পৃথিবীতে মানুষ জন্মগ্রহণ করলে মৃত্যু হবে এটাই স্বাভাবিক। বরং আমরা যে বেঁচে আছি এটাই অস্বাভাবিক। তবে কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের চলে যাওয়া হৃদয়ে দাগ কেটে যায়। অর্থাৎ তাদের এই চলে যাওয়া আমরা সহজে মেনে নিতে পারিনা। তাদের স্নেহ-মায়া-মমতা লালিত পালিত হওয়ায় তাদের পরলোকগন এ আমরা আপসোস করি। যদি আরো কিছুটা সময় তারা আমাদের পাশে থাকতেন তাহলে কতই না ভালো হতো।

তেমনই একজন ছিলেন আমার নানি। ছোটবেলা থেকেই নানী আমাকে খুব ভালবাসতেন। ছোটবেলায় নানুর বাড়িতে ঘুরতে গেলেই নানি আমাদের জন্য নানা ধরনের আয়োজন করতেন।পিঠা-পুলি,বিভিন্ন ধরনের নাস্তা সহ আরো কত রকমের আয়োজন তার কোনো ইয়ত্যা নেই।আর যখন বড় হলাম তখন নানি বাড়ি গেলেই টাকা দিতেন। আরো নানান ভাবে খোঁজখবরও নিতেন। ঠিকমতো খাচ্ছি কিনা,পড়াশুনা কেমন হচ্ছে সেসব বিষয় এও জিজ্ঞাসাবাদ করতেন।আমিও আমার নানি বাড়ির লোকজনদের মধ্যে নানীকেই সবথেকে বেশি ভালবাসতাম।আমার এই প্রিয় মানুষটিকে হারালাম উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি শেষ হবার ঠিক আগে।নানি মারা যাওয়ার পরে অনেক খারাপ লেগেছিল।নানি মারা যাওয়ার পর থেকে আমার নানী বাড়ি যাওয়ার পরিমাণও কমে গিয়েছিল।কারণ সেখানে গেলেই নানির কথা খুবই মনে পড়ত এবং সেই সঙ্গে খারাপ লাগার পরিমাণও বেড়ে যেত।

দেখতে দেখতে নানীর পরলোকগমন এর তিন বছর হয়ে গেল।গত শুক্রবার আমার নানীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হলো।তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নানি বাড়িতে অনেক আত্মীয় স্বজন এসেছিল আগের দিনই।আমি আমার আম্মু এবং ছোটভাই তিনজনও গিয়েছিলাম মৃত্যুবার্ষিকীর একদিন আগেই।সব আত্মীয় স্বজনের দেখে বেশ ভালই লাগলো।সবার সঙ্গে অনেকদিন ধরে দেখা হয়না।সেই হিসেবে মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি পুনর্মিলনীর মতই ছিল।আমার চার মামা এবং বড় খালা রয়েছেন।সব মামা এবং তাদের ছেলে মেয়েরাও এসেছিলেন।মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গ্রামেরও সকল লোকজনদেরও দাওয়াত দেয়া হয়েছিল।শুক্রবার বাদ জুম্মায় সকলের জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল।লোকজন দিয়ে বাড়ি ভরে গিয়েছিল।গ্রামের লোকজনদের প্রথমে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।এরপর বাড়ির আত্মীয় স্বজনদের জন্য খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

সব মিলে দিনটি বেশ উৎসবমুখর পরিবেশে কেটে গিয়েছিল।দিনটি উৎসবমুখর পরিবেশে কাটলেও যার জন্য সব কিছুর আয়োজন তার কথা মনে হওয়ার পর কেমন যেন মনের মধ্যে অসস্তি বোধ কাজ করছিল।একটাই দোয়া আল্লাহ যেন আমার নানীকে জান্নাত নসীব করেন।