আ_{^{মার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।}}

আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আজ আমার ছেলের চার বছর পূর্ণ হল। তাই আজ আমার ছেলের জন্মদিন। আমার ছেলের জন্ম নিয়ে খুবই করুন একটি কাহিনী আছে যা আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আমার ছেলে যখন তার মায়ের গর্ভে ছিল তখন থেকেই নানারকম সমস্যায় জর্জরিত ছিল। আমার অর্ধাঙ্গিনী সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত আছেন। আমার বাড়ি থেকে আমার অর্ধাঙ্গিনীর স্কুল প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যার কারণে প্রতিদিন ১১ কিলোমিটার যাতায়াত করার কারণে আমার ছেলে তার মায়ের গর্ভে নানান রকম সমস্যায় ভুগছিল। তাই আমার অর্ধাঙ্গিনী আমার ছেলের ছয় মাস গর্ভাবস্থায় মাতৃত্বকালীন ছুটি নিতে বাধ্য হয়। আমার অর্ধাঙ্গিনী সেই সময় খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। যার কারণে তাকে তিনবার হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নিতে হয়।

অবশেষে আমার ছেলে যখন ৮ মাস গর্ভাবস্থায়, ঠিক তখন আমার অর্ধাঙ্গিনী ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে আর এই অসুস্থ অবস্থায় তাকে কুড়িগ্রাম ক্লিনিকে নিয়ে গেলে তাকে রংপুর বিভাগে রেফার্ড করে দেয়া হয়। কারণ কুড়িগ্রামে কোন NICU ছিলনা। আমরা সকলেই তখন মা ও ছেলেকে নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। অ্যাম্বুলেন্সে করে রংপুর বিভাগে নিয়ে যেতে যেতে আমার অর্ধাঙ্গিনী ও আমার ছেলে দুজনেই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে থাকে। অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রায় এক ঘন্টা পরে আমরা রংপুর বিভাগের খ্যাতি সম্পন্ন ডক্টরস মেডিকেল এন্ড কলেজে গিয়ে উপস্থিত হই। যেখানে আমার অর্ধাঙ্গিনী আগে থেকেই ডঃ আজিজা বেগম লুসির চিকিৎসাধীন ছিলো।

ডক্টরস মেডিকেল এন্ড কলেজে নেয়ার পরে আমার অর্ধাঙ্গিনীর সিজার করা হয়। আমার ছেলে ৮ মাসে জন্মগ্রহণ করার কারণে তার ওজন হয়েছিল ১ কেজি ৯০০ গ্রাম। ওজনের দিক থেকে কম হওয়ার কারণে আমার ছেলে দেখতে অনেক ছোট হয়েছিল। জন্মের পর পরই তার ভীষণ শ্বাসকষ্ট হওয়ার কারণে তাকে শিশু বিশেষজ্ঞ NICU তে ভর্তি করে নিল। আমার অর্ধাঙ্গিনী সিজার করার সময় রক্তের সংকট হলে @mahir4221 আমার অর্ধাঙ্গিনীকে রক্তদান করে। অতঃপর আমার অর্ধাঙ্গিনীকে সুস্থ অবস্থায় কেবিনে শিফট করে দেয়া হয়।

চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে NICU তে থাকাকালীন আমার ছেলের একদিনের চিকিৎসার ব্যয় ছিল ৫৬০০ টাকা। এভাবে প্রতিদিন বিশাল অংকের অ্যামাউন্ট খরচ করতে করতে ১৩ দিন পর্যন্ত আমার ছেলের চিকিৎসা চলতে থাকে। আমার অর্ধাঙ্গিনী ও আমার ছেলের এই ১৩ দিনে সুনাম খ্যাতি ডক্টরস মেডিকেল এন্ড কলেজ ও ঔষধ সহ বিল এসে দাঁড়ায় প্রায় ২ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। অনেকেই যখন আমার অর্ধাঙ্গিনী ও আমার ছেলেকে দেখার জন্য ডক্টরস মেডিকেল এন্ড কলেজে এসে ছিলেন তারা আমাদের আড়ালেই আলাপ-আলোচনা করত যে আমাদের টাকাও যাবে আবার আমাদের ছেলেকেও হারাতে হবে। এরকম মন্তব্য শুনে আমাদের মন ভীষণ খারাপ হয়ে থাকতো। এই ১৩ দিনে আমরা আমার ছেলের অবস্থা দেখে সব সময় দুশ্চিন্তায় ছিলাম।

মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ কৃপায়, এই ১৩ দিনে আমার ছেলে কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠে। আমার ছেলের দুই হাতে ও দুই পায়ে এতটাই ইনজেকশন ও কেনুলা পরানো হয়েছিল যার কারণে আমার ছেলের হাত ও পায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল। চিকিৎসা শেষে যখন আমরা ডক্টরস মেডিকেল এন্ড কলেজ থেকে আমার ছেলেকে রিলিজ করে আনি তখন আমার ছেলের ওজন হয়েছিল ১কেজি ৫০০ গ্রাম।

অল্প কিছুদিনের মধ্যে আমার ছেলের শারীরিক বৃদ্ধির উন্নতি ঘটতে থাকে। তাকে দেখলে কেউ কখনোই মনে করতো না যে সে ৮ মাসে ১৯০০ গ্রাম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিল। তবে আমার ছেলেকে সব সময় আমি শিশু বিশেষজ্ঞের চিকিৎসাধীন রেখেছিলাম। আমার পরিবারের লোকজনের যত্নের কারণে এবং মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার ছেলে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে।

আমি, আমার এক বড় বোনের সাথে আমার ছেলের সাথে সেলফি স্টিক দিয়ে একটি ছবি তুলেছিলাম যখন তার বয়স ৮ থেকে ৯ মাস। আজ এই ছবি স্মৃতি হিসেবে রয়ে গেছে আমার মুঠোফোনে। সুস্থ সবল সন্তান সকল পিতা-মাতারই কাম্য। তবে আমার ছেলের ওপর দিয়ে যে ঝড় চলে গিয়েছে তা মনে করলে, আজও আমার হৃদয় কেঁপে ওঠে। হয়তো আজ আমি এই কথাগুলো খুব সহজভাবে প্রকাশ করছি কিন্তু বাস্তবতা এতটাও সহজ ছিল না। যাই হোক আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার ছেলে সুস্থ ভাবে বেড়ে উঠতে থাকে।

আমার ছেলে যত বড় হতে থাকে ততই তার চঞ্চলতা বাড়তে থাকে। তাকে দেখে কোন ভাবে বোঝার উপায় নেই তার জন্মের সময় ঠিক কতটা ধকল গিয়েছিল তার শরীরের উপর দিয়ে। এখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ এবং সুন্দর জীবন যাপন করছে। একদিন আমার অর্ধাঙ্গিনী কে তার স্কুলে রেখে আসার সময় ধরলা নদীর তীরে একটি স্পিড বোট দেখতে পেয়ে সেখানে যাবার জন্য বায়না ধরে বসলো। আর আমিও আমার ছেলের এই ছোট্ট বায়নাটি পূরণ করার জন্য তাকে স্পিডবোটের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে তার আনন্দের সীমা ছিল না। ঠিক সেই মুহূর্তে আমি তার দুই একটি ছবি তুলে নেই আমার মুঠোফোন।

আশা করি আজ আমার ছেলের জন্মদিন পর্ব - ১ পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।

আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ সুন্দর বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।