আমার পরিবারের সাথে ঘটে যাওয়া একটি মজার ঘটনা
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।
আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে।আর আজকে আমি আমার পরিবারের সাথে ঘটে যাওয়া একটি মজার ঘটনা নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আজ থেকে অনেক অনেক বছর আগে, এই হবে হয়তো আমি ক্লাস ফোর কিংবা ফাইভে পড়ি। তাই ঘটনাটি আমার খুব ভালোভাবেই মনে আছে। আমার বাবা একজন সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। তিনি আমাদের কুড়িগ্রাম জেলার জজ কোর্টে A.O হিসেবে কর্মরত ছিলেন।আর আমার মা একজন গৃহিণী ছিলেন। আমার বাবা চাকরি করার সুবাদে প্রতিদিন সকাল ৯ টায় তার অফিসে গিয়ে উপস্থিত হতেন।
যার কারনে আমার মায়ের দায়িত্ব ছিল প্রতিদিন সকাল ৮ টার মধ্যে আমার বাবার জন্য গরম গরম খাবার তৈরি করে রাখা। আর আমার মা বাড়ির সমস্ত কাজ একা করতে পারতো না বলে, আমাদের বাসায় দুজন গৃহপরিচারিকা আমার মায়ের কাজে সাহায্য করার জন্য নিযুক্ত ছিল। তো একজন ছিল মাঝ বয়সী খালা, যে কিনা আমার মাকে রান্নার কাজে সহযোগিতা করত। আর একজন ছিল আমার থেকে এক দেড় বছরের বড় একজন মেয়ে। তার নাম ছিল হালিমা। তার বয়স খুব বেশি একটা না হওয়ার কারণে, সে শুধু আমাদের টুকিটাকি কাজগুলো করে দিত। তবে হালিমা ছিল খুব অলস প্রকৃতির।
সে তার কাজগুলো ঠিকঠাক ভাবে করতো না। আর সুযোগ পেলেই টিভি দেখার জন্য ভীষণ ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তো। আমার বাসার সকলেই তার এমন আচরণগুলো জানত। তো একদিন বিকেল বেলা বাসার সমস্ত কাজকর্ম যখন শেষ হয়ে গেছে, তখন আমার মা, আর সেই খালা ও হালিমা বসে বসে টিভিতে সিনেমা দেখছিল। বিকেল থেকে যখন গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল, তখন আমার বাবা অফিস থেকে ফিরে এসে চা নাস্তা খাবার জন্য হালিমাকে ডাকাডাকি শুরু করেছিল।
তবে সেই সময় সকলেই খেয়াল করে দেখে, হালিমা বাসার কোথাও নেই। তখন আমরা আমাদের পুরো বাড়ি এমনকি আমাদের পাশের বাড়িগুলোতে গিয়ে হালিমার খোঁজখবর শুরু করেছিলাম। আমার বাবা তো ভীষণ রেগে গিয়ে সকলের সাথে চিৎকার করতে শুরু করেছিল, আর বলেছিল তোমরা মনে হয় হালিমার সাথে কেউ রাগারাগি করেছ, যার কারণে সে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের বাড়ির সবাই বলেছিল, আমরা তো তার সাথে কিছুই করিনি, বিকেলে ঘরে বসে বসে টিভিও দেখেছিল, তাহলে হঠাৎ করে সে কোথায় যাবে।
এভাবে যখন অনেকক্ষণ সময় পার হয়ে যাওয়ার পর রাত আটটা বেজে গিয়েছিল, তখন আমার বাবা চিন্তা সহ্য করতে না পেরে, আমাদের বাড়ির পাশে মসজিদে গিয়ে মাইকিং শুরু করেছিল। তবুও যেন কোন ভাবে আমরা হালিমার খোঁজ পাচ্ছিলাম না। আমাদের পরিবারের সকলে মিলে যখন আমার বাবার ঘরে বসে বসে আলাপ আলোচনা করছিল হালিমা আসলে কোথায় যেতে পারে। এমন চিন্তা ভাবনা করতে করতে হঠাৎ করে সকলের সামনে, হালিমা খাটের নিচ থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছিল।
তখন ঘরের মধ্যে থাকা আমার পরিবারের সবাই হালিমাকে দেখে খুবই অবাক হয়ে গিয়েছিল। যে মেয়েকে এত খোঁজাখুঁজি করে পাওয়া যাচ্ছিল না, অবশেষে মাইকিং পর্যন্ত করা হয়েছিল। আর সেই হালিমা কিনা খাটের নিচ থেকে বেরিয়ে আসছিল। আসলে কি জানেন, হালিমা বিকেলে টিভি দেখতে দেখতে মেঝেতে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল, আর এক সময় ঘুমের ঘোরে খাটের নিচে চলে গিয়েছিল। আর ওই যে আমি আপনাদেরকে বলেছিলাম, হালিমা খুব অলস প্রকৃতির, আর তাই তাকে হারানোর ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেও, সে কিছুই বুঝতে পারেনি।
যেখানে আমরা সবাই খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলাম, ঠিক সেই সময় হালিিমাকে খাটের নিচ থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে, আমার পরিবারের সকলেই ভীষণ খুশি হয়েছিল। সত্যি কথা বলতে কি, ওই সময় আমার পরিবারের কারো মাথায় আসেনি যে হালিমা খাটের নিচে থাকতে পারে। ঘটনাটি হয়তো আমি লিখে আপনাদের তেমন একটা বোঝাতে পেরেছি কিনা জানিনা, তবে যখন এই ঘটনাটি আমার পরিবারের সাথে ঘটেছিল, তখন কিন্তু আমি খুবই মজা পেয়েছিলাম। তাই আজ সেই ঘটনাটি মনে পড়ে গেল বলে আপনাদের মাঝে শেয়ার করে নিলাম।
আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।
