আ_{^{মার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।}}

Source

আজ আবারও ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আজ আমি আমার এক প্রতিবেশী বড় বোনের কথা নিয়ে হাজির হয়েছি। আমার এই বড় বোনের নাম হচ্ছে মনি। তাকে আমরা সবাই মনি আপু বলেই ডাকি। মনি আপু আমাদের থেকে খুব বেশি একটা বড় হবে তা কিন্তু নয়। এই হবে হয়তো এক থেকে দু বছরের বড়। সেই ছোটবেলায় আমরা কত যে একসাথে খেলাধুলা করেছি, তার কোন হিসেব নেই। শুধু খেলাধুলা নয় বরং মারামারি চুলোচুলি পর্যন্ত হতো। তবে সে মারামারি ক্ষণস্থায়ী ছিল, খুব বেশি একটা দীর্ঘস্থায়ী হতো না, তাই নতুন করে আবারো আমরা একসাথে খেলাধুলা করতাম।

মনি আপু দেখতে বেশ সুন্দরী। হালকা পাতলা গরণের ফর্সা ও কেশবতী কন্যা ছিল মনি আপু। ছোট থেকে মনি আপুকে দেখে এসেছি পশু পাখির উপর তার ভীষণ দরদ রয়েছে। আমরা যখন খেলাধুলা করতাম তখন সে বাসা থেকে খাবার এনে কাক কিংবা পাখিদের খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করত। ছোটবেলার সেই মুহূর্তে আমরা তাকে দেখে ভীষণ হাসাহাসি করতাম। তার এই উদার মন মানসিকতা তখন আমরা একটুও বুঝতাম না। যার কারণে তাকে নিয়ে খুব হাসাহাসি ও তামাশা করতাম। তবে এখন বড় হয়ে যখন তার সেই সব উদার মন-মানসিকতার কথাগুলো চিন্তা করি তখন খুবই অবাক হয়ে যাই।

এত অল্প বয়স থেকে কারো মনে পশু পাখির জন্য এত মায়া কিভাবে তৈরি হতে পারে। শুধু পশু পাখি বললে ভুল হবে, বরং গরিব-দুঃখীদের দুঃখে তিনি পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। এখনো সে রাস্তা দিয়ে হেটে গেলে কোন ক্ষুধার্ত পশুপাখি দেখলে তাদের খাবার কিনে ডেকে ডেকে খাওয়ায়। আজ হঠাৎ করে তার কথা আপনাদের মাঝে কেন বলছি, হয়তো মনে করতে পারেন। আজ তার সম্পর্কে আমি অনেক কিছু নতুন করে জানতে পারলাম, আর জানার পর থেকে আমার বিষয়টি মনে খুবই দাগ কেটেছে। খুব খারাপ লাগছে মনি আপুর কথা চিন্তা করে। যার কারণে তার কথাগুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে এলাম।

মনি আপুর বিয়ে হয়েছে প্রায় ১০ বছর হয়ে গেল। দশ বছর বিবাহিত জীবনে তাদের কোন সন্তান হয়নি। আর এই সন্তান না হওয়াকে কেন্দ্র করে মনি আপুর স্বামী মনি আপুকে অহেতুক অনেক কথাই শোনা তো। বিভিন্ন ডাক্তার ও কবিরাজি চিকিৎসা করেও মনি আপুর সন্তান হওয়ার কোন সম্ভাবনাই ছিল না। যার কারণে অবশেষে মনি আপুর হাজবেন্ড মনি আপুকে ১০ বছর সংসার করার পরে, তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়। মনি আপু মনের দুঃখে তার বাবার বাসায় চলে আসে। শুধুমাত্র সন্তান না হওয়ার কারণে মনি আপুকে তার সংসার ছাড়তে হলো। ১০ বছর সংসার করার পরেও কিভাবে তার হাজবেন্ড মনি আপুর মায়া ত্যাগ করতে পারলো আমার তা মাথায় আসেনা।

যাইহোক আজ সকালে মনি আপুকে দেখলাম রাস্তায় দাঁড়িয়ে পাঁচ থেকে ছয়টি কুকুরকে সে খাবার দিচ্ছে। কত যত্ন করে বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে এসে রাস্তায় কুকুরগুলোকে খাওয়াচ্ছে। কুকুরগুলো খাবার খাচ্ছে আর মনি আপু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখছে। আর সেই মুহূর্তে আমি যখন তার পাশ দিয়ে আসছিলাম, তখন মনি আপু আমাকে জিজ্ঞেস করল, কিরে কেমন আছিস। আমি বললাম বেশ ভালো আছি আপু। এই কথা বলে তখনই চলে এসেছিলাম, আর বাসায় এসে যখন আমার অর্ধাঙ্গিনীকে মনি আপুর কথা জিজ্ঞেস করলাম, শ্বশুরবাড়ি থেকে কবে এসেছে, তখন আমার অর্ধাঙ্গিনী বলল মনি আপুর ডিভোর্স হয়ে গেছে।

হঠাৎ করে আমি এই কথা শুনে, সত্যিই বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। এত ভালো একটি মানুষ, যে কিনা শুধু মানুষ নয় পশু পাখির ওপর তার খুব মহব্বত। অথচ সেই মানুষটি আজ শুধুমাত্র সন্তানের কারণে সংসার ছাড়া, স্বামী ছাড়া হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা যদি কাউকে সন্তান ধারণ করার ক্ষমতা নাই দিয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিটির কি দোষ হতে পারে তা আমার বোধগম্য হয় না। কেন শুধু শুধু মনি আপুকে সন্তান না হওয়ার জন্য কষ্ট পেতে হচ্ছে। মনি আপুর ডিভোর্সের কথা শুনে সত্যিই আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। আর তাই আমার কষ্টের কথাগুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করে নিলাম।

আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।

আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।