখত তার বাড়ির লোকজন তাহলে আর এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো না।
ভাই আমার বড় বোনের সাথে এই ঘটনাটি ঘটেছে আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগে। তবে আপনি ঠিকই বলেছেন, তাড়াহুড়োর কারণে হয়তো এমন দুর্ঘটনা ঘটেছিল। আপনার মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
খুব খারাপ লাগলো ঘটনাটি শুনে ভাইয়া।পরে কি হয়েছিল যদিও জানতে পারলাম না।তবে আমার মনে হয় প্রতিবার ঈদ এলে ওই কষ্টের স্মৃতি আপনাদের মনে দাগ কেটে যায়। অনুভূতি গুলো খুব কষ্টের।
একদম ঠিক বলেছেন আপু, ঈদের সময় এলেই আমাদের এই ঘটনাটি ভীষণ মনে পড়ে যায়। আপনার মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
অনেক খারাপ লাগছে আমার। পড়তে পড়তে চোখে অলরেডি পানি চলে আসলো। আপনার বোনের শাশুড়ীর কথা শুনে আামর মেজাজ অনেক গরম হয়েছে৷ নিশ্চয়ই এই ঘটনার পর তিনি অনুতপ্ত হয়েছেন।
আপু সব শাশুড়ি এক হয় না, আর তাইতো আমার বোনের শাশুড়ির ব্যবহার দেখে মনে হয়েছিল সে মোটেও অনুতপ্ত নয়। আপনার মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
খুব মর্মান্তিক ও দুঃখজনক ঘটনা ভাইয়া।ঈদের আনন্দ কাটিয়ে বাড়িতে গিয়ে ভয়ানক দূর্ঘটনার স্বিকার। আসলে মায়ের মন হয়তো কোন ভাবে বিপদের আভাস পেয়েছিলো তাই থাকতে বলছিলো।ছুটি শেষ না হলে হয়তো থেকেই যেতেন কিন্তুু চাকুরির কারণে তো নিজের মনের কথা শুনলে হবে না।ওনার শ্বশুড়বাড়ি যদি রান্না টা করে রাখতেন তাহলে হয়তো তারাহুরো করতেন না এবং এমন দূর্ঘটনার স্বিকার হতেন না।ধন্যবাদ ভাইয়া পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।
দিদি আমার বড় বোনের শাশুড়ি খুব একটা ভালো নয়। ব্যবহারের দিক থেকেও ভীষণ খারাপ। যার কারণে আমার বোন বিরক্ত হয়ে রান্না করতে গিয়ে এমন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। আপনার মন্তব্য প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।