আমি ও আমার জীবন || 10% beneficiary @shy-fox
তখন আমার মাত্র জন্ম হল। বাবা মায়ের প্রথম সন্তান আর পরিবারের মধ্যেও প্রথম হবার কারণে আমার আদরের অন্ত ছিলনা। পরিবারের লোকজন তো বটেই, আত্মীয়তার মাত্রা শূন্যে থাকার কারণে আমার সদ্য হওয়া পরিবার যাদের ভুলতে বসেছিল, তারাও এসে আদরের কয়েক পশলা নমুনা দেখিয়ে যেতে লাগলো।
দিনও পেরিয়ে যেতে লাগলো সেই সাথে। এক সপ্তাহ, এক মাস, এক বছর...এভাবে আদর পেয়ে পেয়ে বয়স যখন ৩ এর কোঠায়, তখন শুরু হল আমার অন্য জীবন। সেই জীবনে খেলার পাশাপাশি আর একটা কর্ম যোগ হল। লেখাপড়া।
বাবা মায়ের কল্যাণে এই কঠিন কর্মটাও আমার খেলার দলে জায়গা পেল। ধীরে ধীরে এর লঘুত্বের চাকা ঘুরে গেল। শূন্য থেকে মহাবিশ্ব হবার মত লেখাপড়াও আমার জীবনে শূন্য হয়ে ঢুকে জীবনের পুরোটা ছেয়ে নিল। তবে এর মাহাত্ম্য আর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি হতে হতে আরো কয়েক বছর লেগে গেল। শেষমেষ যখন উপলব্ধ হলাম, তখন সদ্য উপলব্ধি করতে পারা এই আমি আমাদের দেশের অধিকাংশ সাধারণ ছেলেমেয়ের মতই ডাক্তার হতে চাইলাম। কয়েক বছর এই পেশার উপর কচ্ছপের কামড় দিয়ে রইলাম, যাই হোক না কেন আমি একজন ভবিষ্যৎ ডাক্তার!
ধীরে ধীরে চোখের আবরণ সরে গেল। ডাক্তার ছাড়াও যে আরো ভাল কোন কিছু হওয়া যায়, সেটা যেদিন জানলাম, তার কিছুদিনের মধ্যেই নিজের মধ্যে থাকা এত দিনের লালিত স্বপ্ন ছুড়ে ফেলে দিলাম, আঁকড়ে ধরলাম নতুনত্বকে। কিন্তু আগের মত আর কচ্ছপের কামড় দিতে পারলাম না। প্রতিনিয়ত নতুন পৃথিবী দেখছিলাম, আর সেই সাথে পরিবর্তন হচ্ছিলাম ভবিষ্যৎ আমি।
অনেক ক্ষেত্র পার করে শেষমেষ ঝোকের বসেই একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। ভবিষ্যৎ আমিকে অনেক পেশায় রেখে দেখেছি, কিন্তু কখনোই প্রকৌশলী হবার কথা চিন্তা করিনি। এর প্রধান কারণ ছিল গণিত-ভীতি। তবু শেষ পর্যন্ত ভাগ্য আমাকে সেখানেই দাঁড় করালো।
অনেক যুদ্ধ করে পাতার পর পাতা ক্যাল্কুলাস করে গিয়েছি শুধু প্রকৌশলী হবার নেশায়। সেক্টর নিয়ে বিস্তর পড়াশুনা করেছি, আমার জন্য সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য সেক্টর খুঁজে বের করেছি, আর শেষমেষ দক্ষতাও যখন ফুলে ফেঁপে উঠছিল, তখন জীবনের আরো একটা অন্ধকার বাক সামনে এসে হাজির হল। সেই বাক গুছিয়ে নিয়ে আসা জীবনকে আরো একবার ঢেলে সাজানোর অনুরোধ করল। আর এমন পক্ষ থেকে সেই অনুরোধ এলো যাদের কখনোই উপেক্ষা করা যায়না; অন্তত আমি করতে পারিনা।
অগত্যা অন্য কূল পাবার আশায় আমি আমার অনুকূলকে পরিত্যাগ করলাম। উঠে চড়লাম এক দাঁড়হীন নৌকায়। নদীটায় শান্ত স্রোত ছিল, নৌকাও সেই সাথে চলছিল। কিন্তু সময় যত যেতে লাগলো আকাশ কালো হয়ে এল, মিশ্র স্রোত শুরু হল আর আমি সহ দাঁড়হীন নৌকা প্রবল ঝড়ের মধ্যে পড়লাম...
এই ঝড়ের শেষ কোথায় জানিনা। আর কত দূর গেলে অন্য পাড় পাব সেটাও জানিনা। শুধু ভয় লালন করছি, যদি শূন্য সমুদ্রে পড়ে যাই!
ডিভাইসঃ রিয়েল মি ৮ ৫জি
আপু আপনি কোন বিষয়ে লেখাপড়া করছেন খুব জানতে ইচ্ছে করছে। কমিউনিটিতে অনেক দিন পর এত সুন্দর একটি পোস্ট পেলাম। লেখার ভাষাটা আমার কাছে এতো ভালো লেগেছে মনে হচ্ছিল কোন অভিজ্ঞ সাহিত্যিকের লেখা। আপনার এতোটুকুন পোস্ট পড়ে আমি অনুভব করলাম লেখালেখিতে আপনার সহজাত প্রতিভা আছে। দয়াকরে চর্চাটি চালিয়ে যাবেন। আর প্রার্থনা করি ঝড় থেমে গিয়ে আপনি যেন খুব তাড়াতাড়ি তীরে পৌঁছে যান।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। এমন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা পাব ভাবিনি। তবে আমিও প্রার্থনা করছি যেন ঝড় থেমে যায়, ভুল হয়েছিল দাড় হাতে না নিয়ে কূল ছাড়াতে, এখন সেটা ঠিক করার চেষ্টায় আছি। আর আমি বর্তমানে আই আই টি তে পড়ছি।
অনেক সুন্দর একটি পোষ্ট লিখেছেন পড়ে অনেক ভালো লাগলো আপনার গল্পটি দোয়া করি আপনি শূন্য সমুদ্রে না পরেন। সামনের দিনগুলোর জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল
আপু আপনার জীবনের কিছু কিছু সময় বেশ চমৎকার ভাবে আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন আপনি আজকে। আপনার লেখাগুলো যখন পড়েছিলাম মনে হচ্ছে অনেকটা সাহিত্যিক কিছু পড়ছি। জীবন যাত্রায় অনেক চড়াই-উতরাই রয়েছে তবে এই ব্যাপারে হতাশ হওয়া যাবে না। শক্ত করে হাল ধরতে হবে। আপনার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ সফল হোক। শুভকামনা আপনার জন্য আপু।