আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। সবার সুস্বাস্থ্য এবং মঙ্গল কামনা করছি। সেই সাথে আপনারাও আমাকে আপনাদের দোয়ায় রাখবেন।
image source
গত ২২ এপ্রিল, ২০২২ আমাদের ছোট দাদা দ্বিতীয়বারের মতো একটি কবিতা কনটেস্ট আয়োজন করেছেন। আজকেই এই কন্টেস্টের শেষ দিন। আমার সৌভাগ্য শেষ দিন হলেও আমি এইবার আমার সব থেকে পছন্দের কবিতা কনটেস্টে অংশগ্রহণ করতে পারছি।
এইবারের প্রতিযোগিতার কবিতাটি হল বিখ্যাত কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ব্যর্থ প্রেম।
আমার অংশগ্রহণ
ইউটিউব ভিডিও লিংকঃ
image source
background music source
ব্যর্থ প্রেম – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
প্রতিটি ব্যর্থ প্রেমই আমাকে নতুন অহঙ্কার দেয়
আমি মানুষ হিসেবে একটু লম্বা হয়ে উঠি
দুঃখ আমার মাথার চুল থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত
ছড়িয়ে যায়
আমি সমস্ত মানুষের থেকে আলাদা হয়ে এক
অচেনা রাস্তা দিয়ে ধীরে পায়ে
হেঁটে যাই
সার্থক মানুষদের আরো-চাই মুখ আমার সহ্য হয় না
আমি পথের কুকুরকে বিস্কুট কিনে দিই
রিক্সাওয়ালাকে দিই সিগারেট
অন্ধ মানুষের শাদা লাঠি আমার পায়ের কাছে
খসে পড়ে
আমার দু‘হাত ভর্তি অঢেল দয়া, আমাকে কেউ
ফিরিয়ে দিয়েছে বলে গোটা দুনিয়াটাকে
মনে হয় খুব আপন
আমি বাড়ি থেকে বেরুই নতুন কাচা
প্যান্ট শার্ট পরে
আমার সদ্য দাড়ি কামানো নরম মুখখানিকে
আমি নিজেই আদর করি
খুব গোপনে
আমি একজন পরিচ্ছন্ন মানুষ
আমার সর্বাঙ্গে কোথাও
একটুও ময়লা নেই
অহঙ্কারের প্রতিভা জ্যোতির্বলয় হয়ে থাকে আমার
মাথার পেছনে
আর কেউ দেখুক বা না দেখুক
আমি ঠিক টের পাই
অভিমান আমার ওষ্ঠে এনে দেয় স্মিত হাস্য
আমি এমনভাবে পা ফেলি যেন মাটির বুকেও
আঘাত না লাগে
আমার তো কারুকে দুঃখ দেবার কথা নয়।
আমার দৃষ্টিকোণ থেকে কবিতার মূলভাব ব্যাখ্যাঃ
কবিতাটি নিজের কষ্টকে সম্বল করে মানুষের উপকার করে যাওয়া একজন মানুষের কথা বলছে। কবিতাটি থেকে কবির উন্নত দৃষ্টিভঙ্গি ও মননের পরিচয় পাওয়া যায়। কবি নিজেকে এখানে একজন ব্যর্থ প্রেমিক হিসেবে তুলে ধরেছেন যাকে কেউ ফিরিয়ে দিয়েছে। আমাদের সময়ে ব্যর্থ প্রেম মানেই অনেক সময় হেরে যাওয়া। উঠে দাঁড়ানো অনেকের জন্যই সম্ভবপর হয়না। আবার সম্ভব হলেও অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়। সেক্ষেত্রে নিজের থেকে অন্যদের অবদান অনেক সময়ই বেশি হয়। কিন্তু কবি নিজেই নিজের জন্য যথেষ্ট। তিনি প্রতিটি ব্যর্থ প্রেম থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছেন এবং মানুষ হিসেবে আরো একটু পরিপূর্ণতা পেয়েছেন।
কষ্ট যখন তাকে আচ্ছাদিত করে ফেলে তখন তিনি সবার থেকে আলাদা হয়ে অন্য এক পথ ধরে চলেন। সেই পথ তার সাহায্যপ্রার্থী। তিনিও সেই পথের ডাকে সাড়া দিয়ে অভাবীদের প্রতি তার সাহায্যের হাত বাড়ান। এতেই যেন তিনি তার নতুন এক জগত খুঁজে পান। তবে যারা আরো-চাই তত্বে নিজেদের জীবন চালায়, তিনি তাদের সহ্য বা সাহায্য কোনটাই করেন না।
কবিতাটি থেকে কবির ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে একটা আভাস পাওয়া যায়। বোঝা যায় তিনি খুব পরিপাটী একজন মানুষ এবং মন দয়ায় পরিপূর্ণ। তিনি এতটাই বিনীত যে এমনকি জড় বস্তুও তার থেকে যেন আঘাত না পায়, সেদিকেও তিনি খেয়াল রাখেন। তিনি যে নিজেকেও খুব ভালবাসেন ও যত্ন করেন তা বোঝা যায় খুব গোপনে তার নরম মুখকে নিজেই আদর করার মাধ্যমে।
আর দুটি বিষয় না বললেই না। অহংকার ও স্মিত হাস্য। ব্যর্থ প্রেম তাকে যে শুধু আর এক ধাপ পরিপূর্ণ করে তাই নয়, তাকে অহংকার ও স্মিত হাস্য প্রদান করে। এই অহংকার তাকে নতুনভাবে পথ চলায় এগিয়ে নেয়। আর স্মিত হাস্য এই উদার মানুষটির চারপাশে এক রহস্যের বেড়াজাল তৈরি করে!
কবিতাটি সম্পর্কে এটা আমার নিজস্ব মতামত ও ব্যাখ্যা। একটি কবিতা অনেকভাবে বিশ্লেষণ করা যায়, এই কারণে ভিন্ন মানুষের ব্যাখ্যা ভিন্ন হতে পারে। তাই আমার ব্যাখ্যার ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এই কাম্য।
what3words location
ধন্যবাদ,
@kitki
বেশ ভালো লাগলো আপু আপনার কবিতা আবৃত্তি। খুব দৃঢ়তার সাথে প্রতিটি শব্দের উচ্চারণ ছিল। এই ব্যাপারটা সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে আমাকে। যাইহোক প্রতিযোগিতার জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইল।
ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার জন্যও অনেক শুভ কামনা রইল।
বেশ ভালোই শুনে আবৃত্তিটি । যদিও সবাই এবার বেশ ভালোই চেষ্টা করছে ,প্রতিনিয়ত। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। আসলে প্রতিযোগিতায় জিততে পারাই বড় কথা নয়। একটা প্রতিযোগিতা তখনই সার্থক হয় যখন সবাই এতে অংশ নেয় আর সবাই সবার সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করে। এই প্রতিযোগিতাতেও তা-ই হয়েছে। খুব ভাল লাগছে এটা ভেবে যে আমার বাংলা ব্লগের কল্যাণে এখন কবিতা-চর্চা হচ্ছে।