কিছু শিক্ষিত মানুষের ভিতরেও নেই মনুষ্যত্ব

" আজ মঙ্গলবার - ১৩ই আষাঢ় - ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৭,জুন - ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ "

মার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।

pexels-michael-burrows-7148048.jpg

source

আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আর আজকের পোস্ট হচ্ছে একজন শিক্ষিত মানুষের মনুষ্যত্বহীন কার্যকলাপকে কেন্দ্র করে। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন আমার অর্ধাঙ্গিনী একজন সরকারি প্রাইমারি স্কুলের টিচার হিসেবে কর্তব্যরত আছেন। আর সেই স্কুলের একজন শিক্ষিকা, যিনি আমার অর্ধাঙ্গিনীর কলিগ তার নাম হচ্ছে তমা। আর সেই কলিগের কিছু ঘটনা আপনাদের মাঝে শেয়ার করব। কারণ তার এমন কিছু পারিবারিক ঘটনা আমার মনকে ভীষণভাবে কষ্ট দিয়েছে, যা কিছুতে মেনে নিতে পারছি না। আবার তাকে কিছু বলতেও পারছিনা। তাই আপনাদের মাঝে কথাগুলো বলে একটু হালকা হবার চেষ্টা করছি আর কি।

তমা ম্যাডামের দুই ভাই ও মা সহ তাদের চারজনের সংসার। বাবা অনেক আগে গত হয়েছেন। তমা ম্যাডাম চাকুরী পাওয়ার সাত বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর গত দুই বছর আগে তার পছন্দের এক ছেলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। যখন বিয়েটা হয়েছিল তখন আমরাও সেই বিয়েতে উপস্থিত ছিলাম। বিয়ের পরে তমা ম্যাডাম যখন সেই ছেলের বাড়িতে সংসার শুরু করতে লাগলো, তখন সে দেখল তার ননদ বাবার বাড়িতেই থাকেন। তিনিও একজন সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। তার একটি ছেলে পানিতে পড়ে মারা যাওয়ার কারণে, শশুর বাড়িতে না থেকে বাবার বাসায় থাকেন। তমার ননদ যে বাবার বাসায় থাকতেন এই বিষয়টা তমা কখনোই জানতেন না।

তাই যখন বিয়ে হয়ে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে তার ননদের থাকার কথা জানতে পেরেছিল, তখন থেকেই সে এই বিষয় নিয়ে স্বামী ও শাশুড়ির সাথে বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলতে শুরু করেছিল। যখন সে তার ননদের বিষয় আমার অর্ধাঙ্গিনী ও অন্যান্য টিচারের সাথে শলা পরামর্শ করছিল, তখন আমার অর্ধাঙ্গিনী সহ অন্যান্য টিচার যারা ছিলেন তারা সবাই মিলে তমা ম্যাডামকে খুবই বুঝিয়েছিলেন। বলেছিলেন নতুন একটি সংসার, সেখানে ননদ দেবর সবাইকে সহ হাসিখুশিতে থাকতে হবে। তবে কে শুনে কার কথা, তার ননদের থাকার বিষয়টি তমা যেন একদমই মেনে নিতে পারছিল না। তাই বিয়ের এক মাসের মাথায় বাবার বাড়ি চলে এসেছিল, আর শ্বশুর বাড়িতেই যায়নি। এদিকে তমার বর তমাকে ডাকতে ডাকতে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল। তাই অবশেষে বাধ্য হয়ে তমার বাবার বাড়িতে থাকাটা মেনে নিয়েছিল।

এসব ঘটনার পরে তমার ননদ খুব লজ্জা পেয়ে তার বাবার বাড়ি ছেড়ে পাশেই একটি বাড়িতে ভাড়া হিসেবে থাকতে শুরু করেছিল। এটাও যেন তমার সহ্য হয়নি। তমার ননদ শ্বশুরবাড়িতে না গিয়ে বাড়ির পাশে কেন বাসা ভাড়া নিয়েছে এটাও সে মানতে রাজি ছিল না। যাইহোক এভাবে একটি বছরের বেশি কেটে যেতে না যেতেই তমা গর্ভবতী হয়ে যায়। যেহেতু তমার বয়স অনেক বেশি ছিল, তাই তারা এত দ্রুত সন্তান নিতে রাজি হয়েছিল। এবার যখন সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়ে পৃথিবীতে আসলো, তখন পর্যন্ত সে শ্বশুরবাড়িতে যায়নি। এমনকি তার সন্তান নিয়ে সে বাবার বাসায় দিন যাপন করছে, শাশুড়ির সাথে ঠিকমতো নাতিকে দেখা সাক্ষাৎও করায় না। একদিন তোমার শাশুড়ির সাথে দেখা হলে তিনি এ বিষয় নিয়ে খুবই আফসোস করেছিলেন। বলেছিলেন বংশের বড় নাতি আজ আমার বাসায় না থেকে তার নানার বাসায় গিয়ে আছে। এটা মানতেও তমার শাশুড়ির ভীষণ কষ্ট হয়। তিনি অঝোরে কাঁদছিলেন আর তার বংশের প্রদীপকে নিয়ে বিলাপ করছিলেন। এ সময় আমার কিছুই করার ছিল না।

শিক্ষিত একটি মেয়ে যে কিনা মা ও ভাইদেরকে ভীষণ ভালোবাসে, অথচ অন্যের সংসারে গিয়ে মা ও মেয়ের ভালোবাসাকে মেনে নিতে পারল না। অন্যদিকে তার সন্তানকে দাদীর আদর থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। মনের ভিতর এত জটিলতা ও এত হিংসামূলক ব্যবহার কি করে একটি শিক্ষিত মানুষের আচরণে থাকতে পারে। যদিওবা তার এই আচরণ আমার অর্ধাঙ্গিনী ও তার অন্যান্য কলিগরা মেনে নিতে পারেনি, তবে আবার তমাকে কিছু বলতেও পারেনি। কেননা এটা তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যা। যেখানে বাইরের মানুষের নাক গলানো মোটেই উচিত নয়। শিক্ষিত মানুষ হয়েও বিন্দুমাত্র মনুষত্ব নেই যার মধ্যে সে কিভাবে শিক্ষিত হতে পারে, তা আমার বোধগম্য নয়।আজ হঠাৎ করে কেন জানি তমার শাশুড়ির কথা খুব মনে পড়ে যাচ্ছে। তার অশ্রুসিক্ত চেহারা চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে। তাই আপনাদের মাঝে আমার মনের কষ্টের কথা গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।



আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkPKDYqZPTyz3HQnPBAZYA84k8k89ixkhuUsFjZkgWkC1gjU36M1oU8J7FbJUoPMtjB5EHLD1usXZox8d6boJGJdTa7jANjx37k.png
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

3q52Dkr5nBe3kDiHrk4F3qdzX6E5VuVcCcF7TDQDco37AUsMDxK7aJ1uasvrAaBSP6D1NgNuBSX2m.gif

3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeSsa63mzHQexuvWRDgxAQmHZjMKhFaYGe2ubQmiC33SnsVy3TGA7BbZJiqfXWxLCKhiShcGVU.png

Picsart_22-12-06_06-32-35-909.png

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 56560.74
ETH 2390.02
USDT 1.00
SBD 2.34