কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো ও প্রসাদ বিতরণ
নমস্কার বন্ধুরা,
পুজোর কাজকর্ম কিছুটা এগিয়ে রাখবার পর বিছানায় গা তো এলিয়ে দিলাম কিন্তু পুজোর উত্তেজনাতে কিছুতেই ঘুম আসছিলো না। কিছুটা সময় তাই শুয়ে শুয়েই উত্তেজনায় ছটফট করলাম। যেন শারীরিক দুর্বলতা বলতে কিছুই নেই। অনেক চেষ্টা চরিত্র করবার পর মন শান্ত করতেই ঘুমটা চলে গেলো।
অ্যালার্ম বাজলো ঠিক এক ঘণ্টা পর। আমিও অ্যালার্ম শোনা মাত্র বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম। পুজোর সময় চলে এসেছে আর পুজোর বাকি কাজ গুলোও সেরে ফেলতে হবে। ওদিকে আবার পুরোহিত মশাই বলে রেখেছেন সন্ধ্যে লাগার আগেই উনি আসবেন, ৫:৩০ টার দিকে। চোখে মুখে জল দিয়েই সোজা গেলাম পুজোর জায়গায়, গিয়ে দেখি জায়গায়টা আবার বেশ সুন্দর ভাবে লেপে দেওয়া হয়েছে।
আমার কাজ পড়লো মা লক্ষ্মীর প্রতিমা ঘর থেকে বের করে এনে পিঁড়িতে বসানো তবে বুঝে ছিলাম একার শক্তি দিয়ে হবেনা। শেষে দুজনে ধরাধরি করে তবেই মা লক্ষ্মীকে পিঁড়িতে এনে বসানো গেলো। মা চট করে আলপনা এঁকে দিলেন। তারপর ধীরে ধীরে পঞ্চ প্রদীপ, পুজোর জন্য কেটে রাখা ফলমূল আর পিতলের প্রদীপ গুলো জ্বালিয়ে মায়ের কাছে বসানো হলো।
মা লক্ষ্মীর গায়ে অলংকার না থাকলে হয়। মায়ের জন্য যতগুলো সোনার অলংকার ছিল সবই একে একে পরানো হলো তবে এই দায়িত্বটা আমার ছিল না। বাবা নিজে হাতে পুরোটা কাজ অনেক ধৈর্য্যের সাথে করলেন। অনেকটা সময় ধরে মা লক্ষ্মীর হাতে পদ্ম ফুল দিয়ে গায়ে অলঙ্কার সব কিছু দিয়ে সাজানো হলো।
এরপর আমাকে পুজোর জায়গা থেকে এক প্রকার তাড়িয়েই দেওয়া হলো। আমার নতুন দায়িত্ব পড়লো আমন্ত্রিত ভক্তদের প্রসাদের দিকটা দেখে শুনে সাজিয়ে রাখা। পাশের বাড়ির এক ভাইপোকে নিয়ে আমি বসে পড়লাম। প্রসাদ স্বরূপ আছে ১০০ কিলো মুড়ি, ১২ কিলো মুড়কি সাথে দু ধরনের নাড়ু আর ছিলো ফলমূল। যেগুলো মা লক্ষ্মীর পুজো হলেই পাওয়া যাবে।
আমরা দুজনে অল্প অল্প করে মুড়ি ঢেলে নিয়ে তার সাথে কিছুটা করে মুড়কি মিশিয়ে প্লাস্টিকের প্যাকেটে পুরতে শুরু করে দিলাম। আমাদের কাজ চলাকালীন পুরুতমশাই এসে হাজির হলেন আর চটপট পুজো শুরু করে দিলেন। আমরাও আমাদের কাজের বেগ বাড়িয়ে দিলাম যাতে সন্ধ্যাতে পুজো হওয়ার পর ভক্তরা আসতেই তাদের ঝটপট প্রসাদ হাতে তুলে দেওয়া যায়।প্রায় ষাট কিলো মুড়ি এবং আট কিলো মুড়কি মাখিয়ে সেগুলো ১৬০ খানা প্যাকেট বন্দি করে রাখা হলো।
সন্ধ্যা ৭:৩০ টার সময় থেকে ভক্ত দের আগমন শুরু হয়ে গেলো। যদিও তখন পুজো শেষ পর্যায়ে তাই প্রথমের দিকে ধীরে ধীরে প্রাসাদ বিতরণ শুরু করে দেওয়া হলো। রাত ৮ টা বাজতেই পুজো শেষ সাথে সাথে নেমে এলো ভক্তদের ঢল। ৭:৩০ থেকে প্রসাদ বিতরণ শুরু হওয়ার ৪৫ মিনিটের মাথায় ১৬০ খানা প্যাকেট শেষ। আমরা হুড়মুড়িয়ে আবার মুড়ি-মুড়কি মাখাবার কাজে লেগে পড়লাম। সময় না থাকার কারণে প্যাকেটের ব্যবস্থা আর করা গেলোনা। হাতে হাতেই সবাইকে দিতে হলো। প্রসাদ বিতরন শেষ হতে হতে রাত সাড়ে নয়টার বাজলো আর সবমিলিয়ে ভক্তের সংখ্যা গিয়ে দাড়ালো প্রায় আড়াইশো।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আশা করি দাদা, ভালো আছেন? কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোতে খুব সুন্দর মুহূর্ত অতিবাহিত করেছেন। দেখে অনেক ভালো লাগলো। পূজা প্রসাদে অনেক আইটেম করেছেন দেখছি মুড়ি মুড়কি নানা ধরনের ফল ইত্যাদ। পূজাতে কাটানো এত সুন্দর মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
এই না হল পুজোর মজা,ভক্ত আসবে প্রসাদ বিতরণ হবে।সবাই পুজো দেখতে বের হবে।আমাদের এদিকে খালি দুর্গাপুজাই যা ধুমধাম এর সাথে করা হয়,বাকি পুজা গুলোতে এত মজা হয়না। ধনযবাদ দাদা পুজার আনন্দ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
শ্রদ্ধা আর ভক্তির পরিমাপটা এইযে ভক্তের সংখ্যা দেখেই আসলে বুঝা যায়।তাও ভালো যে পূজোর জন্যে অসুস্থতাটা ভুলে গিয়েছেন।
আমার মামার বাড়িতে এমন ধুম ধাম করে মা লক্ষ্মীর পুজো করা হয়। এবছর তো যেতেই পারলাম না। ওখানে অবশ্য একদম পাত পেরে বসিয়ে ইচ্ছে মত খাওয়ানো হয়। প্রসাদ দিতে দিতে কোমর আর পায়ের বারোটা বেজে যায়। আপনিও দেখি বাড়ির কাজে ভালোই লেগেছিলেন দাদা। তবে এই কাজ গুলোর মধ্যে একটা আনন্দ আছে,, একটা শান্তি পাওয়া যায় মনে।
দাদা,মনের মধ্যে যদি ভক্তি থাকে সকল দুর্বলতা সকল কষ্ট এক নিমিষে শেষ হয়ে যায় যেমনটা আপনার ক্ষেত্রে হয়েছে।দাদা,খুব সুন্দর করে প্রসাদ বিলিয়ে দিয়েছেন আর প্রসাদ গুলো প্যাক করতে সময় লেগেছে কিন্তু বিলি করতে সময় লাগে নি। আসলে দাদা, এই প্রসাদ গুলো আমার খুবই ভালো লাগে।ছোট বেলায় বিভিন্ন পুজোতে যেতাম আর আমাদের বাড়ির পাশে এক মাসির বাড়িতে যেতাম তিনি আমাকে বিভিন্ন রকমের হাতে তৈরি প্রসাদ দিতেন। ধন্যবাদ দাদা,আপনার পোস্টটা পড়ে সত্যিই খুব ভালো লেগেছে।।
পূজার ভোগ বিতরণ করতে সত্যিই অনেক আনন্দের।খুবই বড়সড় আয়োজন করে লক্ষ্মীপূজা সম্পন্ন করেছেন দাদা, দেখে খুবই ভালো লাগলো।ভক্তকে ভোগ বিতরণ করলে মনে একটা আলাদা প্রশান্তি কাজ করে, ধন্যবাদ দাদা।
বাপরে! এই প্রথম দেখলাম কারো বাড়িতে এত প্রসাদের আয়োজন। আগেকার দিনে হত শুনেছি। কিন্তু এখন আর দেখি না, সবই নিউক্লিয়ার আর আইসোলেটেড ব্যাপার স্যাপার। এখনও মিল এতো দেখে ভালোই লাগলো।
প্রথমে মাতা লক্ষ্মী কে প্রণাম জানাই। পূজা পরবর্তী সব থেকে বড় দায়িত্ব হল ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ। আগে আমাদের বাংলাদেশে এ ধরনের পোশাক বিতরণের রীতি চালু ছিল কিন্তু বর্তমানে দেখছি আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছে। এভাবে প্রসাদ বিতরণ টা সত্যিই আমার কাছে দারুন লেগেছে। আপনি অতিথি সেবা বেশ ভালোভাবেই সম্পূর্ণ করেছেন। মাথা লক্ষী আপনার উপর ধন সম্পদ বর্ষিত করুক।
ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতেও এরকম ধুমধাম করে লক্ষ্মীপ অনুষ্ঠিত হতো, তারপর গ্রামের লোকদের খিচুড়ি খেতে দেওয়া হত। তবে এখন যেহেতু কেউ বাড়ি থাকে না সুতরাং ওই ব্যাপারটা এখন আর নেই তেমন একটা।
তারপরও কিন্তু আমার বাড়ি কোন পুজোর প্রসাদের প্যাকেট আসেনি, তোমার বাড়ি থেকে। খুব খারাপ লাগলো নির্মাল্য দা।😭