জেনারেল রাইটিং ✍️ মানুষ ও মনুষত্ব।

২১জৈষ্ঠ্য , ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আসসালামু আলাইকুম,আমি মোঃআলী, আমার ইউজার নাম @litonali।আমি বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে আমার আজকের পোস্ট শুরু করছি।

Source

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব এবং সৃষ্টিকর্তার সেরা সৃষ্টি। আর মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হওয়ার পিছনে মানুষের বিবেক এবং বুদ্ধি সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা পৃথিবীতে আরও অন্যান্য কত প্রাণী রয়েছে মানুষের থেকে অনেক বড় এবং শক্তিশালী। তারা স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হতে পারেনি কারণ তাদের বিবেক জ্ঞান বুদ্ধি নেই। মানুষের মাধ্যমেই এই সৃষ্টির বিকাশ ঘটেছে। মানুষ যখন থেকে সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে বসবাস করা শুরু করেছে তখন থেকেই অনেক ধরনের পরিবর্তন আসতে শুরু করেছেন। চিন্তা করুন আজ থেকে পাঁচশো বা ৭০০ বছর আগের কথা। ইতিহাস খুলে দেখুন তখনকার কথাগুলো পড়ুন দেখবেন এখন থেকে মনে হবে সবকিছু স্বপ্নের মত। মানুষ তো সবাই হতে পারে কিন্তু মনুষত্ব কিন্তু সবার মাঝে থাকে না। আর মানুষ তখনই সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে বসবাস করতে পারে শৃংখলার মধ্য দিয়ে যখন মানুষের মধ্যে সেই পরিমাণে মনুষত্ব থাকে। মানুষ পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে কি করতে হবে আর কোন কাজগুলো পরিত্যাগ করতে হবে এগুলো কিন্তু খুব ভালোভাবে জানে এবং সেই অনুযায়ী সামনের পথ অনুসরণ করে চলে। অথচ পৃথিবীতে আরো অন্যান্য প্রাণী রয়েছে তাদের কিন্তু এরকম কোন ধ্যান-ধারণা নাই। তাৎক্ষণিক পেট ভরে খাবার পেলেই হলো। পরবর্তীতে কি হবে এরকম কোন পরিকল্পনা তাদের থাকে না। আসলে অনেক কারণে মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব যেগুলো ব্যাখ্যা করে কখনো শেষ করা যাবে না।

মানুষ হয়ে কিন্তু আমরা সবাই জন্মগ্রহণ করেছি তবে এটাই কি আমাদের সার্থকতা?? মোটেও না যখন একজন আদর্শ ব্যক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে পারব মনুষত্ব থাকবে নিজের মধ্যে তখনই জীবনের সার্থকতা ফুটে উঠবে। এজন্য কবি বলেছেন মানুষ তো সবাই হয় কিন্তু মনুষত্ব কজনের থাকে। আর মনুষত্বহীন মানুষকে কখনোই আমি মানুষ মনে করি না। পৃথিবীতে যেহেতু জন্মগ্রহণ করেছি সেহেতু মৃত্যু অবধারিত এটাই চিরন্তন সত্য। এটা কিন্তু আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারবো না। যদি মানুষ হিসেবে পৃথিবীর বুকে চলাফেরা করতে চাই এবং এই জীবন ও মৃত্যুর পরবর্তী জীবন ভালো রাখতে চাই তাহলে অবশ্যই একজন ব্যক্তি সম্পন্ন মনুষত্ব সম্পন্ন মানুষ হতে হবে। কেননা মনুষত্বহীন ব্যক্তি পশুর থেকেও নিকৃষ্ট। মানুষ সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করতে ভালোবাসে। আর প্রত্যেকটা মানুষ কিন্তু একে অপরের পরিপূরক। কোন মানুষ কিন্তু সমাজে একা একা বসবাস করতে পারবে না। আর মুষ্টি কয়েক মানুষের জন্য কিন্তু সমাজে বসবাস কৃত সকল মানুষের উপর নেমে আসে দূর দিন। ওই যে বললাম মনুষত্ব। যাদের মধ্যে মনুষ্যত্বের অভাব রয়েছে তারাই একমাত্র সমাজের বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। মানুষের উপর অন্যায় অত্যাচার অবিচার করে জুলুম করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে। নিজেকে অনেক বড় মনে করে এবং বড় হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করে। অথচ কোন মানুষের মধ্যে যদি ১০০% মনুষত্ব থাকে তাহলে দেখবেন সবাই তাকে অনেক ভালোবাসে মনে রাখে এবং সবার মাথার তাজ মনে করে।

বর্তমান পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ ব্যক্তিত্বহীন এবং মনুষত্বহীন। তা না হলে আমরা বর্তমান সময়ে পথে বা সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে যেগুলো দেখি মানুষের উপর অন্যায় অত্যাচার জুলুম অবিচার এবং অনাহারে দিন কাটানো এর চিত্র। মানুষের মধ্যে যদি মনুষত্ব থাকবে ব্যক্তিত্ব থাকবে তাহলে সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা কেন এগিয়ে আসে না এদের দুর্দিনে। একটু ভাবুন তো ফিলিস্তিনের কথা সবসময় তোমরা দেখছি মনে মনে কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু কতটুকু আগ্রহ দেখাচ্ছে তাদের এই কষ্ট থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য। বর্তমান পৃথিবীতে তো কত শক্তিশালী রাষ্ট্র শক্তিশালী ব্যক্তি রয়েছে তারা ইচ্ছা করলে তো এই যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে ফিলিস্তিনের অসহায় মানুষকে মুক্তি দিতে পারে এই জুলুম অত্যাচার থেকে। অথচ দেখুন তারা নিজেকে এবং দেশকে বড় বলে পরিচয় দিচ্ছে। অথচ অসহায় মানুষের পাশে থাকার মত কোন মন মানসিকতাই তাদের নেই। তাহলে একজন পশুর আচরণ আর সেই মানুষটার আচরণের পার্থক্য কি হলো। আবে দেখবেন একটা পশুকে যখন কোন হিংস্র প্রাণী আক্রমণ করে সবাই সবার মতো পালানোর চেষ্টা করে নিজেকে বাঁচানোর জন্য। কারণ তাদের কোন বোধ শক্তি নেই। অথচ একজন মানুষের জ্ঞান বুদ্ধিবোধ বোঝার মত শক্তি সৃষ্টি কর্তা দিয়েছেন তাহলে তিনি সেই শক্তিকে বা বুদ্ধিকে কোন পথে ব্যয় করলেন। কোথায় গেল তার মনুষ্যত্ব। অথচ এই ব্যক্তিগুলোই জনসভা বা কোন মঞ্চে উঠলে নীতি কথাগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরে। অথচ সেই নীতি কথাগুলো বাস্তবায়ন করতে বা নীতি কথাগুলোর ফিটেফোঁটা তার মধ্যে উপলব্ধি করা যায় না। আসলে আমাদের সমাজের দিকে তাকালে এখন মনুষত্বহীন ব্যক্তিদের আধিপত্য বেশি। এর মধ্যে যা কিছু মনুষত্বপূর্ণ ব্যক্তি রয়েছে তারাও চুপচাপ রয়ে যায় দিন শেষে।

মানুষকে শুধু মানুষ হিসেবে সমাজে বালক মুখে পরিচিতি হলে চলবে না। একজন আদর্শ এবং ভালো মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে হলে অবশ্যই তার মধ্যে মনুষত্ব থাকতে হবে। মনুষ্যত্ব হলো আলো জ্ঞানের পরিধি বিকাশ বা ভালো মানুষের চিহ্ন। পুঁথিগত বিদ্যা মানুষের মধ্যে রয়েছে কিন্তু সেটা বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ধর্মীয় জ্ঞান মানুষের মধ্যে রয়েছে তবে সেটা ধর্মের মাঝেই সীমাবদ্ধ। বর্তমান পরিস্থিতিকে তাকালে বোঝা যায় সেটা। পুথিগত বিদ্যা বা ধর্মীয় জ্ঞান কতটুকুনে আমরা সমাজের বুকে আলোচন করতে পেরেছি বা আলো ছড়িয়ে দিতে পেরেছি সেটাই দেখার বিষয়। কেননা আমাদের মধ্যে তো মনুষ্যত্ব টাই নেই। আর যদি মানুষের মধ্যে সঠিক মনুষত্বটা থাকতো তাহলে আমাদের পরিবেশ বা সমাজ এত অধঃপতনের দিকে যেত না। প্রযুক্তির কল্যাণে যেমন সমাজ উন্নতি হয়েছে তেমন কিন্তু অপরাধের ধরনও বেড়ে গিয়েছে। তাই আসুন আমরা একজন মানুষ হিসেবে পরিচয় দেওয়ার আগে নিজের মধ্যে সেই মনুষ্যত্বটা গড়ে তোলে। কেননা মনুষত্বহীন ব্যক্তি সমাজের কখনোই ভালো চাইবে না। আলোর পথগুলো বন্ধ করে অন্ধকার ছড়িয়ে দেবে। আর এই ঘুনে ধরা সমাজ এবং পরিবেশকে আলোর পথে আনতে হলে অবশ্যই মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে। যাই হোক চেষ্টা করলাম আমার এই ছোট্ট জ্ঞানে মনুষ্যত্ব নিয়ে কিছু আলোচনা করার জন্য। আশা করছি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।