বউয়ের কাণ্ড
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।
আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আজ আমি আপনাদের মাঝে আমার ফেলে আসা স্মৃতি থেকে খুবই মজার একটি স্মৃতি শেয়ার করতে যাচ্ছি। এই স্মৃতিটুকু যখনই আমি মনে করি তখনই আমার ভীষণ রকম হাসি পায়। আজ হঠাৎ করে যখন স্মৃতিটুকু মনে করে হাসতে শুরু করেছিলাম, তখনই ভাবলাম আমার হাস্যকর স্মৃতিটুকু আপনাদের মাঝেও শেয়ার করব। তো এখন থেকে বেশ কয়েক বছর আগে আমি ও আমার বউ মিলে তার বান্ধবীর বাসায় বেড়ানোর জন্য রওনা হয়েছিলাম। তবে তখন আমার প্রিয় বাইকটি নষ্ট থাকার কারণে, বাইক নিয়ে না গিয়ে বাসে করে রওনা হয়েছিলাম।
যদিও বা আমার কাছে মোটর বাইকর জার্নি ভীষণ রকম প্রিয়, তবুও প্রিয় বাইকটি নষ্ট হওয়ার কারণে একপ্রকার বাধ্য হয়ে বাসে করে যেতে হয়েছিল। আমার বউয়ের বান্ধবী ঢাকায় থাকেন। তার হাজবেন্ড ঢাকায় পুলিশের এসআই হিসেবে কর্তব্যরত ছিলেন। তারা হঠাৎ করে ছুটি পাওয়ার কারণে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন এবং আমার বউয়ের সাথে দেখা করতে চেয়েছেন। যেহেতু আমার প্রিয় বাইকটি নষ্ট ছিল, তাকে ভালো করার মত সময়টুকু আমার বউ কিছুতেই দিতে চাইছিল না।
মেয়ে মানুষ বলে কথা যখন যেটা বলবে তখনই সেটা করা চাই। বিন্দু মাত্র ধৈর্য না ধরে বান্ধবীর কথা শুনে ছটফট করতে শুরু করেছিল। যাইহোক বউয়ের মন বলে কথা, তাই তার মন রক্ষা করার জন্য দুজনে মিলে বাসে করেই রওনা হয়েছিলাম। তো আমরা টোনা ও টুনি মিলে বাসে করে বাদাম চিবোচ্ছি আর বান্ধবীর বাড়ির দিকে সামনে এগোচ্ছি। আমার বউ জানালার কাছে বসে বাইরে প্রকৃতি দেখতে দেখতে ভীষণ আনন্দে বান্ধবীর সাথে দেখা করতে ছুটে চলেছিল। হঠাৎ করে উলিপুর নামক এক জায়গার কাছে এসে বিড়বিড় করে যেন কি বলতে লাগলো। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কি হয়েছে কাকে কি বলছো, আমার বউতো রেগে আগুন হয়ে বলছে গাড়ি থামাতে বল আমি এখানে নামবো।
আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম হঠাৎ করে আবার কি হলো মাঝ পথে কেন গাড়ি থামাতে বলবো। সে বলল রেস্টুরেন্টে থাকা এক ব্যক্তি তাকে নাকি চোখ মেরেছে। আর তাই আমার বউ রাগে আগুন হয়ে জ্বলতে শুরু করেছিল। আমি তাকে অনেক বুঝিয়েছি চলো আগে বান্ধবীর সাথে দেখা করে আসি, ব্যাপারটি পরে দেখা যাবে। আমার বউ আমার কথা শুনে বান্ধবীর বাড়ি গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত আমার বউয়ের ভিতরে যেন কয়লার আগুন ধিকি ধিকি জ্বলছিল। সে যেন এই ব্যাপারটি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না। আমার বউ আবার তার স্কুল জীবন থেকেই একটা প্রতিবাদী মেয়ে ছিল কিনা, তাই তার যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করলেই যেন নয়।
যাই হোক বান্ধবীর বাড়িতে গিয়ে বান্ধবীর পরিবারের সাথে অনেকটা সময় কাটিয়ে, প্রচুর খাওয়া দাওয়া করে আমরা বিকেলের দিকে বাড়িতে আসার জন্য রওনা হয়েছিলাম। তবে এবার যখন আমরা বাসে উঠেছিলাম, তখন আমার বউ বাস কন্টাকটার কে উলিপুরে নামিয়ে দেয়ার কথা বলেছিল। আমি বউকে যতই বোঝাতে চেয়েছিলাম, কিছুতেই আমার বুঝ যেন সে মানতে চাইছিল না। তাই কি আর করার শেষমেষ আমিও রাজি হয়ে গেলাম উলিপুর পর্যন্ত যাওয়ার জন্য। যখন আমাদের বাসটি উলিপুরে পৌঁছেছিল, তখন আমার বউ তড়িঘড়ি করে বাস থেকে নেমে পড়েছিল, এবং সেই রেস্টুরেন্টের মালিকের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল।
মালিক হঠাৎ করে আমার বউকে সামনে দেখতে পেয়ে কিছুটা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। সকালবেলায় যে মেয়েটিকে চোখ মেরেছিল, আর বিকেল হতে না হতেই সেই মেয়েটি তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমার বউ তো হঠাৎ করেই তাকে বলে বসলো, ভাইয়া আর একবার চোখ মারেন তো দেখি। সকালে দূর থেকে দেখেছি তো কেন যেন শান্তি হয়নি। তাই কাছ থেকে চোখ মারা দেখার জন্য আপনার কাছে চলে এসেছি। এই কথা শুনে তো সেখানে থাকা লোকজনও আমার বউয়ের কথা শুনে একদম অবাক হয়ে গিয়েছিল।
রেস্টুরেন্টের মালিক তো একদম অস্বীকার করে বসলো এরকম নেককার জনক কাজ তিনি করেননি। আমার বউ তো নাছোড়বান্দা লোক, সে চোখ মারা দেখেই ছাড়বে। এক কথায় দু কথায় সেখানে অনেকগুলো লোক জড়ো হয়ে গিয়েছিল। আর সেখানে থাকা লোকগুলো বলাবলি করছিল, এই রেস্টুরেন্টের মালিকের নাকি স্বভাবের দোষ রয়েছে। তাই আমার বউ যা করেছে ভালই করেছে। তার নাকি এরকম শিক্ষা হওয়ার প্রয়োজন ছিল। আমার বউ তো হঠাৎ করে কথা বলতে বলতে তার পায়ের জুতো খুলে রেস্টুরেন্টের মালিকের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে, কিন্তু আমি তাকে পেছন থেকে টেনে ধরে বলেছিলাম, এই লোকটি এমনিতেই অনেক অপমানিত হয়েছে, তাকে আর মারার প্রয়োজন নেই।
সেখানে থাকা লোক গুলো আমার বউয়ের হয়ে রেস্টুরেন্টের মালিককে চরমতম অপমান করতে শুরু করেছিল, আর বলতে শুরু করেছিল, বেঁচে থাকতে আর কোনদিন কোন মেয়ে মানুষের সাথে যেন এরকম দুর্ব্যবহার না করতে। আমার বিশ্বাস এই ঘটনার পরে লোকটি আর কোনদিন কোন মেয়ে মানুষের দিকে চোখ তুলে তাকাতেও সাহস করবে না। তবে আমার বউ যদি বাড়ি ফেরার পথে রেস্টুরেন্টের মালিক কে এরকম হেরোস্তা না করতো, তাহলে হয়তো সে যে কোন মেয়ে মানুষ দেখলে তার বদ স্বভাবের কাজ গুলো রীতিমতো চালিয়ে যেত।
তাই আমার বউয়ের সেদিনের কর্মকাণ্ডগুলো আমার কাছে বেশ ভালই লেগেছিল। কেননা মেয়ে মানুষ হচ্ছে, মায়ের জাত। তাই তাদের সম্মানটুকু যেন সবসময় বজায় থাকে তা আমাদেরই খেয়াল রাখা উচিত। যদিও বা এখনকার সময়ে চোখ মারা ব্যাপারটি খুবই সহজ বিষয়, তবে একটা সময় ছিল এই চোখমারাকে অনেক নোংরা ও কুরুচি সম্পন্ন কাজ বলে মনে করা হতো। যাই হোক এই ছিল আমার ফেলে আসা হাস্যকর মজার স্মৃতি, যা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে।
আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
আপনার ঘটনাটি আসলেই হাস্যকর ছিল। তবে আমি বুঝতে পারলাম না ভাবিকে যখন চোখ মারল তখন কিছু না বলে হঠাৎ করে বাসে উঠে তার মনে পড়েছে । ভাগ্যিস আপনি যাওয়ার সময় থামিয়ে রেখেছিলেন তা না হলে তো বান্ধবীর বাড়িতে আর যাওয়াই হতো না । শেষমেষ যে আবার সামনাসামনি হয়ে লোকটাকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে এটিই ভালো লেগেছে। এসব লোকদেরকে এমনই করা উচিত।
আপু বাসে করে যখন বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিলাম তখন চলন্ত বাসে রেস্টুরেন্টের মালিক চোখ মেরেছিল। আর যখনই চোখ মেরেছিল তখনই সে গালি দিতে শুরু করেছিল। আর পরবর্তী ঘটনা তো আপনি পড়ে নিয়েছেন। আমার পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
পোস্টটি খুব ভালোভাবে পড়লাম সবমিলিয়ে বুঝতে পারলাম প্রতিবাদী স্বভাবের মেয়ে আপনার বউ। আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে এই ধরনের খারাপ স্বভাব লোকদের এরকম সমচিত জবাব দেওয়াই ঠিক। যে খুশিতে বান্ধবীর সাথে দেখা করতে গিয়েছিল তা যাত্রাপথে নষ্ট করে দিয়েছে হোটেল মালিক। 🤩 ভালোই ছিল ঘটনাটা মনে থাকবে আজীবন।
ঠিক বলেছেন ভাই বউ আমার ভীষণ প্রতিবাদী। তা না হলে চোখ মারার জন্য কাউকে জুতা খুলে মারতে যায় 😁। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ভাবি সত্যিই অনেক প্রতিবাদী একজন মানুষ। তাইতো তিনি নিজের উপর হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন। আসলে কিছু কিছু মানুষ আছে যাদেরকে শিক্ষা না দিলে তারা কখনোই নিজের চরিত্র শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করে না। ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে।
আপু আপনার ভাবিও তাই বলে, সেদিন যদি আপনার ভাবি রেস্টুরেন্টের মালিককে চোখ মারার জন্য শায়েস্তা না করত, তাহলে দেখা যেত পরবর্তী সময়ে সে আবারও কাউকে চোখ মারতো। এরকম ঘটনার জন্য হয়তো তিনি আর পরবর্তীতে চোখ মারার সাহস করতে পারবেন না। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ভাইয়া আপনার গল্পটি পড়ে সত্যিই ভীষণ মজা পেয়েছি । হাসতে হাসতে গল্পটি পড় ছিলাম ।আসলেই ভাবির সাহস আছে বলতে হবে । উচিত শিক্ষা দিয়েছে বেয়াদব লোকটিকে । না হলে কত মেয়ের সঙ্গে যে এ রকম করত তার ঠিক নেই । আর দ্বিতীয়বার কারো চোখের দিকে তাকানোর সাহস এখন পাবে না লোকটি ।বেশ ভাল ছিল ।ধন্যবাদ আপনাকে ।
আপু, আপনার ভাবীর কান্ড আমার কাছেও দারুন লেগেছে। আর তাইতো তার সাথে থেকে তাকে সাহস দিয়েছিলাম। তবে যখন মারতে গিয়েছিল তখন পেছন থেকে টেনে ধরেছিলাম। আপু আমার পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।