জীবন যুদ্ধে হার না মানা সৈনিক"বাবা"।

in আমার বাংলা ব্লগ26 days ago

২১বৈশাখ , ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আসসালামু আলাইকুম,আমি মোঃআলী, আমার ইউজার নাম @litonali।আমি বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে আমার আজকের পোস্ট শুরু করছি।


Source


আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন যে সব সময় কোন ভাবনাটা আপনার মধ্যে বেশি ভাবায়? নিশ্চয়ই রিজিক। রিজিকের ভাবনা নিয়ে কিন্তু আমরা সব সময় ব্যস্ত থাকি। ভালো থাকার জন্য কিছু অর্থ করি গোছানোর জন্য যত রকমের পরিশ্রম করার দরকার সব সময় করে থাকি। কেননা টাকাকে বলা হয় দ্বিতীয় সৃষ্টিকর্তা। হাজার টাকা আছে তার কাছে সবকিছুই আপনা আপনি ধরা দিবে। টাকা ওয়ালা ব্যক্তি খারাপ হলেও সমাজে স্বনামধন্য। আর টাকা বিহীন ব্যক্তি গুলো সব সময় অবহেলা অপমানিত এবং ভোকা অবস্থায় দিন পার করে। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থাটা এমন হয়েছে যার টাকা আছে সে গণ্যমান্য এবং ভালো ব্যক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ পাচ্ছে সমাজের বুকে। এজন্য আমরা টাকার পিছনে এতটা ছুটসি দিনরাত্রি। কোথায় গেলে আরো বেশি টাকা ইনকাম করা যাবে এবং এই টাকা নিয়ে ভালো থাকা যাবে এই ভাবনাটাই হয়তো আমাদের মধ্যে সবসময় বেশি ভাবায়। আর এই ভাবনাটা যে ব্যক্তি সবসময় বেশি ভাবে সে হচ্ছে পরিবারের দায়িত্ব যার কাঁধে। বিশেষ করে বাবা। আর আজ আমার লেখনীর মধ্যে বাবাদের কে নিয়ে কিছু লিখতে চাই।

যার কোন অভিযোগ নেই তার নাম বাবা। যার কোন অভিমান নেই তার নাম বাবা। যার নতুন পোশাক লাগেনা পরিবারের খুশিতেই খুশি তার নাম বাবা। ০ পকেটে থেকেও যে ব্যক্তি পরিবারের চাহিদা মেটাতে প্রস্তুত তার নাম বাবা। আসলে আমরা বাবাকে দেখি কিন্তু একজন বাবা হওয়া যে কতটা কঠিন এবং কত বড় দায়িত্ব এটা কি কখনো ভেবে দেখেছি। একজন বাবা হতে গেলে পুরাতন জামা কাপড় পড়তে হয় এমনকি ছেঁড়া। দুবেলা খেয়ে এক বেলা না খেয়ে পরিবারের মুখে আহার তুলে দিতে হয়। শত কষ্টে থেকেও বলতে হয় না আমি ভালো আছি। বাবা নামক এই ব্যক্তির কাছে আমরা শুধু আবদার টা করেই যাই। কিন্তু তিনি কিভাবে আবদার টা পূরণ করছেন এটা কি কখনো ভাবি। যে আবদার টা করলাম এটা পূরণ করার মত সামর্থ্য তার আছে কিনা এটা কখনো ভাবি। আসলে একটা বয়স হলে আমরা যখন এরকম দায়িত্ব পালন করবো তখন হয়তো বাবার মর্ম টা পরিপূর্ণভাবে বুঝতে পারবো। আর এই বাবা গুলো কেই আজ আমি জীবন যুদ্ধে হার না মানা বিশ্বজয় সৈনিক বলে আখ্যায়িত করেছি। আসলে তারা সবসময় যে প্রতিকূল পরিবেশের সাথে যুদ্ধ করে পরিবারের মুখে হাসি ফোটায় এটাই আসলে আমাদের জীবনের জন্য প্রকৃত যুদ্ধ। সারা বিশ্ব জুড়ে যে প্রচন্ড তাপদাহ চলছে দেখেছেন কখনো যার উপর পরিবারের দায়িত্ব রয়েছে সে আরাম করছে বাড়িতে শুয়ে। অথবা বলছে যার যার খাবারের জোগার সেই সেই করে নাও ।এতবার গরমে আমি কাজ করতে পারবো না। কখনোই বলবে না এমন কথা কেননা তাদের তো কোন অভিযোগ নেই। দিনশেষে তারা পরিবারের মুখে হাসি দেখতে চাই। তাই তো এত বড় গরমকে অপেক্ষা করে সারাদিন কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উপার্জন করা টাকা দিয়ে পরিবারের মুখে আহার তুলে দিচ্ছে।

গতকালকে ঘটে যাওয়া আমার এবং আমার বন্ধুর সাথে একটা ঘটনা আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব। শহরের মধ্যে রাস্তার পাশে বসে একটা দোকানে চা খাচ্ছিলাম দুই বন্ধু। এবং বেশ কিছু সময় ধরে লক্ষ্য করছিলাম একজন বয়স্ক রিক্সা চালকের দাঁড়িয়ে থাকা। বর্তমান সময়ে তো সবই ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক। অথচ তিনি এখনো পাঁচালী তো রিক্সা দিয়ে যাত্রী আনা নেওয়া করেন। বয়সের ভারে অনেক দুর্বল তিনি। এজন্য যাত্রী তার গাড়িতে উঠতেও চায়না। অনেক সময় ধরে দেখছিলাম যাত্রীদেরকে তিনি ডাকছেন তার রিকশায় চড়ার জন্য। অনেক সময় অনেক যাত্রীর কাছে কাকুকে মিনতি করে বলছেন অথচ কেউ কোন সারা শব্দ না দিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। তখন বেলা আনুমানিক ১২:৩০ টা বাজবে। মুখটা মলিন ঘাম ঝরছে কপাল দিয়ে। তবুও রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে যাত্রীর জন্য। বিষয়টি দেখে খুব খারাপ লাগলো। আরো কিছু সময় সেখানে বসে রইলাম। দেখলাম সে কোন যাত্রী পাচ্ছে না। তখন দুজনেই পরিকল্পনা করলাম তার জন্য কিছু একটা করতে হয়। আমরা যে তার রিক্সায় চড়ে কোথাও যাব এমন পরিকল্পনাও ছিল না। শুধুমাত্র তাকে সহায়তা করার জন্য এগিয়ে গেলাম তার দিকে।

সেখানে যাওয়ার পূর্বে আমার বন্ধু ১ লিটার পানি এবং দুটো স্যালাইন কিনে পানিতে মিশালো। সেটা নিয়ে রিক্সাওয়ালা চাচাকে দিয়ে বললাম বাস স্ট্যান্ড যাইবেন। বলল যাব। পানির বোতলটা তার কাছে দিয়ে অল্প একটু এগিয়ে গেলাম এবং একটি গাছ তলাতে দাঁড়াতে বললাম। সেখানে দাঁড়িয়ে পানিটা খাইতে বললাম। পানিটা খাওয়া হলে বললাম এখানে একটু দাঁড়ান আমাদের একটু কাজ আছে। এই বলে তার সাথে তার ব্যক্তিগত কথা জানার চেষ্টা করলাম। তার কাছ থেকে সব কথা শোনার পরে জানতে পারলাম তার একটা ছেলে একটা মেয়ে এবং বাড়িতে তার স্ত্রী। অথচ ছেলে মেয়ে দুইটাই প্রতিবন্ধী। এক শালা চাচার বয়স প্রায় 70। গায়ে শক্তি নেই তবুও পরিবারের খাবার জোগাতে তার এই কাজ প্রতিনিয়ত করতে হচ্ছে। এখন বলতে পারবেন যে এত বড় ত্যাগ এবং এত পরিশ্রম কে করতে পারে এই পৃথিবীতে বাবা বাদে। তখন বুঝতে পারলাম এরই নাম বোধহয় বাবা। বাবা হওয়াটা এতটাও সহজ নয়। প্রায় আধা ঘন্টা তার সাথে গাছতলা বসে গল্প করলাম। একসময় সে বলে ফেলল মামা আপনারা যাবেন না আপনাদের নামা দিয়ে আমাকে তো আবার অন্য ভাড়া খুঁজতে হবে। তার কথাবার্তা শুনে এতটুকুনি বুঝতে পারলাম যে এক বেলার খাবারও তার ঘরে মজুদ থাকে না।

তার সাথে অনেক সময় কথা বললাম। কথা বলার পরে আমাদের দুজনের তরফ থেকে যতটুকুনি পারলাম সহায়তা করলাম। পরক্ষণে লক্ষ্য করে দেখি দুচোখ দিয়ে পানি পড়ছে। তখন বলেই ফেলল যে আমার রিস্কায় কেউ চড়তে চায় না। বয়সের ভারে এখন আমি দুর্বল যাত্রী নিয়ে দ্রুত যেতে পারি না। এবং আমার এই দুর্বল শরীর দেখে লোকজন উঠতেও চায়না। কিন্তু আপনারা আমার জন্য যা করলেন আমি সারা জীবন মনে রাখব। হয়তো তার প্রতিদিনের খাবারের ব্যবস্থা করতে পারবো না। তবে চেষ্টা করেছি তাৎক্ষণিক তার মুখে হাসি ফোটাতে। এমন অনেক লোক আছে আমাদের সমাজে যারা আসলে অনেক পরিশ্রম করে তিন বেলার দুবেলা একবেলা খেয়ে দিন পার করছে। আমাদের উচিত এদের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া আমাদের স্বার্থ মতো। একজন বাবা হলে কতটা পরিশ্রম করতে হয় সেটাই বুঝলাম আমি এই রিক্সাওয়ালা কে দেখে। শ্রদ্ধা জানাই পৃথিবীর সকল বাবাকে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে পরিবার এবং সন্তানদের কে ভালো রাখে। যা হোক ছোট্ট একটা গল্পের মাধ্যমে বাস্তবতাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে।


ডিভাইসঃ Redmi Note 5



break .png

Banner.png

|| [আমার বাংলা ব্লগ-শুরু করো বাংলা দিয়ে]

standard_Discord_Zip.gif

>>>>>|| এখানে ক্লিক করেন ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য ||<<<<<

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Witness Banner 2.png


সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

ধন্যবাদ

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 26 days ago 

সত্যি ভাইয়া বর্তমান সময়ে টাকা ছাড়া সম্মান পাওয়া অনেক বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বাবা হল এক যোদ্ধার নাম। তিনি পরিবারের সবার জন্যই জীবন যুদ্ধে নেমে পড়েছেন। ভাইয়া আপনার লেখাগুলো পড়ে অনেক ভালো লাগলো। দারুন লিখেছেন আপনি।

 25 days ago 

বাবাকে নিয়ে লেখা কথাগুলো আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে অনেক খুশি হলাম ধন্যবাদ আপনাকে।

 26 days ago 

আসলে হার না মানা একজন সৈনিক হলো বাবা। পরিবারের বোঝা কাধে নিয়ে তিনি প্রতিনিয়ত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এই যুদ্ধে যেন হার না মানা সৈনিক হয়ে তিনি সর্বোচ্চ দিকে এগিয়ে থাকেন। আসলে এই পরিবারকে এগিয়ে নিতে বাবা নামক সৈনিক যেন প্রত্যেকটা পরিবারের বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। আর এই যোদ্ধা যদি না থাকতো তাহলে পরিবার টিকে থাকতে পারতো না।

 25 days ago 

আসলে বাবা ছাড়া একটি পরিবারের কোন কিছুই যেন গোছানো থাকে না এক কথায় পরিবারই কল্পনা করা যায় না।
বাবা হলের শেয়ার মত।
ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।

 26 days ago 

বাবারা আমাদের মাথার ওপরে ছাতার মতো। যেটা সরে গেলে হয় রোদে পুড়ব না হলে বৃষ্টিতে ভিজবো। আসলে বাবাদেরকে নিয়ে যতই লেখালেখি হোক না কেনো শেষ করা যাবে না। সবশেষে একটাই কথা ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল বাবা।

 25 days ago 

ঠিকই বলেছেন আপনি যতই লেখি না কেন আর যতই মনের ভাব প্রকাশ করার চেষ্টা করি না কেন কখনোই শেষ হবে না।
এ যেন এক বট বৃক্ষ যে প্রতিটা সময় অনেক দায়িত্ব নিয়ে পরিবারকে আগলে রাখে।
ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য।

 25 days ago 

আসলে ভাই এই পোস্টে কি মন্তব্য করব বুঝতে পারছি না তবে সার্বিক দিক দিয়ে সবসময় ভালো রাখার জন্য বাবা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যায়। বাবা সব সময় নিজের শ্রম বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে পরিবারের প্রতিটা সদস্যের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে।

 25 days ago 

আসলে এটাই ঠিক নিজের শরীরের ঘাম এবং শ্রম বিক্রি করে পরিবারকে আগলে রাখা সুখে-দুখে পরিবারের সাথে থেকে বট গাছের মতো ছায়া দেয়া ব্যক্তি হলো বাবা হাজার কখনো তুলনা হয় না।
ধন্যবাদ ভাইয়া মন্তব্য করার জন্য।

 25 days ago 

আসলে দুনিয়াটা এমন হয়ে গেছে যার টাকা আছে তার সবকিছুই আছে। একদম ঠিক বলেছেন হার নাম উনার সৈনিক হলো বাবা। যার নতুন জামা লাগে না যার মধ্যে থাকেনা ক্লান্তি। কারণ তার উপর যে অনেক বড় দায়িত্ব হয়তো আমরা একজন বাবা হবে অবশ্য আপনি হয়ে গিয়েছেন। বাবা হল বট বৃক্ষের মতো দারুন লিখেছেন

 25 days ago 

এজন্যই তো এখন একটু হলেও বুঝতে পারি বাবাদের উপর কতটা দায়িত্ব অর্পিত থাকে প্রত্যেকটা সময়।
ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য।

 24 days ago 

বাবার সাথে পৃথিবীর অন্য কোন মানুষের তুলনা হয়না।বাবা হলেন সেই মানুষ, যার কখনো নিজের জন্য কোন কিছু করে না।সে সব সময় তার সন্তানের কে খুশি করার জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করে। আপনি আজকে বাবা কে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা লিখেছেন। আপনার লেখা গুলো পড়ে আমার কাছে সত্যি অনেক ভালো লেগেছে।

 24 days ago 

একদম ঠিক বলেছেন ভাই বাবা নামক এই ব্যক্তির সাথে পৃথিবীর অন্য কোন মানুষের কখনোই কোনোভাবে তুলনা হয় না।
যার যার বাবা তার কাছে হিরো।
ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.11
JST 0.030
BTC 67546.21
ETH 3785.08
USDT 1.00
SBD 3.56