আমার ভ্যালেন্টাইন্স ডে || 10% beneficiary @shy-fox

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
হ্যালো বন্ধুরা! আসসালামু আলাইকুম। সবাইকে বসন্ত ও ভ্যালেন্টাইন্স ডে-এর বাসি শুভেচ্ছা। কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভালো আছেন। আমিও ভাল আছি।

সবারই তো ১৪ ই ফেব্রুয়ারী নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা থাকে। কেউ ভ্যালেন্টাইন্স ডে আবার কেউ ফাগুন বরণ করে। তবে বেশির ভাগই দুইটাই করে। তাই ১৪ ই ফেব্রুয়ারী নিয়ে আমারও জল্পনা কল্পনার অন্ত ছিলনা। ভ্যালেন্টাইন্স ডে যত তত আমার ফাগুন বরণ করতেই বেশি উৎসাহ।

14.jpg
the image is prepared in canva by me

কিন্তু ভাগ্য বরাবরের মত এবারো আমার সাথে ছিলনা । তাই শত পরিকল্পনা সত্ত্বেও কিছুই হলনা। সকালে ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথে মনে হল আজকে লাইব্রেরি যেতে হবে, সাথে আপুর বিশাল একটা পারসেল আনতে হবে। উঠে খেয়ে রেডি হয়ে বের হলাম। ভাগ্য ভাল যে যেতে আসতে দুইবারই রিকশা পেয়েছি।

হলে এসে দুপুরে খেয়ে রেস্ট নিচ্ছি, তখন এক বান্ধবি আসল। আমার শাড়ির কালেকশন দেখতে চাইল। আমি ৩ বছর আগে যে বসন্তের শাড়ি ঠিক করে রেখেছি পড়ব বলে, সে সেটাই নিল। সত্যি বলতে কষ্টই লাগছিল যদিও এই দিন আমার শাড়ি পড়া এমনিতেও হবে না। শেষে আমারই তাকে সেটা পড়িয়ে দিতে হল 😒 (ওকে অনেক বার বলে দিয়েছি যেন শাড়ির মারও না ভাংগে।)

এরপর আমার ক্লোজ আর একটা বান্ধবীর সাথে অনেক সময় কথা বললাম। শাড়ি পরলে দুজন একসাথে পড়ি। কিন্তু দুইজনেরই পরীক্ষা। তাই শত ইচ্ছা থাকলেও কেউ আর পরার জন্য মনস্থির করতে পারলাম না। এরপর বসে বসে আমার বাংলা ব্লগে এই আরটিকেল লিখা শুরু করলাম। আজ ১৮ তারিখ, ৫ দিন যাবত সেই আরটিকেলটাই লিখছি। কিন্তু এখনো শেষ করতে পারলাম না! কারণটা বলছি...

সেদিন প্রায় বিকাল হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ আমার ২য় বান্ধবী মেসেজ দিল "চল শাড়ি পরি!"

তারপর সম্মতি জানিয়ে স্টোরে গিয়ে পিন কিনে আনলাম। সব শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। (আমার পছন্দের শাড়িটা পরতে পারলাম না বলে কত শত বার যে আফসোস করেছি...) যে শাড়িটা পরেছি সেটা বসন্তে তেমন যায়না। তাই কিছু ব্যতিক্রমী ধাচ আনতে শাড়ির সাথে মানান রেখে নব্বই দশকের একটা লুক করেছিলাম। এরপর আমাদের সবার কাংখিত সেই গোল্ডেন শাওয়ারের সাথে ছবি তুললাম।

IMG_20220216_020404.jpg

এখানে ছবি তুলতে তুলতে ৭টার মত বাজলো। এরপর হলের বাইরে ঘুরতে বের হলাম। প্রথমেই টারজানে গিয়ে ফুচকা, চটপটি খেলাম। মামার দোকানে অনেক ভিড় ছিল, তাই ওখান থেকে বের হতে হতে ৮ঃ১৫ টা বেজে গেল।

IMG20220214193022.jpg

ক্যাফেতে খুব সুন্দর গান বাজছিল। পরে গান শুনতে শুনতে ধীরে ধীরে দুইজন সেদিকে যাচ্ছিলাম। সোজা পথে না গিয়ে আমরা সেন্ট্রাল ফিল্ডের ভেতর দিয়ে হেটে আগাচ্ছিলাম। তখন সেখানে ঘোর অন্ধকার। শুধু মাঝে মাঝে কারো মোটর সাইকেলের সম্মুখ বাতি কিছুক্ষণের জন্য সেই অন্ধকার চিরে দিচ্ছিল।

সেন্ট্রাল ফিল্ডে হাটতে হাটতে ক্যাফের গান

গান শুনতে শুনতে আমরা মুক্তমঞ্চে গেলাম। উপর থেকে সিড়ি ভেংগে নিচে নামলাম অন্ধকারের মধ্যে। এদিক সেদিকে কয়েকজন বসেও ছিল। হঠাৎ এক যুগল উঠে সেন্ট্রাল ফিল্ডের দিকে যাচ্ছিল। আমি ছবি তোলার সুন্দর একটা জিনিস পেয়ে তুলেও ফেললাম। অনুমতি না নিয়ে ছবি তোলার জন্য অবশ্য একটু খারাপ লেগেছিল।

IMG20220214200855.jpg

এরপর ছাতার ছাউনির নিচে বসলাম, বাদাম খেলাম আর ক্যাফের গান শুনলাম। সময়টা খুব দারুণ কেটেছে। এরপর আমাদের মনে হল, "আরে টিএসসির ছাদে কেন যাচ্ছিনা!" ক্যাফের পাঠ চুকিয়ে তখন আমরা টিএসসি চলে গেলাম। ছাদে ঘোরাঘুরি করলাম, ছবি তুললাম।

IMG20220214204449.jpg

IMG20220214205908.jpg

এই করতে করতে ৯ঃ১৫ টা বেজে গেল। হলে গিয়ে আর খাবার পেতাম না তাই দুজন বটতলার দিকে হাটা দিলাম। উঁচু বটে খাব নাকি নিচু বটে খাব সেটা নিয়ে কিছু সময় চিন্তার আর আলোচনার ঝড় চলল। পরে উঁচু বটের একটা দোকানেই ঢুকলাম। খেয়ে বের হতে হতে ১০ঃ২০টা। সাথে রিকশা নেই, তাই আবার হাটা ধরলাম হলের দিকে।

ট্রান্সপোর্ট হয়ে হলে যাব। এদিকে যেতে যেতেই শুনলাম ছবি চত্বর ছাড়াও আরো কোথাও গানের আসর বসেছে। গেজ করেছিলাম ট্রান্সপোর্টই হবে।

আমার খালি পায়ে রাস্তায় হাটার খুব শখ! কিন্তু এর আগে সম্ভব হয়নি। যাই হোক এবার আমায় থামায় কে? জুতোজোড়া খুলে হাতে নিয়ে হাটা শুরু করলাম। রাস্তার পিচের সাথে ধুলোগুলোও খুব ঠান্ডা ছিল। কিন্তু আমি থোড়াই কেয়ার করলাম।

IMG_20220218_155703.jpg

এরপরে আমি হেটেছি কম। বলতে গেলে মনের খুশিতে লাফিয়ে লাফিয়ে চলেছি। এর সাথে ট্রান্সপোর্ট থেকে ভেসে আসছিল "চাঁদমামা আজ বড্ড একা, বড় হয়েছি আমি" গানটা। রেজিস্ট্রার থেকে ট্রান্সপোর্ট যেতে আর সময় লাগল না বেশি। কাছাকাছি এসেই অনেক সময় পর মানুষের ভিড় চোখে পড়লো ।

IMG20220214214932.jpg

ওই তো গানের আসর! জলদি জলদি চলে গেলাম সেখানে।

IMG20220214215010.jpg

IMG20220214215101.jpg

আহা! কি সুন্দর যে এইসব মুহুর্ত। কিন্তু বেশি সময় থাকতে পারলাম না। তখন প্রায় ১০ঃ৫০ এর মত বাজে, আম্মুর সাথে ভালভাবে কথা বলতে পারিনি বাইরে থাকার জন্য। তাই একটু তাড়া ছিল। তবু হলে যেতে যেতে ১১ঃ১৫ বেজে গেল।

IMG20220214220244.jpg

এই যে সামনে আমার গুণধর(!) বান্ধবী আমাকে রেখেই হলে ঢুকতে চাচ্ছে। 😏

পহেলা ফাল্গুন আমার জন্য প্রতিবারের মত খুব সাধারণ আর সাদামাটাভাবে শুরু হলেও শেষটা খুব সুন্দর ছিল। বিকাল থেকে অনেকের জন্য গভীর রাত পর্যন্ত অনেক ঘুরেছি, খেয়েছি, ছবি তুলেছি। সব মিলিয়ে একটা পারফেক্ট দিন ছিল।

এক্সাম আর কিছু উটকো ঝামেলার জন্য পোস্ট লিখতে ও স্টিমিটে সময় দিতে পারিনি। ঝামেলাটা এখনো যায়নি, তবে আশা করি আজ রাতেই পরিত্রাণ পাবো।

ডিভাইসঃ রিয়েল মি ৮ ৫জি
লোকেশনঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Sort:  
 2 years ago 

আপনার পোস্ট পরে ভালো লাগলো।আসলেই হলে থাকার মজাই আলাদা।ইচ্ছে উপর তেমন কোন রেস্ট্রিকশন থাকে না।তাছাড়া সন্ধ্যা বেলার ঘোরাঘুরি আমার কাছে অনেক ভালো লাগে।যাই হোক জীবনে চলার পথে যে কোন পরীক্ষা তো থাকবেই। তাই বলে কি মজা করার সুন্দর সুন্দর দিনগুলো ছেড়ে দিতে হবে? যাই হোক ভালো লাগলো।ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 
 2 years ago 

আপনার ভ্যালেন্টাইন্স ডে কাটানো মুহূর্তগুলো পড়লাম। নিজের পছন্দের শাড়িটা বান্ধবীকে পরিয়ে দিলেন। ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই মজা লাগলো যদিও দুঃখজনক। শাড়ি পরবেন না বলেও ঠিক শাড়ি পরেছেন পরে। কিন্তু তারা নিজের পছন্দের শাড়ি ছিলনা। কিন্তু যাই হোক শেষমেষ অনেক আনন্দ করলেন দেখলাম। পরীক্ষার কারণে আমরা অনেক সময় অনেক আনন্দ থেকে বিরত থাকি। আপনার পুরো মুহূর্তটা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

হঠাৎ করে কোন কাজ করলে সেটা আনন্দ অনেক থাকে। এভাবে আমরা বন্ধুরা মিলে অনেক সময় হঠাৎ করে কোনো কাজ করি। অনেক ভালো লাগলো আপনার পোস্টটি পড়ে। আর আপনি অনেক আনন্দ করেছেন ভ্যালেন্টাইন্স ডে উপলক্ষে। আর আমার কপাল সেদিন সারাদিন ঘরে শুয়ে ছিলাম। 14 ই ফেব্রুয়ারি চলে গেছে আমি টেরই পাইনি। ধন্যবাদ আপনাকে আপু আনন্দময় মুহূর্ত গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

ভালোই লাগছে শাড়িতে আপনাকে । ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মুহূর্ত আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্য।

 2 years ago 

আপনার পোস্টটি পড়ে মনে হচ্ছে দুর্দান্ত একটি দিন কাটিয়েছেন আপনি। ভ্যালেন্টাইন্স ডে এবং ফাল্গুন আমাদের ঠেকায় কে তাইতো আমরা ঐ দিনটা অনেক আনন্দ উল্লাসে উদযাপন করে থাকি। কিন্তু আপনার বাসি শুভেচ্ছা নিবো না। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মুহূর্তগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। শুভেচ্ছা রইলো।

 2 years ago 
আপু ভালোবাসা দিবসের বিশেষ এই দিনে খুব সুন্দর একটি জায়গায় সময় কাটিয়েছেন। আর এরকম একটি দিনে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ একদম পারফেক্ট। আপনার ফটোগ্রাফি গুলো চমৎকার হয়েছে। শুভ হোক আপনার আগামীর পথচলা এই কামনা করি।
 2 years ago 

বাহ আপনার তো তাহলে দিনটা বেশ ভালোই কেটেছিল। বিশেষ করে শেষ বেলায় দিনটা বেশ উপভোগ করেছেন। তবে আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একদম বিপরীত। আমি সারাদিন ঘুমিয়ে পার করে দিলাম উফ্ ভাবতেই কেমন যেন লাগছে। আপনার অনুভূতি গুলো জানতে পেরে অনেক ভালো লাগলো। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 60699.39
ETH 2655.06
USDT 1.00
SBD 2.59