একজন মায়াবতী || 10% beneficiaries @shy-fox

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

pexels-cottonbro-5494180.jpg
image source

হঠাৎ চোখ খুলে দেখি ঘরটাতে আবছা অন্ধকার। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি সে হিসাব নেই। অভ্যাসবশত ডান পাশের দেওয়ালে তাকালাম, কিন্তু দেওয়াল ঘড়ির জায়গাটা আজও শুন্য পড়ে আছে। হাত বাড়িয়ে পাশ থেকে যে সেল ফোনটা নিব সেই শক্তিও সঞ্চিত হয়নি। এখনো আড়ষ্টতা যায়নি।

সেইভাবে শুয়ে থাকতে থাকতে আবার যে কখন আধোঘুমে তলিয়ে গিয়েছি টেরই পাইনি। হঠাৎ মনে হলে দূর থেকে একজন মানবীর গলা ভেসে আসছে। কি মায়া মেশানো সেই স্বর! স্বপ্ন নাকি বাস্তব সেই জ্ঞান তখন আমার নেই। শুধু বুঝতে পারছিলাম এই গলার স্বর আমার অতি চেনা এবং এই মানবীকে আমি খুব ভালবাসি। স্বভাবতই একটা সুখানুভূতি আমাকে ছুয়ে যাওয়া উচিৎ। কিন্তু কি কারণে জানিনা সেই আধোঘুমেই কষ্টে বুক ভেংগে যাচ্ছিল।

সেই অবস্থায় আর ঘুমানো অসম্ভব। ঘুম কেটে যেতেই সব পরিষ্কার হয়ে গেল। আর মাত্র ৪০ ঘন্টা। তারপরই এই মানবী ও তার সংসার ছেড়ে অসীম সংখ্যক দিন আমাকে অন্যত্র থাকতে হবে; সম্পূর্ণ একা। এছাড়া মানব-মানবীর চাঁদের হাটও আর ৪০ ঘন্টা পর মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাবে। সন্ধ্যার সময় আবছা অন্ধকারে একা একটা ঘরে শুয়ে থাকার সময় রাজ্যের হতাশা ও হাহাকার শক্ত জাল হয়ে আমাকে পেচিয়ে অতলে তলিয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু আমি দুর্বল, তাই সেই জাল ছিন্ন করে মানব, মানবী ও তাদের সুখের পরিবারের সাথে মিশে যেতে পারিনি। আসলে কখনোই পারিনা।

২৩ দিন কিভাবে কেটে গেল জানিনা। এখনো পেছন ফিরে তাকালে মনে হয় ওই তো সেদিন বাড়ি গেলাম। সেদিনই তো অনেক দিন পর প্রথম বারের মত আম্মুর হাতে রান্না খেলাম। এরপর কি হল জানিনা। হুট করে দেখি ছুটির দিন শেষ।

যেদিন চলে আসব তার আগে কত আয়োজন। সেই আয়োজন করতে গিয়ে সেই মায়াবতী আমাকে সময় দিতে পারেনা। আমি তাদের এটা বোঝাতে পারিনা এত আয়োজন আবশ্যক নয়। অবশ্য বোঝানোর চেষ্টা কি কখনো করেছি? নাহ করিনি। কিছু জিনিসে মুখ ফুটে বাধা দিতে ইচ্ছা করেনা। কারণ জানি ওই করেই তারা সন্তুষ্ট হবে। সন্তানকে সব দিতে পারার মধ্যে তাদের সুখ৷

ধীরে ধীরে সময় ফুরিয়ে আসে আর মনে হয় আমি বুঝি সবার পর হয়ে যাচ্ছি। তখন থেকেই দূরে থাকি, সবার থেকে দূরে, লোকচক্ষুর অন্তরালে। কিন্তু আজ যখন শত ক্রোশ দূরে একদম একা একটা ঘরে আছি, তখন বারবার সেই মায়াবতীর কথা মনে পরছে। আমি জানি তারও আমার কথা মনে পরছে। কিন্তু দুজনে সেই কথাটা সংগোপন করে চলেছি।

Location

Sort:  
 2 years ago 

সন্তানকে সব দিতে পারার মধ্যে তাদের সুখ৷

কত সুন্দর একটা লাইন অথচ এর অর্থ বোঝার মত মানুষ খুব কম আছে। আনন্দের দিনগুলো আসলে এভাবেই দ্রুত ফুরিয়ে যায়। কথায় আছে না, যেতে নাহি দিতে চাই তবু যেতে দিতে হয়। পৃথিবীতে মায়ের ভালোবাসার সঙ্গে কোন কিছুর তুলনা চলেনা। অসাধারণ লিখেন আপনি। এভাবেই চালিয়ে যান।

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া লিখাটার গুরু অর্থ বোঝার জন্য। আর সত্যিই মায়ের ভালবাসা অতুলনীয় আর নিখাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 57298.55
ETH 3059.61
USDT 1.00
SBD 2.29