বন্ধুরা মিলে চাঁদনী রাতে পদ্মা নদী ভ্রমণ ও মাছ শিকার।

in আমার বাংলা ব্লগ16 days ago

২৬জৈষ্ঠ্য , ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আসসালামু আলাইকুম,আমি মোঃআলী, আমার ইউজার নাম @litonali।আমি বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে আমার আজকের পোস্ট শুরু করছি।



শুভ রাত্রি ❤️ সময়টা ২০১৫ সাল সবেমাত্র কলেজে উঠেছি। গ্রীষ্মের কোন এক চাঁদনী রাতে বন্ধুরা মিলে সবাই একসাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম স্কুল মাঠে। ভরপুর চাঁদনী রাত অন্যরকম একটি ভালবাসা কাজ করছিল সে সময়। গান গল্প আর আড্ডায় মেতে উঠেছিলাম আমরা সবাই। যেহেতু সবাই রাতের খাবার খেয়ে এক জায়গায় হয়েছিলাম। কারণ ঘন ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছিল। আর প্রচন্ড গরম ছিল যার কারণে ঘরে বা বাড়িতে টিকা মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল। আ তাছাড়া গ্রীষ্মের ছুটিতে সবাই সে সময় বাড়িতে ছিলাম। আর বয়সটা যেহেতু কৈশোর কাল কেমন আনন্দ-গল্প আর মজা হতে পারে হয়তো কিছুটা হলেও আপনারা অনুধাবন করতে পারছেন। তখনো হাইস্কুলের গন্ধটা গা থেকে সরেনি। সবে তো ১৪ তে এসেছি পাশ করেছি সবাই। আর আমরা তো তেমন একটা সে সময় এন্ড্রয়েড ফোনে বা কোন ধরনের নেশায় আসক্ত ছিলাম না। যার কারণে আমাদের সময়টা ইয়ার্কি আড্ডা গল্প আর গান দিয়েই চলত। কিন্তু বর্তমান সময়ের দৃশ্যপট ভিন্ন এক জায়গায় দু তিনটা বন্ধু হলেও কেউ কারো সাথে কথা নেই শুধু ফোনের দিকে নজর। এরকম অবস্থা দেখলে এখন মাঝে মাঝে আমার কাছে মনে হয় আমরাই আসলে ভালো সময় অতিবাহিত করেছি শৈশব কাল রাতে। যাই হোক অনেক রাত পর্যন্ত আমরা বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম হঠাৎ করে আমার এক বন্ধু বলে উঠলো চল সবাই মিলে পদ্মাতে মাছ শিকার করতে চাই। আর কে ঠেকায় যে কথা সেই কাজ। মাছ ধরার যন্ত্র হিসেবে নিয়েছিলাম কেউ জাল তুর্কুশ বা খোঁচা এবং টস লাইট। যেহেতু আমাদের বাড়ি থেকে পদ্মা নদী বেশি একটা দূরে না। আর যেহেতু সাত আট জন বন্ধু একসাথে ছিলাম ভয়ের কোন কারণ ছিল না। আর পদ্মা নদী তো আমাদের অনেক পরিচিত প্রায় সবসময়ই এই পদ্মা নদীর পাশেই আমরা ভালো সময় অতিবাহিত করতাম বিশেষ করে বিকেল থেকে নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত। কিন্তু হঠাৎ করে সবাই একসাথে পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে যাব তখনই খুব ভালো লাগছিল। আর সেই কথাগুলো এখন মনে আসতেই মনটা যেন কিরকম উতলা হয়ে যাচ্ছে। সবাই সবার মত ব্যস্ত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছি বাংলাদেশের এক এক জেলাতে। বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া সবার সাথে দেখা হয় না। কিন্তু পুরাতন যে স্মৃতিগুলো রয়েছে এখনো কিন্তু অন্তরে দোলা দিয়ে যায়। কিছু কিছু সময় কিছু কিছু কথা স্মৃতি মনে হলে চোখের কোনায় জল জমা হয়ে আসে।

যাইহোক এবার আমরা মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে রওনা হলাম। আমাদের বাড়ি থেকে অল্প একটু যেতেই ছোট্ট একটি নদীর রয়েছে এটা পদ্মার শাখা। সবসময়ই ঘাটে অনেক নৌকা বাঁধা থাকতো। এই ছোট নদীটা পার হয়ে কিছু সময় হাঁটার পরে আমরা মেন পদ্মা নদীতে চলে গেলাম। এই সময় নদীতে পানি কম থাকে হালকা স্রোত থাকে কিন্তু ঢেউ থাকে না। এবং এই সময় বিভিন্ন জায়গায় অনেক বড় বালির চর পড়ে যায়। আর যেহেতু অনেক গরম ছিল আর নদীর পাড়ে খুব সুন্দর বাতাস ছিল আমরা অন্যরকম একটি অনুভূতি পাচ্ছিলাম। প্রথমে আমরা পদ্মার পাড়ে গিয়ে একটি নৌকা নিলাম এবং সেটি বাইতে থাকলাম পদ্মা দিয়ে। বুঝতে পারছেন চাঁদনী রাত ফাকা প্রান্তর আর পদ্মা নদীর পাড় কতটা আনন্দ এবং মজাদায়ক ছিল। আমরা সবাই তো মন খুলে যে যার মত গান গাইতে শুরু করলাম এমন ফাঁকা প্রান্তর আর এমন পরিবেশ এ যেন অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করছিল। আমরা বেশ কিছু সময় মাছ শিকার করা যন্ত্র গুলো দিয়ে মাছ ধরতে চেষ্টা করলাম। বেশ কিছু মাছ পেলাম। তবে নদীর পাড়ে গিয়ে আমাদের কাছে মনে হচ্ছিল মাছ ধরার চেয়ে সবাই মিলে এক জায়গায় বসে যদি আড্ডায় মেতে উঠি তাহলে আমাদের সময়টা আরো ভালো পার হবে। এরই মধ্যে কিন্তু মাঝরাত পার হয়ে গিয়েছে আমরা পদ্মা নদীর কাছ থেকেই বারবার দেখতে পাচ্ছি বিদ্যুৎ একবার আসছে এবং আরেকবার চলে যাচ্ছে। আর আমরা যে জায়গাটাতে ছিলাম সেখানে অনেক সুন্দর বাতাস পরিবেশও অনেক ভাল ছিল আর চাঁদনী রাত মনে হচ্ছিল যেন দিনের মতো। অনেক রাত হলেও কিন্তু আমরা কোনভাবেই ভয় পাচ্ছিলাম না কেননা সাত আট জন একসাথে থাকলে ভয়ের কোন বালাই আসতে পারবে না। আর বাড়ি গিয়ে কি হবে বিদ্যুৎ যেহেতু খেলা করছে করতে থাক।


আমরা কিছু সময় বসে আড্ডা দেওয়ার পরে আবার মাছ শিকার করতে চলে গেলাম। যেহেতু হালকা স্রোত ছিল অনেক জায়গাতেই মাছ ধরা ফাঁদ পাতা ছিল নদীর পাড়ে। আমার একটা বন্ধু আছে নাম বলছি না অনেকেই হয়তো চিনবে। সে খুব দুষ্টু। সে হঠাৎ করে মাছ শিকার করা কিছু যন্ত্র তুল্য এবং ভিতরে অনেক বড় বড় চিংড়ি এবং বেলে মাছ ছিল। আমরা না চাইলেও সে সেই মাছগুলো আমাদের ঝুরিতে ভরে নিল। আসলে এই কৈশোর বয়সে বুদ্ধি যখন যেটা মাথায় আসে সেটাই যেন করতে মন চায়। কিছু সময় মাছ শিকার করার পরে প্রায় চিংড়ি এবং বেলে মাছ দিয়ে এক কেজি মত পেয়েছিলাম। তবে সবগুলো মাছি তরতাজা অনেক ভালো বড় বড় ছিল। আর রাতের বেলায় পদ্মা নদীতে মাছ শিকার করার মজাই অন্যরকম অনেকবারই করেছি। মাছগুলো তীরে এসে শস্য পানিতে বালির উপরে গা ভাসা দিয়ে থাকে। আর খুব সহজেই খোঁচা বা জাল দিয়ে এই মাছগুলো শিকার করা যায়। যেহেতু পানি অনেক পরিষ্কার থাকে এজন্য মাছ শিকার করা খুবই সহজ হয়ে যায়।

আমার বন্ধুর জাহিদ কে হয়তো আমার বাংলা ব্লগের অনেকেই চেনে আমাদের এলাকার। সে খুব ভালো লালনগীতি পল্লীগীতি এবং ফোক গান গাইতে পারে। এখনো সে অনেক ভালো গান গায়। মূলত তার কারণেই আমাদের আড্ডাটা জমে উঠতো। মাঝরাতের পরে আমরা এক পর্যায়ে নদীর পাড়ে বসে গেলাম এবং গানে মেতে উঠলাম। বন্ধু জাহিদ একে একে অনেকগুলা গান গাইলো সেই সাথে আমরা মাঝে মাঝে তার সাথে তাল মিলাতে থাকলাম। আসলে এই স্মৃতি এবং এই কথাগুলো এখন বলছি খুবই কষ্ট হচ্ছে বলতে। কেননা কথাগুলো মনে উঠতেই বারবার ইচ্ছে করছে আবার যদি সেই কৈশোর সময়টা ফেরত পেতাম। সেই সাথে বন্ধুগুলো থাকতো তাহলে আরো ভালো করে মজা করে আসতাম। যদিও এখনো ছুটিতে সবাই বাড়ি আসলে আমরা আবার সেই কৈশোরের ন্যায় পদ্মা নদীর পাড়ে গিয়ে ভালো সময় অতিবাহিত করি। এই যে সবাই মিলে একসাথে নদীর পাড়ে আড্ডা দেয়া নদীতে মাছ শিকার করা বা নদীর পারে পিকনিক করা নদীর পাড়ে আড্ডা গানে মেতে ওঠা আসলে সময়টা অসাধারণ কেটেছে আমাদের। চাঁদনী রাতে এরকম সময় বারবার ফিরে পেতে মন চায় নদীর পাড়ে বন্ধুদের সাথে। যাইহোক আমরা প্রায় শেষ রাত পর্যন্ত নদীর পাড়ে ছিলাম। এক কথায় যত সময় চন্দ্রের আলো পরিপূর্ণ ছিল অন্ধকার হয়েছিল না তত সময় পর্যন্ত আমরা সবাই মিলে নদীর পাড়ে বসে আড্ডায় মেতে উঠেছিলাম। যাইহোক যতই চেষ্টা করি হয়তো সেই সময়টা আর সেই বন্ধুগুলো আর কখনোই একত্রে এই নদীর পাড়ে বসে আড্ডা মজাতে পারবো না। কেউবা আমাদের মাঝখান থেকে চিরতরে বিয়োগ হয়ে গিয়েছে আবার কেউবা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে বছরে ১-২ বার দেখা হয় হয় না। তবে সময়টাতে খুব ভালো ছিল এখন সেটা পড়তে পড়তে বুঝতে পারি। যাইহোক এরই মধ্যে দিয়ে আমার আজকে পদ্মা নদীর পাড় ভ্রমণ এবং চাঁদনী রাতে মাছ শিকারের গল্প শেষ করছি আশা করছি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।


ডিভাইসঃ Redmi Note 5



break .png

Banner.png

|| [আমার বাংলা ব্লগ-শুরু করো বাংলা দিয়ে]

standard_Discord_Zip.gif

>>>>>|| এখানে ক্লিক করেন ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য ||<<<<<

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Witness Banner 2.png


সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

ধন্যবাদ

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 16 days ago 

অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার পোস্টের লেখাগুলো পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। আসলে এরকম জোসনাময় চাঁদনী রাতে বন্ধুদের সাথে ভ্রমন করা আর মাছ শিকারের মধ্যে রয়েছে যে পরিমাণ আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব হয় সেটা হয়তো অন্য কোন কিছুতে পাওয়া সম্ভব নয়।

 15 days ago 

খুব মধুর একটি সময় আপনারা অতিবাহিত করেছিলেন নদীর পাড়ে। সেই সুন্দর স্মৃতি আপনি আজকে আমাদের সাথে শেয়ার করলেন। একসাথে সাতজন মিলে আড্ডা দেওয়া চাঁদনী রাতে। সেই সাথে আবার নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া। একসাথে গল্প গুজব করা অনেক আনন্দের কিছু সময় অতিবাহিত করেছিলেন। সত্যি অ্যান্ড্রয়েড ফোন না থাকলেও সেই সময় গুলো অনেক ভালো কাটতো। সে সময় গুলো অনেক বেশি মধুর ছিল। যেহেতু এখন মোবাইলে সময় দেওয়া হয়। তখন তো মোবাইলে সময় দেওয়া হতো না বন্ধুদের সাথে বেশ ভালো সময় কাটানোর সুযোগ ছিল।

 15 days ago 

বন্ধুদের সাথে রাতে আড্ডা দেওয়া এবং সেই সাথে মাছ শিকার করার অসাধারণ একটি স্মৃতি আপনি শেয়ার করেছেন ভাইয়া।কিছু কিছু বিষয় আমাদের জীবনে স্মৃতি হয়েই থেকে যায় বন্ধুদের স্মৃতি গুলো আদলেই সারাজীবন মনে থাকে।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.12
JST 0.029
BTC 61696.14
ETH 3401.11
USDT 1.00
SBD 2.52