অভাগী কুসুম
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।
আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আর আজকের পোস্টটি হচ্ছে অভাগী কুসুমের জীবন যাপন কে কেন্দ্র করে। কুসুম নামের এই মেয়েটিকে অভাগী বলার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। খুব ছোট্ট বয়সে, এই হবে হয়তো দু থেকে তিন বছর বয়সে কুসুমের মা রোগাক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল। আর যখন একজন সন্তানের মা পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় তার চেয়ে অভাগী বোধহয় আর কেউ হতে পারে না। তাই কুসুমের নামের আগে বাধ্য হয়েই অভাগী কথাটি যুক্ত করতে হয়েছে।
যাইহোক এই অভাগী কুসুমের বাড়ি আমার অর্ধাঙ্গিনীর স্কুলের পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামে। আমার অর্ধাঙ্গিনীর স্কুলে লেখাপড়া করার সুবাদে তাকে আমি চিনি। কেননা আমি যখন আমার অর্ধাঙ্গিনীকে স্কুলে রেখে আসতে যাই, তখন প্রায় সময় ছোট্ট এই মেয়েটির সাথে আমার দেখা সাক্ষাৎ হয়। ওর মা নেই বলে কেন জানি ওর ওপরে আমাদের সকলেরই ভালোবাসা কাজ করে। এর চেয়েও একটি ব্যাপার হচ্ছে অভাগী কুসুমের চোখে মুখে কেমন যেন মায়াবী মায়াবী একটা ব্যাপার আছে। যার কারণে সকলে মেয়েটিকে দেখলে আদর করার চেষ্টা করে। একে তো মেয়েটির মা পৃথিবীতেই নেই, অন্যদিকে বাবা আরেকটি বিয়ে করে বহাল তবিয়াতে সংসার করছে।
তবে অভাগী এই কুসুম সারাটি দিন কি খায় কি করে তার কোন খোঁজ খবরই তার বাবা রাখে না। সৎ মা দিনে তিন বেলা খাবারের জায়গায় কখনো দুবেলা, কখনো আবার একবেলা খাইয়ে দিনটি পার করে দিতে বলে। ভাগ্যিস অভাগী কুসুমের কপাল ভালো, তাই পাড়া-প্রতিবেশী ডেকে ডেকে কুসুমকে খাবার খাওয়ায়। কুসুম যখন স্কুলে এসে তার প্রতিদিনের জীবনযাপনের কথাগুলো আমাদের সামনে বলে তখন যেন আমরা তাকে সান্তনা দেওয়ার ভাষা খুজে পাই না। যখন কুসুমের কথা গুলো শুনে তার বাবা মার সাথে যোগাযোগ করতে যাই,তখন তারা উল্টো আমাদেরকেই বিভিন্ন ধরনের গালিগালাজ করে, আবার বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলে। তাই মন চাইলেও কারো সন্তানের দায় দায়িত্ব আমরা নিতে পারি না।
যাক এভাবেই অভাগী কুসুমের জীবন যাপন চলতে থাকে। তবে এই তো সেদিন কুসুম যখন স্কুলে আসেনি, তখন আমি এক ছাত্রীর কাছে জানতে চাইলাম, কুসুম কেন স্কুলে আসেনি। তখন সেই ছাত্রীটি জানায় কুসুমের বাবা কুসুমের সৎ মায়ের কথায় বেধড়ক মারপিট করেছে, যার কারণে কুসুমের ভীষণ জ্বর এসেছে। এই কথা শুনে আমারতো ভেতরটা একদম দুমড়ে মুচরে যাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল আমার হয়তো কিছু করার আছে। কিন্তু কি করব কুসুমের বাবা-মা তো আমাদের সহযোগিতা কখনোই চায় না, যার কারণে মন চাইলেও কুসুমকে আর দেখতে যেতে পারলাম না। শুধু অপেক্ষা করতে থাকলাম কোন দিন কুসুম সুস্থ হবে, আর কোন দিন সে স্কুলে আসবে।
ছোট্ট এই কুসুম সবেমাত্র ক্লাস থ্রিতে উঠেছে, এখনো তার সামনে অনেক অনেক কঠিন দিন অপেক্ষা করছে। কিভাবে কি হবে কুসুমের ভাগ্যে মাঝে মাঝে তাই চিন্তা করে পাই না। নিজের ওপরে খুব ধিক্কার আসে এত অসহায় মেয়েকে সামনে পেয়েও কখনো আমরা সহযোগিতা করতে পারছি না। কুসুমের কথা যখনই চিন্তা করি তখনই মনে হয় বাবা ও সৎ মায়ের কাছে অভাগী কুসুমের বন্দী জীবন যাপন পালন করতে হচ্ছে।
আর এই বন্দী জীবন যাপন থেকে কবে অভাগী কুসুম মুক্তি পাবে, কবে সুখের মুখ দেখবে এই চিন্তা মাঝে মাঝে আমাকে কুরে কুরে খায়। অভাগী কুসুমের মায়াবী মুখ দেখলে আমার মনে হয় আমার মেয়ের সাথে যদি এরকম আচরণ কেউ করত তাহলে কি আমি সহ্য করতে পারতাম। তাহলে কিভাবে একজন বাবা হয়ে ছোট্ট এই মেয়ের গায়ে হাত তুলতে পারে। ধিক্কার ওই বাবাকে যে বাবা নিজের সন্তানের দেখভাল করতে পারে না। ধিক্কার ওই বাবাকে যে মেয়ের ভালোবাসাকে প্রাধান্য দেয় না। আমার যদি কখনো সেই সময় সুযোগ আসে তাহলে আমি অবশ্যই অভাগী কুসুমের জন্য কিছু করার চেষ্টা করব।
তবে আমি খুবই ক্ষুদ্র মানুষ হয়তো বা আমার দ্বারা অভাগী কুসুমের খুব বেশি উপকার হবে না, তবে আমার দিক থেকে যতটুকু সম্ভব ততটুকুই করার চেষ্টা করব। আজ বেশ কয়েকদিন হয়ে গেল কুসুম স্কুলে আসছে না, তাই আজ ওর কথা বড্ড মনে পড়ছে। তাই কুসুমের কথাগুলো আপনাদের মাঝে বলে কিছুটা হালকা হবার চেষ্টা করছি আর কি। যাইহোক সকলের কাছে আমার প্রত্যাশা এই যে, আপনারা সকলেই ছোট্ট এই মেয়েটির জন্য অবশ্যই দোয়া করবেন।
আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।
