একটু অন্যরকমের ভালোলাগা
নমস্কার বন্ধুরা,
বহুদিন পর টানা বেশ কদিন বাড়িতে কাটিয়ে গত পরশুদিন কলকাতা ফিরে আসলাম। আর আমার যাতায়াতের সঙ্গী ভারতীয় রেল। আদপে আমি মূলত ট্রেনেই যাতায়াত করি এবারও তাই ট্রেনের টিকিট'ই কেটেছিলাম। তবে যেহেতু কলকাতা ফেরাটা হুট করে ঠিক হয়েছিল তাই ট্রেনের টিকিটটাও হুট করে কাটি, যার ফলে সিট নিশ্চিত হয়নি।
সিট নিশ্চিত হচ্ছিলো না দেখে একটা সময় কলকাতা ফেরা বাতিল করারও পরিকল্পনা ছিলো। যা শেষপর্যন্ত করতে হলো না। কারণ ট্রেন ছাড়ার মাত্র ঘন্টা পাঁচেক আগে সিট নিশ্চিত হলো এবং আমি একটি পুরো সিট পেলাম। আসলে এতটা দূরের রাস্তা তার উপরে সকালে নেমেই দৌড়ঝাঁপ, শরীর দেবে না। তাছাড়া বিগত কয়েক মাস ধরে শরীরের উপর এত অত্যাচার হয়েছে যে গত ১৫-২০ দিন ধরে একটু জটিল শারীরিক সমস্যাতেও ভুগছি। সন্ধ্যার সময় যথারীতি ট্রেনে নিজের সিটে বসে পড়লাম। জানলার ধারের সিট। সেখানে বসে হাওয়া খেতে খেতে অনেকটা দূর পেরিয়ে এলাম। রাত্রি তখন ১২:৩০ বাজে, ওদিকে আবার সকাল ৬:৩০ মিনিটে গন্তব্যে নামিয়ে দেবে তাই আর দেরী না করে ঘুমোতে যাবার তোড়জোর করলাম। ঘুমোতে যাবার আগে বাথরুম সারতে গিয়ে দেখি সেখানে এক ছেলে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে পারলাম তার সিট কনফার্ম হয়নি।
২০১১ সালে ট্রেনে যাতায়াত শুরু করলে তখন আমার সাথে এমন বহুবার হয়েছে, যখন ট্রেনের টিকিট কেটেছি তবে সিট নিশ্চিত হয়নি কিন্তু ওদিকে আবার যেতেই হবে। তাই কষ্ট করে হলেও রেলের কামরার বাথরুমের সামনে দাঁড়িয়ে সারাটা রাত পার করে দিয়েছি। কখন আবার কোনো সহৃদয় ব্যক্তির আমাকে দেখে কিছুটা সহানুভূতি জন্মালে আমাকে তার সিটের কোনায় বসতে দিতেন। তবে বেশিরভাগ সময়ে বাথরুমের সুবাসই কপালে জুটতো। দিনগুলো ভুলে যাওয়ার নয়। যেমন কষ্ট পেয়েছি তেমনি কম সংখ্যায় হলেও কিছু ভালো মানুষে সাহায্য পেয়েছি। সেই অভিজ্ঞতা যেহেতু ছিল তাই বাথরুম থেকে ফেরার পথে যখন ছেলেটাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম তখন নিজের কথাই খুব মনে পড়ে গেলো।
ছেলেটি ফোনে কথা বলছিল তাও তাকে জিজ্ঞেস করেই বসলাম ভাই কোথায় যাবে? কিছুক্ষণ পর ফোনে শেষ করে সে উত্তর দিতে বুঝলাম দুজনের গন্তব্য একটাই। তারপরে শুনলাম যে আদপে টিকিট তার আছে কিন্তু সেটা কনফার্ম হয়নি অথচ আজ তাকে কলকাতা যেতেই হবে। ছেলেটিকে বললাম, তুমি আমার সিটে বসতে পারো। মনে হলো আমার কথাটা শুনে ছেলেটি উৎফুল্লই হলো। আমি যখন নিজে এরকম পরিস্থিতিতে পড়েছি তখন আমাকে কেউ বসার জায়গা দিলে আমি খুব উৎফুল্ল হতাম। আমি সিটে কাত হয়ে শুয়ে পড়লাম, ছেলেটি আরেকটি পাশে বসলো। তার সাথে দু একটা কথা বলতে বলতে বুঝলাম বসতে অসুবিধা হচ্ছে। তাই তাকে সিটে কাত হয়ে শুয়েই পড়তে বললাম। তারপর দুজনে অল্প চাপাচাপি করেই শুয়ে পড়লাম।
রাত তিনটের দিকে ঘুম ভাঙলে বুঝতে পারি ছেলেটি সিটে নেই। ইতিউতি তাকাতে বুঝলাম সে অন্য এক সিটে সটান শুয়ে। আমিও তা দেখে নিজের সিটে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম ভাঙতে দেখি ছেলেটি আমাকে দেখে মিটিমিটি হাসছে। সকাল সকাল মনটা বেশ ভালো লাগলো। আসলে আমি যখন ওরম পরিস্থিতিতে পড়েছি তখন কোনো সহৃদয় ব্যক্তিই আমাকে বসার সুযোগটা দিয়েছিল আমি তার এক সিকি ভাগ আজ ফিরিয়ে দিতে পারলাম। ছেলেটিও হয়তো এমন পরিস্থিতিতে কাউকে দেখে দিকে হাত বাড়িয়ে দেবে...
![](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmVZ2LnjzbteWf1QSr3MqRaJx7dYMMGANXS258rRfzaubR/Division.jpeg)
দাদা অবশেষে অনেক জল্পনা কল্পনা করার পর সিট নিশ্চিত পেলেন ৷ আপনার ট্রেন জার্নি তে আরকে জন্য ছেলে কে হেল্প করে খুব ভালো কাজ করছেন ৷ না হলে না জানি ছেলেটার কি হতো ৷ আসলে মানুষ হিসেবে এটাই প্রধান কাজ ৷ আর ভালো কাজ করলে মনটা এমনি করে ভালো লাগে ৷ যদি ভুল না বলি ৷
যে মানুষের পাশে দারানো ৷আর আপনি সেই কাজটাই করেছেন ৷ অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা ভগবান আপনার মঙ্গল করুক ৷
সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসে ভোর রাতে সিট পেতো। তবে সহায়তা না করে থাকতে পারিনি।
আমাদের সমাজের ব্যাপার টা আসলে এমনই দাদা। আজ আমি একজনকে সাহায্য করলে কাল সে অন্য একজনকে সাহায্য করবে। এভাবে একদিন অন্য একজন আমাকে সাহায্য করবে। আপনি ছেলেটাকে নিজের সিটে বসতে দেওয়ার ব্যাপার টা আমার কাছে ভালো লেগেছে। আমি নিজে হলেও এইটাই করতাম। আর এই পরিস্থিতি যারা সম্মুখীন করেছে তারা এটার অসুবিধা কষ্ট দুইটাই খুব ভালোভাবে জানে।
আমারও তাই মনে হয়, ভালো কাজ চক্রাকারে ঘুরতে থাকে।
দাদা আমরা মানুষ এবং আমাদের মাঝে কিছু মানবিক গুণ অবশ্যই থাকা দরকার। আপনি অতীতে ট্রেনে যাতায়াত করার সময় অনেকের হেল্প পেয়েছেন বলে,সেই ছেলেটিকে আপনি হেল্প করলেন। হয়তোবা পরবর্তীতে সেই ছেলেটি অন্য কাউকে এভাবে হেল্প করবে। এভাবেই মানবতার জয় হবে একদিন। যাইহোক পোস্টটি পড়ে আসলেই খুব ভালো লাগলো দাদা। এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ভদ্র পোশাকের মানুষদের থেকেও এমন আচরণ পেয়েছি যা আজ অবধি আমাকে অবাক করে। তাই বলে কি আমাকেও তাদের মতো হতে হবে?
বর্তমানে ভদ্র পোশাকের মানুষদের কাছ থেকেই অমানবিক আচরণ বেশি দেখা যায়। কিন্তু আমাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে মানবিক কাজগুলো বেশি করা উচিত। তাহলে একসময় আমাদের সমাজটা পাল্টে যাবে। আপনার মানবিক কাজ দেখে আসলেই ভীষণ ভালো লেগেছে দাদা। ভালো থাকবেন সবসময়।
তুমি যেহেতু অন্যের থেকে সাহায্য পেয়েছো, এক্ষেত্রে তোমার অন্যকে সাহায্য করাটা দায়িত্ব এবং সেই দায়িত্বটা তুমি সঠিকভাবে পালন করেছো দাদা। আসলে এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোতে মাঝেমধ্যে সিট ওয়েটিং দেখায়, অনেক সময় কনফার্মও হয়ে যায়। তবে সেটা না হলে যে কি কষ্ট সেটা আমি নিজেও কয়েকবার দেখেছি। বাথরুমের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা গন্তব্যে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত।
সেই ছেলেটিও হয়তো অন্য কাউকে করবে... আশা তেমনই
সেটা হলেই তো ভালো দাদা। এভাবে একে অন্যের উপকারের মাধ্যমে সমাজের মঙ্গল হবে।