আমার প্রতিবেশী পাপিয়া

" আজ মঙ্গলবার - ২৪শে শ্রাবণ - ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ০৮,আগস্ট - ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ "

মার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।

IMG_20230808_014227.jpg

source

আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আর আজকের পোস্ট হচ্ছে পাপিয়া নামের একটি মেয়েকে কেন্দ্র করে। আর এই পাপিয়া হচ্ছে আমার প্রতিবেশী এক আপার মেয়ে। যদিও বা এই প্রতিবেশীদের বাড়িতে আমাদের খুব বেশি একটা যাতায়াত নেই। তবে তাদের বাড়ি আমাদের বাড়ির কাছাকাছি বলা যেতে পারে। তো এই পাপিয়া গত বছর একটি ছেলের হাত ধরে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। যাকে বলা যায় প্রেমের পরিণয়ে বিয়ে।

পাপিয়া যখন চলে গিয়েছিল তখন আমরা তার চলে যাওয়ার ঘটনাটি শুনে খুব আফসোস করেছিলাম। কেননা পাপিয়া ছিল বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। তবে তাদের ঘরে একটি ছেলে সন্তানও আছে। আর বাবা-মা ও ভাই বোন নিয়ে পাপিয়াদের ছোট্ট সংসারটি বেশ ভালই চলছিল। কিন্তু যখন পাপিয়া চলে গিয়েছিল তখন তার বাবা-মা খুবই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। তাই মনের দুঃখে মেয়েকে আর ফিরিয়ে আনার কথা তারা চিন্তাও করেনি।

তবে এইতো কয়েকদিন আগে পাপিয়া যখন বাসায় ফিরে এসেছিল, তখন তার বাবা-মা তাকে আর ফিরিয়ে দিতে পারেনি। কেননা মেয়ের করুন অবস্থা দেখে বাবা-মা দুজনেই অঝোরে কেঁদেছিল। তাদের কান্নার শব্দ শুনে আর কিছুটা হইচই শুনে আমার অর্ধাঙ্গিনী গিয়েছিল তাদের বাসায় কি হয়েছে তা দেখার জন্য। আর সেখানে গিয়ে যে হৃদয়বিদারক কাহিনী শুনে এসেছে তা শুনে আমিও খুবই হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম।

আমার অর্ধাঙ্গিনী যা শুনে এসেছিল তা হলো এরকম, পাপিয়া যখন ছেলেটির সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে ছিল তখন সেই ছেলেটি জুতার ব্যবসা করতো। যদিও বা পাপিয়ার বাবা-মায়ের সচ্ছল অবস্থা ছিল, আর সারা বছর তারা ঘরের ধানের ভাত খেত কোন প্রকার চাল কিনে খেতে হতো না। কেননা তাদের বেশ কয়েক টুকরো চাষাবাদের জমিও ছিল। পাপিয়া যখন দশম শ্রেণীতে পড়তো তখন এই জুতা ব্যবসায়ীর সাথে পরিচয় হয়েছিল। তাও সেই জুতা ব্যবসায়ী ফেরি করে জুতা বিক্রি করতো।

তবে চেহারার দিক থেকে ছেলেটি বেশ সুদর্শন ছিল। যার কারণে পাপিয়া কোন চিন্তা-ভাবনা না করেই সেই সুদর্শন ছেলেটির সাথে চলে গিয়েছিল। আর যখন সে বাড়ি থেকে চলে গিয়ে ছেলেটিকে বিয়ে করেছিল তখনই পাপিয়ার জীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছিল। পাপিয়ার শশুরালয়ের লোকজন তেমন ভালো ব্যবহার করত না সেইসাথে ঠিক মতো খাবারও খেতে দিত না। বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার কারণে পাপিয়া লজ্জা শরমে তার বাবা মার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি।

যার কারনে প্রায় এক বছর পাপিয়া তার শ্বশুরবাড়িতে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতিত হয়ে আসছিল। এভাবে যখন নির্যাতনের শেষ সীমায় এসে পৌঁছেছিল তখন পাপিয়া শশুরালয় থেকে বের হয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে যখনই পাপিয়া বাবার বাড়িতে চলে আসার চেষ্টা করত তখনই তার স্বামী তাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে আবারও বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেত। তবে এভাবে আর খুব বেশি দিন চলতে না পারার কারণে পাপিয়া অবশেষে শ্বশুরালয় থেকে পালিয়ে বের হয়ে এসেছিল।

আর যখন পাপিয়া বাসায় এসেছিল, তখন তার বাবা-মা পাপিয়ার করুন পরিস্থিতি ও কঙ্কাল চেহারা দেখে ভীষণ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিল। এত সুন্দর চেহারা পাপিয়ার অথচ চোখে মুখে কালো দাগ পড়ে গেছে। হঠাৎ করে কেউ দেখলে পাপিয়াকে কোনভাবেই চিনতে পারবে না, এরকম পরিস্থিতি হয়ে গিয়েছিল পাপিয়ার। তাই বাবা-মায়ের মন ভেঙ্গেচুরে গেলেও পাপিয়াকে তারা মেনে নিয়েছিল। পাপিয়া ও তার বাবা মায়ের অটল সিদ্ধান্ত সে আর কখনো সেই জুতা ব্যবসায়ীর কাছে ফিরে যাবে না।

পাপিয়াকে আবার নতুন করে লেখাপড়া শিখিয়ে প্রতিষ্ঠিত করার চিন্তা ভাবনা করছে তার বাবা-মা। আর এসব শুনে এসে আমার অর্ধাঙ্গিনী যখন পুরো ঘটনাটি খুলে বলে আফসোস করছিল তখন আমার কাছেও খুবই খারাপ লেগেছিল। হয়তো অল্প বয়সে পাপিয়ার ভুলের পরিমাণটা অনেক অনেক বেশি হয়ে গিয়েছিল, যার কারণে তাকে সারা জীবন এই কষ্টের বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে। তবে আমি মন প্রাণ থেকে চাই পাপিয়া যেন আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে এবং সেই সাথে লেখাপড়া করে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

ছোট মানুষ না বুঝেই অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে, তবে এই ভুল যেন পাপিয়ার জীবনকে ধ্বংস করে না ফেলে তার জন্য তার বাবা-মা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে যা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। এজন্য অবশ্য আমি পাপিয়ার বাবা মাকে অনেক অনেক সাধুবাদ জানাই তাদের সুন্দর মন মানসিকতার জন্য। যাক অবশেষে পাপিয়া তার ঘরে ফিরে আসতে পেরেছে এবং বাবা মার সাথে থাকতে পারছে এটা জেনে আমিও কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছি। কেননা তারা হচ্ছে আমাদের প্রতিবেশী তাদের মঙ্গল কামনা চাওয়াটাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র কাম্য।



আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkPKDYqZPTyz3HQnPBAZYA84k8k89ixkhuUsFjZkgWkC1gjU36M1oU8J7FbJUoPMtjB5EHLD1usXZox8d6boJGJdTa7jANjx37k.png
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

3q52Dkr5nBe3kDiHrk4F3qdzX6E5VuVcCcF7TDQDco37AUsMDxK7aJ1uasvrAaBSP6D1NgNuBSX2m.gif

3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeSsa63mzHQexuvWRDgxAQmHZjMKhFaYGe2ubQmiC33SnsVy3TGA7BbZJiqfXWxLCKhiShcGVU.png

Picsart_22-12-06_06-32-35-909.png

Sort:  
 last year 

ছেলেমেয়ে ভুল করলেও মা-বাবা ফেলে দিতে পারেন না।বিশেষ করে মায়েরা।পাপিয়া অল্প বয়সে একটা ভুল করে আজ বুঝতে পেরে মা-বাবার কাছে ফিরে এলো। এই মা-বাবা গ্রহন না করলে খুব ক্ষতি হয়ে যেতো। হয়তো মেয়েটি কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলতো।পাপিয়ার মা-বাবা তার পাশে আছে জেনে খুব ভালো লাগলো।এই থেকে শিক্ষনীয় বিষয় হলো মা-বাবার অবাধ্য হয়ে কিছু করা ঠিক নয়।অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। সুন্দর একটি ঘটনা শেয়ার করার জন্য।

 last year 

আপনি ঠিকই বলেছেন আপু বাবা-মা কখনোই সন্তানদের ফেলে দিতে পারেনা। আর তাই পাপিয়ার বাবা-মা পাপিয়াকে বুকে টেনে নিয়েছিল। হয়তো এজন্যই পাপিয়ার ভবিষ্যৎ কোন এক সময় ভালো হতেও পারে। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 last year 

ভাইয়া এমন ঘটনা বাংলাদেশে অহরহ হচ্ছে। তারপরও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এগুলো থেকে শিক্ষা নেয় না। যেমন পাপিয়া আবেগের কারনে জীবনের কত বড় সর্বনাশটা করলো। বিয়ের পরে বুঝতে পেরেছে বাস্তবতা কতটা কঠিন। যায়হোক দোয়া করি পাপিয়া নিজের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহন করুক। ধন্যবাদ।

 last year 

পাপিয়ার এক বছরের বিবাহিত জীবনে বেশ ভালই শিক্ষা অর্জন করেছে ভাই। যার কারনে অবশেষে সে পালিয়ে বাবা-মায়ের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। যাইহোক ভাই, পাপিয়ার সাথে যেন ভাল কিছুই হয় আমিও এই প্রত্যাশা করছি।

 last year 

মা-বাবার যতই কষ্ট হোক না কেন ,সন্তানের কষ্ট দেখলে তারা কখনোই সন্তানকে ফেলে দিতে পারে না। ঠিক তেমনি পাপিয়ার মা-বাবাও তাকে অসহায় অবস্থায় দেখে আবারও বুকে টেনে নিয়েছে। ছোট বয়সে ভুল করে ফেললেও ,পাপিয়া শেষ পর্যন্ত সেটাকে শুধরে নিতে পেরেছে এটাই অনেক ভালো দিক তার জন্য।

 last year 

বাবা-মা কখনোই সন্তানকে ফেলে দিতে পারে না। আর তাই হয়তো পাপিয়ার বাবা-মা এত কষ্টের মাঝেও মেয়েকে বুকে আগলে রেখেছে। এবং তার ভবিষ্যৎ যেন উজ্জ্বল হয় তার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। আপনার সুন্দর মতামতের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু।

আসলে পাপিয়া ছোট বয়সে না বুঝে ছেলেটির সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েছিল শুধুমাত্র। যার জন্য তার এই করুণ অবস্থা হল। তবে শেষ পর্যন্ত সে যে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে পারলো তার বাবা-মায়ের কাছে এটাই অনেক। নিশ্চয়ই তার ভবিষ্যৎ জীবন সুস্থ স্বাভাবিক হবে।

 last year 

ছেলেটির শুধু রূপই ছিল বিন্দুমাত্র গুণ ছিল না। যার কারনে পাপিয়া তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। তবে পাপিয়ার বাবা মায়ের কারণে পাপিয়া হয়তো ভবিষ্যতে ভালো থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 66050.37
ETH 2629.02
USDT 1.00
SBD 2.68